ভ্রু জোড়াতে ঘাম জমেছে তিয়াসের ।হাতের চেটোতে মুছতে ভয় লাগছে ।ভয় লাগার কারনও অবশ্য আছে ।বারবার ঢোক গেলা,অস্বাভাবিক ঘাম,ইতস্তত করা সহ যেকোন কিছুই চেকপোস্টের সিআইডি কর্মকর্তাদের কাছে সন্দেহজনক ঠেকবে ।কথাটা ক্লাস সিক্স পড়ুয়া তিন গোয়েন্দা পাঠকও জানে ।কিউটা আরেকটু আগালো ।অগত্যা তিয়াসকেও এক কদম এগোতে হল ।
ওহ!তিয়াসের ঘামার কারন তো বলিইনি ।জৈষ্ঠ্য মাসের কাউয়া মরা রোদ এর জন্য দায়ী নয় ।কারন,এখন বাজে সাড়ে আটটা ।হালকা বাতাস পাওয়া যাচ্ছে ।যা কেশাগ্রের ডগা উড়াতে পারছে কেবল ।আপাতত এটাই অমৃত দীর্ঘ লাইন ধরা প্রায় জনা ষাটেক লোকের কাছে ।ঢাকা চিটাগং গামী রুটের নির্দিষ্ট একটা বাসের কোন নির্দিষ্ট এক বা একাধিক যাত্রী হাই কোয়ালিটির ডিফর্মড ব্রাউন সুগার বহন করছে ।বাংলায় বললে হেরোইন ।গোপন তথ্যের ভিত্তিতে চেকিং চলছ মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে ।পাশেই তিনজন সিআইডি ওয়ালা যাত্রীদের লাগেজের মোটা মোটা লাইনিং পর্যন্ত ব্লেড চালাচ্ছে সনি টিভির সিআইডি "দয়া"র মত "কোনা কোনা ছান মারা"র মত ।
দীর্ঘক্ষন পর তিয়াসের পালা এল ।ভয়ে তার লোমকূপ গুলোও যেন সিটিয়ে যেতে লাগল ।দক্ষ হাত শরীরের প্রায় প্রতিটি ইঞ্চি টিপে দেখছে ।হা করিয়ে দাতেঁর স্ট্রাকচার থেকে শুরু করে গলনালী পর্যন্ত দেখে নিচ্ছে পেন্সিল টর্চের আলোয় ।জুতোর সোলে কাঠের হাতুড়ির বাড়ি দিয়ে সেটার পুরুত্ব পরীক্ষা করাও বাদ গেলনা ।
কর্মকর্তার মুখে কাঙ্খিত দুঃখিত শব্দটি শুনে তিয়াসের হার্ট যেন একপাক সাম্বা নেচে নিল ।ঘাস খাওয়া শালাদের মাথাতেই আসেনি কোথায় রাখতে পারে জিনিসগুলো ।একশো ত্রিশ আউন্সের র' ব্রাউন সুগারগুলো কনডেনসারে পাস্তরিত করে 6mm ব্যাসের একটা টিউবাকৃতির মোটা পলিমারে ভরে দিয়েছে লোডাররা ।এই একশো ত্রিশ আউন্স র' ম্যাটেরিয়াল একহাজার ত্রিশ আউন্সে পরিনত হলেও অবাক হবার কিছু নেই ।দেশের ড্রাগ বিজনেসে ভেজাল ভীষনমাত্রায় থাকে । টিউবটা এখন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে আরামদায়ক উস্ন জায়গায় ।তিয়াসের রেকটামের ছোট্ট নালীটায় এখন সেটা ।
জার্নির শুরু থেকেই কিছু খেতে মানা করা হয়েছে তাকে ।চিটাগং পৌছুনোর আগ পর্যন্ত নিজের শরীরের বিশ্বরোডটাকে জ্যাম করে রাখার জন্য তাকে কড়কড়ে দশহাজার টাকা দেয়া হবে । এমাউন্টটা বেশ ওজনদার তিয়াসের কাছে ।বোনের এস এস সির ফর্ম ফিলাপ করাতে হবে ।সাথে তার দু মাসের মেসভাড়াও সহজে কভার হয়ে যাবে এক ট্রিপে ।ভয় এখন একটাই এই টিউব যদি রেকটামের পেশীগুলোর চাপ সহ্য করতে না পারে তাহলে আর দেখতে হবেনা ।প্রানপক্ষী ডাইরেক্ট সপ্ত আসমানে চলে যাবে ।জিনিসটাতে ভেজাল থাকলেও হয়তো বাচাঁর আশা ছিল ।বাট র' ব্রাউন সুগারের খেল হবে আলাদা । অবশেষে চেকিং শেষ হল ।টেকো এক ভদ্রলোক । সি আইডি দের বস বোধহয় ।যাত্রীদের উদ্দ্যেশে ব্যাখ্যা করেন চেকিংয়ের কারন ও গুরুত্ব ।এর সাথে বলেন অপরাধী যদি থাকে এবং সে যদি স্বেচ্ছায় আত্নসমর্পন করে তাহলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে ।
মনে মনে হাসে তিয়াস ।ধরা পড়লে সিআইডির কারনে ডিমের বাজার আবার অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে কোন সন্দেহ নেই ।অন্তঃত পার পিস যে এক টাকা করে বাড়বে নিশ্চিত থাকা যায় । শালা নিঃসন্দেহে সনি টিভির সিআইডি সিরিয়ালের ফ্যান ।এস এ পি প্রদ্যুয়মানকে নকল করে ডায়লগ ছাড়ছে ।
অবশেষে থেমে থাকা যাত্রা শুরু হল ।তিয়াসের পাশের যাত্রী একটা হাফ লিটার সেভেন আপ কিনে চুমুক দিচ্ছে দেখে তিয়াসের গলার ভেতরটা খসখসে ঠেকল ।করুন চোখে তাকাতে দেখে তার দিকে বোতল বাড়িয়ে দেয় দয়ালু যাত্রী ।এক চুমুকেই আদ্দেকটা নামিয়ে দেয় তিয়াস ।ধন্যবাদ দিয়ে হেডরেস্টে মাথা রেখে চোখ বোজে তিয়াস ।
ঘন্টা চারেক ভালই কাটল ।তন্দ্রা কাটতেই অনুভুত হয় ডাল মে কুচ বেগুনী হ্যায় ।পেটের ভেতরের কেবলগুলো পাক খাচ্ছে তার । পায়ু স্ফিংটার রিংটা ওঠানামা করছে তার ।প্রকৃতির অমোঘ টান ।সেভেন আপের co2 খালি পেটের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাচ্ছেনা । পেশী সংকোচন করার আপ্রান চেস্টা করছে তিয়াস ।টিউবটাকে ভেতরে নিতে স্পেশাল লুব্রিকান্ট লেগেছে ।এখন মাঝপথে বেরিয়ে গেলে সমস্যা ।অবশেযে চেস্টা সফল ।ক্লান্তিতে এলিয়ে পড়ে তিয়াস । মিনিট বিশেক পর সচকিত হয় মন ।চিন্তাভাবনা সব জড়িয়ে যাচ্ছে কেন?চোখ খুলে দেখে দুনিয়া ঝাপসা !এই কি তবে পিনিক? আরেকটা কথায় মাথায় আসতেই ঝটকা দিয়ে উঠে বসে তিয়াস ।টিউব ফেটে গেছে!রক্তের উপাদানের সাথে মিশতে শুরু করেছে বিশুদ্ধ হেরোইন । যার এক চিমটি পরিমান কিনা একজন মানুষকে স্বর্গে তুলে দিতে পারে সেখানে একশো তিরিশ আউন্স স্বর্গে তোলার গতিকে না ফেরার দেশের পথে রকেটের বেগে উন্নীত করবে ।
অবসাদে শরীর ভেঙে আসছে তিয়াসের ।এড্রেনালিনের ফ্লো বাধা পাচ্ছে পপি ফুলের এমফেটামিন রিএজেন্টের কারনে ।রন্ধ্রে রন্ধ্র ছড়িয়ে পড়ছে মাদক ।মুখের কষে ফেনা এসে গেছে তিয়াসের ।দেখলে যে কেউ বলবে ঘুমের ঘোরে লালা পড়ছে তিয়াসের মুখ থেকে ।আচ্ছন্ন আধখোলা দৃষ্টিতে জানালা দিয়ে তাকালো সে ।জানালার কাচেঁ কি সত্যিই তার বোনের প্রতিবিম্ব দেখতে পাচ্ছে সে?নাকি সুরে টেনে টেনে বলছে "ভাইয়া! বিশ তারিখের ভেতর টাকা না দিলে এডমিট দিবো না স্যারে.."
নাকি সবই তিয়াসের ভ্রম?অসাড় আঙ্গুলে অসাড় বাঁ কবজিতে চিমটি কাটে ।কোন সাড় নেই ।আচ্ছা এটা কি দুঃস্বপ্ন?ইসস!যদি কেটে যেত এক্ষুনি ।চোখ বুজে আসে তিয়াসের ।বড্ড ক্লান্ত সে ।