somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রতারিত ছবি

০৯ ই আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ চমকে উঠে মুনিয়া।কোন চমকে দেয়া জোড়ালো শব্দ বা তীব্র আলোর ঝলকানিতে নয়।কোন এক স্মৃতির সত্যতা যেন আছড়ে পড়লো মুনিয়ার উপর চাবুক হয়ে।অবশ্য চমকে উঠা ভাবটা খুব একটা চোখে পড়ার মত ছিলো না শুধু মুখটা একতু উন্নত হলো আর বিস্ফোরিত চোখে ছিলো রাজ্যের বিস্ময়।কেউ যদি লক্ষ্য করতো তাহলে সহজেই চোখে পড়তো শক্ত হয়ে যাওয়া চোয়ালের ভাজ।
সময়টা বড়জোড় সাত কি আট বছর আগের।মুনিয়া তখন ক্লাস ফোর-এ পড়ে।ছবি আঁকার হাত ভাল ছিলো বলে আর্ট টিচার দীপক স্যারের খুব প্রিয় ছাত্রি ছিলো।কিন্তু দীপক স্যার আজ একরাশ গম্ভীরতা নিয়ে দ্বিতীয় সাময়িক আর্ট পরীক্ষার খাতা মুনিয়ার হাতে দিলেন।মুনিয়া নত মুখে খাতাটা নিল।মুখে স্যার কিছুই বললেননা দেখে যেন অপমান আর লজ্জা বোধ আরো তীব্রতা পেল।মাথা নিচু করে নিজের সিটে ফিরে আসে মুনিয়া।ব্যাপারটা সবাইকে অবাক করলেও আর্ট পরীক্ষায় ফেইল করবে সেটা আগে থেকেই জানতো মুনিয়া।পাশ করবেইবা কেন?ছবির মূল্যই-বা কি যদি সেখানে রঙের ছোয়া না পড়ে।রঙের অসামান্যতা জাহির করে প্রশ্ন পত্রে ছিলো -"একটি নদীর দৃশ্য অংকন কর ও রং কর।"
বাসায় ফিরে অঝোরে কেঁদে নিল মাকে জড়িয়ে।তাতে পরাজয়ের গ্লানি না কমলেও মায়ের সান্তনা আর আদরে কান্নার বেগ ধীর হয়।
পরীক্ষার দিনটির কথা মনে পড়ছে বারবার মুনিয়ার।প্রশ্নপত্র হাতে পেতেই খুব তাড়াহুড়ায় শেষ করে রচনামূলক অংশটি।এবার আর্ট পেপারে ছবি আঁকার পালা।রং পেন্সিল গুলো বের করে গুছিয়ে রাখলো ডেস্কের উপর।আপন মনে আঁকছে সে।ভালো করে সুন্দর একটা ছবি আঁকার প্রত্যাশা।
-অ্যাই মুনিয়া শোন!
পেছন থেকে ডাকের সাথে একটা পেন্সিলের খোঁচাও অনুভব করলো পিঠে।সবসময় ক্লাসে তুমি করে বলা মেয়েটা আজ অনেক আদুরে সুরে তুই বলায় একতু অবাক হলেও একটা মমতাবোধ ভর করে মুনিয়ার উপর।
-"হুম?"-বলে পেছনে তাকায় সে।
-একটু তোর ছবিটা দেখাবি?
আর্ট স্কুলে ছবি আঁকা শেখা মেয়েটার নদীর ছবি আঁকতে কষ্ট হচ্ছে?একটু অবাক হয়ে ভাবে মুনিয়া।একটু বাঁকা হয়ে সরে বসে খাতার আড়াল ছাড়ে মুনিয়া।
-অ্যাই! একটুও দেখতে পাচ্ছিনা।তোর বোর্ডটা একটু বাঁকা করে ধরনা।
-আচ্ছা।
কিছু সময় বাদে জিঞ্জেস করে-
-হলো?নামাই?
-না।আরেকটু।
এভাবে কত সময় যায় সে হিসেব রাখেনি মুনিয়া তবে বেশ অনেকক্ষন ধরেই সে এভাবেই বসে আছে।
-"হল দেখা?"এবার জিঞ্জেস করে মুনিয়া।
-হুম।আচ্ছা।
মন দেয় আঁকাতে।
-"অ্যাই!আবার দেখাতো!"-পেছন থেকে আবার ডাক আসে।
এবার মনে মনে একটু বিরক্ত হলেও মায়া মায়া ভাবটা রয়ে গিয়েছিলো মনে।সেজন্য খানিক তিরস্কার-ও যেন করলো নিজেকে।
-"আচ্ছা।"বলে মুনিয়া।
কিছুক্ষণ বাদে সুধায় মুনিয়া-হল?
-"হুম।"মীম বলে।
আঁকায় বারবার ছন্দের ছেদ পড়ায় একটু যেন জড়তা ভর করে হাতে।কষ্ট হচ্ছিলো আঁকতে।আঁকতে থাকে মুনিয়া।এভাবে খেয়াল করেনি সবার এঁকে ফেলা ছবিতে রঙের ছোয়ার কাজটিও প্রায় শেষের পথে।চোখ উঠিয়ে যখন তা দেখে ছোট্ট মুনিয়ার বুকটা কেঁপে উঠলো ভয়ে।হাতে মায়ের বেঁধে দেয়া গোলাপী ঘড়িতে সময় হিসেব করে দেখে-
-পাঁচ মিনিট।দশ মিনিট।মোটে দশ মিনিট বাকি!
ভীত মুনিয়া তাড়াহুড়ো করে ছবি আঁকা শেষ করে রং হাতে নেয়।চোখের পানিতে খাতায় ঘষতে থাকা রং পেন্সিলের রং ছড়িয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বারবার।প্রতিটা সেকেন্ড যেন দুঃস্বপ্ন হয়ে পেড়িয়ে যাচ্ছে।ভয়ে অসহায় মুনিয়া চোখ মুছছে আর রং করছে।
ঢং ঢং ঢং করে স্কুলের ঘন্টা সময় শেষের ঘোষনা দেয়।রং পেন্সিলটাকে শক্ত করে আকরে ধরা ।পেন্সিল আর কাগজের যেন যুদ্ধ চলছে।এদিকে গার্ডে থাকা ম্যাডাম দুজনের গল্পেও ছেদ পড়লো।ম্যাডাম দুজন দুদিক থেকে খাতা তুলতে শুরু করলেন।মুনিয়ার খাতা তুলতে যেয়ে ম্যাডাম বলেন-
-কি ব্যাপার মুনিয়া?ছবিতে রং করনি কেন?ভালইতো এঁকেছিলে।
বলতে বলতে ম্যাডাম তাকান মুনিয়ার দিকে।ভেজা চোখ নামিয়ে ফেলে মুনিয়া লজ্জায়।
কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফেরে মুনিয়া।মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে।"রং করা হয়নি আঁকা ছবিতে"-জানায় মুনিয়া।নিশ্চয়ই খামখেয়ালী করেছো?কেন রং করোনি?কি কারন ছিলো বলো?-বলে বকতে যাবার বিপরীতে মা স্তব্ধ হয়ে যান হৃদয় ভেঙ্গে যাওয়া তার ছোট্ট মুনিয়া পাখিটাকে দেখে।কারনটা আর জানা হলোনা।

প্রায় যুগান্তরের পর আজ হঠাৎ নতুন করে আবিষ্কৃত হলো কারণটা...।ছবিটা যে প্রতারিত ছিলো!


*****
ছবি দেখে আঁকা আসল উদ্দেশ্য ছিলোনা মীমের।খুব সুকৌশলে প্রতিদ্বন্দির পরীক্ষা নষ্ট করার অভিনব কৌশল এতটুকু বয়সে কিভাবে মাথায় আসলো তা ভাবতে বসে এখন অবাক হচ্ছে মুনিয়া।এরা যত বড় হতে থাকবে প্রতারনার গভীরতা ততোইকি বাড়বেনা?

*****
জীবন থেকে নেয়া।


সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:২১
৩২টি মন্তব্য ৩৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×