somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার ছবি, বাঙালির ছবি: বিসর্জন

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজো। দুর্গা পুজোর বিসর্জনে দুই বাংলা মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। খুলে দেওয়া হয় সমস্ত রাজনৈতিক বর্ডার। এই মিলনের উৎসবে যেমন অনুপ্রবেশ ঘটে চোরাকারবারিদের তেমনই এই ক্ষেত্রে পদ্মার (জয়া এহসান) বুকে প্রবেশ করেছিল এক নিস্তরঙ্গ প্রেমের কাহিনি। এই প্রেমের নাম নাসের আলি (আবির চট্টোপাধ্যায়)। নাসের ইন্ডিয়ার বসিরহাটের বাসিন্দা। দুর্গা প্রতিমা ভাসানের সময়, নৌকা ডুবে বাংলাদেশের সীমান্তে অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তার নিথর দেহ থেকে প্রেম খুঁটে নেয় পদ্মা। নাসিরের দেহ বাড়িতে নিয়ে এসে সেবাদান করে। কিন্তু ধর্ম বড়ো বালাই। পদ্মা যখন জানতে পারে, সে যে প্রেমের অতল সাগরে তলিয়ে যাচ্ছে তার ধর্ম মুসলমান, কিন্তু ভালোবাসার তো কোনও বর্ডার হয় না, কোনও ধর্ম হয় না, তবুও মুসলমানের গায়ে হিন্দুর মাটি লেপটে দেয় পদ্মা। নাসের হয়ে যায় পদ্মার সুভাষদা। নাসের হয় পদ্মার ফরিদপুর নিবাসী জ্যেঠুর ছেলে। পদ্মা হিন্দু বিধবা। দেনার দায়ে তার স্বামী নেশা করে অকালে চলে গেছেন। পদ্মা কিন্তু তার অসুস্থ শ্বশুরকে নিয়ে, স্বামীর স্মৃতি নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থেকে গেছে।
ওদিকে আছে গ্রামের মাতব্বর গণেশ মন্ডল (কৌশিক গাঙ্গুলি)। পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলি এই চরিত্রকে অসামান্য সাজিয়েছেন। যে পদ্মার স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকেই, পদ্মাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু গণেশ মন্ডলের মধ্যে নূন্যতম উগ্রতা নেই। উলটে একটা কমেডি আছে। সে পদ্মার সামনে আসতে দ্বিধা বোধ করে। তার সঙ্গে কথা বলতে লজ্জা পায়। আবার পদ্মা বিধবা হওয়ার পর থেকে বশিরভাগ আর্থিক দ্বায়ভার গণেশ নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
নাসিরের প্রতি পদ্মার দূর্বলতা ক্রমেই বাড়তে থাকে। কিন্তু নাসের দেশে ফিরতে চায়। সে তার আয়েশার কাছে যেতে চায়। বাবা-মায়ের কথা ভেবে দুঃখ করে। এসব শুনে পদ্মার কষ্ট হয় ঠিকই। কিন্তু তার তো হারাবার কিছু নেই। পদ্মা তার স্বামী যে ব্র্যান্ডের সিগারেট খেত, সেই সিগারেট এনে নাসেরকে দেয়। সিগারেটের গন্ধে পদ্মার স্বামীর কথা মনে পড়ে। আড়ালে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে পদ্মা। পদ্মা নাসেরের জন্য মদ এনে দেয়। নাসেরের মুখ থেকে মদের গন্ধ শোঁকে। পদ্মার মতে, নাসেরকে সেবা করার এটাই তার স্বার্থ। সে তার হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে ফিরে পায়।


নাসেরের বাড়িতে ফোন করতে পদ্মা প্রায়ই টেলিফোন গুমটিতে যায়। সে কথা গণেশ মন্ডলের চোখ এরিয়ে যায় না। ইতিমধ্যে নাসেরের ইন্ডিয়া ফেরার একটা ব্যবস্থা হয়ে যায়। পদ্মার শ্বশুর হঠাতই মারা যায়। একাকীত্বর নাগপাশে পদ্মার জীবনদর্শন ক্রমেই বদলে যেতে থাকে। একাকীত্বকে ভয় পেতে থাকে পদ্মা। নাসেরও আর কিছুদিন বাদে চলে যাবে। দুই মনের এক অসাধারণ দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে এই পর্যায়ে। নাসেরের কাছে ওই প্রান্তে আয়েশা আর এই প্রান্তে পদ্মা। এমন সময়ে কাহিনি অন্য আকার নেয়। নাসের পদ্মাকে বলে ফেলে, সে একজন চোরাকারবারি। ভাসানের দিন তাদের ব্যবসা বেশি হয়। সেই কুকর্মে লিপ্ত হয়েই সেদিন তার এই ঘটনা ঘটে।
অগত্যা পদ্মা জীবনের কাছে মাথানত করে। গণেশের বিয়ের প্রস্তাব মেনে নেয়। কিন্তু এক শর্তে। নাসেরকে নিরাপদে ইন্ডিয়াতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তাই হয়।
পদ্মা এখন রাজরানি। গণেশ মণ্ডলের স্ত্রী। এক পুত্র সন্তান। কিন্তু সে আর ভাসান দেখতে ইছামতীতে যায় না। পদ্মা নাসেরকে আবার ফিরে পায়। পদ্মা নাসেরকে ধারন করে। পদ্মার যাপিত জীবনের সঙ্গে নাসের অতপ্রতভাবে জরিয়ে যায়। পদ্মার ছেলের কাঁধে ঠিক নাসেরের কাঁধে থাকা অবিকল জন্মদাগ রয়েছে।
এই ছবি একটা নিখাদ প্রেমের গল্প। প্রেমের ভিতরে যে দ্বন্দ্ব বেঁচে থাকে, তার গল্প। প্রেম যে কোনও ধর্ম মানে না। কোনও বর্ডার মানে না, তার গল্প। প্রেম যে চিরন্তন, তার যে জন্ম হয় না মৃত্যু হয় না, তার গল্প।
বাংলা চলচ্চিত্র জগতে এই মুহূর্তে জয়া এহসানের যে কোনও বিকল্প নেই, সে কথা তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। পর্দায় পরিষ্কার, জয়া কীভাবে জয়া এই পদ্মা চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে যাপিত হয়ে হয়েছেন। কৌশিক গাঙ্গুলির জন্য কোনও প্রসংশাই যথেষ্ট নয়। আপামর বাঙালির শুধু কৃতিজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত তাঁর কাছে। আবির মন্দ নয়। লামা বেশ নজর কেড়েছেন।
আর কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য। উনি ছাড়া আর কেউই মনে হয় এই বাঙালিয়ানাকে ধারন করতে পারতেন না। বাঙালিয়ানা সঙ্গীতের মাধ্যমে উনি যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, সত্যিই তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।
৬৪তম ভারতীয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত এই ছবি ব্যবসার অঙ্কেও এগিয়ে আছে। যে বাঙালি এই ছবিকে এরিয়ে যাচ্ছেন, প্রজন্ম তাঁকে ক্ষমা করবে না।

সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×