somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি জোসে মারিয়া গুতিরেজ্জে হার্নান্দেজ

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফুটবল সমালোচক দের দাঁত ভাঙা জবাবটা এসেছিলো ক্যাসিয়াস, রাউল এবং তার পা থেকে। তাকে একজন ‘ডাই হার্ড’ মাদ্রিদ ভক্ত বললেও সেখানে থেকে যায় একরাশ অপুর্নতা।

পুরো হৃদয় টাই যেভাবে উজার করেছেন মাদ্রিদের জন্যে তাতে তাকে কতবড় মাদ্রিদিস্তা হিসেবে আখ্যায়িত করা হবে সেখানে থেকে যায় বুক ভরা সংশয়। ২৪ টি বছর আগলে রেখেছেন রাজকীয়দের মিডফিল্ড। ত্রাশ বনেছেন প্রতিপক্ষর কাছে, তছনছ করেছেন তাদের সব পরিকল্পনা। আগুন ঝড়ান দাপটে জয় করেছে হাজারো ফুটবল ভক্তদের মন।

অথচ ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার নাম নেই ফিফার ‘লিজেন্ড ১০০’ এর খাতায়, ঠাঁই হয়নি ‘পেলে-১২৫’ এর পাতায়। কিন্তু যেভাবে খেলেছেন পুরো ক্যারিয়ার মনে হয় ঈশ্বর বুঝি ফুটবলেরই স্বমহিমায় তৈরী করেছেন তাকে।

রাফ খাতায় তার ক্যারিয়ার ফর্ম বিশ্লেষন মিটার স্কেলের পরীক্ষার খাতার সোজা মার্জিনের অন্তরায়। পুরো ক্যারিয়ারটাই পার করেছেন নিখুঁত ফর্মে এক ধারায়। তিনি জোসে মারিয়া গুতিরেজ্জে হার্নান্দেজ। ফুটবল বিশ্বে কাঁপানো দুই অক্ষরে সংক্ষিপ্ত সংস্করণ “গুতি”, যার কম্বিনেশনেই মাদ্রিদ কাটিয়েছিলো দুর্বল একাডেমীর দুর্নাম। বিশ্ব আলোড়িত হয়েছিলো মুখে ঝামা ঘষে দেওয়া একাডেমিক ‘ট্রায়োর’ জবাবে।

৩১ অক্টোবর স্প্যানিশ গ্রামাঞ্চল টর্রেজ্জলন ডি আর্ডজে জন্ম গ্রহন করে গুতি। সালটা ১৯৭৬। বাড়ীর কিছু দূরেই ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। রিয়ালের বুকে জন্মগ্রহন করে ফুটবল পায়ে নিবেন অথচ মাদ্রিদে খেলবেন না তা কি করে হয়
তাকে যুব দলে নিলো রিয়াল মাদ্রিদ গুতির বয়স তখন মাত্র ১০। বুকে নিলেন বৃত্তাকার লোগো, মাদ্রিদিস্তা নীতিতেই ঘটাতে থাকলেন আপন প্রতিভার বিকাশ। এমানিকো তখন সমালোচকদের জবাব দেয়ার স্বপ্নে গড়ে তুলছেন ‘ওয়ারিয়র্স ব্যাটেল’। গুতির সাথে ‘ব্যাটেলে’ যুক্ত হলো দুই কিংবদন্তি রাউল গঞ্জালেজ আর ইকার ক্যাসিয়াস। নিবিড় পরিচর্যা চললো জোড় কদমে।

একে একে টানা ১০ বছর ফুটবল দীক্ষা নিয়ে একজন পরিপূর্ন খেলোয়াড় তৈরী হয়ে জানান দিলেন এবার তিনি প্রস্তত। ভাগ্য দেবতাও সুপ্রসন্ন গুতির ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমে।

সাল ১৯৯৫, ২ ডিসেম্বর সেভিয়ার বিপক্ষে সিনিয়র ক্যারিয়ারে পা দিলেন গুতি লা-লিগা অভিষেকের মাধ্যমে। আর পেছনে তাকাতে হলোনা তাকে এরপর শুধুই ইতিহাস

প্রথম সিজনে ৯ ম্যাচে ১ গোল করার পাশাপাশি লা-লিগা জয় করেন গুতি। তবে মজার বিষয় হলো যুব দলে পাক্কা স্টাইকার থাকা গুতি মূল দলে বনে গেলেন পাক্কা মিডফিল্ডার।

পরের মৌসুমে ট্স কৌশলী হেইংকেসের অধীনে দুর্দান্ত ‘বদলি’ দাপট দেখালেন তিনি। জয় করলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ এবং সুপার কোপা। বিধাতা সোনার হরিন বানিয়ে দিলেন গুতিকে। গুতির অন্তর্ভুক্তির পর সাফল্য যেনো দুহাত ভরে আসছিলো মাদ্রিদের সামনে ।

১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে জন টাসচেকের অধিনে থেকে সুবিধা গড়তে পারলেন না গুতি। সন্তুষ্ট থাকতে হলো ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ নিয়ে। শুরু হলো দেল বস্ক অধ্যায়। অন্যদিকে সাফল্যে ক্ষুধার্থ বাঘ হয়ে থাকা গুতিকে দুর্দান্ত ভাবে ব্যাবহারের প্রচেস্টায় দেল বস্ক।

সেই ধারাবাহিকতায় অল্পদিনেই মিডফিল্ডের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠলেন তিনি। ক্লারেন্স সির্ডফের সাথে ‘অলটারনেট সাবস্টিটিউট’ জুটি আর স্যাভিও-ম্যাকেলেলে ‘কম্বিনেশনে’ অদম্য ঘোড়ায় পরিনত করলেন মাদ্রিদের মিডফিল্ডকে ।

দ্বিতীয় বারের মত উঁচিয়ে ধরলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ, লা-লিগা এবং স্প্যানিশ সুপার কোপা, অদম্য রিয়াল মাদ্রিদ অদম্য গুতি হার্নান্দেজ। পরবর্তীতে জিদান কে সাইন করালো রিয়াল মাদ্রিদ। সংকটে গুতির একাদশে জায়গা পাওয়া। কিন্তু ‘ট্যাক্টিশিয়ান’ দেল বস্ক এমন চাল চাললেন সুযোগ পেলেন উভয়েই।

ইন্টার কনিনেন্টাল, সুপার কাপ, সুপার কোপা, লা-লিগা এবং ৩য় বারের মত চ্যাম্পিয়নস লিগ। মৌসুমে এতগুলো ট্রফি সুপারস্টার গুতির হাতে। পরের মৌসুমেও লা-লিগা জয় করলো রিয়াল।

এরপরেই শুরু খারাপ সময়। মরিয়েন্তেস, ম্যাকেলেলে, স্যাভিও, এমনকি দেল বস্ক মাদ্রিদ ছাড়লেন সবাই কিন্তু আঠার মত রয়ে গেলেন দুই কান্ডারি রাউল এবং গুতি, মাঝখান থেকে আসলেন জিদান ।

কিন্তু কাজ হলোনা কোন কিছুতেই ,তবে ২০০৬-০৭ বার্নাড শুষ্টারের অধীনে পুনরায় স্বপ্ন বুনছিলো মাদ্রিদিস্তারা এবং গুতি ও রিয়াল জয় করলো লা-লিগা। জিদান চলে গেলেন।
তার পরও পরের মৌসুমে লা-লিগা এবং সুপার কাপ জয় করলো রিয়াল। কিন্তু একে একে ঘটলো গ্যালাকটিকোজ ভার্সন ২ এর অবসান। কার্লোস, রোনলাদো, শুষ্টার সবাই উধাও।

রিকার্ডো কাকাকে যোগ করালো রিয়াল মাদ্রিদ। ধারাবাহিকতায় মাদ্রিদ ছাড়ার ঘোষনা দিলেন গুতি। এতোদিন যে ব্যাজ বুকে বেধে ছিলেন তা এবার পরিত্যাগ করে টার্কিশ ক্লাব বেসিকটাসে যোগ দিলেন ফ্রি ট্রান্সফারে আর বন্ধু রাউল গেলেন শালকা ০৪ এ।

মাদ্রিদ ছাড়ার আগে ৫৪২ ম্যাচে ৭৭ টি গোল করে কিংবদন্তির খাতায় ঠাঁই করে নিয়েছেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী। পাশাপাশি ২ টি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ, ১ টি উয়েফা সুপার কাপ, ৫ টি লা-লিগা, ৪ টি সুপারকোপা, ৩ টি উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লীগ জয় তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মাদ্রিদিস্তা হিসেবে ।

বাঘ যে আহত হলে বাঘই থাকে তা গুতি প্রমান করেন ক্যারিয়ারের সূর্যাস্তেও বেসিকটাসের হয়ে টারকিশ লিগ জিতে। বয়স বেড়েছে শরীরের ভার আর কুলোচ্ছেনা তাই কাঁদলেন গুতি, কাঁদালেন গুতি। অবশেষে অশ্রু ভেজা চোখে বিদায় জানালেন ফুটবলকে।

অবসর নেয়ার আগে মাত্র ১৩ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে তার, করেছেন ৩ গোল। আন্তর্জাতিক অর্জন হিসেবে অনুর্ধ্ব-১৮ এবং অনুর্ধ্ব-২১ উয়েফা চ্যাম্পিশীপ জয় করেন এই জীবন্ত কিংবদন্তী।

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×