ওদিকে যেতেই মামার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সামনেই সেবা প্রকাশনীর স্টল। একসময় তিন গোয়েন্দা আর ওয়েস্টার্নের কী ভক্ত ছিলেন সেই কথা ভাবতে ভাবতে দাঁড়ালেন স্টলের সামনে। চারদিকে কিশোর কিশোরীদের ভীড়। সবাই ক্যাটালগ দেখে দেখে বই বাছাই করছে। সেখানেই দেখা হলো অনুসূয়া আর তার মামা ফয়সালের সঙ্গে।
নস্টালজিয়ায় ভুগতে ভুগতে মামাও একটা ক্যাটালগ তুলে নিলেন। তারপর তার প্রথম জীবনে পড়া বইগুলো একে একে অর্ডার দিতে লাগলেন। এ বইগুলো পড়েই তিনি অনুসূয়ার বয়সে ব্যাপকভাবে আলোড়িত হয়েছিলেন। দশ মিনিটের মাথাতেই তাদের সামনে হাজির হলো আঠারোটি বই। অনুসূয়া চুপচাপ দাঁড়িয়ে। সে কোন কথা বলছে না। মামার পছন্দের উপর তার যথেষ্ট আস্থা আছে। কিন্তু বই যখন ছাবি্বশটি ছাড়িয়ে গেলো তখন অনুসূয়া আর চুপ থাকতে পারলো না। ীণ স্বরে একবার শুধু বললো, "মামা, আর কিনো না। এত বই আমরা নেব কিভাবে?"
কথা হলো মামা ফয়সালের সঙ্গে, "যে বইগুলো কিনেছি তার সবগুলোই আমার পড়া। দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার কারণে বইই আর পড়া হয় না। দু'মাসের জন্য দেশে এসেছি। ভাগনির জন্য যেগুলো কিনলাম সেগুলো আমি আবারও পড়বো এই ক'দিনে।"
বইমেলায় ফয়সালের মতো অনেকেই সেবা প্রকাশনীর সামনে এসে নস্টালজিক হয়ে পড়েন। মনে পড়ে কৈশোরে টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে বই কেনার কথা। "বইমেলা উপল েযারা বই কেনে তাদের সবাই কিন্তু পাঠক না। অনেকেই বই কিনে এই ভেবে যে এলামই যখন বইমেলায় তখন একটা বই কিনে নিয়ে যাই। আর সত্যিকারের যারা পাঠক তারা সেবা প্রকাশনীর সামনে এসে নস্টালজিক না হয়ে পারবেই না। কারণ বাংলাদেশে পাঠক তৈরীতে সেবা প্রকাশনীর অবদান অসামান্য। সেবার বই না পড়ে কেউ সত্যিকারের পাঠক হতে পারে না।" আবেগ জড়ানো গলায় জানালেন এইচএসবিসি ব্যাংকের কর্মকর্তা আহমেদ রুমি।
2.
মেলার ভেতরের দিকের স্টলের সামনে দিয়ে হাঁটছিলেন এক নব দম্পতি। তাদের হাঁটার স্টাইল দেখে বোঝা যায় বই কিনতে তারা আসেননি। এসেছেন এমনিতেই বিকেলবেলা একটু ঘুরতে। অনেণ থেকেই স্বামী বেচারা একটা বই কিনে দিতে চাইছে স্ত্রীকে। কিন্তু সে কিনবেই না। অবশেষে অনেক স্টল ঘুরে স্ত্রী একটি বই পছন্দ করলেন। বইটির নাম 'মা ও শিশু'। লিখেছেন অধ্যাপক এম আর খান, ডা. এ এফ এম সেলিম ও ডা. সুমন চৌধুরী। স্বামী হাসতে হাসতে বইটির দাম পরিশোধ করলেন। স্ত্রী বেচারী ততণে লজ্জায় লাল।
বলুনতো তিনি কেন লজ্জা লাল হলেন?
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০