somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসা এবং কিছু শুন্যতা

১৭ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পরছে।যেন আকাশের সব অভিমান অশ্রু হয়ে ঝরে যাচ্ছে।বৃষ্টি দেখলেই মন ভাল হয়ে যায় তার।বৃষ্টি দেখে,বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা অনুভব করে ।আজ অনেকদিন পর স্মৃতির ছেড়া পাতাগুলো খুব উল্টাতে ইচ্ছা হল আসিফের।

আসিফ আর ঝর্নার বন্ধুত্ব শুরু হয় ভার্সিটিতে। একি ক্লাসে পড়ে তারা।আসিফ সবসময় খুব চুপচাপ থাকে। কারোর সাথেই তেমন কথা বলে না।তাই বন্ধু বলতে তার কেও নেই।সবসময় একা থাকে,নিজের সাথে কথা বলেই সময় কাটায় যেন,একাকীত্ব তার একমাত্র বন্ধু।শূন্যতা যখন তকে গ্রাস করে ফেলছিল ঠিক সেই মুহূর্তে বন্ধুত্বের হাত বাড়ায় ঝর্না।তখন থেকে শুরু হয় আসিফের জীবনের নতুন অধ্যায়।
খুব চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ঝর্না।সারাক্ষন কিছু না কিছু করছেই।দুষ্টুমি ফাজলামিতে সবাইকে মাতিয়ে রাখে।আর ওদের মধ্যে খুনসুটিতো লেগেই আছে।প্রতিদিন ঝগড়া করে একে অপরকে মানানো তাদের নিত্যদিনের অভ্যাস।
এভাবে ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে আসিফ,যেন তার অন্ধকার মেঘাচ্ছন্ন জীবনটা কেও ভোরের শুভ্র আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে। যে ছেলের কাছে শূন্যতা আর একাকীত্বই ছিল তার জীবনে চলার পথের সঙ্গী,আজ সে আর একা নেই।অনেক বন্ধু তার যারা সবসময় তার সাথে থাকবে,তাকে আগলে রাখবে। তবে মা-বাবার পর তার সবচেয়ে আপন একজনই,ঝর্না।যত যাই হোক না কেন সে ঝর্নাকে হারাতে চায় না।তাই তো যেই ঝগড়া শুরু করুক না কেন আসিফ আগে সরি বলবে।ঝর্নার মুখে হাসি দেখার জন্য সে সবকিছু করতে পারে।
সেদিনও ঠিক এভাবেই বৃষ্টি পরছিল। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ভার্সিটির বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছিলো সে।হঠাৎ একটি মেয়ে দৌড়ে এসে তার পাশে দাঁড়াল।তাকাতেই মনে হল মেয়েটি যেন বর্ষাস্নাত কদম ফুল।মেয়েটির টানাটানা চোখ আর মায়াকাড়া চেহারা মন কেড়ে নিয়েছে তার।অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মেয়েটির দিকে।আসিফ বলে ডাকতেই চমকে উঠল সে।
-কিরে আসিফ ঠিক আছিস তো?
-অহ!তুই??কখন এলি?
-কখন এলি মানে?এতক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে ডাকছি আর তুই আমার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস।
-নাহ!এমনি
-অহ!তাই বল।আচ্ছা ক্লাস না করে এভাবে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকলে হবে?চল ক্লাসে যাই।
-নারে আজ আর ক্লাস করব না।তুই যা।আমি যাই আজকে।
বলেই হাঁটতে শুরু করল আসিফ। ওদিকে ঝর্না ডেকেই চলেছে,কিন্তু আজকে কেন জানি সাড়া দিতে ইচ্ছে হল না।
ঝর্নাকে নিয়ে আজ সারাক্ষণ ভাবল আসিফ। নাহ!কোন কাজেই মন বসাতে পারছে না সে।কিন্তু কি অদ্ভুত! যতবার সে মেয়েটির কথা ভাবছে মনে কিরকম যেন অনুভূতি হচ্ছে যা কখনো আগে অনুভব হয়নি।তবে কি আমি প্রেমে পরেছি? যে ছেলে প্রেম ভালবাসা থেকে একশ হাত দূরে থাকে সে কি একটু একটু করে ভালবাসতে শিখে গেল??চিন্তার সাগরে ডুবে থাকতে থাকতে রাত পার হয়ে কখন ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে খেয়াল করে নি আসিফ।অনেক চিন্তার পর ভাবল না এভাবে বসে থাকলে তো হবে না,পাগলীটাকে জানাতে হবে যে তাকে কত ভালবাসে।ঝর্নাকে ছাড়া তার জীবনটাই তো অচল।ভাবতেই আনন্দ লাগছে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধুকে সে এত ভালবাসে।যে অনুভূতিকে সে বন্ধুত্ব বলে মনে করত আসলে সেটা ছিল তার ভালবাসা।এমন সময় হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠল।ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখল ঝর্নার নাম
-এই শোন তোকে একটা জরুরি কথা বলব।এখনি ভার্সিটি চলে আয়।
-আচ্ছা আসছি।
তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে ভার্সিটিতে চলে গেল আসিফ।এক ঘণ্টা হয়ে গেল ঝর্নার দেখা নেই।নাহ মেয়েটা আর ঠিক হল না।অপেক্ষার পালা যেন শেষ হচ্ছেই না। কখন যে তাকে মনের কথাগুলো বলতে পারব!
-এই আসিফ।সরি অনেক দেরি করে ফেললাম।
-তুই তো দেরি করবি।এ আর নতুন কি?
-আচ্ছা প্লিজ রাগ করিস না। তোকে একটা কথা বলব।
-কি বলবি তাড়াতাড়ি বল কারণ আমিও তোকে একটা জরুরি কথা বলব।
-তোকে বলা হয় নি।রাতুল আমাকে গতকাল রাতে প্রপোজ করেছে।কিন্তু আমি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না।তাই ওকে বলেছি আসিফ যা বলবে আমি তাই করব।
-তাই নাকি?আমি যদি না বলি তখন?
-তাহলে না বলে দিব।কারন আমি জানি তুই আমাকে সবার থেকে ভাল বুঝিস আর সবসময় আমার ভাল চাইবি।
-তুই কি রাতুলকে পছন্দ করিস?
-আমি জানি না আসিফ।
-আমি যা বুঝার বুঝে গিয়েছি।রাতুল অনেক ভাল ছেলে। তোকে কখনও কষ্ট দিবে না।আর যদি ওর কারণে যদি তোর চোখে এক ফোঁটাও অশ্রুবিন্দু আসে,তাহলে আমাকে বলবি ওর খবর করে দিব।
-কি যে বলিস না।বলেই হেসে ফেলল ঝর্না।
-আচ্ছা পাগলী আমি যাই। তুই আর তোর পাগল অনেক সুখে থাক।
-যাই মানে? তুই না কি জরুরি কথা বলবি?
-নাহ কিছু কথা অজানা থাকাই ভাল।বলেই চলে গেল আসিফ।কারণ যেখানে সুখ থাকে সেখানে শূন্যতাকে থাকতে নেই।
______________
অনেকদিন পর পাগলীটার কথা মনে করে চোখ ভিজে উঠল আসিফের।। জীবনের কাছে হয়ত একটু বেশিই চেয়ে ফেলেছিলাম আমি । সবাই তো জীবনে সব কিছু পায় না। আমি না হয় তোর স্মৃতি আর কিছু শুন্যতা নিয়েই জীবনটা কাটিয়ে দিব। আসলে কি জানিস? যাদের নিজেদের ইচ্ছাগুলো অপূর্ণ থাকে অন্যের পূর্ণতায় তারা সুখ খুঁজে নেয় ।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×