ঘটনার শুরু ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামাত জয়ী হবার মধ্য দিয়ে। রাতারাতি গ্রামের আত্মীয়-স্বজন হয়ে ওঠে খুনে লুটেরা। আওয়ামীপন্থী হওয়ায় দিনে দুপুরে বাড়িটি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। চালের কল পুড়িয়ে দেয়া হয়। উচ্ছেদ হতে হয় বাপ দাদার ভিটে মাটি থেকে। সুযোগ সন্ধানী এক আত্মীয় পানির দরে কিনে নেয় জমি ও বাগান।
না এসব ঘটনা সেই মুক্তিযোদ্ধার সাথে হয়নি। হয়েছে তার ছোট ভাই রতনের পরিবারের সাথে। বাড়ি ভোলা জেলার তজুমদ্দিন থানার কাজী কান্দী গ্রামে। তিন ভাইর মধ্যে এম.এ.রশিদ মিঞা বড়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন ১৯৮৪ সালে। ঢাকায় স্থিত হবার সুযোগ থাকলেও চলে যান গ্রামের বাড়ি। উদ্দেশ্য গ্রামের মানুষের সাথে মিলেমিশে কাটাবেন বাকীটা জীবন। কিন্তু নিয়তী বড়ই প্রতারক। কিংবা মানুষের খোলসে বসবাস করা মানুষগুলো হয়ে গেছে হায়েনার অধম। বাড়িতে টিকতে পারেননি চতুর্মুখী ষড়যন্ত্রের কারণে। আবারও চাকরী নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যান। ২০০১ সালের ওই ঘটনার পর গ্রামে ফিরে আসেন। ছোট ভাইর ঘর তুলে দেন। গ্রামের লোকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে ঘটনার মিটমাটও করিয়ে দেন।
এর কিছুদিন পর স্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরে আসেন। তার ভাবনা ছিল তিনি গ্রামে থাকলে হয়তো ছোট ভাইর এমন সর্বনাশ হতো না। কিন্তু না, রাজনীতি যেখানে পঁচিয়ে ফেলেছে পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা সেখানে একজন নির্দলীয় মুক্তিযোদ্ধা কতটুকুই বা সম্মান প্রত্যাশা করতে পারে?
২০০৯ সালে লীগ ক্ষমতায় এলে ছোটভাইর ঘর তুলে দেবার জন্য হামলাকারীদের মাথা প্রতি টাকা ধার্য করে দেয়া হয়। কেউ কেউ টাকা দিলেও অনেকেই টাকা দেয়নি। এই টাকা ধার্য প্রক্রিয়ায় গ্রাম্য সালিশের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা এম.এ.রশিদও ছিলেন। তাই তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে স্থানীয় বি.এন.পির ক্যাডাররা। এরই এক পর্যায়ে তার ছোট ভাইর বড় ছেলে জুয়েলকে প্রচন্ড মারধর করে। তাদের মারধর এবং শারীরিক অসুস্থতায় রতনের আরেক ছেলে মাকসুদ মারা যায় কিছুদিন আগে। তবু থেমে থাকেনি বিএনপি ক্যাডারদের হীন চক্রান্ত।
এক ভাইর ফ্যামিলি ধ্বংস করায় সফল হবার পর এবার হাত বাড়ায় বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা এম.এ. রশিদ মিঞার ফ্যামিলিকে ধ্বংস করার চক্রান্তে। বন্ধু সেজে বিএনপি ক্যাডার কাশেম রশিদ মিঞার ছেলে পিন্টুকে তাস খেলার জন্য নিয়ে যায় এক বাড়িতে। সেখানে তাকে কৌশলে বেঁধে বেদম মারধর করে। ছিনিয়ে নেয় টাকা আর মোবাইল। এতেই শেষ হয়নি, আরেক মহিলার সাথে জড়িয়ে প্রচার করে মুখরোচক গল্প। মারাত্মক আহত পিন্টুকে গ্রামবাসীর সহায়তায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতাদের শরণাপন্ন হলে তারা মামলা করার পরামর্শ দেয়। মামলা করা হলে শুরু হয় নতুন মাত্রার কৌশল। এবার তারা বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই তাকে বলা হয়েছে ছোটভাইকে যেভাবে সর্বশান্ত করা হয়েছে তোমাকেও সেভাবে স্বর্বশান্ত করা হবে। অথচ দলীয় কর্মী না হওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী নেতৃবৃন্দও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এই মুক্তিযোদ্ধা ফ্যামিলি থেকে। স্থানীয়রা বলছে, বিএনপির এই ক্যাডারদের গোপনে শেল্টার দিচ্ছে লীগ। কারণ এরা দলছুট। স্থানীয় বিএনপির কোন্দল জিইয়ে রাখতে তাই লীগের এই কৌশল।
ঘটনাটি নিয়ে কয়েকটি পত্রিকার সাংবাদিকের সাথে আলাপ করা হয়েছে। তারা আশ্বাস দিয়েও শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে নিশ্চুপ থেকেছেন। তারা হয়তো জানেন, মুক্তিযোদ্ধারা যত তাড়াতাড়ি এ দেশ থেকে নিশ্চিহ্ন হবে দেশ তত তাড়াতাড়ি পাপ মুক্ত হবে। নইলে একজন আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধার ফ্যামিলির এমন বিপদেও কেন এগিয়ে আসবে না তারা! নাকি তার দলীয় পরিচয় নেই বলে সে আদতেই মুক্তিযোদ্ধা নয় ?
ধন্যবাদ হে চেতনাব্যবসায়ী গণ! আপনারা নিশ্চিন্ত থাকুন, এই মুক্তিযোদ্ধা আপনাদের কাছে হাত পাতবে না। আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চস্বরে বলবে না ‘আমি বিপদগ্রস্থ আমাকে উদ্ধার কর’। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস ঘাতকের বুলেট যাকে খুঁজে বেড়িয়েছে বারবার। যার রক্তাক্ত হাত ধরে বাংলার আকাশে উড়েছে স্বাধীন স্বদেশের পতাকা। সে হয়তো হারিয়ে যাবে এভাবেই নীরবে নিভৃতে। তবু আমি জানি, যাবার আগে আপনাদের এই জঘন্য মুখে অবশ্যই একদলা থুথু নিক্ষেপ করে বলবেন, ‘এই দেশ এখন তোদের মত পশুদের নিরাপদ আবাস। এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি চলে যাব ততই মঙ্গল।’
হ্যাঁ মুক্তিযোদ্ধার ছেলে যেদিন আক্রান্ত হয়েছেন তার আগের দিনই চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয়ী হয়েছে বিএনপি। সামনের নির্বাচনের ফল এখনই বলে দেয়া যায়। বলে দেয়া যায়, আরেকটি গণহত্যার জন্য শুধুই নির্বাচনের অপেক্ষা। তারপরই পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় হত্যাৎসবে মেতে উঠবে কিছু হায়েনা। যার অধিকাংশের শিকারই হবে নিরীহ নির্দলীয় লোকজন।