আপনি যদি ট্রেনে ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম শহরে গিয়ে থাকেন, আপনি পুর্ব পাশে চট্টগ্রামের পাহাড় দেখেছেন; ইহা ফেনী নদী থেকে চট্গ্রাম শহর অবধি বিস্তৃত। অনেক ব্লগার খৈয়াচরা ও মিরসরাইতে অবস্হিত ঝর্ণাগুলোতে গিয়েছেন, এগুলো চট্টগ্রামের পাহাড়ে। চট্টগ্রামের পাহাড়ের পশ্চিম ঢালে হচ্ছে, মিসরাই, সীতাকুন্ড ও কুমিরা; পুর্বঢালে হাটহাজারী, নাজিরহাট, রামগড়। আপনাদের মাঝে কেহ যদি চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে রামগড় গিয়ে থাকেন, চট্টগ্রামের পাহাড় ছিলো আপনার পশ্চিম পাশে। ইহা সর্বাধিক ৯/১০ মাইল চওড়া হতে পারে।
এই পাহাড়ে এখন বাঘ নেই; ইহা শুনে আমি মনে অনেক কষ্ট পেয়েছি। শিশুকালে মনে কষ্ট পেতাম, আমাদের পাহাড়ে কেন বাঘ থাকে! উপরের ছবিতে যেই ধরণের বাঘের ছবি দেয়া হয়েছে, সম্ভবত এই ধরণের বাঘ ছিলো এসব পাহাড়ে। আমার কিশোরকালে আমি বন্ধুদের সাথে পাহাড়ে যেতাম প্রায়ই; বাঘের ভয়ে কমপক্ষে ৪/৫ জন যেতাম, হাতে থাকতো লাঠি ও দা; আমরা সবাই জানতাম যে, বাঘ লfঠিকে ভয় করে না; কিন্তু এর বেশী কিছু আমাদের কাছে ছিলো না।
আমাদের গ্রামের ৯ বছর বয়সী একটি ছেলেকে বাঘ হত্যা করেছিলো; সে আমার থেকে ৩/৪ বছরের বড় ছিলো। তারা খুবই দরিদ্র ছিলো; ছেলেটির বাবা, আমদের জগত কাকাকে টিপারারা ১ খন্ড জমি দিয়েছিলো; তিনি সেখানে আখের চাষ করতেন। সেবার নাকি টিপারারা উনাকে হুশিয়ার করেছিলো যে, সেই এলাকায় ১ জোড়া বাঘ বাস করছে, এলাকায় নিয়মিত দেখা যাচ্ছে। একদিন ভোরে তিনি জমিতে হাল দিয়েছেন, উনার ৯ বছরের ছেলে দুপুরের খাবার নিয়ে গেছে। জগত কাকা ভাত খেয়ে আবার হাল ধরেছেন, ছেলে ১ পাশে আলের উপর বসেছিলো; ১ টি বাঘ ছেলের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, তিনি হাল ফেলে, ছড়ি দিয়ে বাঘটিকে পিটানোর শুরু করেন; তখন অন্য বাঘটি তাঁখে আক্রমন করে; ২।৩ মিনিটের ভেতরেই তিনি বাঘগুলোকে তাড়াতে সক্ষম হন; কিন্তু ছেলের মৃত্যু হয় ততক্ষণে। উনার চীৎকার শুনে টিপারারা ছুটে আসে; কিন্তু দেরী হয়ে গেছে।
এই ঘটনার পর থেকে আমার মনে কিছুটা বাঘের ভয় ঢুকে; কিন্তু বাঘ দেখার ইচ্ছা সব সময় ছিলো। আমার বাবা চট্টগ্রাম শহরে কাজ করতেন; তিনি শুক্রবার রাত ১০টার ট্রেনে বাড়ী আসতেন। আমি ২য় শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকে উনাকে ষ্টেশন থেকে আনার জন্য যেতাম। শীতকালে আমাদের এলাকার লোকজন বাঘের ভয়ে থাকতো, ঐ সময় বাঘ গ্রামে আসতো; আবার চলেও যেতো। একবার গ্রামবাসীরা ১টা বাঘকে তাড়া করেছিলো, বাঘটি দৌড়ে পাহাড়ে চলে গিয়েছিলো। সেবার আমি দুর থেকে পলায়নরত বাঘ দেখেছিলাম।
বাঘের কথা মাথায় রেখে, শীতকালে বেলা ডুবার আগেই আমি ষ্টেশনে পৌঁছে যেতাম; ষ্টেশনে বাবার বন্ধুর চা'এর দোকান ছিলো; আমি দোকানে পোঁছলে বাবার বন্ধু, আহসান উল্লাহ সওদাগর আমার জন্য চা, কুকি ও রুটি দিতেন; আমি খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ প্লাটফরমে ঘোরাফিরা করে, দোকানে ফেরত আসতাম; বাবা এলে, আবার চা খেয়ে ২ জনে বাড়ী আসতাম। বাবা বলতেন, বাঘ মানুষকে ভয় পায়, বাঘ মানুষকে এড়িয়ে চলে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:২৫