somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুজুর মানুষের প্রেম ! অপ্রত্যাশীত ফিরে আসা।

০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ছবি গুগল)

ক্লাশ থ্রি থেকে বাবা মাদরাসায় দিয়ে আসল। অন্য এক জগত আমার চোখের সামনে। শেষ রাতে দরজায় ঠক ঠক আওয়াজে ঘুম থেকে জাগতে হয়। তিনবার আওয়াজ দেয়ার পর কেউ না উঠলে লম্বা মিষ্টির নাস্তা খেয়ে ইরে বাবারে বলে ঘুম ছাড়তে হয়। হুজুরের শাসন,নিয়ম মাফিক চলা আর বাবার অদম্য ইচ্ছা ও কঠোরতায় এক সময় অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম। মা-বাবা,খেলার সাথী- সব বিদায় দিয়ে ১০-১২ বছর বয়সেই প্রবাসি জীবন শুরু। বাবার প্রথম প্রত্যাশা পূরণ হলো আমি যখন ১৫বছর বয়সে হাফেজ হলাম। হেফয খানার বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পাব বলে মনে আনন্দ,মুখে হাসি রেখা আর ফুড়োয় না। যথারীতি মাদরাসায় ইসলামি জলসা করে সম্মানের পাগড়ি পরিধান করিয়ে মাঠে পরিচয় করিয়ে দিল উপস্থিত মাওলানা সাহেব ও এলাকার গণ্য মান্য ব্যক্তিরা। এবার পুরো সমাজটাই যেন আমার হেফয খানা হয়ে গেল। যেখানে যাই সবাই 'হাফেয সাব কেমন আছেন' ? জিজ্ঞাসা করে। কালে ভদ্রে আগে কখন খালি মাথায় দোকান টোকানে গেলেও কেউ কিছু বলত না, এখন সেটা অপরাধে পরিণত হলো। আমিও চুল বড় রেখে ''সুন্নাত বাবড়ি'' রাখলাম। এক ঢিলে দু পাখি-ছোয়াবও হলো চুল বড় রাখার শখটাও পূরণ হলো। বাধ সাধলো শালার জে,এম, বি-রা। সবাই ভয়ে অস্থির,এলাকার লোকজন বড় বড় চোখে তাকায়। বাজারে গেলে ব্যস্ত লোকেরা কাজ ফেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । কারণ আবিস্কার করলাম আমার মাথার লম্বা কেশ সবাইকে 'জে এম বি ' ফোবিয়ায় ফেলেছে। শংকরের সেলুনে বিসর্জন দিলাম আমার মাথার হাফ ফিট চুল মোবারক! মনে একবার ধরছিল 'পীর সাজমু' বিনা চালানের সফল ব্যবসা ! মনকে রেডি করতে পারি নাই।তাই আর পীর হওয়া হলো না।
মার কাছ থেকে আবারো বাবার ইচ্ছা জানলাম- এবার মাওলানা,মুফতি হতে হবে। বাবা শেষ বয়সে এমন দাবী করছে- না মানলে জীবনে কষ্ট আছে মনে করে স্বেচ্ছায় মাদরাসার বন্দিত্ব বরণ করলাম। দীর্ঘ আট বছর। মাদরাসার চার দেয়াল। বড় ভাইদের চোখ রাঙানি আর হুজুরদের কড়া শাসনে দিন যায় রাত আসে, রাত আসলে আর তা সকাল হতে চায় না।
গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরের মাদরাসায় ভর্তি হলাম। বৃহঃবার আসলে অনেকেই বেড়াতে যায়,আমার জানা মতে কোন আত্মিয় ঢাকায় ছিল না তাই একদিন ভাইয়ার ক্যান্টনমেন্টেই বেড়াতে গেলাম।
মেঝ ভাই সাভার ক্যান্টে আর্মিতে চাকরি করে। আমাকে সাথে করে সাভারে এক বাসায় বেড়াতে নিয়ে গেল, রাতে যে ভদ্রলোকের সাথে সাক্ষাত হলো -স্মৃতিতে তার ছবি খুজেঁ পেলাম। সে আমাদের প্রিয় অহেদ কাকা। ছোটতে অনেক আদর করতেন। আমার চাচার বন্ধু ছিল। চাকরির সুবাদে ঢাকায়। অনেক টাকার মালিক। নিজস্ব বাড়ি। সবচেয়ে আশ্চর্য হলাম-ঢাকায় থেকে 'বড়লোকি ভাব'' তার মধ্য না দেখে। আমাদের দেখে সে খুব খুশী হলো। চাচিও বেশ আন্তরিক। এক সাথে রাতের খাবার খেল। আমিতো অবাক! আমার ভয় ভয় ছিল, ঢাকার মানুষ মেহমান দেখলেই বিরক্ত হয় এই ধারণায়। তাও আবার দূ--রাত্মিয়। না, তেমন নয় আমাদের অহেদ কাকা।

এক সাথে খানা খাবার সুবাদে পরিবারের সকলের সঙ্গেই দেখা হলো। খানা খাওয়ার সময় ঠিক আমার সামনে একজন কাছা কাছি বয়সের মেয়েকে দেখলাম। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে খানা খাচ্ছি। মেয়েটি আমাকে তরকারি উঠিয়ে দিল। হাতের ঈশারায় 'না ঠিক আছে,বলে সৌজন্যতা দেখালাম। 'আপনি মেয়ে মানুষ নাকি এত শরম পান কেন ? সবার সামনে সে এভাবে বলে বসল। আমি লজ্জায় আরো মাথা নিচু করলাম। মেয়েদের ব্যাপারে যথেষ্ট কিউরিসিটি আমার ছিলনা- তা নয়। মেয়েদের সাথে আমাদের কোন দিন কথা বলাই হয়ে ওঠেনি। বন্ধু ছিল-কিন্তু বান্ধবি/ মেয়ে ক্লাস মেট? ভাবতেই পাড়িনি। কওমী মাদরাসায় পড়েছি। আমরা যেমন কোন মেয়েদের দিকে তাকানোর সাহস পেতাম না,ঠিক তেমনি মেয়েরাও আমাদের দেখলে এমন ভাবে নিজেদের জড়-সর করে গুটিয়ে নিত যেন আমরা ভিন্ন গ্রহের কোন এক বাসিন্দা।
পরের দিন গেষ্ট রুমে প্রবেশ করে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দিল-ভাইয়া আমার নাম লাভলি,আপনার নাম কি ? সুমন,উত্তর দিয়ে চুপ করে বসে আছি। নীরবতা ভেঙে ও আমার সাথে ফ্রি হতে সাহায্য করলো। আমি ওর সাথে আস্তে আস্তে বিকেলের মধ্যেই অনেক ফ্রি হলাম। ও আমাকে অনেক আপন করে নিল। ক্লাস নাইনে পড়ে,স্কুল সম্পর্কে আমি অনেক কিছুই ওর কাছে থেকে জানলাম। ওর অনেক ছেলে বন্ধু আছে জেনে অবাক হলাম ! বলে কি ? পরে জানলাম,স্কুল-কলেজে এটা এমন কোন ব্যাপারই না।
ওর সাথে বেশ খাতির জমে উঠলো আমার। এর পর অনেক বার ওদের বাসায় গেলাম বলতে গেলে ওর জন্যই। লাভলির ব্যবহারে আমি ওকে কখন যেন ভাল বেশে ফেললাম। অফিস থেকে আমাকে ডাকা হলো,মাদরাসায় আমার ফোন এসেছে,আমার তো অবস্থা খারাপ, না জানি বড় হুজুর কী বলে ? ফোনে কথা বললাম- ভাইয়া আজ বাসায় বেড়াতে আসেন-লাভলির কন্ঠে, আমি শুধু বললাম ঠিক আছে। গেলাম।
-লাভলি সেদিন আমাকে একা পেয়ে বলে ফেলল-ভাইয়া আমি আপনাকে খুব পছন্দ করি।
-আমি বিব্রত হলাম। বললাম তো কী হয়েছে ?
--ও থেমে গেল।
এখন ওর সাথে আমার তুই আমি সম্পর্ক। আমি একটু আগ বাড়িয়ে বললাম
--লাভলি তোকে আমি খুব পছন্দ করি,খুউব ভালবাসি ঠিক আমার ছোট বোনটির মতই। তোকে কেন যেন আমার আপন বোনের মতই ভাল লাগে।
এ কথাগুলো বলার পর ও একেবারে চুপ হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর নীরবতা ভেঙে বলল,
--ভাইয়া আমার বড় কোন ভাই নেই তাই তার মর্যাদাও বুঝিনি। সত্যিই আজ আমার খুব ভাল লাগছে। আমিও আপনাকে আপন ভাইয়ের স্থানেই রাখলাম।
এভাবেই চলছিল আমার মাদরাসার বাইরের জগত।
কোন এক বৃহঃবার লাভলিদের বাসায় বেড়াতে যেয়ে দেখলাম কোথা থেকে যেন ওদের মেহমান এসেছে।
লাভলি আজ একটু ওদের নিয়ে ব্যাস্ত। শুক্রবার সকালে মেহমানরা বেড়াতে যাবে সঙ্গে লাভলিও। ওর চাওয়ায় আমিও তাদের সফর সঙ্গী।
শহীদ মিনারের সামনে হাটছি,আমি, লাভলি আর ওদের মেহমান। হাটতে হাটতেই পরিচয় করিয়ে দিল-এ 'মাহমুদা' আমাদের দেশের বাড়ির এলাকার আত্মিয়। আমার বড় ভাই সুমন। বোরকা পড়ায় মাহমুদাকে শুধু আপাদ মস্তকে একজন, দেখলাম। কথা হলো না। বাসায় আসলাম নামাযের আগেই।
দুপুরে এক সাথে খাওয়ার সুবাদে মাহমুদার সামনের চেয়ারে বসার সুযোগ হলো, খাওয়ার এক ফাকে মাহমুদার দিকে চোখ পড়তেই আমার কলিজা ধড়ফড় করে উঠলো । আল্লাহ ! এত সুন্দর চেহারা করে দুনিয়ায় মানুষ বানিয়েছে। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। জ্ঞান-বুদ্ধি লোপ পাওয়ার জো'। আমি খেতে পারছি না। গলায় আটকে যাচ্ছে। ক্ষুধা যেন নিমিষেই উড়ে গেল। খাওয়ার অভিনয় করে সময় নিলাম আর সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাহমুদার সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে থাকলাম। আমি যেন পরিতৃপ্তির এক মহা অমৃত স্বাদের শরবত পান করছি। খাওয়া শেষ করে উঠে পড়লাম। আগ বাড়িয়ে কথা বলার সুযোগ নিলাম। সুন্দরি হিসেবে কোন অহংকার দেখালো না। পরিচয় জেনে আমি আরো বিস্মিত হলাম। আমার এলাকাতেই তাদের বাড়ি। আলিয়া মাদরাসায় ৮ম শ্রেণীতে পরে। ঢাকায় পরীক্ষার ছুটি কাটাতে এসেছে। কালই ফেরার কথা।
বিকেলেই আমার মাদরসায় ফেরার কথা থাকলেও আমি সন্ধ্যা নাগাদ লাভলিদের বাসায় থাকলাম। মাহমুদার ছোট ভাইকে লিচু কিনে দিয়ে ভাব জমালাম। ওপাশ থেকে বলল-জনাব আমারটা কোথায় ? কথাটা নিজের কাছে অনেক আপন মনে হলো, আরো কয়েকটি লিচু দোকান থেকে কিনে মাহমুদাকে দিলাম। ও আমাকে ধন্যবাদ জানাতে কৃপণতা করলো না। বাকি সময় কথা হলো অনেক। ঠিকানা লিখে নিলাম। তখনও সবার হাতে মোবাইল নেই,ওর বাবার আছে নাংটা নিলাম। কেমন যেন আন্তরিকতা ওর মধ্যও খুজে পেলাম।

মাদরাসায় এসে কিতাবাদিতে আর চোখ বসে না। ক্লাশে উস্তাদ কী যেন বলে আমি বুঝতে পারি না। কিতাবের পৃষ্টায় পৃষ্টায় যেন শুধু মাহমুদার ছবি দেখি। কোথাও কোন স্বস্তি পাচ্ছিলাম না। এভাবে ১ মাস পার হলো,বাড়ি গেলাম। একদিন পর সোজা ওদের এলাকা। গাইবান্ধা ! পূর্ব পরিচিত নয়। জানতাম ষ্টেশন মাদরাসায় পড়ে। ছুটির অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় স্টেশন,গাছের নিচে,রাস্তায় ঘুরা ঘুরি করে পার করলাম। ছুটি হলো- মনে হচ্ছে বুকের ভিতর কে যেন হাতুরি দ্বারা পিটাচ্ছে। এই তো এখন মাহমুদা বের হবে। আমাকে সময় দিবে। আমি নয়ন ভরে দেখব। পিপাসা মিটাবো। শত শত ছাত্র বের হলো। ভিরের মাঝে আমি শুধু খুঁজি মাহমুদাকে। এক সময় বের হলো, বোরকার ভিতরে থাকলেও আমি তাঁকে চিনতে ভুল করলাম না। কিন্তু একি, হায় ! সেই মাহমুদা আমাকে দেখল- ছালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কেমন আছেন ? এর পর উত্তরের অপেক্ষা না করে রিকসায় চেপে বসলো। আমি হতাশ! চূড়ান্ত হতাশা নিয়ে বসে পড়লাম। চোখে জোনাকি সরে গেলে উঠে দাড়ালাম। ৭০ কি,মি রাস্তা যার জন্য পাড়ি দিলাম,যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখলাম সে এভাবে চলে গেল। এর পর আবারো ২মাস পর আসলাম। আমি তাঁকে ভুলতে পারছি না। কোন ক্রমেই না। এভাবে এক বছরে ৭-৮বার তার কাছে যাওয়ার চেষ্টা করলাম শত কষ্ট করে। ছাত্র বয়সে টাকা সময় নষ্ট করে দাড়িয়ে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। শেষে হতাশা নিয়েই এক বছর পার করলাম। তাকে কোন কিছুতেই ভুলতে পারলাম না। গাইবান্ধার অনেকের সঙ্গেই পরিচয় হলো। অনেকেই মাহমুদাকে চেনে। অনেক ছেলে তার সঙ্গে প্রেম করে,মাহমুদাও তাদের সাথে সময় দেয় এমন অনেক অভিযোগ পেলাম কিন্তু কোন কিছুই ওর মোহ থেকে আমাকে বিন্দু পরিমাণ সরাতে পারলো না।
আমি আসি, যাই, ওর জন্য রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি, সব কিছু করি প্রায় শত কিলোমিটার দূর থেকে এসে তাও আবার যখন ঢাকা থেকে ফিরি।
এক বছর পর আমাকে একদিন সময় দিল। দীর্ঘ দু ঘন্টা। আমি ওকে সাথে নিয়ে বেড়ালাম। গল্প করলাম। যোগাযোগ বৃদ্ধি পেল।
এর মধ্য কওমীতে আমার পড়া শেষ হলো। চাকরি পেলাম।
এবার ও আমার প্রতি আগ্রহী হলো। ৭টাকা মিনিট মোবাইল। ওর সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য ২মাসের বেতন দিয়ে একটা মোবাইল কিনলাম। মিস কল দিত,কথা বলতাম। ৩০০টাকার কার্ড একদিনেই শেষ! তার পরেও তৃপ্তি পেতাম। ওর ডাকে ফরিদপুর চাকরিস্থল থেকে গাইবান্ধা আসতাম। দেখা হতো। কথা হতো। বোরকা পরিহিতই থাকতো। কখনো ওর মায়াবি চেহারাটা দেখা হতো না। তার পরও ভাল লাগতো। পাশা পাশি হাটতাম কোন দিন ছুয়ে দেখতাম না। অনেক কথা বলতাম তবে কোন দিন আমি ওকে বলতে পারলাম না '' আমি তোমাকে ভাল বাসি''। এটা নাকি বলতে হয় পরে শুনেছি। আমি কোন দিন বলিনি। এটা কি বলার কথা ? হৃদয় থেকে উপচে পড়ার জিনিষ আর তা হৃদয় দিয়েই বুঝা যাবে এই বিশ্বাস আমার অন্তরে।

আমি মাহমুদার সব খোজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম ওর পরিবারও দ্বীনি পরিবার। সব মিলিয়ে ১০০ভাগ পারফেক্ট আমার জন্য। যেহেতু আমার পড়া শেষ ছোট একটা চাকুরিও করি বিয়ের বয়সও হয়েছে তাই ছিনেমার ডায়ালগের মত '' আমি তোমাকে ভাল বাসি'' এ কথা বলতে চাইনি। মাহমুদা আমার হলে ওকে বুঝাবো আমি ওকে কত ভালবাসি। কিন্তু সে দিন আমার আর আসে নি। এক ধনাঢ্য পরিবারের উকিল ছেলের সাথে হঠাতই বিয়ে হয়ে গেল মাহমুদার।আমি কাঁদলাম।শুধু কাদলাম। এর পর থেকে কান্না আমার সাথী হলো। মাহমুদা ঢাকা পারি জমালো। আমি সব খোঁজ খবর রাখলাম। আমার মত একজন হুজুর মানুষের সাথে কেনই বা ওর বিয়ে হবে ? এগুলো তো টাকা ওয়ালার ইনজয় করার জন্য। আমার ভাল বাসা বিক্রি হলো ওর স্বামির টাকা দিয়ে।
ঘটনা এখানে শেষ হতে পারতো,হলোনা। ২বছর পর হঠাত মাহমুদার ফোন।মাহমুদা বুঝতে পেরে কাঁদতে লাগলাম। ও আমাকে বুঝালো-ত্যাগেই সুখ। দোয়া করতে বললো। আমি বলার আগে থেকেই ওর জন্য সুখের দোয়া করেছি। কোন দিন অভিসাপ করিনি। আমি যে ওকে ভালবাসি। ওর সুখের জন্যই ওকে ওর বাবা মা বিয়ে দিয়েছে। ভাবি,ও যদি আমার হতো আর অর্থনৈতিক সমস্যায় আমি ওকে সুখ দিতে না পারতাম তবে ওর কতই না কষ্ট হতো। তার চেয়ে বরং আমি দূর থেকে ওর সুখ দেখে আমিও সুখি হবো।
৬মাস পরে আবারো ফোন। বিষন্ন কণ্ঠে মাহমুদা।
--আমাকে একটু হেল্প করতে পারেন ? মাহমুদার কান্নার কন্ঠে আকুতি ঝড়ে পড়লো।
-- কী করতে পারি মাহমুদা তোমার জন্য?
---গাইবান্ধা আসতে হবে।
--এখন সন্ধা ! গাড়ি নেই,ভ্যান ছাড়া।
--আসতেই হবে।
অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে মাকে রাজি করে আমি গাইবান্ধার পথে।
কিন্তু রাত অনেক হওয়ায় আর ওকে পেলাম না। কোথায় থাকবো ?এক মাদরসায় শেষে আশ্রয় নিলাম। সকাল ১০টায় মাহমুদা ফোন করে শহরে দেখা করতে বললে আসলাম।
সব শুনে দেখলাম ওর কষ্ট,হিমু ওকে ফোন দেয় না, আর নাকি ঢাকা নেবে না। শশুর বাড়ি থেকে ৫লাখ টাকা ব্যারিষ্টারি পড়ার জন্য চেয়েছিল দেয়নি তাই সে রাগ। হিমু ভাই ঢাকাতে প্রাকটিস করে ,স্বেচ্ছায় আমি পরিচিত হয়েছিলাম অনেক কৌশল করে।
যেভাবেই হোক সে হিমুর কাছে যেতে চায় আমি যেন তার ইচ্ছা পূরণ করি।
কী করে সম্ভব আমি কোন ওয়ে পাচ্ছিলাম না। ফোন দিয়ে ওয়াজ নসিহত করে তাকে গাইবান্ধা আসতে বাধ্য করলাম। শশুর বাড়ি যাবে না এই শর্তে সে আসলো। পার্কে বসে আমি দু'জনকেই ওয়াজ করলাম। কাজ হলো- রাত ১০'টায় মাহমুদার হাত হিমুর হাতে তুলে দিলাম। মাহমুদাকে নিয়ে হিমু ভাই শশুর বাড়ির দিকে গেল। আমি তাকিয়ে রইলাম-------
এত রাতে আমি আজ আবার কোথায় যাব ?? গাড়ি নেই,রাত তখন ১১টা। আরেকটি মাদরাসায় আমি আশ্রয় নিলাম।
দিন যায় রাত যায় আমি আর মাহমুদার কোন খবর পাই না। ভেবে নিলাম সুখে আছে। আমি বিয়ে করলাম। একটি ছেলে জন্ম নিল। চাকরি থেকে ট্রান্সফার হলো প্রিয়তমার গাইবান্ধায়। ছেলে সন্তান নিয়ে সুখে আছি কিন্তু মাহমুদার স্থান ওর জন্যই মনে হয়ে বরাদ্দ ছিল তাই আর কেউ সে যায়গা নিতে পারে নি।
৫ বছর পর হঠাত সে ফোন করলো,বলল
--আমি একটি জিনিষ চাইব দিবেন?
--তুমি ?
--হ্যা আমি মাহমুদা।
--বল কী ?
--আমি মারা গেলে আপনি জানাযা পড়াবেন এটা আমার একান্ত দাবী।
--কী হয়েছে বলো ।
-- না কিছু হয়নি।
--তোমার তো কোন অভাব নেই মাহমুদা ! ঢাকা শহরে গাড়ি,বাড়ি, যশ প্রতিপত্তি সবই তো তোমাদের আছে। একটি সন্তানও আল্লাহ তোমাকে দিয়েছেন। তোমাদের সমস্যাটা কোথায়?
--আমাকে চমকিয়ে দিয়ে সে বলল--
--আমার সব আছে,শুধু আপনি নেই
--তার মানে ?
--আমি তোমার কে ?
--আপনি আমার কেউ না, তবে আমি এত দিনে বুঝতে পেরেছি আমার জীবনে যে জিনিষটির সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তা--ই ছিল আপনার কাছে। দুঃখিত আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। আর আপনি এমন মানুষ যে আপনি আমাকে কোন দিন বললেন না আপনি আমাকে ভাল বাসেন। মানুষ চাইতেই পায় না আর আপনি না চাইতেই কী করে পাবেন?
--থাক মাহমুদা অতীতের কথা।
ভীষণ কান্না করছে মাহমুদা। আমার কান্নাটা আজ ওর সাথী হয়েছে। আমি ওকে শান্তনা দিলাম। আমার সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলো। সময় সুযোগ মত আসতে বললাম।
ছোটবোনসহ আমার কাছে একদিন হাজির। চা খাওয়ালাম। ও খেল না। ওর বোনকে গাড়িতে উঠতে বললো। কেউ না থাকায় আমি উঠতে চাইলাম। আমার সাথে উঠে দাড়ালো। চুপচাপ বসে ছিল।
কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেদে উঠলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। ও করে কি? আমার পরিচয় এখন প্রতিটি এলাকায়। আমি বড় একজন আলেম ,মসজিদের ইমাম এত বড় গুণার কাজ !? এক ঝটকায় ছাড়িয়ে দিলাম। লজ্জিত মাহমুদা কাতর কন্ঠে বলল আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম। আপনি কিছু মনে করবেন না। আমার ভিতরে কোন পাপ বোধ নেই। শুধু আমার শুন্য এ বুকটি আকাশের ন্যায় উদার বুকের সাথে একবার ছোয়াতে চেয়েছিলাম। হঠাত করে মাহমুদা নিচু হয়ে আমার পা স্পর্শ করে চকিত সে হাত তার মুখে আর কপালে মুছতে শুরু করল। আমি আর পারলাম না। বের হয়ে আসলাম । কান্না লুকিয়ে ও আসলো। গাড়িতে তুলে দিলাম। মহাসড়ক দিয়ে ছুটে চলল,তাকিয়ে থাকলাম। হাজার ভিরের মাঝে হারিয়ে গেল মাহমুদাকে বহন করা গাড়িটি। আমি পাপ বোধ নিয়ে পিছে ফিরে তাকালাম। ওর রেখে যাওয়া চোখের পানি মোছা টিস্যূটি পরে রয়েছে টেবিলের এক পাশে। আমি পরম মমতায় স্বযত্নে রেখেদিলাম অশ্রু জড়ানো টিস্যূটি।










সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ২:১৪
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×