somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেটা আর মেয়েটা

০৩ রা জুলাই, ২০১০ রাত ১২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মুষলধারে বৃষ্টি ঝরছে। সাথে দমকা হাওয়া। সন্ধ্যা নামছে । কেমন যেন ঘোরলাগা একটা অন্ধকার। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বর্ষা। দমকা বাতাসে বৃষ্টির ছাঁট এসে লাগছে ওর মুখে,শরীরে। নামটি 'বর্ষা' বলেই কিনা কে জানে বৃষ্টিটা ওকে অনেক বেশি টানে। ছোটবেলায় প্রায়ই স্বপ্ন দেখতো বৃষ্টিতে ভিজছে, একা একাই।

ক্লাস এইটে ,ফার্স্ট টার্ম পরীক্ষার পর গ্রীষ্মকালীন ছুটি। ছুটি কাটিয়ে প্রথমদিন ক্লাসে ঢুকে নতুন একটি মুখ দেখতে পায় ও। হালকা-পাতলা , ফর্সা মতন বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার এক কিশোর। নাম নিলয়। ব্যাগটা রেখে তৃণার পাশে বসতে না বসতেই তৃণা জিজ্ঞেস করলো , নতুন ছেলেটাকে দেখেছিস?
হুম, দেখলাম তো ।
দেখে মনে হচ্ছে খুব অহঙ্কারী হবে।
কেন? তোর এরকম মনে হলো কেন? কাউকে প্রথম দেখেই এরকম ধারণা করাটা ঠিক না।
ধারণাটা এমনি এমনি আসেনি। দেখছিস না, কারো সাথে কথা বলছে না খুব একটা।
প্রথম দিন। সেজন্যই হয়ত। পরে দেখিস ঠিক হয়ে যাবে।
মেয়েদের সাথে না হোক, ছেলেদের সাথে তো কথা বলবে। তাও তো বলতে দেখছি না।
হয়ত কম কথা বলে। এখন গবেষণা বাদ দে তো। কে কি রকম , একদিন দেখেই কিভাবে বুঝবি?
নিলয় প্রসঙ্গে আলোচনা আপাতত সেদিন ঐ পর্যন্তই থাকে।

সময় পেরিয়ে যায়। একসময় নিলয় ক্লাসের সবার খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। সেই সাথে বর্ষারও। কিন্তু বর্ষার সাথে বন্ধুত্বতা যেন একটু বেশিই ছিল। খুব সহজেই মানুষকে আপন করে নেওয়ার মত একটা চমৎকার গুন ছিল বর্ষার। তাই বর্ষা আর নিলয়ের বন্ধুত্বতাটা গভীর হতে খুব বেশি সময় লাগে না।

স্কুলজীবন শেষ হয় একসময়। নিলয়, বর্ষা, তৃণারা ভর্তি হয় একই কলেজে , একসাথে। আর বাকীরা অনেকেই চলে যায় শহরের অন্য কলেজে কিংবা অন্য শহরে। এরই মধ্যে নিলয় আর বর্ষার বন্ধুত্বতাটা আরো গভীর হয়। নিলয় তার জীবনের বেশ কিছু কষ্টের কথা শেয়ার করে বর্ষার সাথে যা সে কখনোই কাউকে বলেনি। ছেলেটার প্রতি বর্ষার মনে অন্যরকম এক মায়া জন্মায়। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে, ও যেন সারাজীবন নিলয়ের পাশে থাকতে পারে। বর্ষার স্বপ্নে পরিবর্তন আসে। স্বপ্নে সে আর একা বৃষ্টিতে ভেজে না। ওর সাথে বৃষ্টিতে ভেজার সঙ্গী হয় নিলয়। একদিন বর্ষা নিলয়কে ওর স্বপ্নের কথা বলে। নিলয় কিছু বলে না। স্বপ্নের কথা শুনে শুধু মিটিমিটি হাসে। একদিন ঝুম বৃষ্টিতে নিলয় ওকে চমকে দিয়ে বলে, "চলো , আজকে তোমার স্বপ্নটা সত্যি করে দেই।" বলেই হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যায় ওকে বৃষ্টির মাঝে। মন ভরে ওরা দুজন একসাথে বৃষ্টিতে ভেজে।

কলেজ পেরিয়ে সময় হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে পা বাড়ানোর। এবার আর ওদের একসাথে থাকা হয় না। ভর্তির সুবাদে দুইজন দুই জেলায় , পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
দুজন একেবারেই আলাদা দুটি শহরে। তৃণা বর্ষাকে বলে , শুনেছি চোখের আড়াল হলে নাকি মনেরও আড়াল হয়। দেখিস, নিলয় যেন আবার মনের আড়ালে না চলে যায়।
বর্ষা হেসেই উড়িয়ে দেয়।
দুইজনের চোখের দেখা না থাকলেও ফোন , ফেসবুকের মাধ্যমে ঠিকই নিয়মিত যোগাযোগ হত। এক সময় ওদের দুজনেরই নতুন আরো বন্ধু হয়। তারপরও ওরা একে অন্যকে ভোলে না।
সময় পেরোয়। একদিন বর্ষা ফেসবুকে নিলয়ের প্রোফাইলে ওর নতুন বন্ধুদের কিছু ছবি দেখতে পায়। ছবিতে মজার মজার মন্তব্যগুলো খুব উপভোগ করছিল। হঠাৎ একটা ছবিতে ওর চোখ আটকে যায়। নিলয় আর তমা নামের একটি মেয়ে- যুগল ছবি। বর্ষা যথেষ্ট উদারমনা। ছবিটি তার মনে কোনওরকম দ্বিধার জন্ম দেয়নি যতক্ষণ না ও ছবির নিচের মন্তব্যগুলো পড়ছিল।
এরকম আরো বেশ কিছু ছবি আর মন্তব্য পড়ে ওর মনে সংশয় জড়ো হয়। একদিন নিলয়কে জিজ্ঞেস করে তমার কথা। নিলয় হেসে উড়িয়ে দেয়। বলে, ধুর ! উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস। নাথিং এলস্‌। আর বন্ধুরা ওসব ফান করেই লিখেছে। এত সিরিয়াসলি নিচ্ছ কেন?
তবু বর্ষার সংশয় কাটে না। ফান রিয়েলিটিতে পরিণত হতে কতক্ষণ। তারপরও মনকে বোঝায়, হয়ত আসলেই ফান। দূরে সরিয়ে রাখতে চায় আজেবাজে ভাবনাগুলো। কিন্তু পারে না।
দিন যায়। আবারও সংশয় দেখা দেয়। এবার আর নিলয় এড়াতে পারে না। বর্ষার প্রশ্নের কোনও উত্তরও দেয় না। নিলয়ের নীরবতায় বর্ষা বুঝে নেয় যা বোঝার। আরও নিশ্চিত হয় নিলয়ের ফেসবুক স্ট্যাটাসে তমার মন্তব্য আর ওয়ালের লেখাগুলো দেখে।
বর্ষা বুঝতে পারে নিলয়ের জীবনে ওর প্রয়োজন ফুরিয়ে এসেছে। ওর সুখ-দুঃখ শেয়ার করার জন্য এখন অন্য কেউ আছে। বৃষ্টিতে ভেজার সময় নিলয়ের সঙ্গীর স্থানটি বর্ষার পরিবর্তে এখন শুধুই তমার জন্য। ও কি জেলাস ফিল করছে? নাহ্‌ । তা হবে কেন? নিলয় যদি তমার সাথেই সুখী হয় তবে তাই হোক। নিলয়ের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেয় নিজেকে।

আজ আবারো একটি বৃষ্টিমুখর সন্ধ্যা। নিলয় কি ভিজছে এই বৃষ্টিতে?- নিজের মনেই প্রশ্ন করে বর্ষা। বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে ওর কি মনে পড়ে বর্ষাকে? হয়ত পড়ে , হয়তবা পড়ে না। কে জানে ......
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৪২
৪৫টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×