চট্টগ্রাম শহরে আপনি দুই ভাবে আসতে পারেন । ট্রেনা অথবা বাসে । ট্রেনে আসলে আপনাকে চট্টগ্রাম রেলষ্টেশনে নামিয়ে দিবে। রেল ষ্টেশনের আশে পাশে হোটেল অনেক হোটেল আছে সেখানে উঠতে পারেন। এখানে সস্তা দামি সব ধরনের হোটেল আছে।
বাসে এলে আপনি সকাল দশটার পর বা রাত দশটার পর পৌছলে শহরে বাস সরাসরি ঢুকবে না। আপনাকে অলংকারের মোড়ে নামিয়ে সেখান থেকে মিনি বাসে করে গরিবুল্লাহ শাহর মাজার নয়ত বি আর টি সি বাস ষ্টেশনে নিয়ে আসবে। বি আর টিসি বাস ষ্টেশনের সাথে সব রকমের হোটেল আছে সেখানে উঠতে পারেন, নয়ত একটু এগিয়ে পূব দিকে গেলে রেল ষ্টেশন। এছাড়া ওয়াসার মোড়ে, জিইসির মোড়,বহদ্দার হাট , চকবাজারে ,কর্নফুলী মার্কেট চৌহুমনির মোড়ে সব ধরনের হোটেল আছে।
কোথায় বেড়াবেন? কিভাবে যাবেন ?
-----------------------------
রেলষ্টেশনে নামলে এর কাছাকাছি জায়গাগুলো ঐতিহ্যবাহী বটতলী পুরাতন রেলষ্টেশন যা হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত।চট্টগ্রাম নিউমার্কেট বা বিপনী বিতান , রেয়াজউদ্দিন বাজার , জহুর হকার্স মার্কেট, চট্টগ্রাম কোর্ট বিল্ডিং বা পরীর পাহাড়,(এটাও হেরিটেজের অন্তর্ভূক্ত) ফিরিন্গী বাজার দিয়ে কর্নফুলী নদীটাকে দেখে আসতে পারেন। হয়ত ঢেউয়ের তালে তালে শুনতেও পারেন এই গান -
ছোড ছোড ঢেউ তুলি ফান ,
ছোড ছোড ঢেউ তুলি -ই ই
লুসাই পাহাড় উড়েত্তুন নামিয়েরে
যারগোই কর্ণফুলী।
এ কুলে দি শহর-বন্দর নগর কত আছে-এ এ
আরেক কুলত সবুজ গায়ঁওর মাথাত সোনালী ধান হাসে।
এছাড়া বান্ডেল রোডে ঢুকলে পুরাতন ঢাকার সাথে কিছুটা মিল পেয়েও যেতে পারেন। তারপর এদের পাশেই আছে লালদীঘি (যদিও এর পানি লাল নয়), এরপাশেই চির নিদ্রায় শায়িত আছেন কয়েকজন বড় আউলিয়া হযরত শাহ আমানত ও হযরত বদর শাহ (রহঃ) । এখানে দাড়িয়ে একটু মাথাটা ঘুরিয়ে চট্টগ্রাম কেন্দ্রিয় কারাগারটা দেখে নিতে পারেন। তারপর ওখান থেকে একটু উত্তর দিকে গেলে পাবেন চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারি কাপড়ের বাজার টেরি বাজার । টেরী বাজার ছেড়ে আর একটু সামনে হেটে গেলে পাবেন আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদ। যা মোঘল আমলে শায়েস্তা খানের দানে নির্মিত। এরপর সোজা সিরাজদ্দৌলা রোড ধরে চলে যান সামনে পেয়ে যাবেন বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন নকশাদার মসজিদ চন্দনপুরা জামে মসজিদ। ওখান থেকে আবার আণ্দরকিল্লার মোড় এসে সামনে বামে গেলে পাবেন চেরাগী পাহাড়। যেখান থেকে আউলিয়া বদর শাহ (রহঃ) চাটি ( বাতি) জ্বালিয়ে জ্বীনদের চট্টগ্রাম ছাড়া করেছেন। ওখানে দাড়িয়ে পিছনে ঘুরলে পাবেন কদম মোবারক এতিম খানা। এখানে হযরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়ের ছাপ ওয়ালা দুটি পাথর আছে। দেখে নিতে পারেন। এবার কদম মোবারক এতিম খানা থেকে বের হয়ে সোজা পশ্চিমে চলে যান । চার রাস্তার মাথায় চলে আসুন দেখবেন রাস্তার ওপারে বৌদ্ধ মন্দির। এবার বামে ঘুরুন পেয়ে যাবেন আমাদের দুখু মিয়াকে। হ্যা এবার আপনি এসেছেন কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতি ধন্য ডি সি হিলে। এখানে চাইলে জিরিয়ে নিতে পারেন গাইতে পারেন আপনার প্রিয় নজরুলের কোন গান।
আজকে এই পর্যন্ত যথেষ্ট হেটেছেন এবার হোটেলে ফিরে চলুন।
বিশ্রাম ও খাওয়া-দাওয়ার পর এবার চলুন অন্যদিকে যাই ।
রিক্সা নিন এবার আপনারা চলুন সি আর বি সাত রাস্তার মোড়। এখানে দেখবেন প্রকৃতির কত সুন্দর রুপ। এটা রেলওয়ের হেড অফিস ।পুরানো দিনের বাষ্পিয় ইন্জিনের ছোট একটা মডেল দেখতে পাবেন। এখানে ঘুরে ফিরে একটু ভিতরে ঢুকুন। ওখানকার স্থানিয় লোকদের থেকে জেনে নিন কছ্ছপ বাড়ি বা হাতি বাড়িটা কোন জায়গায়? দেখে আসুন। ওখান কার প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। এরপর চিটাগাং ক্লাবের সামনে দিয়ে নেমে জিয়া যাদুঘর দেখে নিতে পারেন । এখানেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক কালো রাতে আতাতয়ীর দ্বারা নৃশংস ভাবে নিহত হন। এবার ওখান থেকে চলে যান লালখান বাজার ইষ্পাহানী মোড়। ওখানে স্থানিয় লোকদের থেকে জেনে নিন জিলাপী পাহাড়টা কোন দিকে। পাহাড়ে উঠে দেখুন পৃথিবীর কোথাও এমন পাহাড় আছে কিনা।
আমি বলবঃ এরকম পাহাড় থাকলেও থাকতে পারে না থাকলেও কেইবা বলতে পারে।
ওখানে একেবারে উপরে উঠে যান। উঠার পর দেখবেন সুন্দর একটা খোলা মেলা জায়গা। এখানে দু-র দিগন্তে তাকিয়ে দেখুন সাগর আর প্রকৃতির মনলোভা রুপ। এরপর কাউকে জিগ্গাসা করুন এখান থেকে বাটালী পাহাড় কি করে যাব। যাওয়ার রাস্তা কেউ দেখিয়ে দিলেত ভাল না দিলে আপনি নিজেই চেষ্টা করুন । দেখুনত পাহাড়ের পিছন দিক দিয়ে কোন সিড়ি নেমে গেছে কিনা।
পেয়েছেন ?
হ্যা এইবার এই সিড়ি দিয়ে নেমে পড়ুন। নামার পর বামে রাস্তা গেছে ওটা পরিহার করুন। সোজা যেয়ে ডানে যান পেয়ে যাবেন বাটালী পাহাড়। খুব কষ্ট হবে উঠতে তবে.......... উঠার পর দুর দিগন্তে সাগরের কায়া দেখে সব ভুলে যাবেন মুছে যাবে সব ক্লান্তি ।
এরপর নেমে পড়ুন নেমে রিক্সা নিয়ে সোজা আমবাগান রেলওয়ে যাদুঘরে চলে যান। যাদুঘর আর এর আশেপাশের প্রকৃতি দেখে আপনার নিজের অজান্তে মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসবে ঃকি অপরুপ আমার বাংলা মায়ের কোল।
এবার ওখান থেকে রিক্সা নিন । রিক্সাওয়ালাকে ফয়েজ লেক যাওয়ার জন্য বলবেন। চলতে থাকুন তবে উঠার আগে রিক্সাওয়ালাকে বলে রাখুন ৭১ এর বধ্য ভূমিটা একটু দেখানোর জন্য। ফয়েজ লেক যাওয়ার পথে চক্ষু হাসপাতালের একটু আগেই দেখবেন হাতের ডান দিকে অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে ৭১ এর বধ্যভূমি।
এরপর ফয়েজলেকে চলুন। যদিও এই ফয়েজ লেক দেখে কতটুকু তৃপ্তি পাবেন বলা মুশকিল। আগের সেই লেক আর নাই। আগে এই লেকের ছিল পাহাড়ী কন্যার বন্যরূপ আর এখন শহুরে ম্যাডামের মেকাপে ঢাকা তিলোত্তমা সুন্দরী ফয়েজ লেক। লেকে ঢুকার আগে চিড়িয়াখানা আছে সময় থাকলে দেখে নিয়েন। এরপর রিক্সা নিয়ে চলে যান ষোল শহর দুই নম্বর গেট চার রাস্তার মোড়ে দেখতে পাবেন স্বাধিনতার চিহ্ন। এখানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংগালী সাহসী সৈনিকেরা প্রথম স্বাধিনতার পক্ষে বিদ্রোহ করে। এর অপর পাড়েই পাবেন বিপ্লব উদ্যান। এখানে বিকাল চারটার পর প্রবেশধিকার পাওয়া যায়। এখানে আছে শেখ ফরিদের চশমা পাহাড় দেখতে পারেন। ওখান থেকে এবার সোজা চলে যান বায়েজিদ বোস্তামের ওখানে এখানে পুকুরে দেখতে পাবেন বড় বড় কছ্ছপ। এদের নাম গজারি। মনে রাখবেন এটা আদতে বায়েজিদ বোস্তামি (রঃ) মাজার নয়। এখানে উনি এসে কিছুদিন অবস্থান করে ছিলেন। তখন কিছু জ্বীন উনাকে বিরক্ত করেছিল তাই তিনি ওদেরকে কছ্ছপ বানিয়ে এই পুকুরে বন্দি করে রেখেছেন। এবার আসুন জি ই সির মোড়। চট্টগ্রামের মাম-ড্যাড ছেলে-মেয়ের আড্ডা এখানেই হয়। যারা আমেরিকা বা ইউরোপে বৃষ্টি হলে বাংলাদেশে ছাতি ধরে। এখানে ভাল ভাল কয়েকটা মার্কেট আছে দেখে নিতে পারেন ।
এখন চলে আসুন ওয়াসার মোড়। এখানে পাবেন চট্টগ্রামের জাতিয় মসজিদ জমিয়তুল ফালাহ। এখানে পারলে সন্ধ্যার পর আসুন। মসজিদের পিছনে মাঠের সাথে লাগোয়া সিড়িতে বসলে রাতের এগারটার আগে উঠতে মন চাইবে না।
ঝিরি ঝিরি বাতাসে মনটা হয়ে যাবে উড়ু উড়ু।
মুছে যাবে সব ক্লান্তি।
মনে পড়ে যাবে ফেলে আসা করো কথা,
বুকে বাম পাশে অনুভব হবে হয়ত চিনচিনে ব্যাথা।
মনে রাখবেন পতেংগা সি-বিচে যাবেন দুপুর তিনটার পর। সন্ধ্যার পর যাবেন নেভালে একাডেমির সাগর পাড়ে। এই দুটিই কাছাকাছি । এছাড়া ওয়ারসেমট্রি আছে ওখানে যেতে পারেন খুব সুন্দর জায়গা। এছাড়া অবশ্যই যাবেন আগ্রাবাদ বাদামতলীর মোড় নেমে সোজা পূর্ব দিকে ।সেখানে জাতিতাত্বিক যাদুঘর যা না দেখলে চরম ভাবে মিস করবেন। এই আগ্রাবাদে আছে ঢেবা দীঘি । স্থানিয়দের বললে দেখিয়ে দিবে। দেখে নিয়েন ভাল লাগবে। এরপর যেতে পারেন কর্নফুলি নতুন ব্রিজ। যদিও এখানে মানুষের ভিড় ভাট্টা একিটু বেশি।
আপাতত এই হল আমাদের চট্টগাম শহরের ভিতরের দর্শনীয় স্থানসমূহ।
কোথায় খাবেন।
--------------
খাওয়ার ব্যাপারে এই শহরে ঢাকার মত তেমন সুবিধা পাবেন না। লালদিঘীর কাছাকাছি সোনালী হোটেল আছে। চকবাজার কাজেম আলী স্কুলের সামনে মাজারের পাশে একটা হোটেল আছে সেখানে গরুর গোশতের জন্য সেরা। তবে যেতে হবে দুপুর বারটার আগে। জিই সির মোড়ে ভাল কয়েকটা খাবার হোটেল আছে।সার্কিট হাউসের সামনে কয়েকটা কাবাবের দোকান আছে চেখে দেখতে পারেন।
চট্টগ্রামে আসার জন্য আপনাকে স্বাগতম।
ও ভাই আঁরা চাটগাইয়া নওজোয়ান দইজ্জার কুলত বসত করি ,
আঁরা সিনা দি ঠেকাই ঝড় তুয়ান।