এক রাজ্যর রাজ জ্যোতিষী একদিন সকালে রাজাকে জানাল আগামী বর্ষা রাজ্যর জন্য ভয়ানক এক বিপদ হয়ে দেখা দিবে। কেননা আগামী বর্ষায় যে বৃষ্টি হবে সেই বৃষ্টির পানিতে নদী-নালা খাল-বিলের সব পানি দুষিত হয়ে যাবে। সেই দুষিত পানি যে বা যারা পান করবে তারা সবাই পাগল হয়ে যাবে। রাজা আর সভাসদেরা জ্যোতিষীর ভবিষ্যৎ বানী শুনে আৎকে উঠল। কিছুখ্খন পর রাজা ব্যাপারটা হজম করে জ্যোতিষীকে জিগ্গাসা করল এই বিপদ থেকে বাচার উপায় কি ? জ্যোতিষী অনেক আকিবুকি দাগ কেটে রাজাকে বললঃ মহাশয় এই বিপদ থেকে বাচার একটা মাত্র উপায় আছে। তবে কতটুকু ফলপ্রসু হবে তা এখন বলা যাছ্ছেনা।
ঃফলপ্রসুর কথা পরে ভাবা যাবে এখন বল উপায়টা কি ?
ঃ রাজা মহাশয় এখন যা করতে হবে, তা হল আমাদের প্রত্যেকে আগামি বর্ষা আসার আগে বর্তমানে যে ভাল পানি আছে তা জমিয়ে রাখতে হবে।যেন বর্ষা পরর্বতী সময়ে পাগলা পানি খেতে না হয়।
জ্যোতিষীর কথা মত রাজা ঘোষনা করে দিলেন আগামী বর্ষা আসার আগে সবাই যেন ভাল পানি জমিয়ে রাখে।রাজার ঘোষনা শুনে সব প্রজা যার যার সামর্থ মত পানি জমিয়ে রাখল। যার কলস ছিল সে কলসিতে রাখল,যার মটকা ছিল সে মটকাতে রাখল। রাজা রাখল রাজার মত। রাজপ্রসাদের ভিতর বিশাল এক পুকুর কেটে তাতে পানি জমিয়ে রাখল।
এরপর যথারীতি বর্ষা এল। নদী খাল বিল পুকুরের যত পানি ছিল সব পানি পাগলা পানিতে ভরে গেল। মানুষ তখন জমানো পানি খাওয়া শুরু করল। যার কলসি ভরা ছিল সে কলসির পানি যতদিন ছিল ততদিন খেল। যার মটকা ভরা ছিল সে যতদিন মটকার পানি ছিল সে ততদিন মটকার পানি খেল। এভাবে একসময় সব প্রজার জমানো পানি ফুরিয়ে গেল। প্রথম প্রথম কেউ খেতে না চাইলেও পিপাসার কারনে সব প্রজাই পাগলা পানি খেতে বাধ্য হল। পাগলা পানি খেয়ে প্রজারা একে একে সবাই পাগল হয়ে গেল। রাজ্যর সব প্রজাই পাগলের মত আচরন করতে লাগল। কেউ গায়ের কাপড় খুলে ফেলে কেউ নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়ে,কেউ নিজের বাড়ি নিজে জ্বালিয়ে দেয়। এই অবস্থা চলতে লাগল সারা রাজ্য জুড়ে। সব প্রজা পাগল তাই কেউ কাউকে বাধা দিছ্ছে না এবং একজন অন্যজনকে পাগল ভাবছে না। প্রজারা সবাই এটাকেই স্বাভাবিক আচরন মনে করছে। ভাল পানির অভাবে প্রজারা পাগলা পানি খেয়ে পাগল হলেও রাজা কিন্তু ঠিক আছে। কারণ রাজাকে পাগলা পানি তখনও খেতে হয়নি। রাজার বিশাল করে কাটা পুকুরের পানি যথেষ্ট পরিমানেই আছে। তাই রাজার আচরন তাই সুস্থ স্বাভাবিক। রাজার এই সুস্থ আচরনের কারনে তিনি পড়লেন আরেক বিপদে। প্রজারা একদিন লক্ষ্য করল তাদের আচরনের সাথে রাজার আচরন মিলছেনা।ব্যাপার কি ? প্রজারা সবাই আলোচনা করল। এরপর তারা সিদ্ধান্তে পৌছল আমাদের রাজা আসলে পাগল, তাই তার আচরনের সাথে আমাদের আচরন মিলছে না।তাহলে! এখন কি করা যায়? কি আর করা এই পাগলা রাজাকে উৎখাত করতে হবে যদি দেশকে বাচাতে হয়। তবে তাই করা যাক।পাগল প্রজাদের যেই ভাবা সেই কাজ সবাই যার কাছে যা হাতিয়ার ছিল তাই নি্যে রাজপ্রসাদের দিকে দৌড় দিল।প্রজাদের অবস্থা দেখে রাজা পড়ল বিপদে। তাড়াতাড়ি উজিরকে জিঘ্ঘাসা করলঃ উজির পরিত্রানের উপায় কি?
উজির এক দৌড়ে এক গ্লাস পাগলা পানি এনে বললঃ রাজা মহাশয় এই পানি পান করাই এখন একমাত্র পরিত্রানের উপায়।
প্রজারা রাজ প্রসাদে এসে দেখে রাজা মশায় তাদের মতই কাপড়-চোপড় খুলে পাগলা নাচন দিছ্ছে।
বিঃদ্রঃ- জনগন সৎ হলে শাসক সৎ হতে বাধ্য। সৎ জনগন থেকেই জন্ম নেয় সৎ শাসক।আসুন আমরা প্রত্যেকে সৎ হই , সৎ প্রশাসন গড়ে তুলি। কেননা আমার আপনার সন্তান এদেশের ভবিষ্যত কর্ণধার।পিতা সৎ হলে সন্তান সৎ হবে। সৎ সন্তানেরাই গড়ে তুলবে সন্ত্রাস মুক্ত দূর্নীতি মুক্ত দুশ্চরিত্র মুক্ত দেশ।