আমেরিকায় সব জাতির মানুষ আছে, সবাই মিলে আমেরিকান; কিন্তু কিছু মানুষ সাদা-আমেরিকানদের আচরণ সহজে শিখতে পারে না; আমি ১ দিনে তিন দেশের মানুষ থেকে ৩ ধরণের আচরণ পেয়েছি:
গত শুক্রবার সকাল ১০টায় ব্যাংকে গেলাম; দেখি, ব্যাংক থেকে অদুরে ১টি নতুন কোরিয়ান গ্রোসারী খুলেছে; নতুন খোলার কারণে, কিছু কিছু আইটেম বেশ কমদামে দিচ্ছে! আমি ২টি স্বচ্চ প্লাষ্টিকের ব্যাগে ১০টা করে কমলা নিয়ে ক্যাশিয়ারের কাছে গেলাম। কোরিয়ান তরুণী ক্যাশিয়ার, ছাত্রী হতে পারে। আমি ২০টা কমলার দাম, ২০ ডলারের নোট তার সামনে রেখে, বললাম,
-২ ব্যাগে মিলে ২০টি কমলা।
সে ক্যাশ রেখে শপিং ব্যাগে ভরে আমাকে কমলা ও রিসিপ্ট দেয়ার কথা; কিন্তু সে কমলা গণনার শুরু করলো। আমি ২০ ডলারের নোটটি ফেরত নিয়ে বললাম,
-তুমি কমলা গণনা করলে, আমি কমলা নেবো না।
-তোমার সমস্যা কোথায়?
-সমস্যা হলো, তুমি আমাকে বিশ্বাস করছো না।
-তোমাকে আমি বিশ্বাস করছি; কিন্তু আমি এখানে চাকুরী করি। দেখ, দোকানের কোণে যেই বয়স্ক কোরিয়ানটি দাঁড়িয়ে এদিকে তাকিয়ে আছে, সে হলো মালিক। আমি না'গুণে তোমাকে কমলা দিলে সে অসন্তুষ্ট হবে।
-ঠিক আছে, তাকে খুশী রাখ, আমি যাচ্ছি।
-তুমি কমলা নিয়ে যাও; তুমি চলে গেলে, সে আমাকে অপবাদ দিবে যে, আমার কোন খারাপ আচরণে তুমি চলে গেছ। আমি এই দেশে জন্ম নিয়েছি, মানুষকে বিশ্বাস করি; কিন্তু তোমাকে বুঝতে হবে যে, ইহা আমার ব্যবসা নয়, আমি চাকুরী করি।
দুপুরে কয়েকজনের সাথে খেতে হবে; শীত লাগছে; সামনে পড়লো ম্যাকডোনাল্ড। ভাবলাম কোন কিছু ডিসকাউন্টে থাকলে স্নেক খেয়ে শরীরটা গরম করে নিই। ফিসফিলে ডিসকাউন্টে দিচ্ছে, ২টা'র দাম ৬ ডলার ৮৫ সেন্ট। মোটামুটি ভীড় আছে। খুবই হাসিখুশী মেক্সিকান তরুণ ছেলে ক্যাশিয়ারের হাতে ২০ ডলারের নোট দিলাম, চেন্জ নিয়ে ক্যাশ থেকে দুরে সরে গেলাম, ভীড়; সেখানে দাঁড়ায়ে ফেরত দেয়া ডলার গুনতে গেলে লোকজন বিরক্ত হবে। সে আমাকে ১৩ ডলার ১৫ সেন্ট দেয়ার কথা, দিয়েছে ৮ ডলার ১৫ সেন্ট; ৫ ডলার কম দিয়েছে। ভীড় কমার জন্য অপেক্ষা করলাম, সে ফ্রি হতে গিয়ে বললাম,
-আমি ২০ ডলারের নোট দিয়েছিলাম, চেন্জে ৫ ডলার কম।
সে ক্যাশ খুলে আমাকে ৫ ডলার দিলো। আমি নিশ্চিত হতে চাইলাম যে, সে আমাকে ঠকাতে চেয়েছিলো। আমি বললাম,
-আমাকে কোক নেয়ার জন্য ১টি বড় কাপ দাও।
সে দিলো, আমি ধন্যবাদ দিয়ে সরে গেলাম; নিশ্চিত হলাম যে, সে আমাকে ঠাকাতে চেয়েছিলো।
সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে ব্লাড প্রেসার নিলাম, অনেক কম দেখাচ্ছে; আবার নিলাম, এবার না মেপেই ভুল দেখালো; আবার চেষ্টা করলাম; এবার বেশী দেখাচ্ছে। গত কয়েকদিন ইহা এভাবেই চলছে। একটা নতুন ইনষ্ট্রুমেন্ট কেনার দরকার। যেখানে নিয়মিত ঔষধ কিনি সেখানে গেলাম; সব সস্তা দামের টুলস, বাদ। একটু দুরে একটি বড় ফার্মেসী, সেখানে গেলাম। একটি সুশ্রী সাদা মেয়ে দেখে শুনে ভালো একটা যন্ত্র দিলো, ১৬০ ডলার; দাম দিয়ে দরজা অবধি আসার পর, ভাবলাম, মেয়েটার আচরণ খুবই ভালো, তাকে ডিসকাউন্টের কথা বললে কেমন হয়? ফিরে গিয়ে বললাম,
-তোমার ডিলিংস খুব ভালো লেগেছে; তাই, ভাবলাম, কোন রকম ডিসকাউন্ট আছে কিনা তোমাকে জিজ্ঞাসা করি!
-সে হেসে ফেললো, বললো,
-আমাদের কোম্পানীর কাষ্টমার কার্ড আছে তোমার কাছে?
-না, আমি অন্য ফার্মেসীর কাষ্টমার।
-অসুবিধা নেই, ফোনের প্যাডে তোমার টেলিফোন নম্বরটা পান্চ কর, আমি দেখি কি করা যায়।
সে আমাকে হাতে একটি টেম্পোরারী কাষ্টমার কার্ড দিলো ও ৭০ ডলার ফেরত দিলো। আমি বললাম,
-তুমি আমার অনেক টাকা সেইভ করে দিয়েছ!
-তোমাকে খুশী দেখতে চেয়েছি আমি!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ রাত ৩:৩৮