আমি ৭ বছর বয়স থেকে শুনে এসেছি যে, চাউলের দাম বেশী, গরীবেরা দরকারী পরিমাণ চাউল কিনতে পারে না, অনেক সময় উপবাস করতে হয়; যাদের কোন ধরণের আয় নেই, তাদেরকে ভিক্ষা করতে হয়; কারণ, দাম কমিয়ে দিলেও তারা কিনতে পারার কথা নয়। আমি যখন থেকে বাজার করার শুরু করলাম, তৈল আনার জন্য প্রায়ই ২টি বোতল নিতাম: ১টিতে সরিষার তৈল অন্যটিতে পরিবারের নারীদের জন্য নারিকেলের তৈল । তখন আমাদের গ্রামের অনেকেই কোনদিনই সরিষার ও নারিকেলের তৈল কিনতো না; সেজন্য তৈলের দাম নিয়ে তাদের কোন অভিযোগ ছিলে না।
আমাদের পরিবারের আয় ছিলো কৃষি থেকে; যখনই আমি ধান বিক্রি করতাম, আমার মনে হতো, এতো সস্তায় ধান বিক্রি করে, কি করে আমরা সারা বছর চলবো? তরকারী বিক্রয় করতাম চট্রগ্রাম শহরের পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে; ওরা কৌশলে ওজনে ঠকাতো ( ওরা নিজেদের দাড়িপাল্লা দিয়ে মেপে নিতো ), কিংবা তরকারীর মান খারাপ ইত্যাদি বলে কম টাকা দিতে চেষ্টা করতো। আমার মনে হতো, তরকারী থেকে এত কম টাকা এলে, চাষ করবো কিভাবে?
তখন প্রায় সবাই পায়ে হেঁটে সব যায়গায় যাওয়া আসা করতো, মানুষ হেঁটে চট্রগ্রাম শহরে যেতো; ভাড়া বেশী নিয়ে অভিযোগ করতে কোনদিনও শুনিনি। আমাদের গ্রামের যারা জুট মিলে চাকুরী করতো, তাদের পরিবার গ্রামে থাকতো; ফলে, ঘরভাড়া নিয়ে কাউকে কান্নাকাটি করতে দেখিনি। যারা কলিকাতা ও রেংগুনে থাকতো, তারা মোটামুটি ধনী ছিলো; ফলে, তাদের কোন ব্যাপারে অভিযোগ ছিলো না। তারা দেশে আসার সময় কলের গান নিয়ে আসতো।
সেই ৭ বছর বয়স থেকে যে শুনছি, দ্রব্য মুল্য বেশী, একদিনের জন্যও এই অভিযোগ বন্ধ হয়নি। আমি পুরাতন টেক্সট বই কিনে আনলে, মা বলতেন, নতুন বই কিনলে ভালো হতো, নতুন বই ছাত্রদের জন্য আনন্দের ব্যাপার! কিন্তু আমার কাছে নতুন বইয়ের দাম বেশী মনে হতো। আজকে ৭৩ বছর বয়সে, ব্লগ, মিডিয়া ও মানুষের মুখে প্রতিদিন শুনছি, দ্রন্য মুল্য বেশী! আমার জীবনের ৬৬ বছর যেই সমস্যার কথা শুনে আসছি, ইহার সমাধান হয়নি আজো। আমাদের ১৯ কোটী মানুষের মাথায় কেন এই সমস্যা সমাধানের মতো মগজ নেই!