আজ একুশে ফেব্রুয়ারী ( ৮ই ফাল্গুন কেন নয় ?) মাতৃভাষায় কথা বলার, লেখার, ভাব প্রকাশ করার অধিকার আদায়ের দিবস। পৃথীবি অনেক দেশ আছে যেখানে মাতৃভাষা বলতে পারলেও সরকারি ভাবে লিখতে বা স্বীকৃত নয়। যেমন আমাদের পার্শ্ববর্তি দেশ ভারতে বহু ভাষাভাষির দেশ, সেখানে সরকারি ভাষা হিন্দি।বাংলাভাষা স্থানিয় ভাষা।
একমাত্র আমরা বাংলাদেশীরা বিশ্বে প্রথম যারা স্বামির (দেশের) দ্বিতীয় বউ (দ্বিতীয় ভাষী) হতে রাজি হইনি। আমরা আমাদের জাতিস্বত্তা নিয়ে আমাদের মাতৃভাষা নিয়ে আমাদের স্বাধিনতা জন্য পরপর দুইবার রক্ত দিয়েছি। সেই রক্ত বৃথা যেতে দেইনি। অধিকার আদায় করে নিয়েছি। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার যেমন বুনো ওল ছিল আমরা বাংলাদেশের বাংগালীরা তেমন বাঘা তেতুল ছিলাম। তাই যেমন কুকুর তাকে তেমন মুগুর মেরে আমরা আমাদের অধিকার আদায় করে নিয়েছি।
ভাষা মহান আল্লাহর পক্ষ হতে তার বান্দাদের প্রতি পরম এক করুনা। ভাষা যদি না হত তাহলে এই পৃথিবী এতটুকু সভ্যতা অর্জন করত কিনা সন্দেহ আছে।ভাষার কারণে মানুষের ভাব আদান করা সহজ হয়েছে বিধায় সভ্যতাও দ্রুততম হয়েছে। পু্র্ববর্তি প্রজন্মরা নিজেদের জ্ঞান ভাষার বর্ণমালায় লিখে রেখে গেছেন পরবর্তি প্রজন্মের জন্য।
পৃথিবীর মানুষ প্রায় ৬৮০০ ভাষায় কথা বলে।এর অর্ধেক প্রায় সাড়ে তিন হাজার ভাষায় মাত্র আটটি দেশের মানুষ কথা বলে। দেশগুলো হলো পাপুয়া নিউগিনি, ইন্দেনেশিয়া, ভারত, মেস্কিকো, ক্যামেরুন, অস্ট্রেলিয়া ও ব্রাজিল। ভাষাবিদদের ধারনা এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ জীবিত একশত ভাষার প্রায় নব্বই শতাংশ হারিয়ে যাবে। ২০০১ সালে হারিয়ে গেছে বা বিলীন হয়ে গেছে ২০টি ভাষা।
পৃথিবীর অর্ধ সংখ্যক জীবিত ভাষা ব্যবহারকারী সংখ্যায় কোনোটিতে আড়াই হাজারের বেশি নয়।
ভাষা বিলুপ্তি নতুন কোন ঘটনা নয়।
২০০৮ সালের ১১ জানুয়ারি ৮৩ বছরে মেরি স্মিথ জোন্স নামে এক মহিলার মৃত্যুর সঙ্গে ইয়াকা ভাষাটিরও মৃত্যু হয়। সেই সাথে ইয়াকা ভাষাটি নিশ্চিহ্ণ হয়ে যায়। একটি ভাষা পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাওয়ার মানে কেবল এই নয় যে একটি অভিধানের মৃত্যু হলো। আসলে সেই সঙ্গে একটি সভ্যতারই মৃত্যু হয়। যে ভাষাটির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা একটা সমাজের সংস্কৃতির ইতিহাস ও জ্ঞানের মূল্যবান সব তথ্য উপাত্ত চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। এটা বড়ই বেদনাদায়ক । ষোড়শ শতকে স্পেনিয়রা দক্ষিণ আমেরিকা দখল করলে শত শত ভাষার মৃত্যু ঘটে। গত চল্লিশ বছরে সংখ্যালঘুর ভাষার যে রক্তক্ষরণ হয়েছে, এমন ধ্বংসযজ্ঞ আগে কখনো ঘটেনি।
বর্তমানে ত্রিশ কোটি মানুষ ইংরেজি বলছে ইংরেজি তাদের মাতৃভাষা বলে। আর একশ কোটি বা ততোধিক মানুষ কমবেশি সাবলীলতায় ইংরেজি বলছে। ভাষাটির আন্তর্জাতিক গুরুত্বের কারণে ইংরেজির এই উত্থান আজ অনেক রাষ্ট্রের উদ্বেগের বা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটা স্বীকার না করে উপায় নেই শত বছর ধরে ইংরেজ তিনশ’টির বেশি ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করেছে বলে ইংরেজি ভাষা বর্তমান অবস্থানে আসতে পেরেছে।ভাষাবিদ ফিশার তাঁর গ্রন্থে বলেছেন যে, ইংরেজি নিজস্ব কথ্যরূপ হারিয়ে মুখ্য বিশ্ব ভাষা তথা আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজিতে পরিণত হয়েছে। এখনো স্থানীয় আদি উৎসসমূহ থেকে শব্দাবলি গ্রহণ করে সমৃদ্ধ হচ্ছে ইংরেজি ভাষা। যেমন অস্ট্রেলিয় ইংরেজি গ্রহণ করেছে অ্যাব অরিজিন থেকে। নিউজিল্যান্ডের ইংরেজি গ্রহণ করেছে মাওরি থেকে, দক্ষিণ আফ্রিকা ইংরেজি গ্রহণ করে আদিবাসীদের ভাষা থেকে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে অনেক বিলীয়মান ভাষার কিছু কিছু শব্দ ইংরেজি ভাষাতে অলঙ্কার হিসাবে আছে।
দুর্ভাগ্য বলতে হয় পৃথিবীর অনেক ভাষার লিখিত রূপ নেই। আমাদের দেশেরো ক্ষুদ্র-নৃ গোস্ঠিদের অনেকের ভাষার লিখিত রূপ নেই। অনেক ভাষা মৌখিকভাবে এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়েছে। লিখিত রূপ না থাকায় সেগুলি হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশের বম উপজাতির ভাষা হারিয়ে যেতে বসেছিল। সম্প্রতি এই ভাষার ইতিহাস রচিত হয়েছে। এটা একটা আশাবাদী ঘটনা।
আমদের দেশে বর্তমানে এক জাতীয় ভাষা যা তথাকতিথ ধনী শ্রেণীর মুখে শোনা যায়, যাকে বলা যায় বাংরেজী ( শব্দ বাংলা উচ্চারন ইংরেজি ) ভাষা। যা শুনতে শ্রুতিকটু লাগলেও এটাই এখন আধুনিকতা।ভাবতে অবাক লাগলেও সত্য, আমরা যারা ভাষার জন্য প্রান দিয়েছি তারাই আজ ভালবাসি কথাটি প্রকাশ করি ইংরেজিতে। আমরা এখন " আমি তোমাকে ভালবাসি" এই কথাটা বলিনা এখন আমরা বলি "আই লাভ ইউ"। আমরা একমাত্র জাতি যারা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছি রক্ত দিয়েছি। আমাদের সেই একুশে ফেব্রুয়ারি (৮ই ফাল্গুন কেন নয়?) আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আসুন আমরা সবাই আমাদের মাতৃভাষাকে বাংরেজি উচ্চারনে নয় শুদ্ধ উচ্চারনে উচ্চারন করি।