somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদ মহিউদ্দিন, জুলাই স্পিরিট ও গণতন্ত্রের মিথভঙ্গ

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
খালেদ মহিউদ্দিন, জুলাই স্পিরিট ও গণতন্ত্রের মিথভঙ্গ



খালেদ মহিউদ্দিন, জুলাই স্পিরিট ও গণতন্ত্রের মিথভঙ্গ
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রবল জন–আকাঙ্ক্ষা থেকেই গত বছরের জুলাইয়ে যে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তা ছিল এক ঐতিহাসিক জনজাগরণ। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ, সীমাহীন আত্মত্যাগ এবং একটি শোষণমুক্ত ভবিষ্যতের স্বপ্ন তখন ঢেকে দিয়েছিল ভয়ের অন্ধকারকে। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে সেই স্বপ্নের অনেকটাই ভেঙে পড়েছে—যেভাবে সাংবাদিক খালেদ মহিউদ্দিনের সাম্প্রতিক মন্তব্য এই তিক্ত বাস্তবতাকে সামনে এনেছে, তাতে কেউই নির্দোষ নয়।

জুলাই চেতনার অপব্যবহার
খালেদ মহিউদ্দিন যখন বলেন, “জুলাই চেতনা বিক্রি করে নিজের আখের গোছাচ্ছে অনেকেই”, তখন তাঁর ক্ষোভ কেবল কিছু ব্যক্তির প্রতি নয়; বরং একটি প্রবণতার বিরুদ্ধে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মতো নতুন দলগুলো শুরুতে জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে দেখা দিলেও, এখন তারা দ্রুত সেই পুরনো রাজনীতির রূপ ধারণ করছে—যেখানে আদর্শ নয়, ব্যক্তিস্বার্থই মুখ্য।

জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলোতে যেসব তরুণ বুক পেতে গুলি নিয়েছিলেন, তারা কোনো দলীয় পতাকা নয়, বরং মুক্ত গণতন্ত্রের পতাকা বহন করেছিলেন। অথচ আজ দেখা যাচ্ছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে গড়ে ওঠা নতুন নেতৃত্ব পুরনো রাজনীতির সব রোগে আক্রান্ত—বিলাসী জীবনযাপন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা, বিদেশি দাতাদের তোষামোদ, এমনকি ক্ষমতার লোভে আদর্শ বিসর্জন।

আওয়ামী লীগের ছায়া ও বর্তমান শাসনের প্রতিফলন
এই দৃশ্যপট বাংলাদেশের জনগণের কাছে নতুন নয়। আওয়ামী লীগও একসময় গণতন্ত্র ও মুক্তির প্রতীক ছিল—স্বাধীনতার পর যে দল জনগণের আশা হয়ে উঠেছিল, সময়ের ব্যবধানে সেই দলই পরিণত হয়েছে এক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার প্রতীক হিসেবে।
দলীয়করণ, প্রশাসনিক দমননীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচনী প্রহসন—সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের মৌলিক ভিত্তিগুলো ধ্বংস করেছে এমন ধারণা আজ সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীরভাবে প্রোথিত।

এ কারণেই জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল—একটি দমবন্ধ সময়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, সেই আন্দোলনের ফলও একই পথ ধরে হাঁটছে।
যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মালিকানা দাবি করে একে রাজনৈতিক সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল, আজ এনসিপি-ও “জুলাই চেতনা”কে ঠিক সেইভাবে ব্যবহার করছে—একটি রাজনৈতিক ব্র্যান্ড হিসেবে, আদর্শ নয়।

খালেদ মহিউদ্দিনের অবস্থান: আদর্শ বনাম সুযোগবাদ
খালেদ মহিউদ্দিন বরাবরই জুলাই স্পিরিট ও গণতান্ত্রিক আদর্শের পক্ষে থেকেছেন। তাঁর সমালোচনা মূলত এই চেতনার পবিত্রতাকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা। অথচ এনসিপি নেতারা তাঁর বক্তব্যকে আক্রমণ হিসেবে দেখছেন, এবং তাঁকে “ফ্যাসিস্টের দোসর” আখ্যা দিচ্ছেন—যা ঠিক সেই আচরণ, যা একসময় আওয়ামী লীগ করত যে কোনো সমালোচকের প্রতি।

এই ঘটনাই প্রমাণ করে, ক্ষমতার কাছে যাওয়া মাত্রই নতুন দলগুলো পুরনো দলের মানসিকতা গ্রহণ করছে। খালেদ মহিউদ্দিনের ভাষায়, “গণতন্ত্র মানে শুধু ভোট নয়; এটা জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও নৈতিকতার সংস্কৃতি।” এই জবাবদিহির অভাবই আজকের বাস্তবতা—চাই সেটা পুরনো দল আওয়ামী লীগ হোক, বা নতুন দল এনসিপি।

জনগণের আশা বনাম রাজনৈতিক ব্যবসা
জুলাই স্পিরিটের মূল ছিল—একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, আন্দোলনের শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন এক শ্রেণি–নেতা, যারা গণমানুষের আত্মত্যাগকে ব্যবসার মূলধনে পরিণত করছে।
এটা ঠিক সেই চক্রের পুনরাবৃত্তি, যা আওয়ামী লীগ গত এক দশক ধরে চালিয়েছে—বিপ্লবী ভাষণ, অথচ শাসনে স্বৈরাচার।

ভবিষ্যতের সতর্কবার্তা
খালেদ মহিউদ্দিনের বক্তব্য তাই কেবল কোনো সাংবাদিকের ব্যক্তিগত মত নয়; এটা জনগণের গভীর হতাশার প্রতিধ্বনি।
যদি এনসিপি বা জুলাই আন্দোলনের নেতারা এই সতর্কতা না শোনেন, যদি তাঁরা গণতন্ত্রের জায়গায় ক্ষমতা–রাজনীতির পুরনো পথে হাঁটেন, তবে তাঁরা শুধু খালেদ মহিউদ্দিনের সমালোচনাই পাবেন না—পাবেন গণমানুষের আস্থাহানিও।
তখন জুলাইয়ের শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে, এবং “জুলাই চেতনা” কেবল ইতিহাসের আরেকটি ব্যর্থ স্বপ্নে পরিণত হবে।

উপসংহার:
জুলাই চেতনা কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। এটি বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের আত্মার প্রতীক।
যেভাবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে রাজনীতি করেছে, এখন যদি নতুন প্রজন্মের দলগুলো “জুলাই চেতনা” নিয়ে একই পথ ধরে চলে, তাহলে গণতন্ত্রের পুনরুত্থান নয়, হবে তার পুনর্দাসত্ব।
জনগণের প্রত্যাশা এখন নতুন মুখ নয়—নতুন মানসিকতা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৪১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×