somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ পথের শেষে

১৩ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক
তিশা বরাবরই খুব অভিমানি মেয়ে ছিল।আমিও সেটা ভাল করেই জানতাম।তার অভিমানকে ভয়ও পেতাম আবার সেই অভিমানের কদরও করতাম।এটুকু বলে রিয়াদ পাশের সহযাত্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল।সহযাত্রী ভদ্রমহিলা মাঝ বয়েসের কাছাকাছি একজন মানুষ।শান্ত-সৌম চেহারা,উজ্জল চোখ আর মাথার চুলে রুপালি ছোঁয়া সবমিলিয়ে তার মাঝে কেমন একটা নির্ভরতার ছাপ আছে।রিয়াদের গন্তব্য আমেরিকার লসএঞ্জেলস।বিমানের দীর্ঘসময়ের যাত্রাপথে ভদ্রমহিলা তার সহৃদয়তা দিয়ে রিয়াদের মন জিতে নিয়েছেন।তাই রিয়াদের মনের দরজা খুলে গিয়েছে আর সে আপনমনে বলে চলেছে নিজের অন্তরের কথা।

রিয়াদ বলে চলে,তিশাকে আগে থেকেই চিনতাম।আমারই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ক্লাস জুনিয়র ছিল সে।কোকড়ানো কোমর পর্যন্ত চুলের মেয়েটির সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিল মনে হয় তার চোখ।ঘন পাপড়ি ঘেরা বড় বড় চোখ।আর সে চোখের মাঝে কি যে বিস্ময়!সে তার সব কথা যেন সেই পদ্মপলাশ আঁখি দিয়ে বলতে পারত।নাহ!তার সোনালী গায়ের রঙ ও তো কম বড় সম্পদ ছিলনা।আর তার নিটোল গড়ন সেইসাথে তার চিবুকের নিচের কালো তিল!!রিয়াদের পাগলামী দেখে ভদ্রমহিলার মুখে হাসি ফুটে উঠে।তিনি বলেন,আমি জানি কোনো প্রেমিকের কাছে তার প্রেয়সীই সবচেয়ে বেশি অপরূপা।আর হবেই বা না কেন?সমস্ত পৃথিবীর মাঝে একমাত্র প্রেমিকই পারে একজন নারীর আসল মূল্য দিতে,তার কদর করতে।


রিয়াদ একটা লাজুক হাসি দিয়ে বলতে থাকে,তিশাকে ভাল লাগত কিন্ত কখনো প্রেমের প্রস্তাব দিইনি বরং চাকরি পাওয়া মাত্রি সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলাম।বিয়েটা হয়ে যেতেই সেই ছোট্ শহরে আমরা ছোট্ট একটা সংসার পাতলাম।দুটি বছর আমাদের জীবন ভরে ছিল আনন্দের বর্ষনে।ঘুম থেকে জেগেই দেখতাম তিশার হাসি মাখা মুখ।প্রতিদিন সকালে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে দুজনেই বেরিয়ে পড়তাম।আমি অফিসে যেতাম তিশা যেত বিশ্ববিদ্যালয়ে।তিশা এমনিতেই অনেক ভাল ছাত্রী ছিল।আমিও বিয়ের পরে তার পড়ালেখায় কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াইনি বরং সব রকম সহায়তা করেছি।আর করবোই বা না কেন?আমার প্রস্তাবে রাজি হওয়ার আগে ও শর্ত দিয়েছিল যে তাকে তার ইচ্ছামত পড়ালেখা করতে দিতে হবে এবং বিদেশে পড়ালেখার সুযোগ পেলে সেটাও করতে দিতে হবে।আমি ওর প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হয়ে যাই।তাছাড়া তিশাকে নিয়ে আমার অদ্ভুত একটা গর্ব ছিল।আমার সকল বন্ধুর মধ্যে একমাত্র সেই ছিল এমন গুনী আর শিক্ষিত।

কি অপূর্বই না ছিল সেই দিনগুলি! বাইরে থেকে ফিরে দুজনে টিভিতে নাটক দেখতাম,গান শুনতাম, একে অন্যকে গল্প বা উপন্যাস পড়ে শুনাতাম।ছুটির দিনে তিশা সিদ্দিকা কবিরের রেসিপির বই দেখে দেখে নতুন নতুন রান্না করতো আর আমি ওকে সাহায্য করতাম।প্রায়ই আমরা বন্ধু বা আত্মীয়দের দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতাম।আবার অন্যদের বাসায় বেরাতেও যেতাম।সবচেয়ে বেশি যেতাম আমার বড় ভাইয়ের বাসায়।বিয়ের পর থেকেই ভাবির সাথে তিশার খুব ভাব জমে উঠেছিল।ওর বড় বোন নেই তাই নাকি ভাবিকে একদম নিজের বড়বোনের মত আপন বলে মনে হতো।ভাবিও ওকে খুব ভালবাসত।বাসায় ভালমন্দ কিছু রান্না হলে সবসময় আমরা দাওয়াত পেতাম।এসবের ফাঁকে আমাদের ভালবাসাবাসির কোনো বিরাম ছিলনা।নিজেদের পূর্নাঙ্গভাবে সুখি বলে মনে হত আমাদের।এভাবেই আমাদের বিয়ের দুবছর কেটে গেল।তিশার পড়ালেখাও শেষ হয়ে আসল।এমন সময় আমি বেশ ভাল একটা চাকরির অফার পেলাম ঢাকা থেকে।আগে ওদিকে যেতে চাইনি তিশাকে ছেড়ে যেতে হবে এই ভয়ে কিন্ত সেসময়ে আর এমন কোনো ভয় থাকল না।তাই একদিন আমরা আমাদের সংসার গুটিয়ে নিয়ে চলে এলাম ঢাকায় নতুন জীবন সাজাতে।

ঢাকাতে এসে প্রথম প্রথম বেশ সমস্যা হচ্ছিল নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে চলতে কিন্ত মাস খানেকের মধ্যেই সব গুছিয়ে নিলাম।এখানের অফিসের পরিবেশ ছিল একেবারে আলাদা।প্রায় সবাই বয়েসে তরুন,তারা হয় আমার বয়েসের নয়ত আমার চেয়ে কিছুটা বড় বা ছোট।একারনে খুব দ্রুতই অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল।দেখতে দেখতে তাদের সাথে আমি এতটা মিশে গেলাম যে আমারে আসল অস্তিত্ব আমার কাছে অচেনা হয়ে গেল।তাদের হাত ধরে আমি যেন এক নতুন জগতে প্রবেশ করলাম।তারা অনেকেই সন্ধ্যার পরে একটা ক্লাবে যেত আড্ডা দিতে।তারা আমাকেও তার সদস্য করে নিল।তাই অফিসের পর বাড়ি থেকে একটু ফ্রেশ হয়েই আবার বের হতাম।ফিরতে ফিরতে প্রায়ই রাত হতো।আমার জীবনযাপনের আমূল পরিবর্তনের কারনে তিশা খুব একা হয়ে গেল।একেতো বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন নেই তার উপর তার চাকরিও নেই।এই নিষ্ঠুর শহরে কেউ কাওকে সময় দেবে এমন অবসর কোথায়?সারাদিন একা একা কাটানোর পর সে অধির হয়ে অপেক্ষা করত আমার সাথে সময় কাটাবে বলে কিন্ত আমি তাকে সময় দিতে পারছিলাম না।রিয়াদের মুখে একটা গভির দুঃখের ছাপ পরে।সে বলে,আসলে তখন বুঝিনি কিন্ত এখন বুঝি যে মেয়েটাকে আমি সেসময় কতটা অবহেলা করেছি,তার দিনগুলো কত কষ্টে কেটেছে।

আমি প্রথম দিকে ক্লাবে সপ্তাহে এক দুইদিন যেতাম।আস্তে আস্তে সেটা বেড়ে সপ্তাহে ছয় সাত দিনে দাঁড়ালো।তিশার একাকিত্ব দিন দিন বাড়তে লাগল।তবুও লক্ষী মেয়েটা তেমন কোনো অভিযোগ করেনি বা আমাকে কোনো কটু কথা বলেনি।রাতে বাড়ি ফিরে ওর মলিন মুখটা দেখে আমার প্রায়ই নিজেকে কিছুটা অপরাধি মনে হতো কিন্ত শুধুর সেই এটুকুই অনুভব করতে পারতাম।এর চেয়ে বেশি কিছু ওর জন্য করতে পারিনি তখন।মাঝে মাঝে বাইরে খেয়ে অনেক রাতে ফিরতাম।ফিরে দেখতাম ও না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে।এসময় খুব খারাপ লাগত,মনে হতো এসব ছেড়ে দেব কিন্ত পরদিন সন্ধ্যা হতেই আবার সেই প্রবল আকর্ষন আমায় গ্রাস করত।সেইসব উজ্জ্বল বন্ধুত্বের নেশা আমার সংসার জীবনের সুখ ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল কিন্ত আমি এতটাই মোহগ্রস্থ ছিলাম যে সব বুঝেও না বোঝার ভান করেছি।

ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেল যখন আমি তিশার জন্মদিন ভুলে গেলাম।ওর প্রতি জন্মদিনে আমি আগে থেকে গিফট কিনে রাখতাম আর অফিস থেকে ফেরার সময় একগুচ্ছ রজনীগন্ধা আর ওর পছন্দের খাবার কিনে আনতাম একগাদা করে।তারপর কাছের দুএকজনকে দাওয়াত করে চমতকার একটা সন্ধ্যা কাটাতাম নিজেদের বাসাতেই।তবে সেবার আমি অফিস থেকে ফিরে যথারীতি ক্লাবে চলে গেলাম। রাতে ফিরে দেখি সারা বাসা অন্ধকার।বেডরুমে গিয়ে দেখি মেয়েটা কেঁদে কেঁদে চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।হতভম্ব আমি তাকে শান্ত করতে গিয়ে বুঝতে পারলাম কি ভুল করে ফেলেছি।সেরাতে প্রচন্ড অপরাধবোধে আক্রান্ত হলাম আমি।কিন্ত সেইসাথে তিশার প্রতি চাপা একটা ক্ষোভও তৈরী হলো।নিজের দোষটা কেন যেন ওর উপর চাপাতে চাইলাম।মনে হতে লাগল জন্মদিন মনে না থাকায় এত কান্নার কি আছে?নিজের উপর যে বিরক্তিটা ছিল তা কিভাবে যেন ওর উপরেও কিছুটা চলে গেল।এই বিরক্তিটা যেন আমাদের সম্পর্কটাকে আরো একটু শীতল করলো,আরো একটু দূরত্ব বাড়ালো।

এই ঘটনা মনে হয় তিশাকে অনেক বড় আঘাত দিয়েছিল আর ওর মনে গভির ছাপ ফেলেছিল।কারন এর পরে ও নিজের মত করে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।কিছুদিনের মাঝেই সে বাসার কাছে একটা বাচ্চাদের স্কুলে পড়ানো শুরু করল যদিও বেতন এত অল্প ছিল যা ওর যোগ্যতার মেয়ের জন্য রীতিমত অপমান জনক।তবুও আমি একদিক থেকে বেশ খুশি হলাম এই ভেবে যে অন্তত ওর সময় তো কাটবে।বাঁকিটা সময় সে পড়ালেখা করত,সেলাই করত বা সংসারের অন্যান্য কাজ করত।এভাবে আমরা বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেলাম।যদিও আগের মত উষ্ণতা ছিলনা তবুও আমরা বেশ ভালই ছিলাম বলা যায়।কয়েক মাস পর ও বললো যে বাইরে স্কলারশিপের জন্য সে এপ্লাই করতে চায়,আমিও এপ্লাই করবো কিনা।সত্যি কথা বলতে তখন আমার অন্যকিছু নিয়ে মাথাব্যাথা ছিলনা তবুও তার মন রাখার জন্য তাকে বললাম চেষ্টা চালিয়ে যেতে সেই সাথে দুএকটা জায়গাতে নিজেও এপ্লাই করলাম।যত যাই হোক আমি মোটেও আশা করিনি এতে কাজ হবে।কিন্ত তিশা তার অফুরন্ত সময়টাকে কাজে লাগালো,পড়াশোনার পেছনে মনপ্রান ঢেলে দিল।

আমাদের অফিসে আমাদের ইউনিট টাকে অন্য ইউনিটের কলিগরা বলতো ইবিলিসের আড্ডা।অফিসে এসেই সেটা জানতে পেরেছিলাম।পরে তো আমিও এই দলের ভেতরে ঢুকে পড়লাম তাই তাদের এই নামকরন বেশ উপহাসের চোখে দেখতাম।তবে মনেহয় এটা উপহাসের বিষয় ছিলনা।আমাদের ইউনিটের প্রায় সব সদস্যেরই সেই ক্লাবে আনাগোনা ছিল।খেলাধুলা,আড্ডার সাথে সাথে সেখানে সিগারেট আর মদও চলত সমান তালে।আমি প্রথম প্রথম এসব থেকে দুরেই থাকতাম কিন্ত আর কতদিন?প্রথমে সিগারেট ধরলাম তারপর একটু একটু মদ ।তিশা যেদিন প্রথম টের পেল সেদিন প্রচুর রাগারাগি করেছিল তাই ওর ভয়ে কোনো কিছুতে মাত্রা ছাড়াতাম না।ক্লাবে অনেক মেয়েও আসত।যারা ছিল আমার চেনা সব সাদাসিধে মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়েদের থেকে একদম আলাদা।রঙ্গিন প্রজাপতির মত তাদের উপস্থিতি আমাদের আসর মাতিয়ে রাখত।আমি মুগ্ধ হয়ে তাদের সংকোচহীন সাবলীল চলাফেরা দেখতাম।কি স্বাচ্ছন্দেই না তারা পুরুষদের সাথে মিশত।পুরুষদের ঠোঁটের সিগারেট বা হাতের মদের গ্লাস তদের মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারত না বরং অনেকেই সেগুলোতে আসক্ত ছিল।

দিন যত যেতে লাগল আমার অবস্থা তত খারাপ হতে লাগল।আমি সবকিছুতে মাত্রা ছাড়ানো শুরু করলাম।তিশার রাগকে আমি আর পাত্তা দিতাম না।কয়েকজন মেয়ের সাথেও আমার ভালই ঘনিষ্ঠতা হলো।আমি সবকিছুতেই তাদের সাথে তিশার তুলনা করতে লাগলাম যেখানে তিশা পেছনে পড়তে মনে লাগল।ঢাকায় আসার দেড় বছরের মাথায় আমার দাম্পত্যজীবনে ভীষন তিক্ততা এসে গেল।তিশাকে আমার এত অসহ্য লাগতে লাগল যে মনে হতো আসেপাশে ও না থাকলেই ভাল হয়।কারন আমি খারাপ জিনিসে আসক্ত হওয়ার পর থেকে ও ওর সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেছিল আমাকে ফিরিয়ে আনতে।যেটা আমার মোটেও পছন্দ হচ্ছিলনা।
একদিন রাতে সম্পূর্ন মাতাল হয়ে বাসায় ফিরে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় খারাপ কাজটা করে ফেললাম।আমার উপরে তিশা রাগ দেখাতেই ওর গায়ে হাত তুললাম।আমার সম্পূর্ন মনে নেই কি কি বলেছিলাম ওকে সেদিন তবে এটা মনে আছে যে ওকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলাম সেইসাথে আমার জীবনটা নষ্ট করার জন্য ওকে দোষ দিয়েছিলাম।আমার পুরোপুরি হুঁশ ছিলনা তাই সব মনে নেই কিন্ত মনে আছে ওকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেয়ার পর ও চিতকার করে কাঁদছিল আর আমি ওকে নোংরা কথা বলতে বলতে আরো আঘাত করেছিলাম।এরপর আমার কিছু মনে নেই কিন্ত সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেছিলাম তিশা বাসায় নেই।

রিয়াদ তার চোখের পানি সামলে ভদ্রমহিলাকে বলে,আমি জানিনা আমি তখন এত নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারলাম।মানুষ মনে হয় মাঝে মাঝে এতটা পশু হয়ে যায় যে তার ভেতরের মানুষটা সম্পূর্ন উধাউ হয়ে যায়।আমার অবস্থা তখন এমন ছিল।আমি এমনকি তিশাকে খুজে দেখার চেষ্টাও করিনি।মনটা এত পরিমান তিক্ত হয়েছিল আমার যে তার প্রতি একটু টান অনুভব করিনি।সেইসাথে একটা ভয়ও আমাকে তাড়িয়ে নিয়ে বেড়াত।ভেতরে ভেতরে তো ঠিকই জানতাম যে অন্যায় করেছি।কি মুখ নিয়ে তার সামনে দাঁড়াবো সেটাই ভেবে পেতাম না।

এক সপ্তাহ পরে বাড়ি থেকে বড়ভাবি ফোন দিয়ে জানতে চাইলো আমাদের মাঝে কি হয়েছে।আমি একগাদা অভিযোগ করলাম তিশার নামে।আমি যে চাইনা সে আমার জীবনে থাকুক সেটাও জানিয়ে দিলাম।বড়ভাবি খুব গম্ভির হয়ে বললেন তুমি ভুল করছো।ওকে ফিরিয়ে আনো।আমি রেগে উঠে ফোন রেখে দিলাম।এরপর উভয়দিকের অনেক আত্মীয়স্বজন ফোন দিয়েছে কিন্ত আমি ফোন ধরিনি।জানিই তো সবাই কি বলবে।এর তিনমাস পরে একদিন বড়ভাবি ফোন দিয়ে বললেন তিশা স্কলারশিপ নিয়ে একসপ্তাহের মধ্যে আমেরিকা চলে যাচ্ছে,আমি যেন তাকে ঠেকাই।এই খবর শুনে আমি হতবাক হয়ে গেলাম।তার মানে এটা আরো আগে থেকেই ঠিক হয়েছে কিন্ত তিশা আমাকে কিছু জানায়নি।প্রচন্ড রাগে আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল।ঠিক করলাম যায় যাক,ফেরানোর চেষ্টা করবো না।ভাবিকে সেকথা সাফ জানিয়ে দিলাম।ভাবি বললেন,তুমি যে কতবড় ভুল করছো তা এখন বুঝতে পারছো না কিন্ত একদিন ঠিকই বুঝবে।বাড়ির অন্যরা আমার উপর এতটাই ক্রোধান্বিত আর হতাশ ছিল যে কেউ আর ফোন দিতনা।আমিও আরো বেশি বেপরোয়া জীবনজাপন করতে লাগলাম।তবে বাড়িতে ফিরে মাঝে মাঝেই ওর অভাব বোধ করতাম কিন্ত সেই অনুভুতিটাকে পাত্তা দিতাম না।মেয়েদের সাথে আরো বেশি মিশতে লাগলাম।তাদের মাঝে একজন মাঝেমাঝে আমার বাসায় আসত।এভাবেই আমি নিজেকে ভুলিয়ে রাখতে লাগলাম যাতে সংসার ভাঙ্গার কষ্ট আমাকে স্পর্শ না করে।


তবে সেই মেয়েটির সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বেশিদিন স্থায়ী হলোনা।অন্যমেয়েদের সাথেও না।আমি খুব দ্রুতই বুঝতে পারলাম যে এ জাতিয় কোনো মেয়ের সাথেই আমার মিলবে না।মিলবে কিভাবে?আমার শুধু খোলসটা পাল্টেছে ভেতরে ভেতরে আমিতো সেই মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলেটিই আছি যার দিন শেষে ঘরে ফিরে স্ত্রীর হাতের খাবারের প্রয়োজন হয়,তার ভালবাসামাখা যত্নের প্রয়োজন হয়।বিচ্ছেদের পর এই একবছরে প্রথমবার আমি সত্যিকার অর্থে আমার লক্ষী বউটার অভাব অনুভব করলাম।বুঝতে শুরু করলাম কতটা ভুল করেছি।এই উপলব্ধি আমাকে প্রায় পাগল করে তুলল।একদিকে ওর অভাববোধ অন্যদিকে আমার পুরুষসুলভ অহংবোধ,দুধরনের তীব্র অনুভুতি আমাকে দিনরাত অস্থির করে তুলতে লাগল।একবার ওকে খুব বেশি কাছে পেতে ইচ্ছা হতো আবার এভাবে চলে যাওয়ার জন্য ওর প্রতি অভিমান হতো।খুব ইচ্ছা হতো ওর খোজ নিই।কে জানে মেয়েটা কোথায় আছে,কেমন আছে।আবার ভীষন লজ্জা আর ভয় আমাকে আগাতে দিত না।তখন আমার আর আড্ডা ভাললাগত না।সবকিছু কেমন পানসে লাগতে লাগত।তবুও প্রতি সন্ধ্যায় ক্লাবে যেতাম একাকিত্ব কাটানোর জন্য আর অন্য একটা জিনিসের টানে।ক্লাবে নতুন একটা ছেলে ড্রাগ বিক্রি করা শুরু করেছিল কিছুদিন আগে।দেখছিলাম দিনদিন তার খদ্দের বাড়ছে।তিশাকে ভুলে থাকার জন্য আমি একটু একটু করে ড্রাগ নেয়া শুরু করলাম।

হয়ত এভাবেই চলত আর আমি পুরোপুরি ধবংস হয়ে যেতাম কিন্ত একটা ঘটনা আমাকে বাঁচিয়ে দিল।একদিন সন্ধায় ড্রাগের আসরে পুলিশ রেইড করল।সবাই যে ধরা পড়ল তা নয় কিন্ত আমি ধরা পড়লাম।ছয়দিন হাজতে থাকতে হলো।এর মাঝে আমার অফিসের বন্ধুরা আমাকে দেখতে এলো না বা ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করলো না।আমি তাদের সাথে ফোন করে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা সাফ জানিয়ে দিল তাদের সংসার এবং সন্মান আছে।তারা এসব ঝামেলায় জড়াতে চায় না।এই ঘটনা আমাকে ভীষন ঝাঁকি দিল।একধাক্কায় আমার চোখ খুলে গেল।বুঝলাম যাদেরকে বন্ধু মনে করেছিলাম তারা কখনোই বন্ধু ছিলনা।কিন্ত তাদের জন্য আমি আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হারিয়েছি।

হাজতে বসে এই ছয় দিনে আমি শুধু ভাবলাম যাতে নিজের দোষগুলো আরো প্রকট হলো।এদেরই বা কতটা দোষ দেব?এরা হয়ত এই পরিবেশে এভাবেই মানুষ হয়েছে।ক্লাবে আর আড্ডায় হয়ত তাদের সুখ।এতে নিশ্চয় তাদের পরিবারে তেমন প্রতিক্রিয়া হয়না।হয়ত এদের পরিবারের সকলেও এসব দেখে অভ্যস্ত।কিন্ত আমি তো সম্পূর্ন ভিন্ন চিন্তাধারা নিয়ে ভিন্ন পরিবেশে বড় হয়েছি।আমার জীবনের আসল সুখ ছিল আমার সংসারে।আমার শ্রেষ্ঠ সঙ্গী ছিল আমার স্ত্রী।আমার তো সন্ধ্যার পর সঙ্গ পাওয়ার জন্য ক্লাবে যাওয়ার দরকার ছিল না।নিদারুনভাবে উপলব্ধি করলাম যা ঘটেছে তার সম্পূর্ন দায়ভার আমার।ভাবতে গিয়ে দেখলাম তিশাকে কোনোক্ষেত্রেই দোষারোপ করা যায়না বরং সে আমার ক্ষেত্রে অসম্ভব ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছে।আমি তার জীবন অতিষ্ট করে তুলেছিলাম কিন্ত সে আমাকে ছেড়ে যায়নি বরং ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করেছে।কিন্ত শেষ পর্যন্ত আমি ওর সামনে আর কোনো উপায় রাখিনি।

থানা থেকে বের হয়ে আমি প্রথমে যে কাজটি করলাম সেটি হচ্ছে অফিসে রিজাইন লেটার দেয়া।তারপর নিজেই একটা নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি হলাম চিকিতসার জন্য।তিশার অভাব দিন দিন তীব্র হচ্ছিল কিন্ত একটা কথা ভেবে আমি খুশি ছিলাম যে এখনও সে আমার স্ত্রী কারন আমাদের ডিভোর্স হয়নি।মনের মাঝে একটা আশা দানা বাঁধছিল যে চেষ্টা করলে আমি হয়ত তাকে ফিরে পেতে পারি।এই আশাটুকুই ধ্রুবতারার মত আমাকে পথ দেখানো শুরু করলো।আমি আবারও ভাল হতে চাইলাম, সুস্থ হতে চাইলাম।আবার রিয়াদ নামের সেই ছেলেটি হতে চাইলাম যাকে তিশা নামের একটি মেয়ে একসময় পাগলের মত ভালবাসত।নিরাময় কেন্দ্র থেকে ফিরে আমি কিছুদিন ছন্নছাড়ার মত ঘুরে বেড়ালাম।আত্মীয়দের সাথে দেখা করলাম,বাবা মার সাথে দেখা করলাম শেষে বড়ভাবির কাছে গেলাম।আর সবার মত তিনিও আমাকে দেখে খুশি হলেন না।আমি আমার সমস্ত লজ্জা আর সংকোচের মাথা খেয়ে তার কাছে তিশার ঠিকানা জানতে চাইলাম।তিনি স্পষ্ট করে বলে দিলেন তিনি এসব কিছু জানেন না।বুঝলাম উনার পায়ে ধরলেও উনি এই মুহুর্তে কিছু বলবেন না।তাই চলে এলাম।তিশার স্মৃতিমাখা এই ফ্লাটে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না।ঠিক এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরিটা পেয়ে গেলাম তাই সব গুছিয়ে সেখানে চলে গেলাম।

একবার প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রিয়াদ আবার শুরু করে,আজ প্রায় ছয় বছর হতে চলল আমি আমার তিশাকে দেখিনি।এই কয়বছরে আমি অনেক জায়গা থেকে তিশার ঠিকানা জানার চেষ্টা করেছি কিন্ত সফল হইনি।মেয়েটা যেন কাওকে কিছু না জানিয়ে উধাউ হয়ে গেছে।ঠিকানা জানলে জানে তার পরিবারের লোক আর আমার বড়ভাবি।ওর পরিবারের লোকের সাথেও কথা বলার চেষ্টা করেছি কিন্ত সফল হইনি আর ভাবি তো স্বীকার করেই না যে সে কিছু জানে।তাই আমি ঠিক করেছি আমি কিছু টাকায় জমিয়ে নিজেই আমেরিকা যাব ওকে খুঁজে দেখতে।আমি জানি সেটা অনেক বড় দেশ কিন্ত চেষ্টা করলে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়া তিশা নামের বাঙালি মেয়েকে নিশ্চয় খুঁজে পাওয়া যাবে।

রিয়াদ মৃদু হেসে ভদ্রমহিলাকে বলে,সেই থেকে আমি পাগলের মত টাকা জমাচ্ছি।চার বছর ধরে খাওয়া থাকার খরচ বাদ দিয়ে বাঁকি টাকাটা জমিয়েছি।আমি এমনকি একটা নতুন শার্টও কিনিনি এই কয়বছরে।এতদিনে আমার প্লেনের খরচের টাকা জমাতে পেরেছি আর ভাবিরও আমার প্রতি দয়া হয়েছে।আসার আগে তিনি তিশার ইউনিভার্সিটির ঠিকানা দিয়েছেন।এখন আমি যাচ্ছি তিশাকে খুঁজতে।সম্ভব হলে আমার জীবনে ফিরিয়ে আনতে।

রিয়াদের কথা শুনে ভদ্রমহিলা খুব নরম গলায় বললেন,কিন্ত এত দিনে তো অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে।তিশার জীবন বদলে যেতে পারে,তার জীবনে নতুন সঙ্গী আসতে পারে।রিয়াদ একটু ভেবে বলে,সেটা নিয়ে আমিও ভেবেছি।যতই বদলে যাক সবকিছু আমি তিশাকে একনজর দেখতে চাই।আমার অপরাধের কথা স্বীকার করে তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চাই।এই কয়বছরে আমি ওর চোখ,চুল,মুখ থেকে শুরু করে তার নাকের ঠোট্ট সাদা পাথরের নাকফুলটিকেও এত মিস করেছি যে তাকে না দেখা পর্যন্ত আমি কিছুতেই শান্ত হতে পারবো না।

যাত্রা শেষে ভদ্রমহিলা এয়ারপোর্টে রিয়াদের মাথায় হাত রেখে বললেন,দোয়া করি তোমার যাত্রা সফল হোক।তিনি তার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বললেন যদি তুমি তোমার তিশাকে ফিরে পাও তো ওকে নিয়ে আমার ইউনিভার্সিটিতে একবার এসো,আমি তোমাদের আমার বাসায় নিয়ে যাব।এয়ারপোর্ট থেকে বের হয়ে রিয়াদ একটা লম্বা নিঃস্বাশ নেয়।তিশাকে কোথায় খুঁজতে হবে এখন সে জানে।


দুই
আমেরিকার লস এঞ্জেলসসের একটি ছোট্ট বসতি।শহর থেকে কিছুটা দূরে ছোট ছোট পাহাড় আর টিলায় ঘেরা ছিমছাম একটি এলাকা। রাস্তার পাশে একটা টিলার কোল ঘেসে রয়েছে ছোট্ট একটি ক্যাফে।ক্যাফের সামনে সাজানো গোছানো বাগানের পুরোটা জুড়ে ছোট ছোট টেবিল, চেয়ার আর বেঞ্চ পাতা।রিয়াদ গত একমাস ধরে প্রায় সারাটা দিনই এইখানে পড়ে থাকে।ক্যাফে খোলে বিকালের দিকে চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।তখন জায়গাটা মানুষে ভরে ওঠে।রিয়াদ তখনও বসে থাকে।এখানেই খাওয়া সারে।ঘুম পেলে কোনো একটা গাছের ছায়ায় নরম ঘাসের গালিচায় শুয়ে খানিকটা ঘুমিয়ে নেয়।রাতে কাছের একটা হোটেলে চলে যায় আবার ভোর হতেই এখানে এসে বসে।

হ্যাঁ রিয়াদ অবশেষে তার তিশাকে খুজে পেয়েছে।ভাবির দেয়া ঠিকানায় গিয়ে সে জানতে পারে তিশা দুই বছর আগে পি এইচ ডি শেষ করেছে।তারপর সে আগের ঠিকানা ছেড়ে অন্য কোথাও উঠে গেছে।নতুন ঠিকানা জানা গেলনা।তবুও রিয়াদ কিছুদিন পাগলের মত ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়ালো কেউ একজন ঠিকানাটা জানবে এই আশায়।অবশেষে তার একজন সহপাঠি তাকে ঠিকানাটা দিতে পারলো।তার কাছে এটাও জানা গেল যে কিছুদিনের মধ্যেই তাদের পোস্ট ডক্টরেটের কাজ শুরু হবে।


রিয়াদের সেই বিকালটি সারাদিন মনে থাকবে।সেদিন সে এই ছবির মত এলাকায় এই ক্যাফের বাগানে এসে দাঁড়িয়েছিল।ক্যাফেতে মানুষের ভীড়ের মাঝে হঠাত তার চোখ খুঁজে পেল তিশাকে।মুগ্ধ নয়নে সে ভাবতে লাগল মেয়েটির লাবন্য এতটুকু কমেনি বরং যেন আরো বেড়েছে।তিশা হাসি মুখে একটা টেবিলে কফি আর রোল পরিবেশন করছিল।হঠাত কোথা থেকে একটা চার পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়ে ছুটে এসে তিশাকে জড়িয়ে ধরল এবং পরিষ্কার বাংলায় বলে উঠল, আম্মু আমাকে কোলে নাও।রিয়াদের বুকের মাঝে কেঁপে উঠল।এটা কি তিশার মেয়ে?কোন সন্দেহ নেই,তিশার মতই সোনালী গায়ের রং,তারই মত কাঁধ বেয়ে নেমে যাওয়া ঘন কালো,কোঁকড়া চুল।মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছিল না ঠিক মত কিন্ত তিশার মতই মিষ্টি চিবুকের গঠন টা বোঝা যাচ্ছিল।তবে কি তিশা নতুন করে সংসার পেতেছে?রিয়াদের সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল।সে পায়ে পায়ে তিশার দিকে এগিয়ে গেল।মেয়েকে কোলে নিয়ে তিশা বাসার দিকে যাচ্ছিল,রিয়াদকে দেখে থমকে দাঁড়ালো।ছোট মেয়েটিও ঘুরে তাকালো।নাহ! কোনো সন্দেহ নেই এটা তিশারই মেয়ে।চিবুকের তিলটি পর্যন্ত একই রকম।রিয়াদ থমকে দাঁড়ালো,তার সমস্ত পৃথিবী দুলে উঠল।কারন মেয়ের মুখটি দেখে তার কোনো সন্দেহ থাকল না যে এটি তারও মেয়ে!মেয়েটির চোখ, না্ক, মুখ এমনকি হাসিটা পর্যন্ত অবিকল রিয়াদের মত।

সেই থেকে রিয়াদ এই ক্যাফেতে আস্তানা গেড়েছে।এই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি তাকে দিশেহারা করে ফেলেছে।এক সময় তার মনে হয় সে এই জগতের সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মানুষ আবার পরক্ষনেই মনেহয় সে জগতে সবচেয়ে বেশি দূর্ভাগা।তার বিশ্বাস সে একদিন এই ভয়ংকর অভিমানী মেয়েটির অভিমান ভাঙ্গাতে পারবে।যে মেয়েটি তার সন্তানকে গর্ভে নিয়ে কাওকে কিছু জানতে না দিয়ে একা একা এতদূরে চলে এসেছে।যে এতদিন রিয়াদের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে তার সন্তানকে মানুষ করেছে সে নিশ্চয় এখনো মনে মনে রিয়াদ কে ভালবাসে।বাগানে বসে রিয়াদ টিলার উপর ছবির মত বাসাটির দিকে তাকিয়ে থাকে আর ভাবে। তিশা বলত যে, বুড়ো বয়সে অবসর নিলে সে রাঙ্গামাটির কোন এক পাহাড়ে এমন একটা ঘর বানাবে আর সেই সাথে একটা ছোট্ট রেস্তোরা।তিশা নিজের স্বপ্ন কি সুন্দর ভাবেই না বাস্তবে পরিনত করেছে।শুধু আফসোস যে রিয়াদ সে সময় তার পাশে থাকতে পারেনি।

রিয়াদ আজকাল বসে বসে তিশাকে কাজে যেতে দেখে,ক্যাফেতে কাজ করতে দেখে।মেয়েকে স্কুল যেতে দেখে, ছুটোছুটি করে খেলতে দেখে।মাঝে মাঝে ক্যাফের সাহায্যকারী অল্পবয়সি মেয়ে দুটির সাথে সেও অতিথিদের খাবার পরিবেশন করে।আজকাল তার মেয়েটি এসে তার আসেপাশে ঘুরে বেড়ায়,সে ডাকলে তার কোলে বসে গল্প করে।রিয়াদ মেয়েকে বুকে চেপে ধরে আদর করে।তিশা সবকিছু দেখে কিন্ত কিছু বলে না।রিয়াদও কিছু বলেনা শুধু করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে আমি ক্ষমা প্রার্থী,আমায় ক্ষমা করো।রিযাদ ভাবির কাছ থেকে জানতে পেরেছে যে তিনিই একমাত্র প্রথম থেকে সব জানতেন কিন্ত তিশার অনুরোধের কারনে আর তার অমন অধঃপতন দেখে কাওকে কিছু বলেন নি।রিয়াদ তাকে অভিযোগ করলে তিনি হেসে বলেছেন, নাও এবার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করো,দেখ ঘরের বউকে ঘরে ফেরাতে পারো কিনা।

রিয়াদের বিশ্বাস সে পারবে।একদিন তিশার অভিমান ভাঙবে।তখন সে রিয়াদকে তার জগতে ডেকে নেবে।আবার দুজনের জগত এক হবে।রিয়াদে মাঝে কোনো তাড়া নেই কারন তার সামনে পড়ে আছে এক মহাকাল সময়,অসংখ্য দিন,অগনিত রাত।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদীর পরিবার সংক্রান্ত আপডেট

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯


মার্চ মাস থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবছিলাম। ক'দিন আগেও খুলনায় যাওয়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েও আমার বিগত লিখায় কিছু তথ্য চেয়েছিলাম। অনেক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও মেহেদীর পরিবারকে দেখতে আমার খুলনা যাওয়া হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×