somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী কোটা বাতিল: প্রগতির পথে প্রতিক্রিয়ার পদধ্বনি

২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নারী কোটা বাতিল: প্রগতির পথে প্রতিক্রিয়ার পদধ্বনি



নারীর অধিকার কেড়ে নিয়ে যে শক্তি ‘সমতা’র নামে প্রতিক্রিয়াশীলতা ছড়াচ্ছে, তাদের মুখোশ উন্মোচনের সময় এখনই।

২০২৪ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনকে অনেকেই “সমতার লড়াই” বলে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবে এই আন্দোলনের ছায়ায় লুকিয়ে ছিল এমন এক প্রক্রিয়া, যা বাংলাদেশকে প্রগতির পথ থেকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিক্রিয়াশীলতার অন্ধকারে।
আমি তখনই বলেছিলাম—নারী কোটা বাতিলের দাবিতে যেসব নারীরা রাস্তায় নেমেছিল, তারা না বুঝেই নিজের পায়ে কুড়াল মারছে। আজ, সময়ই তার প্রমাণ দিচ্ছে।

কোটা কেন ছিল?
কোটা কখনোই কোনো দয়া বা অনুদান নয়। এটি সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি হাতিয়ার—একটি ব্যবস্থাগত বৈষম্য ভাঙার সেতুবন্ধন।
বাংলাদেশের বাস্তবতায় এখনো নারী ও পুরুষের মধ্যে সমান সুযোগ নেই।
ভেবে দেখুন—
একজন শহুরে মেয়ের সঙ্গে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মেয়েটির অবস্থান কি এক?
গ্রামের মেয়েটি হয়তো এখনো স্কুলে যাওয়া–আসার জন্য বাবার অনুমতি চায়, কলেজে ভর্তি হতে লড়াই করে, চাকরির প্রস্তুতি নিতে গিয়ে সমাজের কটূক্তি সহ্য করে।
সেই মেয়ের সঙ্গে একই এলাকার কোনো সুবিধাভোগী পুরুষের প্রতিযোগিতা—কতটা ন্যায্য?

এই বাস্তবতার কারণেই নারী কোটা প্রয়োজন ছিল—সমতার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণে আনার জন্য।

নারী কোটা বাতিলের পেছনের রাজনীতি
২০২৪ সালের আন্দোলনকে কৌশলে “ন্যায্যতার আন্দোলন” হিসেবে উপস্থাপন করা হলেও, এর অন্তরালে ছিল পুরুষতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য
★ যারা নারীদের ঘরে বন্দি রাখতে চায়,
★ যারা মেয়েদের স্বাধীন চিন্তাকে ভয় পায়,
★ যারা মনে করে মেয়েদের স্থান সংসারের চার দেয়ালের ভেতরেই সীমাবদ্ধ —
এই আন্দোলনের নেপথ্যে তারাই ছিল।

আরও ভয়ংকর হলো—এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন কিছু প্রভাবশালী নারী বুদ্ধিজীবী, যারা বছরের পর বছর ধরে “নারীর ক্ষমতায়ন” নিয়ে কথা বলেছেন।
তাঁদের মদদে নারী কোটা বাতিলের দাবি ওঠে—যেন মেয়েদের প্রতি একটি রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতাকে বিলুপ্ত করা যায়।
ফলাফল?
★ যে মেয়েরা ক্ষমতায়নের সুযোগ পেত, তারাই আবার বঞ্চিত হলো।

ষড়যন্ত্রের গভীরতা: নারীকে প্রান্তিক করার প্রক্রিয়া
এটা কেবল নারী কোটা বাতিল নয়, এটি একটি পরিকল্পিত সামাজিক প্রকল্প।
প্রথমে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার সংকুচিত করা হবে—চাকরির সুযোগ কমিয়ে, প্রশাসনিক কাঠামো থেকে সরিয়ে।
তারপর শিক্ষার ক্ষেত্র সংকুচিত করা হবে—মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট আসন, নিরাপত্তা ও উৎসাহ কমিয়ে।
শেষ ধাপে নারীদের সামাজিক উপস্থিতি হ্রাস পাবে—অর্থাৎ, ধীরে ধীরে নারীকে ফেরানো হবে “ঘরের ভিতর”।

এভাবে নারীর সামাজিক অগ্রগতি থামিয়ে দেওয়া হলে, কেবল নারীরাই নয়—পুরো সমাজ পিছিয়ে যাবে।
কারণ, নারীর অগ্রগতি মানে সমাজের অগ্রগতি; আর নারীর পতন মানে সভ্যতার পশ্চাদমুখিতা।

মৌলবাদী মুখোশ উন্মোচনের সময়
আজ যারা নারী কোটা বাতিলের মাধ্যমে “সমতা”র কথা বলছে, তারা আসলে সমতার নয়, আধিপত্যের কথা বলছে।
এরা সেই মৌলবাদী শক্তি, যারা নারীকে কণ্ঠহীন করে রাখতেই আগ্রহী।
তাদের যুক্তি যতই আধুনিকতার মুখোশে ঢাকা থাকুক, লক্ষ্য একটাই—নারীর স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া, তাকে আবার ঘরে ফেরানো।

এই মুখোশ এখনই উন্মোচন করতে হবে।
না হলে আগামী প্রজন্মের মেয়েরা দেখবে, তাদের জন্য রাষ্ট্রে কোনো জায়গা নেই—না কর্মক্ষেত্রে, না নীতিনির্ধারণে।


উপসংহার: নারীর কোটা নয়, ন্যায্যতার কোটা
নারী কোটা কোনো দয়া নয়; এটি ন্যায্যতার জায়গা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা।
যারা এটি বাতিলের মাধ্যমে “সমতা”র বুলি আওড়ায়, তারা আসলে সমতার শত্রু।
তারা নারীকে প্রতিযোগিতার মাঠে ঠেলে দেয়, কিন্তু হাতে বেঁধে রাখে পুরনো সমাজের শেকলে।

আজ সময় এসেছে এই প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের নারীদের সোচ্চার হওয়ার—
কারণ নারী কোটা ফিরিয়ে আনা মানে কেবল একটি নীতির পরিবর্তন নয়,
এটি হবে এক প্রজন্মের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের ঘোষণা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×