কিছুই অতীতের মত সোনালী থাকে না। সবকিছুই রং হারিয়ে বিবর্ণ হয়। আমার বিদায় তাই রূপ নিচ্ছে চিরবিদায়ের সুরে। স্মৃতির পাতা যতই ভারী হয়ে উঠুক নস্টালজিক ভাবনায়, জীবন নশ্বর। কিছুই স্থায়ী নয় এ বিশ্বে। স্থায়ীত্বের ক্ষণ হয়তো আরো স্বল্প এই ভাচর্ুয়াল পৃথিবীতে। সুতরাং অমরত্ব যেখানে অলীক সেখানে সেই অসম্ভব-অর্জনের চেষ্টায় সময়ক্ষেপন নিরর্থক। আমি তাই বেছে নিয়েছি এক নীরব প্রস্থানের নিভৃত উপায়; স্বেচ্ছামৃতু্য। আমার এই স্বেচ্ছামৃতু্যর সিদ্ধান্ত আপনাদেরকে ব্যথিত করবে জানি, আপনাদের স্মৃতির পাত্রে অশ্রু-শিশিরের মুক্তো টল-টল করে উঠে জলের ধারা জন্মাবে জানি, তবে চূড়ান্ত সত্যকে মেনে দ্রুত মেনে নিতেই বলবো। যা একদিন ঘটতো তা নাহয় একটু আগে ঘটলো । এ ক্ষুদ্র নশ্বর জীবনে আপনাদের প্রাণ-স্পর্শে বৃথাই যে স্ফুলিঙ্গের মত জ্বলে উঠে বুঝেছি এই চকিত আতশবাজির মধ্যেই জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া অর্জিত হয়ে গেলো, বাকী দীর্ঘ সময় ধরে ছাই হয়ে বেঁচে থাকার নিরানন্দ থেকেই মুক্তি খোঁজাই হওয়া উচিত আমার আরাধ্য। সে মুক্তিই আমাকে দিন। আমাকে চির-বিদায় জানান। আমার যা অর্জন তা আমি আপনাদেরকেই দিয়ে গেলাম। তাকে আপনারা যেমন ইচ্ছে রাখুন আপনাদের হৃদয়ে। আর যেসব অসমাপ্ত কাজ রয়ে গেলো, যা করবো বা লিখবো বলে আশা দিয়েছিলাম, তার দায়িত্ব দিয়ে গেলাম আমার স্নেহভাজন চৌধুরীকে। ইতোমধ্যে সে আপনাদের ভালবাসা পেয়েছে। আমি জানি তার যোগ্যতা আছে আপনাদের ভালবাসা মাথায় নিয়ে আমার অসমাপ্ত কাজগুলোকে চূড়ান্ত পরিণতি দেয়ার। আপনারা তাকে হারিয়ে যেতে দেবেন না। তার মাঝেই আপনারা আমার ছায়া পাবেন, আমাকে পাবেন।
আর স্বর্গলোকের উজ্জ্বল তারাটি থেকে আমি আপনাদের আর্শীবাদ করে যাবো, ভালবেসে যাবো। আনন্দ ও উল্লাসে কাটুক আপনাদের জীবন। সুখী হোক আপনাদের হৃদয়। বিদায়...দেখা হবে অমর্তলোকে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০