আমি শান্ত।আমার নাম শান্ত নয় ।আমি শান্ত স্বভাবের।প্রথম পৃথিবীর আলোর মুখ দেখেও আমি শান্ত ছিলাম।প্রসূতি ডাক্তার অবাক হয়েছিলেন । নবজাতকেরা সচরাচর আমার মত শান্ত থাকেনা ।ভেবেছিলেন আমি জন্মগতভাবে বোবা । উনার চাপড়ের জবাবে খানিকটা শব্দ করে নিশ্চিত করেছিলাম যে আমি স্বাভাবিক ।
বাবা মাও খানিকটা দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন আমার মাত্রাতিরিক্ত শান্ত স্বভাবের জন্য ।স্কুলে যখন ছেলেপেলেরা চঞ্চলতার জন্য ডিটেনশান খেত তখন আমি সেসব দুরন্ত বালকদের কাছে রোল মডেল হতাম স্যারদের কল্যানে। কেবলই শান্ত স্বভাবের জন্য। ক্লাস এইটে থাকাকালে যখন বাবা মা দুনিয়া ছেড়ে চলে যান আমাকে আর আমার ছয় বছরের ছোট ভাইটিকে রেখে তখনও আমি শান্ত ছিলাম।
প্রতিবেশীরা অবাক হয়েছিল খুব।আত্নীয়রা সান্ত্বনা দিতে এসে আমাকে নিরুত্তাপ দেখে অবাক হল আরো । ছোট ভাইটিকে নিয়ে যখন দুঃশ্চিন্তায় পড়েছিলাম তখন মেজ চাচা এসে আমাদের নিয়ে গেলেন তার বাড়িতে ।সেখানে আরো চারটে চাচাতো ভাইবোন। চাচী যে আমাদের দুয়ার খুলে আমন্ত্রন জানালেও হৃদয় খুলে আপন করে নেননি আমি বুঝতাম ।
ছোটভাইটা নাস্তায় একমুঠো মুড়ি বেশি খোজাঁর কারনে চাচী আমাদের "হাভাইত্যা" বলে গালি দিল আমার ছোট বুকে তখন রাগ চেপে ধরা কষ্টকর হয়ে গিয়েছিলাম।
হাতের চেটোতে আড়ালে চোখ মুছে ফেলে শান্ত ছিলাম তখনও। কতইবা বয়স আমার!
এই ফাকেঁ ছোট আর মেজো চাচা মিলে বাবার নিজের ঘামে তৈরি জায়গা জমিন,আমার মায়ের গহনা সব ফুকেঁ উড়িয়ে দিলেন বিড়ির ধোয়াঁর মত। কিছু বলিনি তাদের। শান্ত ছিলাম তখনো।আমি এখনো ছোট।
দিন দিন আমাদের কদর কমে এল চাচার বাসায়। নানা ফুট ফরমাশ খেটেও অনেক অত্যাচার সইতাম। বকিছু শয়েও শান্ত ছিলাম ভাইটার মুখপানে চেয়ে।ভাইটাকে আগলে রাখতাম।রাতে তাকে বুকে জড়িয়ে না জড়িয়ে ঘুমাতাম না। মা মা বলে চেচিঁয়ে উঠত রাতে ও।হয়ত ওর স্বপ্নে মা তখনও জ্যান্ত । কষ্টে বুকটা ফেটে যেত।আহারে ভাইটা মায়ের স্নেহ মিস করছে।
নিয়ে ছোটভাইকে নিয়ে চলে এলাম স্বপ্নপুরী ঢাকায়। আগামসি লেনের একটা ঘিঞ্জি লেনের ছোট্ট বাড়িতে চলতে শুরু করল আমাদের দুই ভাইয়ের সংসার।বাড়িওয়ালা বড় ভাল মানুষ।আমাকে নিম্ন আদালতের পেশকারের চাকরি ম্যানেজ করে দিলেন।
আমার ভাই তখন ইন্টার পাশ করল। কোচিংয়ে ভর্তি করে দিলাম। বুয়েটে তাকে পড়াবই।আমার ঘামের দাম দিল ছেলেটা ।রোজ সন্ধ্যায় ঘর্মাক্ত কলেবরে বাসায় এসে যখন দেখতাম ও পড়ছে তখন এক অপার্থিব সুখ অনুভব করতাম। আমার জন্যে দৌড়ে গিয়ে চিনির শরবত বানাত।মা বাবার দায়িত্বটা আমি পালন করেছি ভেবে তৃপ্তি পেতাম।
বুয়েটে চান্স পেল ও।আর আমি হাতে পেলাম ঈদের চাদঁ। খুশিতে পাড়ার সবাইকে সহ জজ সাহেবকেও মিষ্টি খাইয়ে ফেললাম।সবাই আমাকে বাহবা দিল।বলল আমি না থাকলে ভাইটা এতদূর আসতে পারতা না। পেশকারের চাকরি থেকে স্টেনোগ্রাফারের চাকরিতে উন্নীত হলাম।বেতন ও বাড়লো।বড় বাসা নিলাম। ভাইকে পড়ালেখার পরিবেশ দিতে হবে তো । চলে যাচ্ছিল আমাদেল জীবন ।
বিথী ।আমাদের নতুন বাসার বাড়িওয়ালার লতায়পাতায় আত্নীয়া।বাসায় ফুটফরমাশ খাটত আর এলাকায় কয়েকটা টিউশনি করাতো ।হালকা শ্যামলাবরন দীঘলকেশী মেয়েটার দেখা পেতাম সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার সময় । আকাশে গোবর লেপটে দেয়া ছায়ার আলোয় তাকে দেখতাম চুল বেনী করছে বেলকনীতে বসে । আজন্ম যোদ্ধা আমার শান্ত হৃদয়ে কালবোশেখী হয়ে এল বিথী । অন্তরের ঝড় বিপদসীমা অতিক্রম করার আগেই বিয়ের প্রস্তাব পাঠালাম বাড়িওয়ালার বাসায়। ধুমধাম করে সানাই বাজিয়ে বিথী চলে এল আমাদের ঘরে। ভাইটাকেও আপন করে নিল নিজের ভাইয়ের মত। কবি জসিমউদ্দীনের কবিতার মত ঘরময় সোনার মত আলো ছড়াত বিথী। সারাদিনের অফিসের ক্লান্তি হজম হয়ে যেত তার বাহুডোর ঢুকলেই ।রাতগুলো সব কবিতা হয়ে যেত দুজনে একসাথে ছাদে জোছনা দেখতে দেখতে।
ভাইটা এর ভেতর ফাইনাল ইয়ারে উঠে গেছে। বিয়ের আড়াই বছর পেরিয়েছে। আমাদের সাজানো সংসারে ঝড় নেমে এল যেদিন মেডিকেল রিপোর্ট বিথীর হাতে দিলাম ।বিথীর ইনফার্টিলিটির খবর আমার দুনিয়া নাড়িয়ে দিয়েছিল। বিথীর সে কি কান্না! রাতভর তাকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা দিলাম।
দিনকে দিন বিথী মেজাজী হয়ে উঠছে।ঝগড়া লাগছে অহরহ।মোটিভ একটাই-আমার ফার্টিলিটির টেস্ট ও করাতে হবে।বুঝলাম প্রতিবেশী কেউ তার কানে সায়ানাইড ঢেলেছে।আমি যতই বুঝাতে চেস্টা করি বিথীর ততই জেদ চেপে যায়।একদিন জেদের বশে বলেই বসে সে অন্যপুরুষ দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করাবে।হতবাক হয়ে যাই আমি। এই সেই বিথী?নাকি প্যারালাল ইউনিভার্সের অন্য বিথী?সজোড়ে চপেটাঘাত করে গালাগাল করতে করতে বেড়িয়ে পড়ি আমি।সেদিন বারে বসে রাশান স্কচের পুরো একটা বোতল সাবাড় করে বিড়ি ফুকঁতে ফুকঁতে বাসায় ফিরি আমি ।জীবনে প্রথমবারের মত মাতাল হলাম আমি। বাসায় ঢোকার সময় দেখি সদর দরজা খোলা ।ব্যাপার কি?চোর ঢুকেছে নাকি?নিঃশব্দে এগোতে থাকি ঘরের ভেতর।
ম থেকে কিসের শব্দ আসছে?কাছে যেতেই টের পাই কামাতুর নারীর শীত্কারের শব্দ।দরজা ছাড়া তিন দেয়ালের প্রতিধ্বনিতে ঘর মুখরিত।ভাই এত নিচে নেমে গেছে!শেষ পর্যন্ত রাস্তার মেয়েছেলে নিয়ে ফূর্তি করছে?তাও আমার বাসায়।চুপিচুপি দরজার কী হোলে চোখ রাখতেই টের পাই আমার ঘাড়ের চুল সড়সড় করে খাড়া হয়ে গেছে।
বিথীকে নিচে ফেলে গায়ের জোড়ে তাকে বিছানায় ঠুকে চলেছে আমার ভাই। বিথী!শেষ পর্যন্ত জেদকে বাস্তব রূপ দিল।তাও আমার ভাইয়ের সাথে?আমার পৃথিবী নিমেষেই দুমড়ে গেল।চুপচাপ বেড়িয়ে পড়লাম আবার।এক কলিগের বাসায় রাত পার করে সকালে ঘরে ফিরলাম।সবাই নিরুত্তাপ ।দিন কেটে যায়।বিছানায় বিথীর সাথে সেই গত্বাধাঁ রুটিন ধরে চলি আমি।সপ্তাহখানেক
পর হাসিমুখে একদিন জানায় বিথী সে কনসিভ করেছে।মৃদু হাসি আমি। এরমধ্যে বোনের বাড়ি বেড়াতে যায় বিথী।
ভাইকে আমার সাথে দাওয়াতে যেতে বলি ।নাচতে নাচতে রেডি হয়ে গেল সে । কিছু লোক ভাড়া করে রেখেছিলাম আগেই ।ভাইকে এক নির্জনে নিয়ে গিয়ে লোকগুলোর সহায়তায় বেধেঁ ফেলি ।মাথায় আমার খুন চেপেছে । আমার মায়ের পেটের ভাই।এক এক করে অঙ্গহানি করতে লাগলাম তাকে চাপাতির সাহায্যে ।তার অনুনয়,বিনয়,আর্ত নাদ আমাকে টলাতে পারলো না ।মাফ চাইতে লাগল বারবার । অবশেষে গলাটা দুভাগ করে দিলাম এক পোচেঁ । এই গলা না ধরে ঘুমালে আগে ঘুম হতনা ।সেই গলা এখন আমার হাতেই দ্বিখন্ডিত । এখনো আমি শান্ত। ভাড়াটে লোকগুলো হতভম্ব হয়ে আমার হাতের কারুকাজ দেখতে থাকে ।কাজ শেষে ওদের লাশটা গুম করে ফেলার জন্যে টাকা দিই ।মুখও দেখতে চাইনা অই কুত্তার ।
বিথীকে বাড়ি আসতে ফোন করি আমি। সেদিন অফিস কামাই দিয়ে সারাটা দিন রোমান্স করি বিথীর সাথে। তাকে বলি ভাই পিকনিকে গেছে।বাড়ি ফাকাঁ ।আজকের দিনটা শুধুই আমাদের । স্পেশাল রেসিপি রেধেঁ খাওয়াই তাকে ।নিজেকে এই গ্যালাক্সির সবচে সুখী মেয়ে ভাবতে দেই বিথীকে । খাওয়া শেষে দু মগ কফি বানিয়ে মুভি দেখতে বসি আমরা ।বিথী আদুরে কন্ঠে জানতে চায় মুরগির কলিজাতে এমন কি জাদু করেছি যে এখনো তার স্বাদ মুখে লেগে আছে ।নিরুত্তাপ কন্ঠে বলি ভাইয়ের দুটো স্ক্রোটাম আর পেনিসটা কুচি কুচি করে মিশিয়েছি তরকারীতে ।আতঁকে উঠে বিথী ।সন্দেহের চোখে তাকায় আমার দিকে ।আমার নির্বিকার মুখ দেখে বুঝে নেয় যা বোঝার ।দৌড়ে বেসিনে গিয়ে গলায় আঙ্গুল ঢুকিয়ে বমির চেস্টা করতে থাকে সে । বুঝলাম না যে মাংসের স্বাদ কাচাঁ উপভোগ করেছে সেটা রান্না করা অবস্থায় পেটে সইছে না কেন? এখনো আমার দিকে পিছন ফিরে আছে কুত্তিটা ।বেসিনে উবু হয়ে বমি করছে ।
খাটের স্ট্যান্ডটা আলগোছে খুলে নিয়ে দড়াম করে বাড়ি মারি তার পিঠে ।চকিতে সোজা হতে যায় সে ।কিন্ত বাঁ পাশ থেকে আসা স্ট্যান্ডটা খটাশ করে ল্যান্ড করে তার কপালে । সটান পড়ে যায় মেঝেতে ।সেনসলেস হয়ে গেছে । দ্রুত দেহটাকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে বিবস্ত্র করে হাত পা চারটা চারদিকে দড়িতে আটকে ফেলি ।ব্যাঙের ডিসেকশানের মত ।যে খাটে ফুলশয্যা করে সুখের নীড় রচনা করেছি সেই খাটেই আজ শেষশয্যা করব বিথীর ।হা হা!bed of thorn u can say । কাপড় ইস্ত্রি করার যন্ত্রটা সকেটে লাগিয়ে খানিকটা তপ্ত করে বুলিয়ে যাই বিথীর পেটের উপর ।চড়চড় শব্দে গোলাপী চামড়া কালো হয়ে যাচ্ছে ।মুখে আগেই আমার ঘামে ভেজা মোজা দুটো গুজে দিয়েছি ।পেটে সজোড়ে দুটো লাথি খেতেই জেগে যায় বিথী ।দুচোখে রাজ্যের আতংক ।পরম মমতায় ইস্ত্রি বুলিয়ে যাই তার শরীরের প্রতিটি ইঞ্চিতে । চোখজোড়া হাসের ডিমের মত ফুলে গেছে বিথীর ।একটা কিং সাইজ হাতুড়ি কিনেছিলাম ফার্নিচারের বল্টু লাগাতে । খাটের নিচ থেকে ওটা বের করে হাটুঁর বাটির জয়েন্টে ঘা দিলাম ।কড়াত্ করে শব্দটা আমায় নিশ্চিত করল সে নতুন জায়গার সন্ধানে বেরোচ্ছে । একে একে অন্য পা এবং হাতজোড়ার জয়েন্ট ও পেল হাতুড়ির ছোয়াঁ ।কালচে শীতল হয়ে আসা চামড়ায় আবার চালালাম তপ্ত ইস্ত্রি ।পেটের কাছে আসতেই বিজবিজ করে ফুটে বেরোল হলদে চর্বি ।ঘোরের মধ্যে চলে গেছে বিথী ।সুডোল স্তনযুগলের উঠানামা জানান দিচ্ছে প্রানের অস্তিত্বের । হাতুড়িটা এবার সই করলাম ঠিক কপালের মাঝখানে ।সজোড়ে নামিয়ে আনলাম ।বিঙ্গো!খুলি চুরমার ।ঘিয়ে রঙের ঘিলু ছড়িয়ে পড়েছে বালিশে ।ডান চোখটা বেরিয়ে এসেছে ফাটা ডিমের কুসুমের মত ।পুরো বডিটা এখন পুরনো মমির মত লাগছে । ওহ!কি অমানুষিক! আমি এখনো শান্ত । এক গ্লাস পানি খেয়ে ফোন দিলাম থানায় ।খুলে বললাম সব ।পুলিশ আসতে আসতে বাথরুমে গিয়ে গোসল করে আসলাম ।নতুন কাপড় গায়ে দিলাম ।পুলিশ যখন বাড়িতে ঢুকল তখন আমি পারফিউম মাখছি বগলে ।শান্ত ভাবে হাতকড়া পরে প্রিজন ভ্যানে গিয়ে বসলাম ।অকপটে স্টেটমেন্ট দিলাম থানায়। কোর্টে যখন জজ আমার ফাসিঁর আদেশ দিল তখনো আমি নির্বিকার,গভীর পুকুরের মত শান্ত ।এই লোমহর্ষক জোড়া খুনের ঘটনা মিডিয়ায় তোলপাড় তুলল ।কোর্ট প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলনেও চুপচাপ থাকলাম আমি ।জল্লাদ যখন হাড়িঁকাঠে আমার গলায় কালো কাপড় পড়িয়ে দিল তখনও আমি শান্ত ছিলাম ।ঝুলে পড়তে আমার কোন আপত্তি নেই যেন ।আসলে অশান্ত হলে আমার শরীর ভীষন রোমশ হয়ে যায়, সামনের দুটো দাতঁ বেড়িয়ে যায়,পিঠের দুপাশে তরুনাস্থি যুক্ত ডানা বের হয় ,নখগুলো বড় হয়ে যায়,পিছনে তীর্যক কাটাঁওয়ালা লেজ দুলতে থাকে ।পৃথিবীর মানুযকে তো আর আমি আমার অতিপ্রাকৃত রুপ দেখাতে পারিনা ।তাইনা?কারন আমি এমন কেন তা আমার জানা নেই ।