আজ বিশ্ব এইডস দিবস।১৯৮৮ সাল থেকে এইডস রোগের সাথে লড়াই করা ব্যক্তিদের জন্য এই দিবস পালন করা হয়।আসুন জেনে নেই আজকের দিনটা
AIDS..শব্দটাই আমাদের কাছে লোমহর্ষক। এটা একটি রোগের নাম।পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই জানে এই রোগ সম্পর্কে।হ্যাঁ, AIDS একটি মরণব্যাধি। অর্থাৎ যে রোগ হলে মৃত্যু একরকম নিশ্চিত। AIDS এর পূর্ণরূপ Acquired Immune Deficiency Syndrome.তো আসুন এটার বাংলাটা বের করে ফেলি চট করে।
Acquired- অর্জিত
Immune- অনাক্রম্য/বা আক্রমন করা যায় না এমন
Deficiency -অভাব
Syndrome- লক্ষন
অর্থাৎ সব মিলিয়ে যেটা বুঝা গেলো তা সরাসরি ভাবে বোঝা সম্ভব নয়।একটু ভেবে নেই।এটা দাঁড়ায় হলো 'অর্জিত রোগ প্রতিরোধের বা রোগের আক্রমনের অভাবের লক্ষন।' মানে এই রোগটা শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা নষ্ট হলে এই রোগটি হয়।তবে কে নষ্ট করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা? হ্যাঁ HIV নামে একটি ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে দিয়ে AIDS নামক রোগ ঘটায়।HIV এর পূর্ণরূপ The human immunodeficiency virus. ১৯৮১ সালে Luc Montagnier নামে একজন ডাক্তার ও গবেষক প্রথম এই রোগ চিহ্নিত করেন।১৯৮৩ সাল অবধি গবেষণা করে মানবদেহে আক্রমন করা ভাইরাসের নাম দেয়া হয় HIV. প্রথমে ১৯৮২ সালে ভাবা হয়েছিল এটা শুধু সমকামীদের শরীরে উৎপন্ন রোগ। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালে গবেষণায় উঠে আসে যে, এই রোগ যে কারো শরীরে হতে পারে।
নাম এবং ইতিহাস পর্যালোচনার পর চলে আসি এই রোগের লক্ষন কি কি তা নিয়ে:
৩য় শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির পাঠ্যবইতে এইডস নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা আছে।যারা পড়ে এসেছে তারা নিশ্চয়ই ভুলে নি।তবুও আসুন জানা তথ্যগুলো আবার জেনে নেই-
১।এইডসে আক্রান্ত মায়ের গর্ভে থাকা কালীন বা বুকের দুধ খেলে বাচ্চা এইডসে আক্রান্ত হতে পারে।
২।অনিরাপদ যৌন মিলনের মাধ্যমে।
৩।এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে রক্ত নিলে বা একই সুঁচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করলে।
মূলত এগুলোই প্রধান লক্ষন। তবে HIV ভাইরাস ছোঁয়াচে নয়।কারণ: ভাইরাসটি মূলত মানবদেহের মধ্যে সক্রিয়,বাহিরে নিষ্ক্রিয়। তাই এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তির বাহ্যিক ব্যবহৃত কোনো বস্তু যদি সুস্থ কেউ ব্যবহার করে তবে কোনো ক্ষতি নেই।
এইডস এর লক্ষনঃ
এইডসের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষন নেই।তবে-
১। দুমাসের বেশি ধরে পাতলা পায়খানা
২।ঘন ঘন জ্বর ও অবসাদ অনুভব ও রাতে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
৩।দীর্ঘদিন ধরে শুকনো কাশি
৪।শরীরের ওজন অতি দ্রুত হ্রাস পাওয়া।
এসব লক্ষন হলেই ধরে নেয়া যাবে না যে উক্ত ব্যক্তির এইডস হয়েছে।তবে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।
আপনারা জানেন যে এইডস এর প্রতিষেধক এখন অবধি আবিষ্কার হয়নি।এইডসের প্রতিকার করা না গেলেও প্রতিরোধ সম্ভব।আর এটার জন্য সবচেয়ে মূখ্য হল সচেতনতা।
এইডস এ অদ্যাবধি প্রায় ৩ কোটির বেশি লোক মারা গেছেন।এদের এক -তৃতীয়াংশ নিম্ন সাহারীয় (Sub- Sahara) অঞ্চলের।UNAIDS ২০১৫ সালের শেষের তথ্য অনুযায়ী এখন বিশ্বে ৩৬.৭ মিলিয়ন লোক HIV নিয়ে বসবাস করছে তন্মধ্যে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন শিশু। এবং শুধু ২০১৫ সালেই ১.১ মিলিয়ন মানুষ এইডসে মৃত্যুবরণ করে এবং এদের অধিকাংশ নিম্ন সাহারীয় অঞ্চল ও সমকামী ও যৌনকর্মী।যাদের অধিকাংশই অসচেতন।
বৈশ্বিক পরিসংখ্যান এ এত বেশি লোক আক্রান্ত হলেও বাংলাদেশের এইডস রোগীদের সংখ্যা স্থিতিশীল।তবে আমাদের পারিপার্শ্বিক দেশের তথ্য আমাদের নিশ্চয়ই ভাবিয়ে তুলে।চীন,ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার ও ভারত মিলিয়ে প্রায় ৫.১ মিলিয়ন লোক এইডসে আক্রান্ত যা আমাদের জন্য মোটেও সুখকর নয়। তবে ঐ যে হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন 'ঘোড়া এখনো লাগামছাড়া হয়নি' আমাদের অবস্থা সেরকমই।
সব মিলিয়ে আমাদের সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে।এইডস যেভাবে ছড়ায় সেগুলোর প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখতে হবে। নিজে সচেতন থাকলেই হবে না, অন্যকেও সচেতন রাখতে হবে।আর অবশ্যই এইডসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কখনোই অবজ্ঞা করা যাবে না।তাদের মানসিক শক্তি দিতে হবে যাতে সুন্দর পৃথিবীর বুকে তারা আরো কিছুদিন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে বাঁচতে পারে।
পৃথিবী সুন্দর হোক,
পৃথিবী এইডস মুক্ত হোক।