somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

♣রম্যগল্পঃ যেদিন গার্লফ্রেন্ডের মা-কে ডার্লিং বলেছিলাম♣

২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হ্যালো! হ্যালো হ্যালো! হ্যালো দোস্ত! হ্যালো সকাল!

সাত-সকালে এভাবে ফোন দিয়ে বিরক্তি করার কোন মানে হয়না। মোবাইলের লাল বাটনটা কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখলাম। মোবাইল বন্ধ হয়ে গেল। শালা এত সকালে কল দিয়ে সকাল বেলার মজার ঘুমটাই নষ্ট করে দিল। কাথা মুড়ি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। নাহ! বিরক্তি লাগছে। বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। নিচে বাচ্চারা আকাশে প্লেন উড়ে যেতে দেখে চিল্লাচিল্লি, লাফালাফি করছে। এযুগের বাচ্চারা ভীষণ পুংটা আর সাহসী হয়। ছোটবেলায় আমি আকাশে প্লেন উড়ে যেতে দেখলে দৌড়ে ঘরে গিয়ে লুকোতাম। ভাবতাম এই বুঝি বিমানটা ধরমর করে ভেঙ্গেচুরে আমার মাথার ওপর পরবে। কে যেন ছোট্ট একটা আয়নার টুকরা দিয়ে সূর্য্যের প্রতিবিম্ব আমার চোখে-মুখে মারছে। একটু পরেই বুঝলাম, ওইটা কোন আয়নার টুকরার তেলেসমাতি না। ওইটা বদি চাচার মাথা। বেচারার মাথায় আর একটা চুলও বোধহয় অবশিষ্ট নেই। সরিষার তেল মাখানো টাক পরা মাথাটা রোদে চকচক করছে। পাঁচ-ছয় বছর আগে নাকি এলাকার যুব সমাজ তাকে স্টেডিয়াম আঙ্কেল বলে ডাকতো(অবশ্যই তাঁর সামনে নয়)। এর কারণ হচ্ছে, তখন তাঁর মাথার পেছন দিকটাতে কিছু চুল ছিল। মাথাটা দেখতে অনেকটা স্টেডিয়ামের মত লাগতো। এখন আর সেই চুলও নাই, সেই নামও নাই। অবশ্য সেই নাম না থাকার পেছনে আরেকটা কারণ থাকতে পারে। সেইটা হলো চৌধুরী বদিউজ্জামান ওরফে বদি চাচার এখনকার একমাত্র সুন্দরী,রূপসী কন্যা-টুশি। যার নাম কিনা পাঁচ-ছয় বছর আগেও এলাকার ছোটদের তালিকায় ছিল। তাঁর এই সুন্দরী,রূপসী কন্যার জন্য তিনি এখন এলাকার যুব সমাজ থেকে বেশ সম্মান পান। তিনি অবশ্য ব্যাপারটা বুঝতে পারেন। আমার বন্ধু কাফিকে দিয়ে টুশির উদ্দেশ্যে যেদিন প্রথম প্রেমপত্র পাঠালাম, সেদিন এই বদি চাচার কাছে কাফি প্রেমপত্র সহ ধরা খেয়েছিল। তখন ছিল শীতকাল। প্রতিদিন সকালে শীতের রোদে পায়চারি করতে টুশি ছাদে যেত। কাফিকেও তাই চিঠি দিতে ছাদেই পাঠিয়েছিলাম। ছয় তলা বাসার চার তলা পর্যন্ত উঠে কাফি বদি চাচার মুখোমুখী হয়। বদি চাচা কাফিকে থামিয়ে বলেন,

-এই ছেলে দাঁড়াও! কোথায় যাও? বাবার নাম কী? তোমাকে এর আগে দেখেছি বলে তো মনে হয়না। কোন ফ্ল্যাটে থাকো?

-ইয়ে মানে...

-দেখি হাতে কী? দেখি দেখি!

আমি সেদিন আর বাসায় ফিরিনি। স্যরি, ফিরেছিলাম রাত বারোটায়। একটা কথা বোধহয় বলা হয়নি, আমরা কিন্তু টুশিদের বাসাতেই থাকতাম। ওরা থাকতো চার তলায় আর আমরা থাকতাম দো’তলায়। যাইহোক, প্রেমপত্র সহকারে কাফির ধরা খাওয়াতে বাসায় যে বড় ধরনের কোন গোলযোগের সৃষ্টি হয়েছিল, তা বাসায় ঢুকে বাবার রক্তবর্ণের চোখ দেখেই বুঝেছিলাম। বাবা সেদিন হাই কোয়ালিটির প্যাদানি দিয়েছিল আমাকে। ভাগ্যিস মাফলারের নিচে কানে হেডফোন লাগিয়ে হাই ভলিউমে গান শুনতে শুনতে এসেছিলাম। তবে একটা কথা ভালভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম, তা হলো-“তোর কারনে এপর্যন্ত তিনটা বাসা পাল্টাতে হয়েছে হারামজাদা!” এই কথাটা বাবা মাঝে মাঝেই রেগে গিয়ে বলেন। তাই বুঝতে কষ্ট হয়নি।

বদি চাচা এখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর চকচকে টাক্কু মাথাটা দেখে ছোটবেলার কথা মনে পরে গেল। ছোটবেলায় ওপর থেকে নিচে কাওকে দেখলেই দলা পাকানো থুতু মাথায় ছুড়ে মেরে পালাতাম। আমি আবার আমার রুমে এসে খাটের ওপর শুয়ে পড়লাম। উল্টো হয়ে বালিশের নিচে মাথা দিয়ে আছি। কাফির মতে, এতে নাকি বুদ্ধির বৃদ্ধি ঘটে। হঠাৎ পেছন থেকে কে যেন সজোরে কান টেনে ধরলো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে পেছনে তাকিয়ে দেখি-মা।

-আরে কান ছাড়ো। ব্যথা লাগছে তো!

-হারামজাদা! তোরে আমি বটি দিয়া কাইটা টুকরা টুকরা কইরা নদীতে ভাসায়া দিমু! তোর মত পোলা আমার দরকার নাই!

-আরে ঘটনা কী সেইটা খুইলা বলবা তো!

-ঘটনা কী মানে? বদি ভাইয়ের ওপর থুতু ফালাইছিস ক্যান?

-আরে ধুর! কী বলো এইসব? আমি কখন তাঁর মাথায় থুতু ফালাইলাম? আর যদিও থুতু ফালাইয়া থাকি, তাতে তো আমার দোষের কিছু নাই। বারান্দার নিচে আইসা দাঁড়াইবো ক্যান?

মা রেগেমেগে আরও কিছু বলতে যাবে, এমন সময় দাদু এসে মা-কে নিয়ে গেলেন। আমার এই বুড়ো দাদুটা সবসময়ই আমাকে সাপোর্ট দেন। আমাকে ধমকানোর অপরাধে মাঝে মাঝেই বাবাকে বকাঝকা দেন দাদু। টুশির সাথে প্রেমটা দাদুর পরামর্শেই হয়েছে। আচ্ছা, বদি চাচার মাথায় কী সত্যিই ছোটবেলার কথা ভাবতে গিয়ে থুতু ফেলে দিয়েছিলাম? দাদু ঘরে ঢুকলেন। আমার হাতে টাকা গুজে দিয়ে বললেন,
“এই টাকা দিয়া দুইদিন চলতে পারবিনা? দুইদিন একটু কষ্ট কইরা চল। আমার মনেহয় এই দুইদিনে মাইয়ার বাপ সবকিছু মাইনা নিবে। আর যদি এই দুইদিনে না মানে তাইলে দুইদিন পর আবার টাকা পাঠামুনে।”
দাদুর কথা শুনে আমার মনে পড়ে গেল, আজকেই সেই দিন, যে দিনটার জন্য আমি এতদিন অপেক্ষা করে আছি। যে দিনটাকে আমি কতরাত স্বপ্নে দেখেছি। আজ আমার টুশির হাত ধরে পালিয়ে যাবার কথা। আজ সকাল আটটায় আমাদের বাসস্ট্যান্ডে থাকার কথা ছিল। ওখানে বাস-ট্রেনের টিকিট এবং আরও সকল ব্যবস্থা করে দাঁড়িয়ে থাকার কথা কাফির। এজন্যই বোধহয় সকাল সকাল ফোন দিয়েছিল কাফি। ইশ! রাগে নিজের হাত নিজেরই কামড়াতে ইচ্ছে করছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি নয়টা বাজে। মোবাইলটা অন করে দেখি কাফির কয়েকটা মেসেজ। কোনরকম রেডী হয়ে দৌড়ে পৌঁছলাম বাসস্ট্যান্ডে। গিয়ে দেখি কাফি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

-কিরে দোস্ত! আমার টুশি কই?

-ও তো এখনও এলনা।

-আসবে আসবে। রমনায় একবার আমারে দশ মিনিটের কথা বলে তিন ঘন্টা বসিয়ে রাখছিলো। আমিতো রাগে পুরাই ফায়ার। কিন্তু ও আইসা যখন আমারে জরাইয়া হুহু কইরা কাঁদতে শুরু করলো, তখন আমার ফায়ার সব ওয়াটার হয়ে গেল।

-তো এখন কী আমরা তিন ঘন্টা ওয়েট করবো?

-আরে নাহ! তিন ঘন্টা ওয়েট করবো ক্যান? একটু পরেই আসবে মনেহয়।

কিন্তু বিকেল চারটা পর্যন্ত ওয়েট করেও যখন টুশির কোন হদিস পাচ্ছিলাম না, তখন বাধ্য হয়েই টুশিকে ফোন দিলাম।

-হ্যালো ডার্লিং! তুমি আসছোনা ক্যানো? তুমি কী এখনও ভয় পাও? শুনে রাখো, এই সকাল তোমার বাবার সম্পত্তির ওপর হিসু করে।

-তাই নাকি?

ইশ! লাইনটা কেটে গেল। টুশির মনেহয় ঠান্ডা লেগেছে। গলাটা কেমন অন্যরকম মনে হলো। আমি কাফিকে বললাম, দোস্ত! টুশির ঠান্ডা লেগেছে রে। সাথে হালকা জ্বরও বোধহয়। আমার জানুপাখিটা একদম চাপা স্বভাবের। কিচ্ছু বলতে চায়না। আজকের মত ফিরে যাওয়া যাক।

রাতে বাসায় ফিরে তো আমি পুরাই টাস্কিত! দেখি বাসার সব মালামাল গোছানো হচ্ছে। পাশের রুমে চৌধুরী বদিউজ্জামান একা একা বিরবির করে বলছে,

“কত্ত বড় সাহস! আমার বাসায় থেকে আমার মেয়েকে নিয়ে পালাতে চায়! আবার আমার বৌ-কে বলে ডার্লিং! কালসাপেদের কাছে বাড়ী ভাড়া দিতে নেই।”

সেদিন রাতে খুব কেঁদেছিলাম আমি। কাঁদতে কাঁদতে ভাবছিলাম, কী এমন হতো, যদি কল দিয়ে ডার্লিংটা না বলতাম। আমরা ওই বাসা থেকে চলে আসার দুই সপ্তাহ পর এক বড়লোকের ছেলের সাথে টুশির বিয়ে হয়ে যায়। টুশির বিয়ের কিছুদিন পর ওর এক বান্ধবীর মুখে শুনেছিলাম, বিয়ের দিন নাকি টুশি শশুর বাড়ী থেকে দেয়া দামী দামী গহনার দিকে তাকিয়ে সেই হাসিটা দিয়েছিল, যেই হাসিটা শুধু আমাকে দেখলেই দিত বলে জানতাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:২৩
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×