পাকিস্তানে তালেবানের বিরুদ্ধে নারী শিক্ষার পক্ষে কলম ধরে ‘বিখ্যাত’ হয়ে যাওয়া মালালা ইউসুফজাই নামের সেই কিশোরী ব্লগার বন্দুকধারীদের গুলিতে আহত হয়েছে। ১৪ বছর বয়সী ওই কিশোরী পাকিস্তানের জাতীয় শান্তি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছে তার সাহসিকতার জন্য। গতকাল মঙ্গলবার উত্তর-পশ্চিম পাকিস্তানের সোয়াতে মিঙ্গোরা অঞ্চলে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মিঙ্গোরার একটি মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবণতি হওয়ায় সামরিক হেলিকপ্টারে করে তাকে পেশোয়ারে একটি উন্নতমানের হাসপাতালে নেয়া হয়।
চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, ইউসুফজাইয়ের মাথার খুলি ভেদ করে একটি গুলি প্রবেশ করেছে। তবে মগজ রক্ষা পাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যেতে পারে সে। আরেকটি গুলি প্রবেশ করেছে তার গলা ও বুকের মাঝামাঝি স্থানে। শান্তিবাদী এই কিশোরীর আহত হবার খবর শুনে হাসপাতালের বাইরে শত শত লোক জড়ো হয়। বেশ কয়েকটি তাত্ক্ষণিক ক্যাম্প স্থাপন করা হয় প্রয়োজনে তার জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে।
হাসপাতালের বাইরে ইউসুফজাইয়ের ক্লাসের বান্ধবী সাজিয়া গতকাল সাংবাদিকদের বলে, ‘আমরা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। পথে কয়েকজন লোক আমাদের বাসের মধ্যে প্রবেশ করে। তারা জিজ্ঞাসা করে ইউসুফজাই কে। তাকে দেখিয়ে দেয়ার পরপরই তারা দ্রুত কয়েকটি গুলি ছোড়ে। ইউসুফজাই মুহুর্তেই বাসের মধ্যে লুটিয়ে পড়ে। তাকে মৃত ভেবে হামলাকারীরা চলে যায়।’
হামলার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে সে বলে, সোয়াতে তালেবানের নৃসংশতার বিপক্ষে এবং নারীশিক্ষার পক্ষে সে লেখালেখি করতো। তালেবান ওই এলাকায় নারীদের স্কুল কলেজে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও সে নারীশিক্ষার পক্ষে লেখালেখি করতো। এতে শিশু-কিশোরী-তরুণীরা উজ্জীবিত হয়ে স্কুল কলেজে যাওয়া শুরু করে। একারণে ক্ষিপ্ত হয় জঙ্গিরা।
দায় স্বীকার : এদিকে, পাকিস্তানি তালেবানের মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান হামলার পর বিবিসিকে বলেন যে তালেবান এই হামলা চালিয়েছে। হামলার কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, কিশোরী ইউসুফজাই তালেবানের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গড়ে তুলছিল। সে ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী। তাই তাকে হত্যার টার্গেট করা হয়। ওই একই মুখপাত্র পাকিস্তানের দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকাকে বলেন, গুলিবিদ্ধ ইউসুফজাই যদি এ যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যায় তবে ‘না মরা পর্যন্ত’ তার উপর আবারও হামলা চালানো হবে। তরুণ প্রজন্মের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, যারা নারী শিক্ষা বন্ধের বিপক্ষে অবস্থান নেবে তাদের পরিণতি ইউসুফজাইয়ের মতো হবে।
কিশোরী ব্লগার গুলিবিদ্ধ