somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক মেগা মিক্সড পলিটিক্যাল রেসিপি — সংবিধান সংস্কারে জগাখিচুড়ির গণভোট

৩০ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক মেগা মিক্সড পলিটিক্যাল রেসিপি — সংবিধান সংস্কারে জগাখিচুড়ির গণভোট



বাংলাদেশের রাজনীতি এখন যেন এক রন্ধনশালা। মেনুতে আছে ৪৮ রকমের সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব, প্রতিটি দল দিয়েছে নিজস্ব মশলা, কেউ দিয়েছে মরিচ, কেউ দিয়েছে দারুচিনি, কেউ দিয়েছে কাঁচা লঙ্কা। আর সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অবিশ্বাস্য রেসিপি—“জুলাই সনদ: সংবিধান সংস্কারের জগাখিচুড়ি”।

সরকার বলছে, এবার নাকি এই রেসিপি খাওয়ানো হবে পুরো জাতিকে—একটা গণভোটের মাধ্যমে। অর্থাৎ, একবারে ৪৮টা প্রশ্ন, কিন্তু ভোটারকে দিতে হবে একটাই উত্তর—“হ্যাঁ” বা “না”!
যেন আপনি রেস্তোরাঁয় গিয়ে বলছেন, “আমাকে একসঙ্গে বিরিয়ানি, ইলিশ ভাজা, খিচুড়ি, পায়েস, আর কফি দিন,” —ওরা বলছে, “সব মিলিয়ে এক প্লেট, খেতে চাইলে ‘হ্যাঁ’ বলুন, না হলে চলে যান!”

জগাখিচুড়ির সূত্রপাত
ঐকমত্য কমিশনের কাজ ছিল সব দলের মতামত মিলিয়ে একটি পথ দেখানো। তারা মিলিয়েছেও—কিন্তু এমনভাবে যে কেউ জানে না কোনটা কাকে মানাবে। ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৩৬টি নিয়েই রাজনৈতিক দলের ভিন্নমত। তবু সবাই সই করেছে, যেন সবাই মিলে বলছে, “হ্যাঁ, আমরা একমত যে আমরা একমত নই!”

আর এখন গণভোটে সেই ভিন্নমতগুলোও থাকছে না। অর্থাৎ, আপনি যদি কোনো প্রস্তাবের বিপক্ষে থাকেন, তবুও ভোট দিতে হবে পুরো প্যাকেজে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’। এটা গণভোট নয়, এটা ‘গণবাঁধন’—আপনি চাইলে না চাইলেও বাঁধা পড়বেন।

রাজনৈতিক বিভ্রান্তির নাট্যরূপ
এখন দৃশ্যটা এমন—

যদি গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জিতে যায়, তাহলে কমিশনের পুরো খসড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

যদি কোনো দল পরে নির্বাচনে জিতে গিয়ে বলে, “আমরা তো কিছু প্রস্তাবে একমত নই,” তখন সরকার বলবে, “কিন্তু আপনি তো সই করেছিলেন, সুতরাং এখন বদলানোর অধিকার নেই।”

আর যদি ‘না’ জিতে যায়, তখন আবার আলোচনা শুরু হবে “সংবিধান ঠিক রাখতে সংবিধানই বদলাতে হবে” এই চিরন্তন যুক্তিতে।

বাংলাদেশে সংবিধান এখন এক রাবার ব্যান্ড—যার একদিকে সরকার টানে, আরেকদিকে বিরোধী দল। মাঝে জনগণ, যারা জানে না তারা আদৌ ভোট দিচ্ছে কোন প্রশ্নে।

‘হ্যাঁ’–‘না’–এর রাজনীতি

গণভোট মানে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রশ্নে জনগণের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এখানে প্রশ্নটাই এত ঘোলাটে যে মানুষকে বলা হচ্ছে—
“আপনি কি সংবিধান সংস্কার চান?”
যদি কেউ জিজ্ঞেস করে “কোন অংশটা?”, তখন উত্তর আসে—“সবটাই, একসঙ্গে!”
এইরকম গণভোটে ভোটাররা ভোট দিতে যাবে না বলেই আশঙ্কা। কারণ যখন আপনি জানেন না আপনি আসলে কিসের পক্ষে ভোট দিচ্ছেন, তখন ভোট দেওয়া মানেই নিজের ওপর হাস্যকর পরীক্ষা নেওয়া।

জুলাই সনদ: গণতন্ত্রের ব্যাকরণ না, বাগধারা
জুলাই সনদকে বলা হচ্ছে ঐকমত্যের দলিল। কিন্তু এই ঐকমত্য এমন যে তাতে অসহমতই মুখ্য। প্রতিটি দল তাদের ভিন্নমত লিখে সই করেছে, যেন কেউ বিয়েতে গিয়ে আগেই লিখে রাখছে—“আমি আসলে এই বিয়েতে পুরোপুরি রাজি নই, তবে খাবার ভালো তাই উপস্থিত আছি।”

এখন সেই ‘নোট অব ডিসেন্ট’ বাদ দিয়ে সনদ বাস্তবায়নের চেষ্টা মানে হচ্ছে, “আপনি আপনার আপত্তির জায়গাটাও মুছে ফেলুন, আমরা আপত্তি ছাড়াই গণতন্ত্র বানাবো।”

গণভোটের ফলাফল: হ্যাঁ মানে না, না মানে হ্যাঁ
শেষ পর্যন্ত এই গণভোট হবে এক রাজনৈতিক নাটকের শেষ দৃশ্য—

সরকার বলবে: “জনগণ হ্যাঁ বলেছে, তাই আমরা বৈধ।”

বিরোধী দল বলবে: “জনগণ হ্যাঁ বলতে বাধ্য হয়েছে, তাই এটি অবৈধ।”

আর জনগণ বলবে: “আমরা তো ভাবছিলাম স্কুলের প্রশ্নপত্র, এখানে উত্তর দিচ্ছি নাকি জীবনবৃত্তান্ত?”

উপসংহার
ঐকমত্য কমিশন হয়তো অনেক চিন্তা করে একটি “গণতান্ত্রিক সমাধান” দিতে চেয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এটি হয়েছে এক গণবিভ্রান্তি-নির্ভর গণভোট।
বাংলাদেশের সংবিধান এখন এক পরীক্ষাগারে, যেখানে রাজনীতি বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন রাসায়নিক মিশ্রণ করছেন—ফলাফল অনিশ্চিত, কিন্তু ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে স্পষ্ট।

এই গণভোটের নাম রাখা যেত —
“জুলাই সনদ: এক হ্যাঁ-তে সব না, এক না-তে সব হ্যাঁ।”
অথবা, আরও সংক্ষিপ্তভাবে—
“সংবিধান সংস্কারে জগাখিচুড়ির গণভোট।”
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×