নিজে বুদ্ধিমান (?) হয়ে বুদ্ধিমত্তার পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ চাওয়াটা যেমন বোকামী তেমনি আবার নিজের শরীর ডিজাইন্ড (?) হওয়া সত্ত্বেও ডিজাইনের পক্ষে বৈজ্ঞানিক প্রমাণ চাওয়াটাও কিন্তু চরম মূর্খামী। মানুষের বুদ্ধিমত্তার অস্তিত্ব কি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করার দরকার আছে! মানুষ সহ মিলিয়ন মিলিয়ন প্রজাতির শরীর যে অসম্ভব রকমের ডিজাইন করা – সেটারও কি পরীক্ষামূলক প্রমাণ দরকার! যুক্তিবাদী কারো কাছে এগুলোর পক্ষে প্রমাণ দরকার আছে বলে মনে হয় না।
যাহোক, একটি মেশিনের প্রস্তুতপ্রণালী বা কার্যপ্রণালী কোনো ভাবে ব্যাখ্যা করতে পারা মানে কিন্তু এই নয় যে, সেই মেশিনের কোনো মেকার নেই; যদিও নাস্তিকরা এমনটাই বলার চেষ্টা করেন। শিশু বাচ্চাদের মতো বড় বড় নাস্তিকরাও সবকিছু হাত দিয়ে ছুঁয়ে কিংবা নিদেনপক্ষে চোখে দেখে বিশ্বাস করতে চায়। যাহা কিছু হাত দিয়ে ছোঁয়া যায় না অথবা চোখ দিয়ে দেখা যায় না তাহার কোনো অস্তিত্ব নাই! পরীক্ষামূলক অথবা পর্যবেক্ষণলব্ধ প্রমাণ ছাড়া তারা কোনো কিছুতে বিশ্বাস করতে নারাজ। তারা মনে হয় হাবল টেলিস্কোপে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে স্বচক্ষে দেখেই তবে বিশ্বাস করতে চায়! তাহলে তো যুক্তি ও দর্শনের দরজা আজই বন্ধ করে দেয়া উচিত! এমনকি রিচার্ড ডকিন্সের মতো নাস্তিককেও বলতে শোনা যায়, “এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার পক্ষে সামান্যতমও কোনো প্রমাণ নেই।” মজার ব্যাপার হচ্ছে কী ধরণের প্রমাণ দেখালে তারা স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করবেন – সেটাও মুখ ফুটে বলেন না! তাহলে ক্যামনে হবে বাবা! পৃথিবীর ঘূর্ণনের পক্ষে যথেষ্ট পরীক্ষামূলক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কিন্তু কেউ কেউ পৃথিবীর ঘূর্ণনে বিশ্বাস করে না! তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, পরীক্ষামূলক প্রমাণই সবকিছু নহে। পরীক্ষামূলক প্রমাণ ছাড়াও অতিরিক্ত ‘কিছু একটা’ দরকার হয়, যেটি নাস্তিকদের মধ্যে নেই। একজন যুক্তিবাদী মানুষ যদি মাত্র দুটি বিষয় নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেন সেক্ষেত্রে স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাসের বিকল্প কোনো পথ খোলা থাকার কথা নয়:
ডিম থেকে পূর্ণাঙ্গ ছানার বিবর্তন: ডিম জিনিসটাই আসলে অসাধারণ একটি মিরাকল। একটি বদ্ধ পাত্রের মধ্যে এক প্রকার তরল পদার্থকে ঘিরে আরেক প্রকার তরল পদার্থ থাকে অথচ একে অপরের সাথে মেশে না। ডিমকে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে তাপ দিলেই কি তার ভেতরের তরল পদার্থ থেকে এমনি এমনি রক্ত-হাড়-মাংসের গড়া জীবন্ত একটি ছানা বেরিয়ে আসে? তাই নাকি! এ-কি সায়েন্স নাকি সায়েন্স ফিকশন!
অতি তুচ্ছ শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে শুরু করে পূর্ণাঙ্গ মানুষের বিবর্তন: শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর উৎস নিয়ে না হয় না-ই বা মাথা ঘামালেন। ধরেই নেয়া যাক যে প্রকৃতিতে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু আছে। নিয়ন্ত্রিত কোনো শক্তি ও সঙ্কেত ছাড়াই শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে ধীরে ধীরে রক্ত-হাড়-মাংসের গড়া আস্ত একটি প্রাণী বা মানুষ তৈরী হয়? এ তো দেখি ডেভিড কপারফিল্ডকেও হার মানানো ম্যাজিক!
শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে রক্ত-হাড়-মাংসের গড়া মানুষের মতো বুদ্ধিমান ও অত্যন্ত জটিল একটি মেশিন তৈরী হতে হলে প্রতি মুহূর্তে নিয়ন্ত্রিত শক্তি ও সঙ্কেত (Code and Directional Force) দরকার। কোনো রকম সঙ্কেত ছাড়া জীবকোষ কেনো ও কীভাবে বৃদ্ধি পায়? তাছাড়া শুধু কোষ বৃদ্ধি পেলেই কিন্তু হবে না। কারণ একটি কোষ কোনো রকম নিয়ন্ত্রিত সঙ্কেত ছাড়া বৃদ্ধি পেতে থাকলে কিম্ভূতকিমাকার কিছু একটা তৈরী হবে। কিন্তু একজন মানুষের পূর্ণাঙ্গ রূপ কে দেবে? মাথার জায়গাতে মাথা – ব্রেন এর জায়গাতে ব্রেন – কানের জায়গাতে কান – চোখের জায়গাতে চোখ – নাকের জায়গাতে নাক – মুখের জায়গাতে মুখ – নিপলের জায়গাতে নিপল – নাভির জায়গাতে নাভি – লিঙ্গের জায়গাতে লিঙ্গ – হৃৎপিণ্ডের জায়গাতে হৃৎপিণ্ড – কিডনির জায়গাতে কিডনি – হাতের জায়গাতে হাত – পায়ের জায়গাতে পা – আঙ্গুলের জায়গাতে আঙ্গুল – অসংখ্য শিরা-উপশিরা – ও পরিপাকতন্ত্র সহ অত্যন্ত জটিল ও সূক্ষ্ম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো কেনো ও কীভাবে তৈরী হয় এবং কীভাবেই বা ঠিক-ঠাক জায়গামতো বসে যায়? বিজ্ঞান কিন্তু কোনো কালেই এই ‘কেনো’ প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে না। নিজের শরীরের প্রত্যেকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের দিকে গভীরভাবে মনোযোগ দিয়ে একবার ভেবে দেখুন, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু থেকে এমনি এমনি একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ তৈরী হওয়া আদৌ সম্ভব কি-না এবং সেই সাথে নাস্তিকরা যে কতবড় অন্ধ বিশ্বাসী সেটাও বুঝতে সুবিধা হওয়ার কথা নয়।
একটি পাত্রে কিছু পানি ও বালিকোণা রেখে দিলেই কি সেখানে থেকে ধীরে ধীরে সুন্দর একটি মূর্তি তৈরী হবে? একটি জায়গাতে কিছু ইট-পাথর-সিমেন্ট-বালি রেখে দিলেই কি সেখানে থেকে ধীরে ধীরে বিশাল একটি টাওয়ার তৈরী হবে? কারো হস্তক্ষেপ ছাড়াই সামান্য একটি বীজ থেকে ধীরে ধীরে বিশাল একটি গাছ তৈরী হয়? তারপর আবার ফল-মূলও ধরে? বললেই হল নাকি! এর চেয়ে বড় কল্পকাহিনী আর কী হতে পারে! মজার ব্যাপার হচ্ছে বড় বড় নাস্তিকরা ম্যাজিক ও সুপার-ন্যাচারাল এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে তারা নিজেরাই আবার মহা-ম্যাজিক ও মেগা-ন্যাচারাল-এ বিশ্বাস করেন! এই বিস্ময়কর প্রপঞ্চগুলোকে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন প্রকৃতির মাধ্যমে আদৌ কি ব্যাখ্যা করা সম্ভব? এ ছাড়াও প্রকৃতিতে মিলিয়ন মিলিয়ন প্রমাণ আছে। অথচ প্রফেসর ডকিন্স নাকি একজন প্রকৃতি বিজ্ঞানী! উনি হয়ত সবই বোঝেন কিন্তু কিছু পয়সা কামানোর ধান্দা আর-কি – যাকে বলে নাস্তিক পাদ্রী! অথবা উনি হয়ত অহমিকায় ভুগছেন। উনার লিখা বইগুলো পড়ে কতজন যে নাস্তিক তথা ডেলিউডেড হয়েছে কে জানে – যাকে বলে ‘দ্যা ডকিন্স ডেলিউশন’! পশ্চিমা বিশ্বে "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" নামক ট্যাবলেটকে বিজ্ঞান ও নাস্তিকতার সুমিষ্ট প্রলেপ দিয়ে এমনভাবে গেলানো হয়েছে যে, অনেকেই "এই ট্যাবলেটের মধ্যেই সবকিছু লুক্কায়িত আছে" বলে বিশ্বাস করা শুরু করেছেন! যাকে বলে আলাদিনের ট্যাবলেট! এই বিশাল মহাবিশ্ব ও প্রথম সৃষ্ট জীবকে না হয় বাদই দেয়া হলো। এমনকি প্রকৃতিতেই এত বেশী ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য আছে যে, সেগুলোকে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন তত্ত্বের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে যাওয়া এবং সেটিকে আবার "বৈজ্ঞানিক" বলে চালিয়ে দেয়া মানে নিজেকেই বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন বানানো!
কেউ যদি দাবি করেন এই বলে যে গাধা একটি পেন্টিয়াম মেশিন বানিয়েছে, তাহলে কেমন শুনাবে! পাথর একটি পেন্টিয়াম মেশিন বানিয়েছে বললে কেমন শুনাবে! পাথর একজন মানুষ বানিয়েছে বললেই বা কেমন শুনাবে! হ্যাঁ, নাস্তিকদের কাছে এরকম ঘটনা মোটেও আশ্চর্যের কিছু নয় এবং সেই সাথে বৈজ্ঞানিকও বটে! তারা হয়ত তেড়ে এসে বলবেন, "‘এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন’ এবং ‘দীর্ঘ সময়’ নামক দুটি ট্যাবলেট আছে না? পাথর মানুষ বানাতে পারে না ঠিকই কিন্তু পাথর থেকে মানুষ তো ইভল্ভ করতে পারে!” আর এখানেই তাদের চালাকি! তারা এই ‘ইভল্ভ’ ও ‘দীর্ঘ সময়’ নামক দুটি ট্যাবলেটই আমজনতাকে আচ্ছামতো খাওয়াচ্ছেন! মানুষের বুদ্ধিমত্তাও কি "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" এর মাধ্যমে ইভল্ভ করে? ফিজিক্যাল ল্য? পশু-পাখিদের গায়ের ডোরাকাটা দাগ ও হরেকরকম কালার? ফল-ফুলের স্বাদ ও সুগন্ধ? কোনো যুক্তিবাদী মানুষ কি প্রমাণ ছাড়া মিলিয়ন মিলিয়ন রকমের ফল-মূলকে একটি বীজ থেকে ইভল্ভ করেছে বলে মেনে নিতে পারবেন? তাছাড়া প্রথম বীজ-ই বা এলো কোথা থেকে?
নাস্তিকদের একটিই ‘সুবিধা’, আর সেটি হচ্ছে তারা বিজ্ঞানের চার্চের মধ্যে মাথা গুঁজে কথা বলেন। মনে হচ্ছে বিজ্ঞানের চার্চের মধ্যে মাথা গুঁজে যাচ্ছেতাই বললেও সেগুলো এমনি এমনি বৈজ্ঞানিক হয়ে যাবে। পরীক্ষামূলক অথবা পর্যবেক্ষণলব্ধ কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিবর্তনবাদকে বিজ্ঞানের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে ‘প্রতিষ্ঠিত সত্য’ বলে অনেক আগে থেকেই অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এখন এসে প্রমাণ দেখাতে বললে বিজ্ঞান-বিরোধী, সৃষ্টিবাদী, ইত্যাদি বলে ফতোয়া দেয়া হচ্ছে। অথচ পরীক্ষামূলক অথবা পর্যবেক্ষণলব্ধ প্রমাণ ছাড়া তারা নিজেরাই কিছুতে বিশ্বাস করতে নারাজ। বিজ্ঞানের আড়ালে যে একটি অন্ধ ও অমানবিক ডগমা প্রচার করা হচ্ছে সেটা স্কুল ছাত্রদেরও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
নাস্তিকরা হয়ত মনে করেন, স্রষ্টার অস্তিত্বে অবিশ্বাস করলেই সকল প্রকার বিশ্বাস থেকে মুক্ত হওয়া যায়! তা মোটেও নয়। প্রকৃতপক্ষে বিশ্বাস ছাড়া বিজ্ঞান সহ সবকিছুই অচল। এমনকি সবাই কম-বেশী অন্ধ বিশ্বাসী। কারণ এমন কিছু নেই যার পক্ষে বা বিপক্ষে প্রমাণের প্রমাণ … প্রমাণের প্রমাণ … প্রমাণের প্রমাণ … দেয়া সম্ভব। অর্থাৎ কোনো-না-কোনো জায়গাতে থেমে যেতেই হয়। এই চরম সত্যটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। যেমন নাস্তিক বিবর্তনবাদীরা পরীক্ষামূলক অথবা পর্যবেক্ষণলব্ধ কোনো প্রমাণ ছাড়াই বিশ্বাস করেন:
- জড় পদার্থ থেকে কোনো এক কালে প্রথম জীব ইভল্ভ করেছে!
- সেই প্রথম জীব থেকে ধাপে ধাপে একদিন একটি মাছ ইভল্ভ করেছে! সেই মাছ থেকে আবার ধীরে ধীরে লক্ষ লক্ষ ধরণের মাছ ইভল্ভ করেছে!
- একটি মাছ থেকে ধাপে ধাপে একদিন একটি সরীসৃপ ইভল্ভ করেছে! সেই সরীসৃপ থেকে আবার ধীরে ধীরে শত শত ধরণের সরীসৃপ ইভল্ভ করেছে!
- একটি সরীসৃপের গায়ে ধীরে ধীরে মসৃণ পাখা ইভল্ভ করে পাখি হয়ে আকাশে উড়তে শিখেছে! সেই পাখি থেকে আবার ধীরে ধীরে হাজার হাজার ধরণের পাখি ইভল্ভ করেছে!
- কোনো এক কালে একটি সরীসৃপ থেকে ধীরে ধীরে একটি পশু ইভল্ভ করেছে! সেই পশু থেকে আবার ধীরে ধীরে হাজার হাজার ধরণের পশু ইভল্ভ করেছে!
- ডাঙ্গা থেকে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কোনো এক কালে ভাল্লুক জাতীয় কোনো প্রাণী থেকে ধীরে ধীরে তিমি ইভল্ভ করেছে!
- বানর জাতীয় প্রাইমেটস থেকে ধীরে ধীরে মানুষ ইভল্ভ করেছে!
- এর ফাঁকে ফাঁকে আবার মিলিয়ন মিলিয়ন ধরণের গাছ-পালা, ফল-মূল, ফুল, শষ্য, কীট-পতঙ্গ, ইত্যাদিও ইভল্ভ করেছে!
- সবগুলো প্রজাতির পুংলিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ একই সাথে এবং পাশাপাশি ইভল্ভ করেছে!
- এর মধ্যে আবার জীবগুলো বিভিন্ন প্রজাতিতে বিভক্তও হয়ে গেছে! কোনো কোনো প্রজাতি সরাসরি ডিম দেয়, কোনো কোনো প্রজাতি আবার সরাসরি বাচ্চা দেয়! ইত্যাদি! ইত্যাদি! ইত্যাদি!
সবকিছুই ‘কোনো এক কালে’ ইভল্ভ করেছে যা তারা নিজেরাই দেখেনি! মজার ব্যাপার হচ্ছে একটি প্রাণী থেকে অন্য একটি প্রাণী ইভল্ভ করার পরও কিন্তু আগের প্রাণী রয়েই গেছে! এগুলো সবই হাস্যকর রকমের কল্পকাহিনী আর অন্ধ বিশ্বাস। এমনকি আধুনিক যুগের পিচ্চিরাও এগুলো শুনে হেসে দেবে। কিন্তু এরকম কথা বলতে প্রফেসর ডকিন্সের মতো ধাড়ী বিবর্তনবাদীরও হাসি পায় না। কারণ হাসি পেলে তো আর বিজ্ঞানের নামে আমজনতাকে বোকা বানানো যাবে না! এগুলোকে আবার গাছ থেকে ভূমিতে আপেল পড়ার মতো সত্যের সাথেও তুলনা করা হচ্ছে! জীব-জন্তুগুলো তো এখনও বেঁচে আছে। তাদের ধরে নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখালেই তো ল্যাটা চুকে যায়। তা না করে এভাবে ছেলে ভুলানোর মানেটা কী!
এই মহাবিশ্ব সহ প্রাকৃতিক জগৎকে আকস্মিক ঘটনার ফলাফল বলে বিশ্বাস করার চেয়ে বড় কল্পকাহিনী ও অন্ধ বিশ্বাস আর দ্বিতীয়টি নেই। নাস্তিকরা এই হতভম্বতা এড়াতে বিজ্ঞানের নামে "এলোমেলো পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন" নামক আলাদিনের ট্যাবলেটের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছেন। এই ট্যাবলেটই এখন তাদের স্রষ্টা! তাছাড়া এই মহাবিশ্বকে আকস্মিক ঘটনার ফলাফল বলে বিশ্বাস করার সাথে সাথে সকল প্রকার যুক্তিতর্কের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। একদম এখানেই থেমে যেতে হয়। অপরদিকে এই মহাবিশ্বকে একজন মহান স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে বিশ্বাস করলে সেই স্রষ্টাকে জানার জন্য যুক্তিতর্ক ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার অসীম পথ খোলা থাকে। অপ্রমাণিত দুটি বিশ্বাসের মধ্যে যুক্তিবাদী মানুষদের তাহলে কোনটাকে বেছে নেয়া উচিত? নাস্তিকরা মনে হয় এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে কখনো ভাবেন না। কারণ তাদের মটোই হচ্ছে সেই বাংলা গান, “দুনিয়াটা মস্ত বড়, খাও দাও আর ফুর্তি করো!”
ধরা যাক, দু’জন লোক নাসা’র একটি ল্যাব ভিজিট করে সেখানে কাউকে না দেখে একজন দাবি করলেন, “এই ল্যাব কারো সাহায্য ছাড়াই ধীরে ধীরে ইভল্ভ করেছে,” এবং অন্যজন দাবি করলেন, “ল্যাবটি নিঃসন্দেহে কেউ ডিজাইন করেছে তবে ডিজাইনার সম্বন্ধে আমি কিছু জানি না।” কোনো যুক্তিবাদি মানুষ কি দ্বিতীয় জনের বিশ্বাসকে কল্পকাহিনী ও অন্ধ বিশ্বাস বলতে পারবেন? নিশ্চয় না। প্রথম জনের বিশ্বাসকেই কল্পকাহিনী ও অন্ধ বিশ্বাস বলবেন। অতএব, আস্তিকরা এই মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে টেলিস্কোপের মাধ্যমে নাস্তিকদেরকে দেখাতে পারছেন না মানে এই নয় যে, স্রষ্টা নেই বা আস্তিকরা অন্ধ বিশ্বাসী। দেখতে হবে এই মহাবিশ্বের জন্য স্রষ্টার দরকার আছে কি-না। উত্তর যদি ‘হ্যাঁ’ হয় তাহলে স্রষ্টাকে টেলিস্কোপে দেখার আর দরকার নেই। কারণ এই বিষয়টি মানুষের ডোমেইনের বাইরে।