২৩ ডিসেম্বর রংপুর কারমাইকেল কলেজের অন্নদা মোহন হল রুমে চলছিল রংপুর বিভাগীয় বিতর্ক কর্মশালা ও উৎসব। বিকাল ৩:৩০ টায় নিভে গেল মঞ্চের লাইট। দর্শক গ্যালারীর পিছন থেকে বিভৎস শব্দ করতে করতে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেল। পরিচয় পাওয়া গেল তিনি একজন ওঝা। শুরু হলো আত্মা হাজির করার জন্য তদবীর ও বিভিন্ন কায়দা কৌশল। মঞ্চে তখন সাদা ধোঁয়া ও আলো-আধারের এক ভৌতিক পরিবেশ। গা ছম্ ছম্ করা ভুতুরে হাসি আর অদ্ভুত শব্দ ভেসে আসছিল কানে।
ওঝা বলে উঠল “এবার আপনাদের সামনে হাজির করব পাগল বাউল লালন ফকিরকে। হা-- হা-- হা--- লালস শাহ এর আত্মা হাজির হ--।”
গেরুয়া পোষাক আর হাতে একতারা নিয়ে “খাচার ভিতর অচিন পাখি কমনে আসে যায়----” গাইতে গাইতে মঞ্চের সাদা ধোঁয়াকে পেছনে ফেলে সবার সামনে স্পস্ট হয়ে উঠল লালন শাহ। লালন শাহ তার কথায় আর গানে সকল জাতিভেদকে পিছনে ফেলে একটি জাতকে প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন, তা হল মানুষ।
এরপর নবাব সীরাজ-উদ-দৌলার বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর এর আত্মা আসে। সে সবার চোখের ধুলো সরিয়ে দিখিয়ে দেয় বর্তমান সমাজের প্রায় সবাই তারই অনুচর। এমনকি অনেকে নিজের সাথে নিজেই বিশ্বাস ঘাতকতা করছে।
তারপর হাজির হয় যুদ্ধবাজ খ্যাত হিটলার এর আত্মা। সেও প্রমান করতে চা্য় সময়ের প্রয়োজনে তিনিই হচ্ছেন সাহসী বীর ও বলিষ্ঠ নেতা।
অবশেষে চোখে চশমা, সাদা পাঞ্জাবীর উপর হাতা কাটা কালো কোট পরে হাজির হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর এর আত্মা। বঙ্গবন্ধু তার বলিষ্ঠ কন্ঠে ৭ মার্চের ভাষন মনে করিয়ে দেয়। বাঙালি জাতির স্বধীনতার সূর্য্যময় পথের দিশারী যে তিনি এবং বাংলাদেশের সাথে তার নামও এক সূত্রে গাঁথা থাকবে, সে কথা জানিয়ে যান।
ওঝার কেরামতি শেষে , সেও চলে যায়।
পূনরায় মঞ্চে আলো জ্বলে ওঠে। অনুষ্ঠানের উপস্থাপক তাজমিন নাহার তিথি এসে জানিয়ে দিলেন- “এতক্ষন আপনারা উপভোগ করলেন বিতর্ক পরিষদ এর সদস্যদের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় প্লানচেট বিতর্ক। বিষয়ঃ আমার ভূবনে আমিই সেরা। ওঝা চরিত্রে ছিলেন গৌরাঙ্গ রায়, লালন শাহ এর চরিত্রে জগন্নাথ মোহন্ত, মীরজাফর চরিত্রে মুরাদ হাসান, হিটলার চরিত্রে আসাদুজ্জামান আসাদ, বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে সজিব তৌহিদ ও স্বর প্রক্ষেপনে সিরাজ-উদ-দৌলা।”