প্রথমেই বলেই নেই বিবিসি আর সিএনএন দুটোর উপর আমার কোন ভরসা নাই। আলজাজিরা আগে ভালো লাগতো কিন্তু ভালোমত ওদের খবর দেখলে দেখবেন ওরাও আর আগের মত নাই। বিশেষ করে লিবিয়ায় বিক্ষোভ শুরুর পর যেভাবে ওরা খবর দেখাচ্ছে তাতে আমার সন্দেহ সত্যি মনে হচ্ছে। আগে পশ্চিমারা প্রোপাগান্ডা টুলস হিসেবে ব্যবহার করতো বিবিসি সিএনএন কে কিন্তু ভুয়া খবর দিয়ে ইরাকে হামলার কারনে পুরাই ফ্লপ হয়ে যায় বিবিসি। পশ্চিমাদের দরকার হয়ে পড়ে আরেকটি চ্যানেল যেটি হবে বিশ্বাসযোগ্য। তাই তারা এবার ব্যবহার করে খোদ একটি আরবদের থেকে উঠে আসা চ্যানেল-আলজাজিরা। মনে করে দেখুন ইরাক যুদ্ধের সময় আলজাজিরা ছিলো একটি ছোট অ্যারাবিক চ্যানেল কিন্তু রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে পড়ে চ্যানেলটি। শুরু হয় ইংলিশ ইন্টারন্যাশনাল ভার্সন। মাঝখানে একতি ছোট্ট খবর যা তেমন প্রচার পায়নি তাহল চুপিসারে এর মালিকানাও বদল হয়।
গত কয়েকমাস আগেও আলজাজিরায় একটা ডকুমেন্টারি দেখাইছিলো যে লিবিয়া কিভাবে উন্নতি করতেছে গাদ্দাফির শাসনে। উন্নত রাস্তাঘাট, সুদৃশ্য টুরিস্ট সাইট, উন্নত মানের হোটেল, আর ব্যাপক বিনিয়োগে পরিবর্তিত হচ্ছে লিবিয়া। হঠাত কি হইল বোঝা গেল না কিন্তু লিবিয়ানরা খেপে উঠলো (কোন সুনির্দিস্ট কারন কোন চ্যানেল দেখায় নাই) আর আলজাজিরা মানবতার দুত হয়ে গাদ্দাফির বাহিনীর হাতে নির্যাতিত লিবিয়ানদের দৃশ্য দেখাইতে লাগলো। অথচ সেখানে বিক্ষোভকারিদের নিহত বাংলাদেশীদের কোন খবর নাই, বিক্ষোভের নামে যে বিশৃঙ্গখলা চলতেছে তার খবর নাই, কলকারখানা পুড়ায় দিতেছে তার খবর নাই।
সবচাইতে আজব ব্যাপার খেয়াল করে দেখুন মিসরে, লিবিয়ায় বিক্ষোভের সময় ইন্টারনেট, মোবাইল সংযোগ, ফোন লাইন বন্ধ ছিলো। কিন্তু তারপরও আলজাজিরা ওখান থেকে লাইভ খবর সম্প্রচার করতেছে। মিসরতো আলজাজিরার কার্যক্রমই নিষিদ্ধ করেছিলো কিন্তু তারপরও ওরা লাইভ টেলিকাস্ট করল কিভাবে। যতটুকু জানি এর জন্য যে হাইটেক যন্ত্রপাতি লাগে তা শুধুমাত্র সিক্রেট সার্ভিসগুলো ও আর্মিদের কাছে থাকে।
এবার আসল কথায় আসি কিছুক্ষন আগে এনটিভিতে একটা টকশো দেখতে ছিলাম। সেখানে লিবিয়া ফেরত দুই বাংলাদেশী শ্রমিক তাদের অভিগ্যতা বলছিলো। তারা যে কথাটি বললো যে গাদ্দাফি দেশটাকে খুব সুন্দর করে সাজাচ্ছিলো। ব্যাপক বিনিয়োগ আর মরুভুমিতে একের পর ইন্ডস্ট্রি তৈরী হচ্ছিলো। কোন অভাব ছিলো না। তাহলে বিক্ষোভের কারনটা কি? কারন হইল লিবিয়ানদের ধারনা গাদ্দাফি তেলের টাকায় আরামে রাজত্ব করতেছে আর সাধারন মানুষ তার ভাগ পায় না। তার কারন ওখানে বিয়ে করতে গেলে ছেলেদের মেয়ের বাপকে ৮ হাজার দিরহাম দিতে হয় আর ছেলের গাড়ি ও বাড়ি থাকতে হয়। কিন্তু লিবিয়ানরা ভয়ংকর অলস। আর স্বভাব চরিত্র একটু রাফ। কোথাও বেশিদিন কাজ করতে চায় না। যেখানে বাংলাদেশী ও চাইনিজ শ্রমিকরা কল কারখানায় সারাদিন যেকোন কাজ করতেছে সেখানে এসব কাজ করতে লিবিয়ানদের গায়ে লাগে। তো যেহেতু তারা কাজ করে না তাই কোম্পানীগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে গিয়ে কারখানায় কাজ করাইতো। এতেই লিবিয়ানরা খেপা তাদের দেশে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না আর বিদেশী শ্রমিকরা এসে কাজ করে ভাগ্যের পরিবর্তন করতেছে তাই শুরু কর বিক্ষোভ। বরাবরই ভায়োলেন্ট নেচারের লিবিয়ানরা মিসরীয়দের মত সুশৃঙ্গখল আন্দোলনে না গিয়ে প্রথমেই ভাংচুর, বিদেশী শ্রমিকদের হত্যা, কারখানা জালিয়ে দেয়া(বাংলাদেশী শ্রমিকটি যে কোরিয়ান এসি কারখানায় কাজ করতো তা জ্বালিয়ে দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা) লুটপাট শুরু করে। ফলাফল যেমন কুকুর তেমন মুগুর। গাদ্দাফিও তেমন ভায়োলেন্স দেখায়দিলো। বুঝ এখন শালারা, নিজের দেশ নিজেরাই ধ্বংস কর। কাজ করবেননা উনারা আবার সব দোষ সরকারের। সত্যি কথা বলতে লিবিয়ানদের এই বিক্ষোভের প্রতি আমার কোন সহানুভুতি নাই। মরুক শালারা, আল্লাহ যেন আমাদের বাংলাদেশী ভাইদের নিরাপদে রাখেন এইদোয়াই করি।
এইবার আলজাজিরা এইসব সত্য না দেখাইয়া নিরীহ জনতার উপর গাদ্দাফির ভায়োলেন্স দেখানোর কারনটা কি? এরই মধ্যে মার্কিন নৌবহর লিবিয়ার দিকে যাচ্ছে। তবে কি যেভাবে বিবিসি সিএনএন ইরাক হামলায় প্রোপাগান্ডা মেশিন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিলো এবার আলজাজিরা কি সেই হিসেবে ব্যবহৃত হবে?