somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাড়ির দোকানে গিয়ে মাথা ঠিক রাখতে না পারা ও কিছু কথা

১৭ ই আগস্ট, ২০১২ রাত ৮:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি কতটুকু গুছিয়ে কথাগুলো লিখতে পারব জানিনা। তারপরও চেষ্টা করব।

আমার বাবা সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন,এখন অবসর নিয়েছেন। আর মা গৃহিণী। ছোটবেলাতে ঈদে যখ্ন মার্কেটে যেতাম, তখন পছন্দের জিনিস একটু দামী হলে আমার মাকে দেখতাম বাবাকে বলতে ওকে কিনে দাও, বাবাও চাইতেন কিনে দিতে এবং দিতেন ও। বাজেট কাটছাট হত মা এর বাজেট থেকে, কিংবা বাবার কিছু থেকে। সত্যি কথা বলতে অনেক ঈদে আমার বাবা কিছু কিনতেন না। তখন এগুলো দেখতাম, কিন্তু বুঝতাম না। কি আনন্দ করে ঈদ করতাম। অনেক ধন্যবাদ আল্লাহ্‌কে যে তখন এত শত বুঝতাম না। আর না হ লে এখন এসব চিন্তা করে যেমন লাগে, তখন এমনটি লাগলে মনে হ্য় না ঈদ অত মজা করে করতে পারতাম।

বাবা-মার এই আত্মত্যাগ ছিল আমাদের সব ক্ষেত্রেই। আজ যা হয়েছি,যতটুকু হয়েছি -তার পিছনে তাঁদের আত্মত্যাগ অপরিসীম। এক্ষেত্রে আরও একটা কথা মনে হয় বলা উচিৎ। তখন সামাজিক অস্থিরতাও এখন থেকে অনেক কম ছিল। এখন যেমন এক মহিলা আরেক মহিলার কেনাকাটা দেখে, এক শিশু আরেক শিশুর কেনাকাটা দেখে ভেবে পায়না যে কেন তার স্বামী কিংবা শিশুটির বাবা তাকে এটা কিনে দিতে পারেনা অথচ একই চাকরি করে আরেকজন কিভাবে এতসব কিনছে। তখন দুর্নীতি সমাজে অপেক্ষাকৃত কম ছিল কিনা জানিনা।

আজ আলহামদুলিল্লাহ্‌ বড় হয়েছি, দুই ভাই আমরা অনেক ভাল চাকরি করি। বাবা-মাকে ঈদে কিছু কিনে দিতে চাইলে এখনও তাঁরা নিতে চায়না। কেন জানেন, কারণ আমাদের টাকার প্রতি তাঁদের যে অনেক মায়া। আমরা ভাল কিছু কিনলেই তারা খুশি। এই হচ্ছে আমাদের বাবা-মা রা।

আমি আর আমার স্ত্রী আমার মাকে নিয়ে গত ১৫ আগস্ট গেলাম বেইলী রোডে শাড়ীর দোকানে। আম্মা আগেই আমাকে বলে দিয়েছে যে , বেশি দামী শাড়ী কিনবে না। কারণ আমার আম্মা এখন নরমাল সুতি শাড়ি বেশি পরে। গেলাম দোকানে, আপনারা সবাই জানেন আমাদের দেশে পুরা বছরের ব্যবসা দোকানীরা করে ফেলে রমজানে মাসে। আমাদের দেশ তো সবকিছুতেই উল্টা-এটাতো মনে রাখতে হবে।

সব নরমাল নরমাল শাড়ি ধরি, সবগুলোর দামই ৪-৫ হাজার বা তার উপরে। বেইলী রোড থেকে প্রতিবছর আম্মা শাড়ি যেহেতু কিনে সেহেতু আমার ধারণা আছে যে এগুলোর দাম এত না। আম্মা এবং আমার স্ত্রী যখন শাড়ি দেখায় ব্যস্ত, আমি দোকানদারদের জিজ্ঞেস করলাম এত দামের কারণ কি? বলল সুতার দাম বৃদ্ধি। আমার প্রশ্ন হল তাই বলে দাম ২ হাজার টাকার মত বেড়ে যাবে প্রতি শাড়িতে? আরেক দোকানদার বলল, এগুলো ভারতের শাড়ি, এক পিস ই আসে-এরকম কথা বার্তা। নরমাল সুতি শাড়ি তাও নাকি ভারতীয়, আচ্ছা হলই বা, তাই বলে এত দাম কেন হবে?

যাই হোক আমার লেখার মূল প্রসঙ্গে এবার আসব। এর মধ্যে একটা শাড়ি মনে হল আম্মার পছন্দ হল। সুতির শাড়ি। দাম চাইল ৫৮০০ টাকা। বেশ অবাক হলাম। যাই হোক গেলাম অন্য দোকানে।

এভাবে কয়েকটা দোকানে ঘুরতে ঘুরতে আরেকটি দোকানে ঐ এক ই শাড়ি পেলাম। দাম চাইল ৪৮০০ টাকা। দামের কি বৈচিত্র্য । এবার আমাদের দাম বলার পালা, আম্মা কিন্তু বারবার আমাকে আর আমার স্ত্রীকে বলছে, “বাবা, এত দাম দিয়ে কিনিস না, এত দামী শাড়ি পরে কই যাব?” কিন্তু আমার স্ত্রী ঠিকই দাম করছিল শাড়ি। ৩০০০ বলার সাথে সাথে ৪৮০০ টাকা দাম চাওয়া দোকানদার বলল যে এই দাম এ সম্ভব না। যাই হোক আমরা আবারো ঢুকলাম ৫৮০০ টাকা দাম চাওয়া দোকান এ। এই দোকানদারকে ৩০০০ টাকার দাম বলাতে মনে হল অসম্ভব একটা দাম তাকে বলেছি। সে মাথা নাড়ল এবং এর পরে তার কথা বার্তাগুলো দেখুন-

“ খালাম্মা আপনি এইটা কি দাম বললেন? আপনার কি মনে হয় এইটা এই দামের শাড়ি?”
আমার আম্মা ও সহজ সরল ভাবে বলে ফেলে , “ নারে বাবা, আমি ১৫০০ টাকা দামের বেশি শাড়ি কিনবনা”

দোকানদার একটু কড়া সুরে, “ সেইটা আগে বল বেন তো?”

যাই হোক আম্মা আর আমার স্ত্রী বেরিয়ে গেল এই কথা বলে দোকান এথেকে, আমি কেবল দ রজা দিয়ে বের হব, এই সময় আমার কানে আসল, “ ১৫০০ টাকা দিয়ে শাড়ি কিনতে আসছে, আর তারপর এই শাড়ি নামাইতে বলছে, আরে ২ বার যারা নামাইতে বলে তারা কেনার জন্যই দোকানে ঢুকে, সময় নষ্ট”

এইবার আমি মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলাম না। দোকান থেকে বের না হয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করলাম, “ আপনি আপনার মা-বোন কে কয় টাকার শাড়ি কিনে দেন?”

সে থত মত খেয়ে বলছে, “না, দুইবার দেখছেন তো এইজন্য বলছি”

আমি বললাম, “ আমি কাস্টমার, আমি ৪ বার ও দেখতে পারি, তাতে সমস্যা কি? আসলে আপনি একটা ফাজিল, ভাল মানুষ না”

দোকানের অন্য সবাই ( কাস্টমার সহ ) দেখল, কেউ কোন কথা বলল না। আমি দোকান থেকে বের হয়ে গেলাম। আমি চেয়েছিলাম মাথা ঠান্ডা রাখতে পারিনি, এজন্য দুঃখিত।

আমাদের দেশে রমজান মাসে অন্য সব মুসলিম দেশের তুলনায় সব কিছুর দাম যায় বেড়ে, যা খুশি দাম হাঁকে দোকান্দারেরা। আর সেই তালে নাচি আমরাও। কারণ এখন আমাদের মধ্যে তো ঘুষখোর আর চোর বাটপারের অভাব নেই। আর সেই সুযোগে দোকানদারেরা ও ভাব নেয় মধ্যবিত্ত কাস্টমারদের সাথে। দাম কম বললেই অপমান।

অনেকেই মধ্যবিত্তদের ঈদ নিয়ে অনেক কথা লিখেছেন। অনেক মন খারাপ করা কথাও। আমি শুধু বলতে চাই আমরা মধ্যবিত্তরাই সমাজের চালিকাশক্তি, আমরাই ৯-৫টা অফিস করি, আমরাই দেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকি, আমরাই বাংলাদেশ দল কে অকুন্ঠ সমর্থন দেই। আমরা সবসময় ভাবি, সেইদিন হয়তো আসবে, চাওয়া পাওয়া গুলো পূরণ হবে। একটু পূরণ হওয়া, একটু না হওয়া এটাই তো আনন্দ।আর এই আনন্দই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।

সবাইকে ঈদ মোবারক।
১৭টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×