somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দেশের সাংবাদিকরা কি আসলেই শিক্ষিত?

০৬ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১১:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ পুরনো প্রজন্মের সাংবাদিক বনাম বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিক

আজ প্রথম আলো পত্রিকায় আরও ‘কষ্ট’ দিয়ে যাক অস্ট্রেলিয়া শিরোনামের এই খবর পড়ে আমার মেজাজ চরম খারাপ ও বিরক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আরও একবার আমার মনে পুরনো সেই প্রশ্ন উকি দিলো, আমাদের দেশের সাংবাদিকরা কি আসলেই শিক্ষিত?

এই খবরটায় সাংবাদিক(?) বারবার অষ্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের চাহিদা ও অনুরোধ গুলোর সম্পর্কে খোচা দিয়ে দিয়ে লিখেছেন। যেমন অষ্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা ম্যাচ শেষে হাত মেলাবে না এই বিশেষ অনুরোধকে খোচা দিয়ে লেখা হয়েছে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের গায়ে বল লাগলে সেই বল আর অস্ট্রেলিয়ান বোলার ধরবেন কি না, ‘হিট উইকেট’ হওয়া অ্যাশটন অ্যাগার স্টাম্পে বুট লাগায় সে বুট পরে স্যানিটাইজ করে নিয়েছেন কি না ইত্যাদি। এইসব চরম বাচ্চামি। একজন সাধারন দর্শক এই প্রশ্ন করলে মানা যায়, কারন তার বক্তব্য এতো গুরুত্ব বহন করে না। কিন্তু প্রথম সারির জাতীয় পত্রিকায় কোন সাংবাদিক এগুলো লিখতে পারে কি না আমার জানা নেই।
এছাড়াও জিম, সুইমিংপুল সুবিধা নিয়ে এমনকি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম নিজেদের জন্য সাথে করে যে শেফ (রাধুঁনী) নিয়ে এসেছে এটা নিয়েও লেখায় খোঁচা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড হোটেলের কতটি কামরা ভাড়া নিয়েছে, কত টাকা খরচ করেছে এসব লিখে অস্ট্রেলিয়া দলের এই চাহিদা ও অনুরোধগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে।

বিসিবি অন্যান্য দেশের ক্রিকেট বোর্ড এর মতোই একটা বেসরকারী স্বাধীন সংস্থা, তারা সরকার বা জনগনের ট্যাক্সের টাকায় চলে না। আমি কোনভাবেই বুঝতে পারছিলাম না, আমাদের ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের অর্থে সিরিজের সব ব্যয় বহন করছে, তাদের কোন আপত্তি নাই। নিয়ম/অনুরোধ নিয়ে আমাদের ক্রিকেটারদেরও আপত্তির কথা শুনিনি, তাহলে এই সাংবাদিকের এতো জ্বলে কেন?

লেখার শেষ অংশ পড়েই ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেছে। আসলে প্রথম ম্যাচের আগের দিন ড্রেসিং রুম থেকে একাডেমি মাঠে যাবার সময় অস্ট্রেলিয়ান স্পিনার অ্যাশটন অ্যাগার সংবাদকর্মীদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় জার্সি দিয়ে মুখ-নাক ঢেকেছেন। এটা এই সাংবাদিক সাহেবের ইগোতে হার্ট করেছে।



আমি এই লেখা পড়ে ১০০ ভাগ নিশ্চিত সাংবাদিক মেহেদী হাসান (যিনি সংবাদটি লিখেছেন) একজন ইগোম্যানিয়াক ও অশিক্ষিত সাংবাদিক।

অষ্ট্রেলিয়ার এই বিশেষ কড়াকড়ি দেখে আমার অবাক লাগে নাই, কারন অস্ট্রেলিয়া আগা-গোড়াই খেলোয়াড়দের ডিসিপ্লিন ও স্বাস্থ্যের ব্যাপারে কঠোর। এমনকি কয়েকদিন আগে আইপিএল শেষে অষ্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের সরাসরি অষ্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে পর্যন্ত দেয়া হয়নি, আগে মালদ্বীপে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিলো। অষ্ট্রেলিয়ায় করোনায় এখন পর্যন্ত করোনায় ১ হাজার মানুষও মরে নাই, সংক্রমন মাত্র ৩৫ হাজার এবং বাংলাদেশে গত চারদিনেই ১ হাজারের মতো রোগী করোনায় মারা গেছে (করোনার লক্ষন নিয়ে মৃত্যু বাদ দিয়ে), দৈনিক ১৫ হাজার করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এমন দেশে খেলতে আসলে অষ্ট্রেলিয়া সাবধানতা অবলম্বন করবেই। এটা আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয় নাই, এটা আমার কাছে সঠিক সিদ্ধান্ত মনে হয়েছে। এবং দেশের এই বাজে করোনা পরিস্থতির ভেতরেও অস্ট্রেলিয়া যে খেলতে এসেছে, তার জন্য তারা ধন্যবাদের দাবীদার।

একটা বিষয় পরিস্কার করি, সাংবাদিককে অশিক্ষিত বলে আসলে আঙ্গুলছাপ বোঝাইনি। এখন তো আমাদের দেশে কেউ নিজের নামটা লিখতে পারলেই নিজেকে শিক্ষিত দাবী করে বসেন। আমি বলতে চাচ্ছি এই সাংবাদিক হয়তো সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ে নাই। কিংবা এই বিভাগ থেকে পাশ করলেও মুখস্থবিদ্যা কিংবা নকল/প্রশ্নফাস এর মাধ্যমে ডিগ্রি অর্জন(!) করেছে। একজন শিক্ষিত সাংবাদিক সাংবাদিকতার নীতি মানবেন, তার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।
খেলাধুলা বিষয়ক সাংবাদিক সাংবাদিকতার জ্ঞানে শিক্ষিত হলে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়ারদের খাবার খরচ বাবদ প্রতিদিন বিসিবি কত টাকা খরচ করছে, নিরাপত্তায় কত টাকা খরচ হচ্ছে এসব নিয়ে লিখবে না, নিজের মতামত চাপিয়ে দিবে না। সে খেলার পাতার সাংবাদিক, অর্থনীতি পাতার সাংবাদিক বা কলাম লেখক না।

বর্তমান সময়ের সাংবাদিকদের নিয়ে এমনিতেই আর আশা-ভরসা নাই। সৎ-নিষ্ঠাবান হলে চাকরি চলে যায়, দেশ ছাড়তে হয় নয়তো পরিার সহ খুন হতে হয়। টিকে আছে পা-চাটা তোষামোদকারী মগজবিহীন মেরুদন্ডহীন সাংবাদিকেরা।

এখনকার সংবাদপত্রের সংবাদ পড়লে মনে হয় সাংবাদিক সংবাদ লেখার চেয়ে নিজের মতামত জাহির করার চেষ্টা করছে। টিভির নিউজ দেখলে বিরক্তি ধরে যায় রিপোর্টারদের বাচাল স্বভাব দেখে, লাইভ নিউজ হলে তো সাংবাদিক তোতলাতে তোতলাতে আবোল-তাবোল কি যে বলে, হয়তো নিজেও তা জানে না।

দেশের সাংবাদিকদের আদৌ কোন কান্ডজ্ঞান আছে কিনা সেটাও একটা প্রশ্ন, মৃত ব্যক্তির স্বজনদের আহাজারি রেকর্ড করে, কান্না ও আহাজারির সময় জ্যুম করে ভেজা চোখ আর ঠোটে ফোকাস করে ফুটেজ রেকর্ড করা কোন নৈতিকতায় সায় দেয় আমার জানতে ইচ্ছা করে। একটা জিম্মি অবস্থায় পুলিশ-আর্মি-র‍্যাবের অপারেশন লাইভ দেখানো সাংবাদিকদের বুদ্ধিহীন ছাগল বলতে আমার মুখে আটকায় না।

বর্তমান সময়ের সাংবাদিকেরা পেশাদার কি না সেটাও একটা প্রশ্ন, পেশাদার সাংবাদিক তার পেশাতেই নিমগ্ন থাকবেন, কিন্তু বর্তমানে সাংবাদিকদের চাঁদাবাজি, ব্লাকমেইলের খবরও দেখা যাচ্ছে। তাদের হয়তো সাংবাদিকতা পেশায় মন ভরছে না, তাই চাঁদাবাজ হওয়ার চেষ্টা করেন।
অবশ্য ইদানীংকার সাংবাদিকেরা সব কিছুই হতে চায়। কেউ বই লিখে লেখক হয়ে যায়, কেউ নাটক বানিয়ে প্রযোজক হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ তো ব্লগ/ফেসবুকে গল্প-কবিতা-ছোটগল্প লিখে ব্লগার/রাইটার, ছবি তুলে ফটোগ্রাফার হয়ে যায়।

আগের প্রজন্মের সাংবাদিকেরা সমাজের অসংগতি তুলে ধরতেন, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সরব থাকতেন, পক্ষপাতমূলক আচরন একটু কম ছিলো। এখন তো পত্রিকার মালিক ভয়ংকর অপরাধ করলেও সেই নিউজ ছাপানো হয় না, বরং তার গুনগান গেয়ে নিউজ করা হয়। আগের দিনে সমাজের প্রভাবশালীগন লাঠিয়াল পুষতেন, এখন পোষেন সাংবাদিক।

আরেক ধরনের সাংবাদিকের কথা না বললে লেখা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এরা নিজেরাই পত্রিকা খুলে মালিক, প্রকাশক, সম্পাদক ও সাংবাদিক হয়ে যায়। ৯০০ টাকা দিয়ে একটা ওয়েবসাইট ডোমেইন, ১০০০ টাকা দিয়ে একটা হোস্টিং প্যাকেজ কিনে এবং ৩-৪ হাজার টাকা দিয়ে সস্তা ফ্রিল্যান্সার দিয়ে সস্তা ওয়েবসাইট বানিয়ে অনলাইন সংবাদপত্র খুলে ফেলে। এরা বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা থেকে নিউজ কপি-পেষ্ট করে নিজেদের পত্রিকায় ছাপায়। সাংবাদিকতা সম্পের্কে ডিগ্রি নাই, ন্যূনতম ধারনা নাই, তবু হয়ে যায় সাংবাদিক/সম্পাদক।
যদিও এদের নিউজ সাইটে মাছিও যায় না ঘুরতে, কিন্তু অমুক পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় দেখিয়ে অনেক সুবিধা বাগিয়ে নেয় এরা। বিভিন্ন সাংবাদিক ফোরাম ও এসোসিয়েশনের মেম্বারও হয়ে যায়। সাংবাদিকতার সম্মান যতটুকু বাকি ছিলো, এরা সেটাও টেনে নামাচ্ছে।

অনেকেই বলবেন, "সকল সাংবাদিক এক না"। আমিও তাদের সাথে সহমত। সবাই খারাপ না, অনেক যোগ্য, বুদ্ধিমান, শিক্ষিত সাংবাদিকও আমাদের আছে। তাদের সংখ্যা অনুপাতে ১০% হবে। আসলেই বাকি ৯০% মূর্খ ও অশিক্ষিত সাংবাদিক নামের ছাগলদের জন্য পুরো সাংবাদিক সমাজকে দায়ী করা উচিৎ না।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৪:০৭
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম নেতৃত্বের ক্ষেত্রে আব্বাসীয় কুরাইশ বেশি যোগ্য

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৫




সূরাঃ ২ বাকারা, ১২৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
১২৪। আর যখন তোমার প্রতিপালক ইব্রাহীমকে কয়েকটি বাক্য (কালিমাত) দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে সে তা পূর্ণ করেছিল; তিনি বললেন নিশ্চয়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলমানদের বিভিন্ন রকম ফতোয়া দিতেছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১০ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩


আপন খালাতো, মামাতো, চাচাতো, ফুফাতো বোনের বা ছেলের, মেয়েকে বিবাহ করা যায়, এ সম্পর্কে আমি জানতে ইউটিউবে সার্চ দিলাম, দেখলাম শায়খ আব্দুল্লাহ, তারপর এই মামুনুল হক ( জেল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

বামিঙ্গিয়ান উপাখ্যান

লিখেছেন যুবায়ের আলিফ, ১০ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২০




মাঝ রাতে কড়া একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভাঙলো জ্যাকের৷ ঘুমের ঘোরে দেখতে পেল কেউ চোখ ধাঁধানো পোষাক পরে ডাইনিংয়ে একটা চামচ রেখে দরজা গলিয়ে চলে যাচ্ছে৷ গা ও পোষাকের উজ্জ্বলতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×