২০১২ এর ফেব্রুয়ারি মাস। টি.এস.সিতে বসে আছি একদিন।
হঠাৎ একটি পরিচিত লাইন কানে এলো......
“যে জীবন ফড়িঙের, দোয়েলের
মানুষের সাথে তার হয় নাকো …”
লাইনটি এর আগে কোথায় শুনেছিলাম মনে করার চেষ্টা করলাম; মনে পড়লো, এটি প্রিয় কবি জীবনানন্দের কবিতা । এবং দেখলাম আমার থেকে একটু দূরেই একজন একমনে আবৃত্তি করে যাচ্ছেন। একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। তিনি একমনে আবৃত্তি করে চলেছেন......
“জানি - তবু জানি
নারীর হৃদয় - প্রেম - শিশু - গৃহ – নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয় -
আর এক বিপন্ন বিষ্ময়
আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতরে
খেলা করে
আমাদের ক্লান্ত করে
ক্লান্ত - ক্লান্ত করে;”
কী আশ্চর্য ! একটি কবিতা এতো সুন্দরভাবে পড়া যায়!
আবৃত্তি শেষে আবিষ্কার করলাম, তিনি একা নন, তাঁর একটু দূরেই বসে আছেন প্রায় ১৩ জন, সবাইকে একটি দলের মনে হলো।
তার দুইদিন পর বিকেল বেলা, আবারো টি.এস.সিতে।
বিভিন্ন বয়সের ১২-১৩ জন মিলে একসাথে আবৃত্তি করছে,একজন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কবিতাটি আমার অপরিচিত। কিন্তু তাদের সবাইকে দেখে অনেক সুখি সুখি লাগছিল। যেন সারাদিনের ব্যস্ততার ফাঁকে পরম স্বস্তির জিড়িয়ে নেয়া। অনেক ইচ্ছে হচ্ছিল, তাদের দলে মিশে যাই।
সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। কথা বলে জানতে পারলাম, সবাই একটি আবৃত্তি সংগঠনের (স্বরকল্পন আবৃত্তিচক্র) কর্মশালার সাথে সম্পৃক্ত। খোঁজ খবর নিয়ে ইন্টরভিউ দিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম কর্মশালায়।
আবৃত্তি, কবিতাগুলোকে দেয় অন্য মাত্রা। আবৃত্তি কবিতাগুলোকে যেন জীবন্ত করে তোলে। প্রত্যেক কবিতার আলাদা আলাদা আকুতিগুলিকে আরো তীব্র করে । এখন, সপ্তাহ শেষে অনেকে মিলে একসাথে হারাই, কবিতার জগতে।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টি.এস.সি কেন্দ্রিক বেশ কিছু আবৃত্তি সংগঠন রয়েছে। কন্ঠশীলন,স্বরকল্পন, সংবৃতা ইত্যাদি। স্বরকল্পন আবৃত্তি চক্রের নতুন কর্মশালা এই মাসেই শুরু হবে। টি.এস.সিতে এবং আজিজ সুপার মার্কেটের ‘মেঘ’-এ ভর্তী ফর্ম পাওয়া যাচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৫০