somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা এবং আমার কয়েকটি কথা

২৫ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাইকোর্ট এর রায় হবার পর থেকে সেই পুরাতন বিতর্ক আবার নতুন করে শুরু হয়েছে। ব্লগেও বিভিন্ন মতামতের পোষ্ট আসছে, জমজমাট বিতর্কও হচ্ছে। কেউ বলছেন জিয়াই ঘোষক, কেউ বলছেন জিয়া ঘোষক নন - তিনি পাঠক মাত্র, আবার কেউ কেউ সেদিনের ঘোষনার জন্য মেজর জিয়ার বিচারও দাবী করেছেন। সেই সমস্ত তথ্য জোড়া দিয়ে কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করলাম নিজে নিজে।

৭ই মার্চ এর ভাষন থেকে শুরু করে অনেক কিছুতেই স্বাধীনতার ইঙ্গিত যে ছিল তা নিয়ে কোন তর্ক নাই। তবে শেখ মুজিবুর রহমান প্রকাশ্যে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন এমনটাও কেউ দাবী করেন না। হতে পারে এ সবই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গভীর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় বহন করে অথবা অন্যকিছুও হতে পারে (এটা মূল আলোচনা নয়)। স্বাধীনতার ঘোষনা জাতির কানে পৌঁছে ছিল শেখ মুজিবুর রহমান বন্দি হবার পর। জিয়াউর রহমানের দেয়া ঘোষনা (হতে পারে তা শেখমুজিবুর রহমানের পক্ষে) অধিকাংশ মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পেরেছিল সে সময়।

কাল্পনীক বিচার ১:
এখন দেখা যাক একটা কাল্পনীক বিচার যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিচার করছে ততকালীন পাকিস্তান সরকার। বিচার হচ্ছে ৭১ এর এপ্রিলের শুরুতে, শুতরাং মার্চ মাস পর্যন্ত ঘটনাবলী বিচারে বিবেচ্য বিষয়। এই বিচারে শেখ মুজিবুর রহমান কে বিচ্ছিন্ন বাদী হিসাবে রায় দেয়া যায় কি? সম্ভবতঃ না।

যদিও জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের পক্ষেই ঘোষনা দিয়েছিলেন, তা শেখ মুজিবের নির্দেশে ছিল না, তাই এর জন্য শেখ মুজিব কে দায়ী করা যেত না। আর যদি শেখ মুজিবের নির্দেশে হান্নান সাহেব ঘোষনা দিয়েও থাকেন, তবে তার প্রচার এতো সীমিত ছিল যে এ কথা কেউ জানতই না। তাই বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের জন্য প্রথমেই যাকে শাস্তি দেয়া যেত তিনি হলেন জিয়াউর রহমান।

কাল্পনীক বিচার ২:
শেখ মুজিব বন্দী হবার সপ্তাহ খানেক পর বৈদেশিক চাপে ততকালীন পাকিস্তান সমরিক সরকার গনতন্ত্র মেনে নিল এবং শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধান মন্ত্রী হলেন। শেখ মুজিব যেহেতু বিচ্ছিন্নতাবাদী ছিলেন না, তাই এটও একটা আলোচনার ক্ষেত্র হিসাবেই ধরতে হবে। এরকম ক্ষেত্রে তাঁকে বিচ্ছিন্নতা বাদীদের বিচার করতে হলে, জিয়াউর রহমানের বিচারই করতে হতো সবার আগে, কারন শেখ মুজিব জিয়াকে তাঁর নাম ব্যবহার করে এ রকম ঘোষনা দেওয়ার অনুমতি দিয়ে যান নি।

সব বিবেচনা করে আমি যে সিদ্ধন্তে আসলাম তা হলোঃ

১. জিয়াউর রহমান নিজ উদ্দোগে স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছিলেন (হতে পারে তা শেখ মুজিবের পক্ষে) যা জনতার কাছে পৌঁছে ছিল। এ জন্য তাঁকে কেউ নির্দেশ দেয় নি। এমনকি তিনি যদি কোন ঘোষনা পাঠই করে থাকেন শুধু, তাও তাঁর নিজ উদ্দোগে। তিনিই জনগনের কাছে এরকম একটা ঘোষনা পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছিলেন।

২. যদি শেখ মুজিব কাউকে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়ার কথা বলেও থাকেন (কাকে বলে গিয়েছিলেন তা আমার জানা নাই), তবে তাঁরা মারত্মক রকম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন সে ঘোষনা সময় মত জনগনের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে। অথবা বল যায় স্বাধীনতার ঘোষনা যে জনগনের কাছে পৌঁছানো দরকার এটা তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেন নি।

৩. শেখ মুজিব যদি হান্নান সাহেবকে এই ঘোষনার নির্দেশ দিয়ে থাকেন তবে প্রশ্ন উঠে, জনগনের কাছে অধিক গ্রহনযোগ্য কাউকে তিনি এ দ্বায়ীত্ব দিলেন না কেন? এটা তো শেখ সাহেবের রাজনৈতিক প্রজ্ঞাকে প্রশ্ন বিদ্ধ করে। আমি যেহেতু শেখ মুজিবুর রহমানকে অনেক বড় মাপের নেতা হিসাবে মানি, তাই আমার মনে হয় বিষয়টা এরকম ছিলনা।

৪. শেখ মুজিব যদি হান্নান সাহেবকে নয়, বরং অন্য কোন বড় নেতাকে এই ঘোষনার নির্দেশ দিয়ে গিয়ে থাকেন, তবে বুঝাই যাচ্ছে তাঁরা সে নির্দেশ সঠিক ভাবে পালন করেন নি। সেক্ষত্রে বলতে হয় নির্দেশ থাকার পরও এরকম একটা ঘোষনার প্রয়োজন তাঁরা উপলব্ধি করতে পারেন নি। এটা শেখ মুজিবের নেতৃত্বের প্রতি তাঁদের আস্থার অভাব প্রমান করে।

তাই আমার মতে স্বাধীনতা যুদ্ধের একেবারে শুরুতে জিয়াউর রহমান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন ভূমিকায় ছিলেন। যদিও তাঁর কোন রাজনৈতিক প্রভাব ছিল না, তার পরও তার এই ভূমিকা হয়েছিল মূলতঃ সেই সময়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতার কারনে। পরবর্তিতে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন পুনঃ সংগঠিত হয়েছিল, তখন জিয়াউর রহমানের সেই ভূমিকার আর প্রয়োজন পরেনি, তিনি সৈনিক হিসাবে যথাযত ভূমিকা পালন করেছেন।

তাঁর এ সকল ভূমিকা বাংলাদেশের মানুষের সম্মানের সাথেই স্মরন করা উচিৎ।

একটু আপডেট করার দরকার মনে করছিঃ

বঙ্গবন্ধু ২৬শে মার্চ রাতে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়ার ঘন্টা খানেক পর গ্রেফতার হন। তাঁর এ ঘোষনার লিখিত কোন দলিল থাকার কথা আমার জানা নাই এবং সে ঘোষনা খুব সামান্যই প্রচার পায়। তিনি এ ঘোষনায় স্বাধীনতার ঘোষনা কে প্রচার করার আদেশ দিয়েছিলেন। ততকালীন আওয়ামীলীগের প্রথম সারির নেতারা তাঁর এ আদেশ কতোটা পালন করতে পরেরেছিলেন, সে বিষয়ে আমি তেমন কিছু বলার দরকার মনে করছি না। নতুন যোগকরা তথ্যটুকু আমার এই লিখার সাথে বিরোধ পূর্ন নয় বলেই আমার ধারনা।

সে সময়কার পরিস্থিতি বিবেচনায় পশ্চিমাদের পক্ষে জিয়াউর রহমানের বিচার করার আগ্রহ, শেখ মুজিবুর রহমানের বিচারের চেয়ে অনেক কম থাকতো এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে গুরুত্বপূর্ন কাজ গুরুত্বপূর্ন মানুষের অভাবে সবসময় ফেলে রাখা যায় না, এ সময় কম গুরুত্বপূর্ন কাউকেই এগিয়ে আসতে হয়, কাঁধে তুলে নিতে হয় দায় ভার। জিয়াউর রহমান তাই করেছিলেন সে সময়।


(পাঠকের ভিন্নমত সাদরে গৃহীত হবে। তবে অনুরোধ রইলো উত্তজনা পরিহার করার জন্য)
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুন, ২০০৯ দুপুর ২:৩৫
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×