somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হায়াত-মৌত আল্লার হাতে, আজরাইলকে পাঠালে কেউ ফিরাবার পারবি নে!

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১১ বছরের চঞ্চল একটা মেয়ে, নাম পঞ্চমী। আমরা একই গ্রামের বাসিন্দা।
৪ঠা জানুয়ারি, মঙ্গলবার। দুপুর থেকেই পঞ্চমীর পেট ব্যথা করছিল, রাত বাড়ার সাথে সাথে তা বাড়তে থাকে সেই সাথে পেট ফুলা শুরু হয়। পঞ্চমী ব্যথায় কাতরাতে থাকে।
বাড়িতে ছিলেন পঞ্চমীর মা, দাদা-দাদী আর ৫ বছরের ছোট ভাই। বাপ ঢাকায় চাকরি করেন। দাদা বছর দুই আগে হজ্জ্ব করে এসেছেন। এখন হাজী পোদ্দার নামে পরিচিত। বড় আরও তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে।

মেয়ের অবস্হা দেখে মা-ও কান্নাকাটি শুরু করেন, আশেপাশের বাড়ি থেকে মানুষজন জড়ো হয়। দাদি পাশে বসে কুরআন শরীফ পড়তে থাকেন। দাদা মসজিদ থেকে ইমাম সাহেবকে ডাকায়ে আনেন, হুজুর ঝাড়া-ফুক দিতে থাকেন।
রাত বাড়ার সাথে সাথে মেয়েটির অবস্হা আরও খারাপ হয়, পেট ফুলে বলের মতো হয়ে যায়। আশেপাশের মানুষজন কেউ কেউ শহরে ডাক্তারের কাছে নিতে বলে। দাদা রাজি হয় না, 'হাসপাতালোত নেওয়া লাগবি নে, তোমরা আল্লা আল্লা কর ঠিক হয়ে যাবি। বাতাস লাগছে তাই পেট ফাপছে, হুজুরে তো কলো শুনলু না! হায়াত- মৌত, বালা- মসিবত সব আল্লার হাতে। আল্লা অসুখ দিছে আল্লাই ঠিক করে দিবি, অসুখ-বিসুখ দিয়ে আল্লা ঈমান পরীক্ষা করে, ধৈর্য পরীক্ষা করে। তোমরা আল্লা বিল্লা করো।'
সকালেও পঞ্চমীর অবস্হা ভাল হলো না। ব্যথার যন্ত্রনায় মেয়েটার কান্নাকাটি আর কাতরানিও এখন বন্ধ, মুখ দিয়ে মাঝে মাঝে একটু আওয়াজ বের হয় এখন সকাল নয়টার দিকে মেয়ের অবস্হার আরও অবনতি দেখে মায়ের পীড়াপীড়িতে দাদা গ্রামের একজন ডাক্তার ডেকে আনেন। ডাক্তার সাহের ম্যাট্রিক পাশ, থানায় এক ঔষধের দোকানে চাকরি করতো, পরে নিজেই গ্রামে দোকান দিয়ে চিকিৎসা চালাচ্ছেন, এই গ্রামে উনিই একমাত্র ডাক্তার। ডাক্তার সাহেব মেয়ের চিকিৎসা শুরু করলেন, একটা কড়া ব্যথার ট্যাবলেট সাথে এসিডের ঔষধ খাইয়ে দিলেন। কোন লাভ হলো না, পঞ্চমীর অবস্হা আরও খারাপের দিকে।

মা আর প্রতিবেশিদের অনুরোধে দাদা শেষপর্যন্ত হসপিটালে নিতে রাজি হলেন, "ডাক্তারের কাচে লিয়ে কিচু হবি নে গো মা। আল্লা চাইলেই সুস্হ হবি, দোয়ায়ে শেফা পড়, আল্লাক ডাক, দরুদ পড়, নফল নামাজ পড়।"

থানার সরকারি হসপিটালে যখন মেয়েটিকে নিয়ে আসা হলো তখন বাজে ১২টা। হসপিটালে ঘন্টাখানিক রাখার পর কোন সুরহা না করতে পেরে ডাক্তাররা তাকে শহরের হসপিটালে নিতে বললেন, তখন প্রায় দুপুর ১.৩০। মেয়েটিকে মেডিকেল কলেজ হাসপিটালে নিয়ে আসা হয় দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই পঞ্চমী মারা যায়। ডাক্তাররা তার চিকিৎসা শুরু করেছিল, পেট অপারেশনের জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

পরে যা শুনেছি, মেয়েটির এ্যাপেন্ডিক্স ফেঁটে গিয়েছিল। ডাক্তাররা বলেছেন, সময়মত অপারেশন করাতে পারলে পঞ্চমী বাঁচতো, সকালেও যদি হসপিটালে নিয়ে আসা হতো তাহলেও হয়তো বাঁচানো যেত। সময়মত চিকিৎসার অভাবেই শুধু মেয়েটি মারা গেল।

দেখতে গিয়েছিলাম গ্রামে, দাদাকে খুব বলতে ইচ্ছা করছিল, 'আপনারাই মেয়েটিকে মেরে ফেললেন'। তাকে আর বলা হয়নি, প্রতিবেশদেরকে বলেছি।

আল্লা আর তার কুরানের দোয়া মেয়েটিকে বাঁচাতে পারেনি, কোনদিনও কাওকে বাঁচাতে পারেও না বরং অতিরিক্ত আল্লা ভক্তি আর নির্ভরতার কারনেই অসংখ্য মানুষকে মেয়েটির মতো সময়মতো চিকিৎসার অভাবে প্রাণ দিতে হয়। ছোটবেলায় দেখা আমার ফুফুও মারা গিয়েছিল বাচ্চা হওয়ার সময়, মনে হয় সে সময় যদি উনিও হসপিটালে থাকতেন তাহলে হয়তো মরতে হতো না, তার বাচ্চাটাকেও এতিম হতে হতো না।

বিষয়টা নিয়া অনেকে তর্ক করেন, সবাই সাপোর্ট করেন সময়মতো চিকিৎসা করানো ভাল, অসুখ হলে চিকিৎসা করানো নবীজিও সাপোর্ট করে গেছেন, তবে জন্ম-মৃত্যু আল্লার হাতে, মেয়েটির এভাবেই মৃত্যু লেখা ছিল, হসপিটালে সময় মতো নিলেও একই সময় মরতো।


চিন্তা করি যদি ধর্মে উল্লেখ থাকতো জন্ম মৃত্যু কোনটাই আল্লার হাতে না, তাহলে হয়তো মানুষের প্রথমেই ডাক্তার আর হসপিটালের কথাই মাথায় আসতো, অসুস্হ মানুষকে বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা হিসেবে চিকিৎসাকেই বেছে নিত, দোয়া দরুদ, তাবিজ কবজের উপর নির্ভরতা কমতো। এভাবে অকালে প্রাণ দিতে হতো না অনেক মানুষকে।

মেয়েটার কথা কিছুতেই মাথা থেকে দুর করতে পারছি না, ঐ দাদা আর তার ...... ধরে গাতাইতে মন চায়।


( ব্লগটা প্রথমে দিয়েছিলাম স্বপ্নবাজ ব্লগে , এখানে রেস্ট্রিকশানের কারনে কিছুটা এডিট করে দিলাম। লিংক )
২২টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×