অনেক দিন আগের ঘটনা। সত্য ঘটনা। তখন আরব দেশের রাজা বাদশাহদের শখ ছিল সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ জিনিস নিজের অধিকারে রাখার। যেমন কারো হাতি ছিল আরবের সেরা হাতি, কারো ছিল সেরা ঘোড়া, ইত্যাদি। বাগদাদের বাদশাহর ছিল এক সেরা পাহলোয়ান (কুস্তিগীর)।তার নাম ছিল মোহাম্মদ জুনায়েদ। সে ছিল আরবের পরীক্ষিত সেরা পাহলোয়ান (কুস্তিগীর)।আরবের সব পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) দের হারিয়ে তখন সে শ্রেষ্ঠ পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) খেতাবের অধিকারী। তার সাথে কুস্তি করবে এমন কোন পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) তৎকালীন আমলে ছিল না। তাই সে অলস সময় কাটাছ্ছিল। সেরা পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) এর সারাদিন কাটত ব্যায়াম করে আর অন্য ছোটখাট পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) দের সাথে কুস্তিচর্চা করে। এভাবে বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেল। কেউ যখন পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) এর সাথে লড়াই করতে আসছে না তখন বাদশাহ সেরা পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) এর সাথে লড়াই করার জন্য মোটা অংকের পুরুষ্কার ঘোষনা করলেন। তারপরও কেউ এল না সেই পাহলোয়ান (কুস্তিগীর) এর সাথে লড়াই করতে ,কেই বা আসবে জিততেত পারবেই না মাঝখান দিয়ে হাত-পা ভেংগে ঘরে ফিরে যেতে হবে।তাই এভাবে অলস সময় কেটে গেল আরও বেশ কিছুদিন।
একদিন বাগদাদের বাদশাহ দরবারে সভাসদদের সাথে বসে আছেন। এই সময় দরবারে এল জীর্ন-শীর্ন দুর্বল এক যুবক। সে বাদশাহকে বললঃ মাননীয় বাদশাহ আমি আপনার পুরষ্কারের ঘোষনা শুনে এসেছি। সেই পুরুষ্কার অর্জন করার জন্য আপনার সেরা পাহলোয়ানের সাথে আমি লড়াই করব।
যুবকের কথা শুনেত দরবারের সবাই অবাক বলে কি ? কোথায় সেই পাহলোয়ান আর কোথায় এই যুবক! দুর্বল দেহ।জুনায়েদ পাহলোয়ান ভাল করে ফু দিলে কোথায় উড়ে যাবে। যাই হোক, বাদশাহর ঘোষনা শুনে তবুত একজন এসেছে।বাদশাহ কিছুক্ষন চিন্তা করে লড়াই করার দিনক্ষন ঘোষনা করে জানিয়ে দিলেন।
লড়াইয়ের দিনে বাদশাহসহ বাগদাদের প্রায় সব প্রজা লড়াইয়ের ময়দানে হাজির হল। চারদিক দর্শকে ভরপুর।লড়াই মাঠে তিল ধারনের ঠাই নাই। পাহলোয়ান লড়াই ভুমিতে একা কুস্তির নানা কৌশল দেখাছ্ছেন। প্রতিপক্ষের দেখা নাই। এদিকে সময় বয়ে যাছ্ছে ।বাদশাহ ধীরে ধীরে অধৈর্য হয়ে উঠছেন। প্রজারা ছটফট করছেন কখন লড়াই শুরু হবে। এমনি অবস্থায় সেই যুবক ধীর ক্লান্ত পায়ে প্রায় ধুকতে ধুকতে লড়াইয়ের ময়দানে প্রবেশ করল। জুনায়েদ পাহলোয়ানের সামনে যুবককে দেখে সবাই হেসে উঠল। একি লড়াই! এযে হাতির সাথে মশার লড়াই।কি! বিশাল দেহ জুনায়েদ পাহলোয়ানের আর কি শীর্ণ দেহ এই যুবকের। লড়াই মাঠে দর্শকদের মধ্যে হাসির লহড়ি বয়ে গেল।
জুনায়েদ পাহলোয়ান এর আগে প্রতিপক্ষকে দেখেনি ।তাই যুবককে দেখে সেও হতবাক হয়ে গেল। এ কেমন প্রতিপক্ষ! জুনায়েদ পাহলোয়ান তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলে নিলেন। যাই হোক সে বাদশাহর আদেশ মেনে নিয়ে কুস্তি করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করল।
এদিকে যুবক কুস্তির প্রস্তুতিত দুরে থাক সে দুর্বল পায়ে জুনায়েদ পাহলোয়ানের দিকে এগিয়ে এল কথা বলার জন্য। যুবককে এগিয়ে আসতে দেখে প্রস্তুতি রেখে সেও এগিয়ে গেল।
যুবকটি দুর্বল স্বরে বললঃ হে বীর জুনায়েদ পাহলোয়ান আপনি কি মুসলমান?
যুবকের প্রশ্নে জুনায়েদ পাহলোয়ান অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেনঃ কেন?
ঃআপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চয় নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসেন ?
ঃঅবশ্যই ভালবাসি।
ঃ তাহলে বীর পাহলোয়ান জুনায়েদ আজ যেভাবেই হোক আপনাকে হারতে হবে। আমি নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আওলাদ বংশধর। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ অসুস্থ বিধায় কোন কাজ কর্ম করতে পারিনা। নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বংশধর হওয়ায় ভিক্ষাও আমাদের জন্য হারাম, এমনকি ছদকা নেয়াও হারাম। তাই বাধ্য হয়ে আজ আমি আপনার সাথে লড়াই করতে এসেছি। এই লড়াইয়ে আপনি যদি হারেন তাহলে আমি পুরষ্কারটা পাব যা দিয়ে বেশ কিছুদিন আমি ও পরিবারের জীবীকা নির্বাহ করতে পারব এবং নিজের চিকিৎসা করতে পারব।
যুবকের কথা শুনে জুনায়েদ পাহলোয়ান গভীর চিন্তায় পড়ে গেল। এতো এক কঠিন পরীক্ষা।এত দিনের তিলেতিলে গড়ে তোলা সম্মান যা আজকে তাকে আরবের বুকে বিখ্যাত এক পাহলোয়ান হিসেবে পরিচিত করছে, বাদশাহর প্রিয় পাত্র হয়েছে, বাদশাহর বদন্যতায় হয়েছে অগাধ সম্পদের মালিক। এই যুবকের কথা মত যদি সে আজ হেরে যায় তাহলে তার ইজ্ঝত সম্মান সব ধুলায় লুটাবে।সেই সাথে বাদশার রোষানলে পড়তে হবে।হারাবে ধন-সম্পদ এমকি ছাড়তে হবে নিজ জন্মভূমি।কোনটা বড় নবী প্রেম না এই মান-সম্মান.......।
আর কিছু ভাবতে চাইলেননা তিনি কারণ ভাল করেই জানেন এই যুবক যা চাইছে তা অতি সামান্য। আরে যার জন্য জীবন দিতে এতটুকুও কুন্ঠা বোধ করবে না এই জুনায়েদ পাহলোয়ান, সেখানে এই সামান্য ধন মান-সম্মান?
ঃ হে আমার প্রিয় নবীর বংশধর আপনার জন্য প্রয়োজন হলে আমার প্রাণ বিলিয়ে দেব।আপনার সাথে কুস্তি করাত দুরের কথা আপনার দিকে চোখ তুলে তাকানোটাও আমার জন্য চরম ধৃষ্টতা ছাড়া কিছুই নয়।তাই আপনি এই অধমকে যা আদেশ করবেন আমি তাই শুনতে বাধ্য। আপনি কি কিছুটা কুস্তি জানেন। যদি জানেন তাহলে আপনার জিতে যাওয়াটা যুক্তিপূর্ণ হবে।
ঃহ্যা আমি এই সম্পর্কে কিছুটা জানি।
ঃতাহলে চলুন আমরা লড়াই শুরু করি।তবে একটি অনুরোধ এই লড়াই করতে যেয়ে যদি আপনার সাথে কোন বেয়াদপি হয়ে যায় তাহলে এই অধমকে ক্ষমা করে দিবেন।
যুবকটি সম্মতি সূচক ইশারা করলেন। এতক্ষন দুজনের মধ্যে যে কথা-বার্তা হছ্ছিল তা আর কেউ শুনতে পায়নি। কারন তখন দুজনে ছিলেন মাঠের মধ্যখানে। খেলা পরিচালনাকারী ছিলেন অনেকটা দুরে। লড়াই শুরু হতেই খেলা পরিচালনাকারী দুজনের কাছে এলেন। শুরু হল লড়াই। বাদশাহসহ সব দর্শক রুদ্ধশ্বাসে খেলা দেখছে।যদিও সবাই জানে আজকের এই অসম লড়াইয়ে জুনাযেদ পাহলোয়ানই জিতবে। কিন্তু যুবক দূর্বল শীর্ন দেহ হলে কি হবে কুস্তির ম্যার-প্যাচ কিছুটা জানে তা খেলা দেখেই বোঝা যাছ্ছে। দুই কুস্তিগীরের পায়ের আঘাতে মরুভূমির বালুকাময় ময়দান ধুলায় ভরে গেল। কিছুক্ষন পর দুই খেলোয়াড়ই ধুলার মেঘে হারিয়ে গেল। হঠাৎ দেখা গেল ধুলার মেঘ হতে দুই হাত তুলে যুবকটি বের হয়ে এল।সবাই মনে করল জুনায়েদ পাহলোয়ানের মার সহ্য করতে না পেরে মনে হয় যুবকটি পালাছ্ছে। কিন্তু ধুলার মেঘ সরে যেতেই দেখা গেল জুনায়েদ পাহলোয়ান মাটিতে শুয়ে আছে।
বাদশাহসহ সব দর্শক অবাক! একি করে সম্ভব?
সেদিন রাতেই জুনায়েদ পাহলোয়ান স্বপ্ন দেখলেন নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। তিনি বলছেন হে জুনায়েদ তুমি আজ যে আত্তত্যাগ করেছ তার কারনে আমি তোমার উপর খুশি হয়েছি। নিশ্চয় আল্লাহতালা তোমাকে এর প্রতিদান দিবেন।
পরবর্তিতে আরবের সেরা জুনাযেদ পাহলোয়ান বাগদাদী আল্লাহর প্রিয় বন্ধু জুনায়েদ বোগদাদী রহমতুল্লাহ আলাইহি হয়েছিলেন। যার কবর আজ হাজার হাজার মুসলমান জিয়ারত করে ধন্য হয়।