আমরা এক স্কুলে পড়তাম, অনেক অনেক আগে। তোরা আজ কোথায়?
১
অনেক বছর কেটে গেছে, অনেক বছর।
তোদের কি মনে আছে চোখের পলকে কেটে যাওয়া
স্কুলজীবনের উচ্ছল দিনগুলোর কথা?
প্রাইমারি স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে হাইস্কুলে আসা-
মালিকান্দা মেঘুলা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, স্বর্ণাংকিত উজ্জ্বল নাম,
নবীন কলকাকলিতে
আমরা মুখরিত করেছিলাম তার সমস্ত প্রাঙ্গন।
মনে পড়ে চৈত্রের মাঠ, খাঁখাঁ রোদ্দুর,
প্রীতি ফুটবল ম্যাচ - সেকশন 'এ' ভার্সেস 'বি'
গিয়াসের যাদুকরী খেলা, বীনা আর বীথির উন্মাতাল নাচ-
তুমুল উত্তেজনা,
অবশেষে তৌহিদের ডাইরেক্ট শটে গোল এবং সেকশন 'বি'র
অমোঘ বিজয়।
মেয়েরা সেদিন সারা মাঠ জুড়ে কেশর উড়িয়ে উল্লাস করেছিল;
মনে কি পড়ে?
২
এখন এখানে আমি
পথে যেতে যেতে হঠাৎ থামি।
মনে হয় পেছন হতে
কে যেন ডেকেছে আমাকে। তাকালে ব্যস্ত পথে
অতি পরিচিত আপন জনের
কোথাও মেলে না দেখা। মনের
গভীরে কী যে দুঃসহ
বেদনা জেগে ওঠে। এমনি কাটছে সময় অহরহ।
এখনো এখানে হাজার মানুষের ভিড়,
তবু মনে হয় আমি একা,
পথ নির্জন, কাঙ্ক্ষিত জনের কোথাও মেলে না দেখা।
সেই পরিচিত মুখ,
প্রিয় আমবাগান, কৌতুকে মেতে ওঠা দুপুরের সুখ,
বিজ্ঞানমেলা, মাঠে চোরকাঁটা তোলা, প্রাণোচ্ছল পিকনিক
এবং দশদিক
বেদনায় ভারাক্রান্ত বিদায়ের দিন
স্মৃতিপটে আজও জেগে আছে, এতোটুকু হয় নি মলিন।
অনেক বছর কেটে গেছে, অনেক বছর।
তোদের কি মনে আছে ১১৫ জন ক্লাসমেটের কথা? গ্রাম ও শহর,
বিদেশপ্রান্তরে আমরা আজ ছিটকে পড়েছি সবাই,
অনন্ত যুগ যেন কারো দেখা নাই।
হয়তো কোনো এক বয়োবৃদ্ধকালে দৈবাৎ দেখা হলে
পাশ কেটে চলে যাবো বহুদিন দেখা নাই বলে;
ভুলে যাবো বাল্যবন্ধুদের, তারপর
বিশাল গন্তব্যে ছুটে যাবো পিছে ফেলে কালের গহ্বর।
বন্ধুরা, এ ভরা তারুণ্যে আমি ভাবি, আজও আমরা আছি
সব হৃদয়ের কাছাকাছি
মায়ার বন্ধনে বাঁধা। আমরা কি আরেকটিবার
পারি না ফিরে যেতে কৈশোরের সেই পদ্মাপার?
চিঠির সেতু গেঁথে আমরা কি পারি না পরস্পর
রাখতে খবর-
কে কোথায় আছি? পত্রপাঠে ভাবোদ্গত সুখময় ব্যথা
স্মরণ করিয়ে দেবে, আজও আমরা একই সূত্রে গাঁথা।
অনেক বছর কেটে গেছে। তোদের অজানা
ঠিকানায় আকাশে উড়িয়ে দিলাম আমার ঠিকানা।