somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নির্বাচনের হাঁড়ি আর তিন রাঁধুনির জগাখিচুড়ি

০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
নির্বাচনের হাঁড়ি আর তিন রাঁধুনির জগাখিচুড়ি



বাংলাদেশে এখন রাজনীতি নয়, রান্নাবান্নার প্রতিযোগিতা চলছে।
মেনু একটাই— “জাতীয় নির্বাচন”, কিন্তু রাঁধুনি তিনজন:
বিএনপি, জামায়াত আর ইউনূস সরকার।
তিনজনের তিনটা চুলা, তিনটা এপ্রোন, তিনজনেরই দাবি— “আমার রেসিপিটাই আসল গণতন্ত্র।”

প্রথম চুলা: জামায়াতের হুঁশিয়ারি খিচুড়ি
জামায়াতে ইসলামী বলছে— বিএনপি নাকি নির্বাচনে বাধা দিচ্ছে!
অর্থাৎ যারা একসময় “ভোট মানে ভুত” বলত, এখন তারাই ভোটে যাবার জন্য পথ পরিষ্কার করছে।
চিন্তা করো, গণতন্ত্রের রোড শোতে জামায়াত এখন ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায়!
তাদের মুখে নির্বাচন শুনলে মনে হয়, আত্মবিশ্বাস আর বাস্তবতার মধ্যে কোনো কনফিউশন চলছে না — সরাসরি সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
দ্বিতীয় চুলা: বিএনপির ‘ধৈর্যের ভাত’
ফখরুল সাহেব এবার বেশ রেগে গেলেন—
“আমরা তো নির্বাচনমুখী দল! আমরা তো একদিনও বলিনি নির্বাচন পিছাও!”

বলেন ঠিকই, কিন্তু আচরণে এখনো “আন্দোলনমুখী মনোভাব”।
বিএনপি এখন এমন এক ‘নির্বাচনমুখী’ দল, যারা ভোটের কথা বললেই আন্দোলনের রিহার্সাল শুরু করে।
তাদের বক্তব্য এখন এমন: আমরা নির্বাচনে যাব, তবে আগে সরকার বদলাও, আইন বদলাও, ভোটের তারিখ বদলাও, কমিশন বদলাও, তারপর বলো ভোট দিতে।
মানে— পাত্রে ভাত আছে, কিন্তু ঢাকনা খুলতে ভয়।

তৃতীয় চুলা: ইউনূসের সতর্কবাণীর স্যুপ
প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সাহেব বলেছেন— “নির্বাচন বানচালে বড় শক্তি কাজ করবে।”

বড় শক্তি মানে কে?
আমেরিকা? ভারত? নাকি পাশের বাড়ির ছক্কাবাজ রাজনীতিক?
উনি বলেননি, কিন্তু সবাই বুঝে গেছে—
যখন রাজনীতিকেরা “অজানা শক্তি”র কথা বলেন, তখন আসলে বোঝায়, “আমি জানি না, তবে ভয়টা পেতে ভালো লাগছে।”

বৃষ্টির নিচে সই করা সনদ

ফখরুল এবার ‘জুলাই সনদ’-এর গল্প টানলেন—
“আমরা তো বৃষ্টির নিচে ছাতা ধরে সই করেছি!”

এই বক্তব্য শুনে মনে হলো, রাজনীতি এখন আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বে।
বৃষ্টিতে সই করা সনদ এখন শুকনো কাগজে হারিয়ে গেছে—
বৃষ্টির পানি শুকোতেই নীতিও শুকিয়ে গেছে!
এখন কে সই করেছিল, কে ভিজেছিল, কে ভুলে গেছে— কেউই মনে করতে পারছে না।
বাংলাদেশে রাজনীতি এখন ছাতার ব্র্যান্ড অনুযায়ী আদর্শ নির্ধারণের জায়গা।

গণভোট ও নির্বাচন একসাথে না আলাদা— ব্যালট নাকি বেলুন?

ফখরুল বলছেন, “দুটো একসাথে করো, নইলে হাজার কোটি টাকা খরচ!”
সরকার বলছে, “না না, আগে গণভোট, পরে নির্বাচন।”
অর্থাৎ, একজন চাইছে এক পাতে ভাত আর ডাল একসাথে, আরেকজন বলছে আলাদা বাটিতে পরিবেশন করো।

শেষ পর্যন্ত মনে হচ্ছে—
নির্বাচন একটা পাঁচতারা রেস্টুরেন্টের ডিশ, কিন্তু ওয়েটার এখনো ঠিক হয়নি কে বিল দেবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের ডাক: রাজনীতির নতুন রিজার্ভ ফোর্স

ফখরুল মুক্তিযোদ্ধাদের ডেকে বললেন—
“আপনারা সজাগ থাকুন, দেশ রক্ষা করুন!”
মনে হয় এখন রাজনীতিতে ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স মুক্তিযোদ্ধা, সেকেন্ড লাইন অব এক্সকিউজ হলো জনগণ।
রাজনীতিকরা নিজেরা চুল্লি ঘেঁষে না দাঁড়িয়ে সবাইকে বলছে— তোমরা তাপটা সামলাও, আমরা পরে আসব।

শেষে হাসিনা প্রসঙ্গ: সীমান্ত পার রাজনীতি
বিএনপির নতুন কূটনৈতিক ডায়ালগ—
“ভারত সরকারকে বলছি, হাসিনাকে ফেরত দিন।”
মানে, এখন ভোটের রাজনীতিতে ইন্টারপোলও ঢুকে পড়ল।
বিএনপি চায় “হাসিনা ফিরুক”, সরকার চায় “নির্বাচন হোক”, আর জনগণ চায়— বাকিরা একটু চুপ থাকুক।

শেষ কথাঃ খিচুড়ির গন্ধ বাড়ছে
বাংলাদেশে এখন রাজনীতি নয়, রান্না চলছে।
চালটা বিএনপি দিচ্ছে, ডালটা জামায়াত, আর ইউনূস দিচ্ছেন তদারকি—
সবাই মসলা দিচ্ছে, কিন্তু কেউই হাঁড়ি নামাচ্ছে না।

ফলাফল?
গণভোটের হাঁড়ি, নির্বাচনের ডেকচি, আর প্রতারণার চামচে মেশানো এক জগাখিচুড়ি রাজনীতি।

যতবারই ঢাকনা খোলো, নতুন গন্ধ— কখনও গণতন্ত্রের, কখনও ধোঁয়ার।
এই গন্ধে এখন দেশের বাতাস ভারী,
আর আমরা ভোটাররা— শুধু চুল্লির পাশে দাঁড়িয়ে ধোঁয়া খাচ্ছি।

রাজনীতির রন্ধনবিশারদ)
“বাংলাদেশে এখন ভোট নয়, রান্না হচ্ছে;
কে রাঁধে কে খায়— সেটাই আগামী নির্বাচনের আসল প্রশ্ন।”
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×