ওমর সুলেইমান মিসরের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ইসরায়েলের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ হতো। হোসনি মোবারকের স্থলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনিই ইসরায়েলের প্রথম পছন্দ। এ লক্ষ্যে হোসনি মোবারককে ক্ষমতাচ্যুত করতে দীর্ঘদিন ধরে চিন্তাভাবনাও করে আসছে তেলআবিব।
আলোচিত ওয়েবসাইট উইকিলিকস প্রকাশিত গোপন মার্কিন নথি থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে। গত সোমবার ব্রিটিশ টেলিগ্রাফ-এ এই নথি প্রকাশ করা হয়।
দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে মিসরের নতুন ভাইস প্রেসিডেন্ট সুলেইমান যখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, ঠিক তখনই উইকিলিকস এ নথি প্রকাশ করল।
২০০৮ সালের গোপন এক কূটনৈতিক বার্তায় দেখা গেছে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ডেভিড হ্যাচাম মিসরের ভবিষ্যৎ -প্রেসিডেন্ট হিসেবে ওমর সুলেইমানের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি মার্কিন কর্মকর্তাদের বলেছেন, মিসরের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সুলেইমানই ইসরায়েলিদের প্রথম পছন্দ। এমনকি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এহুদ বারাকের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলও সুলেইমানের ব্যাপারে সন্তুষ্ট বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, হোসনি মোবারক মারা গেলে অথবা দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হয়ে পড়লে সুলেইমানেরই অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করা উচিত বলে ইসরায়েলিরা মনে করে। তবে তিনি একই বার্তায় হোসনি মোবারকের বয়স (৮৩) ও কথায় জড়তার ব্যাপারেও দুঃখ প্রকাশ করেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে যোগাযোগে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মিসরের গোয়েন্দা বিভাগের হটলাইন স্থাপন করা হয়েছিল। ওই হটলাইনটি এখনো টিকে আছে। ওই সময় সুলেইমান মিসরের গোয়েন্দা বিভাগের বিদেশ শাখার প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। মিসরের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের জন্য ইসরায়েল সুলেইমানকেই বেছে নিয়েছিল।
একই বছরের অপর এক বার্তায় মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে মার্কিন নথিতে বলা হয়েছে, ‘মিসরের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কায়রো দূতাবাসের সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি। তবে সুলেইমান ক্ষমতা গ্রহণ করলে ইসরায়েল যে স্বস্তিবোধ করবে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো সংশয় নেই।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন গত শনিবার মিসরের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ওমর সুলেইমানকে যোগ্যপ্রার্থী আখ্যায়িত করে বলেছেন, মিসরের ক্ষমতা পালাবদলে সরকারে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা সুলেইমানের রয়েছে।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন সোমবার সুলেইমানকে ফোন করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় দৃঢ় ও বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
গোপন মার্কিন নথিতে আরও দেখা গেছে, গাজা ভূখণ্ডে হামাসের জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র চোরাচালান ঠেকাতে মিসরের সীমান্তবর্তী ফিলাদেলফি অঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক হামলার প্রস্তাব ওমর সুলেইমানই প্রথম দিয়েছেন। গাজা ভূখণ্ডের মানুষ দুর্ভিক্ষে না মরে যেন ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগে, তাও চাইতেন তিনি। হামাস যেন জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, এটাও ছিল তাঁর চাওয়া।
ওমর সুলেইমান অপর এক বার্তায় মার্কিন কূটনীতিকদের বলেছেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের খুব বেশি সময় নেই। আমরা এমন একটি সকাল চাই, যেদিন ঘুম ভেঙে কোনো সন্ত্রাস অথবা বিস্ফোরণ কিংবা কারও মৃত্যুর খবর শুনব না।’ এএফপি, গার্ডিয়ান ও রয়টার্স।
সূত্র -> Click This Link