ছোট ছোট ভাবনা ,ছোট ছোট স্বপ্ন আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন।আর প্রতিটি চিন্তা,প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে জীবনকে। মানুষ মাত্রই স্বপ্ন দেখে।স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। স্বপ্ন সাধারণত দুই রকমের হয়। যার একটি হলো স্বাভাবিক স্বপ্ন, যা আমরা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেখি, যে স্বপ্নের কোন মানেই থাকে না । আর অনেকে সেই স্বপ্ন মনেও রাখেন না। আরেক ধরনের স্বপ্ন আছে যা স্বপ্ন বা মনছবি অথবা আমরা বলতে পারি জীবন ছবি।আর এটা হলো বড় হওয়ার স্বপ্ন,জীবনে একটা কিছু করার স্বপ্ন। এ রকমের স্বপ্নই আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন:-ডাক্তার ,লেখক,ব্যবসায়ী,গায়ক,নায়ক,শিক্ষক ইত্যাদি হওয়ার স্বপ্ন ।
মানুষ তার আশার সমান সুন্দর ও বিশ্বাসের সমান বড় হতে পারে। প্রত্যেকের হৃদয়ে একজন মানুষ বসবাস করে। সে কথা বলে, আত্মনিমগ্ন হয়ে কান পাতলে তার কথা শোনা যায়। সে যা বলে ঠিক সে অনুযায়ী কাজ করলেই জীবনে সফল হওয়া যায়,বড় কিছু করা যায়। কারণ সেখানে আমি বা আপনি সম্পূর্ণ একা। আপনার বা আমার বাবা-মা, ভাই-বোন,বন্ধু-বান্ধব কেউ নেই।একেবারে রাজার মত একা। রাজা নিঃসঙ্গ, কারণ একই সিংহাসনে একসাথে দুইজন বসতে পারেন না। দুই হাজার মাইল হিমালয় পর্বতমালায় হয়তো কোটি কোটি লোকের জায়গা হতে পারে।কিন্তু শৃঙ্গের সর্বোচ্চ শিখরে দুইজন লোক এক সাথে আরোহণ করতে পারে না।একজনকে আগে উঠতে হয়। এজন্য তেনজিং এবং হিলারি এক সাথে শিখরে আরোহণ করতে পারেননি। তেনজিং আগে উঠার কারণে সর্বপ্রথম এভারেষ্ট শৃঙ্গ আরোহণকারী হিসেবে একনাম্বারে তেনজিং এর নাম চলে এসেছে।
বাইবেলে আছে টপ অব দ্যা হিলে যেতে হয় একা। আসলেই তাই।যে মানুষ প্রতিকুলতা এড়িয়ে একাকী চলতে শুরু করে সে-ই পথ পেয়ে যায়,সে-ই এগিয়ে যায়। তার কথাই ইতিহাসে লেখা থাকে। মানুষের জীবন একটা বিশাল ব্যাপার।কোন রকম যোগ্যতা ছাড়া, কষ্ট ,পরীক্ষা ছাড়াই একটা আনন্দে ভরা ,সৌন্দর্যে ভরা আলোয় ভরা জীবন পেয়ে গেলাম আমরা। আমরা মনে করি চাওয়া মানেই স্থুল,ভৌগী হিসেবে নিজেকে মনে করি অথচ এটা ভাবি না যে না পেলে আমি দিবো কি করে, পৃধিবীকে দিবো কি করে, সবকিছুকে সমৃদ্ধ করে তুলব কি করে।একজন ভিক্ষুক কি আরেকজন ভিক্ষুককে কিছু দিতে পারে? যার আছে সে-ই দিতে পারে। সুতরাং থাকার সাধনাই মানুষের সাধনা হওয়া উচিত। দেওয়ার মধ্য দিয়ে পেতে হবে,পাওয়ার মধ্য দিয়ে দিতে হবে। এ দু’টোই যদি না থাকে তাহলে জীবন পরিপূর্ণ হয় না।
বাইবেলে সুন্দর কথা আছে যে He who liveth, he who beliveth, shall never die. যে বিশ্বাস করে সে-ই বেঁচে থাকে। এই বিশ্বাস এবং কাজের মধ্যে যে ডুবে যেতে পেরেছে তাকে কোন দুঃখ,মালিন্য স্পর্শ করতে পারে না। কাজের নিজস্ব আনন্দ রয়েছে।কাজের মধ্যে ডুবে যেতে হলে স্বপ্নের প্রয়োজন। আমরা অনেকেই মনে করি স্বপ্ন মানেই একটি নিচক কল্পনামাত্র। তা নয়,স্বপ্ন মানেই বাস্তব,স্বপ্ন মানেই গন্তব্য।আমি কোথায় যেতে চাই তার নাম স্বপ্ন। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় হতে পারে । বাস্তব স্বপ্ন ও চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। যদি স্বপ্নকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারা যায় তাহলে তা অর্জনও করা যায়। বিশাল এই পৃথিবীতে দূর মহাকাশের নক্ষত্র থেকে আলো এসে পড়ে।আমরা সবাই এই পৃথিবীর প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছি মাত্র কিছু সময়ের জন্য যে সময়টা খুব বেশীও নয় আবার খুব কমও নয়। এই সময়কে নিজের ইচ্ছে মতো সাজিয়ে নিতে দরকার সুপরিকল্পীত স্বপ্নের। যা আমনাকে সফল হতে সাহায্য করবে। আমরা সবাই সাফল্য চাই । সকলে জীবনে সেরা জিনিস চাই। কেউই সাদামাটা জীবন চাই না, হামাগুড়ি দিয়ে চলতে চাই না। কেউই দ্বিতীয় শ্রেণীর মানুষ হতে চায় না,জোড় করে তাকে ঐ শ্রেণীতে পাঠিয়ে দেওয়া হলে সে মোটেই খুশি হয় না। বাইবেলের উক্তিতে সফল হওয়ার কয়েকটি ব্যবহারিক দিক নিহিত রয়েছে,তাতে বলা হয়েছে যে বিশ্বাস পাহাড়কেও টলাতে পারে। বিশ্বাস এক অদ্ভুত,বিপুল শক্তি,এটা কোন ম্যাজিক বা অলৌকিক বিষয় নয়। বিশ্বাস এভাবে কাজ করে ”আমি দৃঢ় নিশ্চিত-আমি পারবো” এই বিশ্বাস মনোবল বাড়ায়,কাজে দক্ষতা ও শক্তি পাওয়া যায়।পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কি হবে তা মাথায় আসবে। বাস্তব স্বপ্ন ও চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না।রাইট ভাতৃদ্বয় স্বপ্ন দেখতেন এমন এক যন্ত্র বানাবেন যাতে করে আকাশে ওড়া সম্ভব।তারা তৈরী করলেন প্লেন ।সভ্যতার চেহারাই পরিবর্তন হয়ে গেল তাদের এই আবিষ্কারের ফলে।মার্কনি স্বপ্ন দেখতেন, স্রষ্টার শক্তিকে জয় করে কাজে লাগাবেন। তিনি যে ভুল স্বপ্ন দেখেননি তার প্রমাণ বেতার ও টেলিভিশন আবিস্কার।উল্লেখ্য যে মার্কনি যখন দাবি করলেন তিনি তারের সাহায্য ছাড়াই বাতাসের মধ্য দিয়ে সংবাদ প্রেরণের পদ্বতি আবিস্কার করেছেন ,তখন তার বন্ধুরা তাকে মনস্তাত্ত্বিক হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল।বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন মাত্র তিন মাস স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। অতিমাত্রায় অপদার্থের অপবাদ নিয়ে স্কুল থেকে বহিস্কৃত হতে হয়েছিল হেলেন কেলার মাত ১৯ মাস বয়সে শ্রবণশক্তি,বাকশক্তি আর দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন।বিশ্বাস আর স্বপ্নের সংমিশ্রণে হয়ে ওঠেন মহিয়সী এবং তার জীবন বিরাট এক সত্যের প্রমাণ-বাস্তবে পরাজয় স্বীকার না করলে কেউ পরাজিত হয় না। সংবাদ পাঠক পদের জন্য এক আবেদন প্রার্থীকে প্রত্যাাখ্যান করা হয়।কারণ তার কণ্ঠস্বর যর্থাথ ছিল না।তিনিই আজকের অমিতাভ বচ্চন! একজন স্কুল শিক্ষক অংকে মনযোগী না হওয়ায় এবং ছোট্ট অংক করতে না পারায় এক ছাত্রকে বলেছিলেন ঃ তুমি জীবনে কিছুই হতে পারবে না।সেই বালক বড় হয়ে হয়েছিলেন মস্তবড় বিজ্ঞানী। তার নাম আলবার্ট আইনস্টান।
উপরের উদাহরণ গুলোর সারমর্ম হচ্ছে ঃ যিনি কখনো পরাজিত হন,লক্ষ্যহীন হন না,তিনিই প্রকৃত বিজয়ী। মানুষের মস্তিষ্ক এক অসাধারণ বায়ো-কম্পিউটার।এই কম্পিউটারে যে মানুষ যে রকম প্রোগ্রাম করবেন,তিনি সেরকম ফল পাবেন।যিনি হতাশ হয়ে নিজেকে বলবেন,তার দ্বারা কিছুই হবে না,তিনি জীবনে ব্যর্থ হবেন। আর যিনি হাজারো প্রতিক’লতার মাঝেও যিনি বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখবেন,তিনি ঠিকই তা করে ফেলবেন।বিশ্বাস বা প্রোগ্রামিং হয়ে গেলে বায়ো কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করে বিজয়ের মালা পরিয়ে দিবে আপনাকে।সাফল্যের জন্য যা কিছু করতে হয়,মন শরীরকে দিয়ে স্বতঃস্ফ’তভাবে করিয়ে নেবে।বাস্তব কখন কখন কল্পনার চেয়েও অবিশ্বাস্য হয়। কেউ যদি বলে আমি পঁচিশ বছর বয়সে আমি অর্ধ পৃথিবীর সম্রার্ট হবো-কথাটা গাঁজাখুরি বলে উরিয়ে দেবেন অনেকে,কিন্তু আলেকজান্ডার তা হয়েছিলেন।
মানুষ তার স্বপ্নের চেয়েও বড় হতে পারে।মানুষ যা আশা করে তা যদি সে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারে।
তাহলে তা সত্যিই পেতে পারে-এটাই হচ্ছে জীবনের ধর্ম।এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।মানুষ যে তার স্বপ্নের সমান বড় হয় তা আমাদের চারপাশের যে সফল মানুষ আছেন তাদের কাছে জানতে চাইলেই আপনি জানতে পারবেন।বাংলাদেশের অন্যতম সেরা কেয়া কসমেটিকস-এর স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালিক পাঠান ছোট বেলায় স্বপ্ন দেখতেন ব্যবসা করে অনেক টাকার মালিক হবেন।তিনি বলেন যখন ক্লাস তৃতীয় শ্রেণী বা চতুর্থ শ্রেণীতে স্কুলে যাওয়ার সময় বাবা টিফিন বাবদ আট আনা বা বার দিতেন,সেখান থেকে টাকা জমিয়ে কিনতেন চকলেট,বিস্কুট আর রাস্তার পাশে বসে বিক্রি করতেন কিচু লাভ হতো।এভাবেই লাভের লোভে পড়ে গেলাম।বন্ধুর সাথে শুরু করলাম মুরগির ব্যবসা ।স্থানীয় বাজার থেকে কিনে দূরের বাজারে বিক্রি করতাম।লাভের টাকা খরচ করতাম না ফলে মূলধন বাড়তে লাগল। মুরগি ব্যবসায়ী হওয়াটা আমার পরিবারে কেউই পছন্দ করত না । তাই মুরগি কিনে রাখতাম বন্ধুর বাসায় রাখতাম । একদিন সে বলে মুরগিগুলো শেয়ালে নিয়ে গেছে।মুরগির কিছু পাখনা আর মায়াকান্না দিয়ে ভুলানোর চেষ্টা কলো।কিন্তু আমি বুতে পারলাম কোন শেয়াল ওগুলো খেয়েছে।বুক ফেটে কান্না আসছিল আমার সব পুজি শেষ,আর বুঝি ব্যবসায়ী হতে পরলাম না।কিছুদিন পর নানা বাড়ী গেলাম।বহু কষ্টে অল্প কিছু টাকা যোগার করলাম নতুন ভাবে ব্যবসা শুরু করলাম।এবার আর কোন অংশীদার নয়।পাইকারী কিনে রাস্তার পাশে বসে খুচরা বিক্রি করি।স্বধীনতার যুদ্ধের অটো-প্রমোশনটা বাধা সাধলো ব্যবসায় ।এক লাফে ক্লাস ফোর থেকে সিক্স-এ।বাবার কড়া হুকুম অনেক হয়েছে আর নয়,পান-বিড়ি বিক্রি বাদ দিয়ে মন দিয়ে লেখাপড়া কর। সুতরাং ব্যবসার অদম্য ইচ্ছাটাকে মনের খাঁচায় পুরে রেখে পড়ালেখায় মনোনিবেশ।পরিনামে ১৯৭৮সালে মেট্রিক পাস।এর মাঝে আরেক ঘটনা শুধু প্রেম নয় একেবারে বিয়ে।মেনে নিল না কোন পক্ষই।আমার স্ত্রী তার জমানো ৬০০ টাকা হাতে তুলে দিল।এই টাকাই আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখালো ।শুরু করলাম লাকড়ির ব্যবসা।এর মাঝে স্ত্রী তার পরিবার থেকে পাওয়া গয়নাটিও আমার হাতে তুলে দিলো বিক্রি করে পেলাম হাজার পাঁচেক টাকা।পুকুর লিজ নিয়ে রুই মাছের পোনা ছাড়লাম।কিন্তু পোনা বড় হতে লাগবে তিন বছর ।অতদিন ধৈর্য ধরারমত সময় বা সামর্থ কোনটাই আমার ছিল না। অতএব এক বছরের মাথায় বিক্রি করে আবার শুরু করলাম লাকড়ির ব্যবসা।এতদিনের আপ্রাণ চেষ্টা শ্বশুর মহাশয়ের দৃষ্টি কাড়লো,মন গললো তার,বাহ ছেলেটা তো বেশ পরিশ্রমী! তিনি তার ইটের খোলায় চাকরি দিলেন ।কেরানির চাকরি বেতন ৬০০টাকা ।কিনতু সেখানেও বেশিদিন কাজ করা হলো না।মাথায় তো ব্যবসা কওে অনেক টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন । চাকরি ছেড়ে কিস্তিতে প্রগতি থেকে একটা ট্রাক কিনলাম।৪০হাজার নগদ,বাকিটা সুদে পরিশোধ করতে হবে।ট্রাক তো হলো।
এবার চালাতে হবে ।ড্রাইভার রাখলাম,তার সাথে থেকে ট্রাক চালানোটাও শিখলাম মাত্র ১৫ দিনে।এবার পথে নামার পালা। দিনে ড্রাইভার আর রাতে আমি চালাই এতে ডাবল আয়।এভাবে ৬ মাসে বেশ কিছু পুজি হতে এল।টাকা জমাতাম পূবালী ব্যাংকে।একদিন ব্যাংকের অফিসার বললেন ,ইটের ভাটা বানান,প্রয়োজনে ঋণ নেন। আমরা সহায়তা করবো।প্রস্তাবটা মনে ধরলো। আমি জমি কিনে ফেললাম।এবার ব্যাংক বেঁকে বসলো,আমাকে ঋণ দেবে না। আমি পড়লাম মহাবিপদে,ঋণ দেবেন না তো আগে বড় বড় কথা বলেছিলেন ক্যান? বিষয়টি আমার শ্বশুরের কানে গেল। কী মনে করে তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন। ২লাখ টাকা ঋণ দিলেন পরের বছর সোনালী ব্যাংক থেকে পেলাম ৩ লাখ টাকা।একে একে পাঁচ পাঁচটা ইট ভাঁটা হলো।
এবার স্বপ্ন দেখলাম ,নিটিং এন্ড ডাইং গার্মেন্টেস করবো।ব্যংিক ঋণ দেবে না।একজন কর্মকর্তা বললেন তুমি মাত্র মেট্রিক পাস।ইটের ব্যবসা করছো,তাই করো।নিটিং এন্ড ডাইং ১০০ ভাগ রপ্তানি ব্যবসা।বিদেশী ক্রেতা আসবে তাদের সাথে ইংরেজীতে কথা বলতে হবে ।এটা তোমার কর্ম নয়। আমি বুঝাতে চাইলাম,বিদেশ থেকে ক্রেতা এসে আমার মালের কোয়ালিটি দেখবে।আমি ইংরেজী জানি কিনা সেটা দেখবে না।তাদের বুঝানোর জন্য ইংরেজী জানা লোক তো থাকবেই।কিন্তু ব্যাংকারগণ সদয় হলেন না।
আমারও গেল জেদ চেপে। ভারত থেকে ১৮টি নিটিং মেশিন কিনে নিয়ে এলাম।কাজ শুরু হলো পুরোদমে।এক পর্যায়ে ব্যাংকের লোকজন বুঝলো,ইংরেজী না জেনেও এই লাইনে ব্যবসা করা যায়,সফল হওয়া যায়।ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সবকিছু দেখে গিয়ে ঋণ বরাদ্দ করলেন ১কোটি ৫ লাখ টাকা। আমিও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
এখন আমার শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি বছর ৪০কোটি টাকার কাপড় রপ্তানি করছি।সেখানে প্রায় ৩হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।সবশেষে হাত দিয়েছি কসমেটিক তৈরিতে। শুরু করেছি কেয়া নারকেল তেল ,পাউডার আর সাবান দিয়ে।
শিল্পপতি আব্দুল খালেক পাঠান বলেন“আমি মনে করি সততা ও পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।এর সাথে মেধা ও স্বপ্নের যোগ হলে সফলতা আসবেই।কখনো অন্যকে ঠকিয়ে বড় হওয়া যায় না। আমার সেই মুরগি ব্যবসার অংশীদার বন্ধুটি কিন্তু এখনো একটি কারখানার কর্মচারিই আছে।”
আপনার চোখে কোন স্বপ্ন আছে কি বন্ধু বর্তমান যান্ত্রিক জীবন মানুষকে এতই ব্যস্ত করে তুলেছে যে আমাদের কাছে স্বপ্ন দেখার মতও সময় নেই।রাত দিন কীভাবে কেটে যায়,এক মাসের পর আরেক মাস চলে আসে,কেউই কিছুই জানতেই পারে না।বন্ধ!ু স্বপ্নই মানুষকে জীবন যুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা প্রদান করে। স্বপ্ন না থাকলে আজ পৃথিবীতে কোন আবিষ্কার হত না। ঘুমের মধ্যে সবাই স্বপ্ন দেখে কিন্তু আমি খালি চোখে স্বপ্ন দেখার কথা বলছি,এ স্বপ্ন ঘুমের স্বপ্ন নয়-তা হলো আপনি কি পেতে চান,কোথায় যেতে চান,প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির স্বপ্ন।যে স্বপ্নের জন্য আপনি মরতেও রাজি এমন স্বপ্ন।যদি স্বপ্ন থাকে তবে আপনি তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করবেন,নাকি তা কখনো পূরণ হবে না ভেবে নিয়েছেন।বন্ধু! ডনজের স্বপ্নকে কখনও আড়ল করবেন না।স্বপ্ন না থাকলে আপনি কখনও উন্নতি করতে পারবেন না, কারণ স্বপ্নই জীবনের জ্বালানী।তাই নিজের চোখ বন্ধ করে একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখে নিন।তারপর তা পূরণের প্রতিজ্ঞা করুন এবং কাজে লেগে পড়–ন।এই স্বপ্ন পূরণের জন্য দৃষ্টিপাত করুন,সমস্ত ঝুকি গ্রহণ করুন সাহসের সাথে।এই স্বপ্নটাকে লিখে ফেলুন এবং সেটাকে লাগিয়েদিন বাসায় যেখানে আপনি বেশি সময় অতিবাহিত করেন সেখানে যাতে যতক্ষণ না আপনি তা পূরণ করতে পারছেন ততক্ষণ যেনও তা আপনাকে ধরে নাড়াতে পারে।
আপনি কোথায় আছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়,আসলে আপনি কোথায় যেতে চান সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।মানুষের প্রতিটি অগ্রগতির বাস্তব হওয়ার পূর্বে তা কল্পনায় গড়ে উঠেছিল-ছোট-বড় আবিস্কার,চিকিৎসার নতুন খোঁজ,ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিজয়,ব্যবসায় সাফল সবই সত্যি হয়ে উঠার পূর্বে তা ছিল স্বপ্ন মাত্র। মানুষ স্বপ্ন দেখতে না পারলে কিছু তৈরী করতে পারত না।তাই বিজ্ঞানী আইনস্টান বলেছেন “ জ্ঞানের চেয়েও কল্পনা (স্বপ্ন) অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লক্ষ্য অর্থাৎ (স্বপ্ন) অভীষ্ট উদ্দেশ্য। লক্ষ্য শুধুই অলীক স্বপ্ন নয়-এটা তেমন স্বপ্ন যা বাস্তবায়িত করা হয়।লক্ষ্য “ যদি আমি পারতাম ” এর আবছা অস্পষ্ট ধারণার চেয়ে অনেক বড়।লক্ষ্য অর্থাৎ “ যার জন্য আমি তৎপর হয়ে কাজ করি।” লক্ষ্য স্থির না পর্যন্ত কিছুই করা সম্ভব নয়,প্রথম পদক্ষেপটি পর্যন্ত নেয়া অসম্ভব।লক্ষ্যহীন মানুষ বিভ্রান্ত,জীবন নদীতে সে হয় নদীতে মাঝিহীন নৌকার মত,নদীতে নৌকা যেমন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে কিন্তু তীরে ভিড়তে পারে না তেমনি মানুষও হোঁচট খেতে খেতে এগোয় বটে তবে যেহেতু তার কোন গন্তব্য জানা নেই তাই কোথাও পৌঁছাতে পারে না।
জীবনের জন্য যেমন বায়ুর প্রয়োজন,তেমনি জীবনে বড় হওয়ার জন্য প্রয়োজন স্বপ্নের ।স্বপ্ন ছাড়া কেউই হঠাৎ সফল হয় না। হাওয়া যেমন বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন তেমনি আপনি বা আমি কোথায় পৌঁছতে চাই সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা চাই।শুরু করার আগে কোথায় যাব তা স্থির দরকার।মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির মত আগে থেকে পরিকল্পনা তৈরী করুন।আমি ,আপনি ,আমরা নিজেরাও তো বকে একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান।আপনার ,আমার দক্ষতা ,প্রতিভা ও ক্ষমতা আপনার ,আমার “পণ্য”।আপনি নিজের পণ্য বিকশিত করতে চান,কারণ আপনি চান তার প্রাপ্য সর্বাধিক মূল্য।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা করতে আপনাকে এই ধারণাটি সহায়তা দিতে পারে ।তা হলো-নিজের ভবিষ্যতকে ৩টি ভাগে ভাগ করা।যেমন ঃ-(১)কর্মক্ষেত্র (২)পারিবারিক (৩) সামাজিক,এভাবে জীবনটাকে ভাগ করতে পারেন। আবার ইচ্ছে করলে আরো বেশি ভাগে ভাগ করতে পারেন।জবিনের সম্পূর্ণচিত্রটা দেখতে পারবেন।জীবনের কাছ থেকে কি পেতে চান ? কিভাবে নিজেকে সন্তুষ্ট করা যায় তা জানতে পারবেন এবং আপনার স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হবে।জীবনের ৩টি বিভাগই একে অপরের সাথে যুক্ত।প্রত্যেকটি বিভাগকে যে বিভাগটি সবচেয় বেশি প্রভাহিত করে তা হলো আপনার কাজ।
আদিম যুগে মানুষ যখন গুহায় বসবাস করত তখন তাদের মাধ্যে যে সবচেয় সুদক্ষ শিকারী হত তাকে সবাই শ্রদ্ধা করত,তার পারিবারিক জীবন ছিল সবচেয় সুখময়।সাধারণভাবে আজও সেই নিয়মগুলো কিন্তু সমান ভাবে প্রযোজ্য।কর্মক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের উপর পারিবারিক জীবনের গুণমান ও সামাজিক জীবনের সম্মান নির্ভরশীল।
আমাদের সকলের আশা থাকে যে আমরা সবাই সফল হবো,মনের মত কাজ করার স্বপ্ন থাকে।তবে মাত্র কয়েকজন সেই স্বপ্নের অনুগামী হই।আমরা আমাদেও স্বপ্নকে সফল করার বদলে তা প্রাণে মেরে ফেলি । স্বপ্ন পূরণের পথে ৫টি বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।এগুলো প্রাণ ঘাতক।যথাঃ-
১।নিজের মূল্য হ্রাস করা থেকে বিরত থাকুন।
২।নিরাপত্তা কর্মীর“সিকিউরিটাইস”,যারা বলেন ‘আমার কাজে নিরাপত্তা আছে’ তারা এই অস্ত্র দিয়ে নিজের বড় স্বপ্নগুলোকে হত্যা করেন।
৩।প্রতিযোগিতার ভয় :-“ঐ কাজে প্রচুর লোক রয়েছে,ওখানে তেমন সুবিধা করতে পারব না ” এই সহজ মন্তব্যই আপনার স্বপ্ন হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ সম্পর্কে সজাগ থাকুন।
৪।অভিভাবকের শাসনঃ- হাজার হাজার তরুণদের এরকম মন্তব্য করতে নিশ্চিয়ই আপনি শুনেছেন “ আমি অন্য কিছু করতে চাই,কিন্তু মা-বাবা যে এটা চান না।” এর মাধ্যমে অকালেই নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দিবেন না।
৫। পারিবারিক দায়িত্বঃ- “৫ বছর আগে জীবিকা বদলালে বেশ হত,কিন্তু এখন পরিবার আছে,দায়িত্ব বেড়েছে,এখন সম্ভব না।”
স্বপ্ন হত্যা করার এই অস্ত্রগুলো ছুড়ে ফেলে দিন।লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যারা সফল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হয়েছেন। তাদের জীবন ধারার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি স্বপ্ন।স্বপ্নের কাছে আত্মসমর্পন করুন।সতিকার শর্তহীন সমর্পণ।সেই স্বপ্নই যেন আপনার জীবনের ধ্যান,জ্ঞান,ব্রত হয়ে উঠে,স্বপ্নের বাস্তবায়ন সময়ের ব্যাপার মাত্র।কখনও কখনও মনে হতে পারে যে কেউ কেউ বুঝি একেবারেই রাতারাতিই সফল হয়ে যায় কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে “ হঠাৎ-সফল ” মানুষের জীবনের ইতিহাস পর্যবেক্ষণ করলে দেখতে পাবেন,স্বপ্নের জন্য তাদেও প্রচুর পরিশ্রমের বুনিয়াদ। সুন্দও বাড়ি তুলতে যেমন পাথরের টুকরোগুলোর প্রয়োজন। সেগুলোর আলাদা হয়ত তেমন মূল্য নেই,সেই রকম ভাবে টুকরো টুকরো করে সফল জীবন গড়ে তুলতে হয়।
সৃষ্টিকর্তার কাছে সব মানুষ সমান। তাই তিনি সবাইকে বড় হওয়ার জন্য ,জীবনে বড় কিছু অর্জন করার জন্য স্বপ্ন দেন।যারা তাঁর স্বপ্নটা দেখামাত্র চিনতে পারেন এবং স্বপ্ন পূরণের জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন তা করেন ,তাদেন জীবনেই স্বপ্ন পূরণ হয়।আর যারা স্বপ্নটা মাঝ পথে ছেড়ে দেন,তারা সাধারণ জীবন যাপন করেন।আবার আরেক ধরণের মানুষ আছেন যারা স্বপ্ন দেখার সাহসই রাখেন না। তাদের জীবনে দুঃসময়ের শেষ থাকে না।
আপনার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবতন করতে পারলে আপনিও হতে পারবেন সফল।এর জন্য চাই স্বপ্ন দেখার সাহস,কল্পনাশক্তি এবং স্বপ্নের প্রতি পরিপূর্ণ বিশ্বাস রাখার সাহস।আপনার অসম্পূর্ণ ক্ষমতা আয়ত্বে আনা,সব শক্তি কাজে লাগানোর একমাত্র উপায় হলো মনের মত কাজ করা। স্বপ্নের নিকট আত্মসমর্পণ করা।আপনি যদি স্বপ্নের নিকট আত্মসমর্পণ করতে পারেন,তাহলে আপনি উৎসাহ-উদ্দিপনা,শক্তি,মনোবল,এমন কি সুস্বাস্থ্যও পাবেন।আর স্বপ্নের নিকট আত্মসমর্পণের কোন নির্দিষ্ট বয়স সীমা নেই।
জর্জ ফোরম্যান ১৯৯৪ সালে ২০ বছর পর মুষ্টিযুদ্ধের খেতাবী লড়াইয়ে জয়ী হয়ে প্রমাণ করেছিলেন স্বপ্নের নিকট আত্মসমর্পণের কোন বয়স সীমা নেই,যদি সমর্পণ করা যায় তা হলে জয় সুনিশ্চিত।১৯৭৪সালে মোহাম্মদ আলীর হাতে নক আউট হওয়ার ২০ বছর পর ১৯৯৪সালে ৪৫ বছর বয়সে ২৬ বছরের মাইকেল মুরারকে পরাজিত করে বক্সিং এর খেতাবী লড়াই জেতার মত অসম্ভবকে তিনি সম্ভব করেছিলেন ,তার স্বপ্নের জোড়েই। জেতার পর সংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন কিভাবে সম্ভব করলেন এই অসম্ভব কাজটি ? সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিনে “স্বপ্ন দেখে,২০ বছর ধরে বিজয়ের এই স্বপ্নই-তো আমি সব সময় দেখেছি।বয়স বাড়লেই মানুষ তার স্বপ্ন বিসর্জন দেয় না।” আপনি মনে প্রাণে যা চান তা পাবেনই।
আপনি যতই বড় হবেন নিজেকে আলাদা করে আবিষ্কার করবেন।আপনি যা চান,যা বিশ্বাসকরেন,যে ভাবে ভাবতে ভালবাসেন,হয়তো কিছুই মিলবে না।একেবারে কাছের মানুষদের সাথে,কিন্তু নিজের স্বপ্নের সাথে আপোস করবেন না।নিজেকেও ভালবাসতে হয়। আগে নিজেকে ভালবাসুন ,তারপর অন্যকে।বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক।আপনার জীবনেও স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা-বিপত্তি আসতে পারে।বৃষ্টি হলে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে যেমন ছাতা বা বৃষ্টির পোশাক ব্যবহার করেন,নিজের স্বপ্নকেও সেভাবেই রক্ষা করতে হবে আপনাকে। আপনার মাঝেই আছে আলোর দ্যুতি।আপনিও হতে পারবেন আপনার স্বপ্নের সমান বড়।
কারণ আপনি জীবনের প্রথম সংগ্রামে জয়ী হয়েই পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছেন।বিশ্বাস হচ্ছে না তাহলে চিন্তা করুন এমন একটি প্রতিযোগিতার কথা যেখানে ৫০কোটি প্রতিযোগি আর মাত্র একজনেরই বেঁচে থাকার জায়গা আছে যে আগে পৌছাতে পারবে সেই বেঁচে থাকবে আর বাকী সবাই মারা যাবে।জন্মের বিস্ময়কর নিয়মে পিতার দেহ থেকে যে ৫০ কোটি শুক্রাণু প্রতিযোগিতায় নামে এর ১টি মাত্র প্রতিযোগি মাতৃগর্ভে প্রবেশ করে দীর্ঘ দশ মাস দশদিন মায়ের শরীরে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার সুযোগ পায়;তারপর পূর্ণাঙ্গ মানব শিশু রুপে পৃতিবীতে আসে।আপনি সেই প্রতিযোগি যে ৫০কোটি প্রতিযোগির সবাইকে হারিয়ে দিয়ে বিজয়ী হয়েছেন,তার গৌরব কত বড়! কত বড় সৌভাগ্য আর যোগ্যতার বিজয় এটা!
আপনি নিজেই এরকম একজন বিজয়ী বীর! আমরা যারা পৃথিবীর আলো দেখেছি,সবাই এমনই এক-একজন বিজয়ী বীর। অবিশ্বাস্য কঠিন প্রতিযোগিতায় অসাধারণ যোগত্যার বলে বিজয়ী আমরা প্রত্যেকে ।তাই বলা যায় জীবনের প্রতিটি সংগ্রামে জয়ী হবেন,যদি প্রতিটি স্বপ্নকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারেন। স্মরণীয় বরণীয়রা বিশ্বাস নামক প্রোগ্রামিং দিয়েই মস্তিষ্করূপী মহা জৈব কম্পিউটারকে ব্যবহার করেছেন।স্বপ্নের প্রতি বিশ্বাস একবার গেঁতে গেলে জৈব কম্পিউটার স্বংক্রিয়ভাবে সাফল্যের পথে আপনার সমগ্র অস্তিত্বকে কাজে নিয়োজিত করবে। সহজ স্বতঃস্ফ’র্ত ভাবে অনিবার্য জয়ের লক্ষ্যে পরিচালিত হবে আপনার সকল কর্মকান্ড,যার ফলে বিজয় আপনার পদচুম্বন করবে।আর ইতিহাসের পাতায় লেখা হবে আপনার নাম কালজয়ী এক সফল মানুষ হিসেবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১০ দুপুর ২:৩৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



