আজকে প্রথম আলো অনলাইনে সকালে “কোন ব্যাংকে টাকা রাখবেন” শিরোনামে একটা লেখা পড়লাম । পরে সেটা যখন প্রথম আলোর ফেইসবুক পেজে দেয়া হলো, তারপর থেকে নানান মন্তব্যে ফুলে ফেঁপে উঠছে পোস্টটি ।
পোস্টে উপদেশ ছিল যে , “কোন ব্যাংকে টাকা রাখবেন, তা বাছাইয়ে কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন কয়েক ব্যাংকার। তাঁরা বলছেন, গ্রাহকেরা টাকা জমানোর সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দিকে খেয়াল রাখতে পারেন। যেই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ভাবমূর্তি যত বেশি স্বচ্ছ, সেই ব্যাংক ততটাই নিরাপদ। প্রতিটি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পরিচালকদের নাম ও পরিচয় দেওয়া থাকে। পাশাপাশি কোন ব্যাংকের বড় গ্রাহক কারা, অর্থাৎ আমানতের টাকা ব্যাংক কাকে দিচ্ছে, তারও খোঁজ নিতে হবে।
ব্যাংকগুলো প্রতিবছর যে বার্ষিক প্রতিবেদন তৈরি করে, সেই প্রতিবেদনে কয়েকজন শীর্ষ গ্রাহকের নাম ও ঋণের পরিমাণ উল্লেখ থাকে। পাশাপাশি যেই ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ যতটা স্বচ্ছ, সেই ব্যাংকও ততটা ভালো। কারণ, দিন শেষে ব্যাংকের কর্মকর্তারাই পারে ব্যাংকটিকে ভালো রাখতে। আবার ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের পেশাদারত্ব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে জমানো টাকা নিরাপদ থাকতে পারে।“
পাঠকদের পক্ষ থেকে একটা মন্তব্য ছিল অনেকটা এরকম যে, সাধারণ মানুষের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই যে এত কিছু বিবেচনা করে টাকা রাখতে যাবে ! আসলে উনি খুব একটা ভুল বলেননি । এত কিছু সহজে বোঝাও সাধারণ মানুষের পক্ষে আয়াসসাধ্য নয় ।
যাইহোক, আমার মতে এক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত “ do not put all the eggs in one basket” ফর্মুলা প্রয়োগ করা ভাল ।
** সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফা খুবি ভালো – ১০.৫ এর আশেপাশে যেখানে ব্যাংকসমূহে ফিক্সড ডিপোজিটে বর্তমানে ৬/৬.৫ এর আশেপাশে ।
** বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন । আপনি চেকের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে পারেন । ফর্ম তাদের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন । জমা দিতে নিজে যেতে হয় না । আবার ইএফটিএন এর মাধ্যমে ব্যাংক একাউন্টে টাকা জমা হবে । মেয়াদ শেষে অটোমেটিক মূল টাকাও জমা হবে ।
** দ্রুত ভাঙ্গানোর ক্ষেত্রে আমার কাছে মনে হয়েছে বেসরকারি ব্যাংক বেশি সুবিধাজনক । দিনে দিনে একাউন্টে টাকা চলে আসে । সরকারি ব্যাংকের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা নেই।
** সব টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ না করে কিছু ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিটেও রাখুন। দ্রুত ভাংগাতে কিছুটা এডভান্টেজ পাওয়া যাবে ।
** আপনার যদি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের লিমিট শেষ হয়ে যায় তাহলে আর পরবর্তি বিনিয়োগে মুনাফা পাবেন না। সেক্ষেত্রে আপনি ব্যাংকে রাখতে পারেন । আবার আপনার ব্যাংকে জমা রাখার পরিমাণও মোটামুটি ভালোই হয় তবে এক ব্যাংকে না রেখে দু-চারটি ব্যাংকে রাখুন ।
সবশেষে ব্যাংক বীমা আমানত আইন, ২০০০ এর একটি ধারা উদ্ধৃত করে বিদায় নিচ্ছি ঃ
৭৷ (১) কোন বীমাকৃত ব্যাংক-এর অবসায়নের আদেশ প্রদান করা হইলে, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ঐ অবসায়িত ব্যাংক-এর প্রত্যেক আমানতকারীকে তাহার আমানতের সমপরিমাণ টাকা, যাহা সর্বাধিক এক লক্ষ টাকার বেশী হইবে না, তহবিল হইতে প্রদান করিবে৷
(২) অবসায়িত ব্যাংকে কোন আমানতকারীর একাধিক হিসাব থাকিলে এবং ঐ সকল হিসাবে একত্রে এক লক্ষ টাকার অধিক স্থিতি থাকিলেও তাহাকে তহবিল হইতে সর্বাধিক এক লক্ষ টাকার অধিক পরিশোধ করা হইবে না৷ তবে এইরূপ পরিশোধ অবসায়িত ব্যাংক-এর নীট সম্পদের বিপরীতে লিকুইডেটর কর্তৃক আমানতকারীদিগকে দেয় অংকের সহিত সমন্বয় করা হইবে৷
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬