রাত দুটোয় যখন তাস পেটানো বন্ধ হলো, ততক্ষণে পেটের ভেতর ছুঁচোদের বুকডন মারা শুরু হয়ে গেছে। উদর পুর্তির উদ্দেশ্যে এক প্রিয় ছোটভাইকে নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে গেলাম। চায়ের দোকানে হালকাপাতলা নাস্তা করার পর সিগারেট জ্বালালাম। টাংস্টেন বাল্বের হলুদ আলোয় মৃদু বাতাসে উড়ে যাওয়া সিগারেটের ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কিছু স্মৃতি মনে পড়ে গেলো। কেউ একজন আমাকে বলেছিলো, “যখন সিগারেট খাও, বড় বিশ্রী লাগে তোমাকে।” সে একজন আজ আর আমার কাছে নেই, রয়ে গেছে সিগারেট। সিগারেট হয়ে গেছে আমার প্রিয়তমা। যখন মন চায়, কাছে টেনে নেই তাকে, চুম্বন করে রস আস্বাদন করি। আর সেই ‘কেউ একজন’ একজনের মতই সিগারেট প্রিয়তমা আমাকে ঠেলে দেয় সম্ভাব্য বিপর্যয়ের দিকে। প্রতিটানে আমার ফুসফুসে ঠেলে দেয় কয়েক হাজার রকম রাসায়নিক পদার্থ।
সিগারেটের প্রধান উপাদান তামাক বা Tobacco। তামাকের দুটি আবাদযোগ্য জাত হল, Nicotiana tabacum আর Nicotiana rustica। প্রথম জাতের উৎপত্তি আর্জেন্টিনায় আর দ্বিতীয়টির পেরু। তামাকে থাকে বিশেষ কিছু অ্যালকালয়েড যা আরামদায়ক অনুভূতির জন্ম দেয়, সৃষ্টি করে তামাকাসক্তির। আর সেই আসক্তি থেকেই অভ্যাস তৈরি হয়। সিগারেট হয়ে যায় ধূমপায়ীর জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সকালে উঠে সিগারেট, তিন বেলা খাবার পর সিগারেট, আড্ডায় সিগারেট, পড়ার সময় সিগারেট, একাকি নিঃসঙ্গতায় সিগারেট। সিগারেট ছাড়া আর চলেইনা।
অনেক চেষ্টা করেছি এই প্রিয়তমাকে ত্যাগ করার। কিন্তু পারিনি। নিবিড় ভালোবাসায় বরণ করে নিয়েছি তাকে বারবার। এর মধ্যে কয়েক দফা সিগারেটের দাম বাড়ল। কিন্তু সিগারেট টানা কমেনি। লাভের মধ্যে লাভ হয়েছে এই যে, পকেট আরও বেশি খালি হয়েছে। প্রকাশ্যে ধূমপানের বিরুদ্ধে সরকার আইনও পাস করল একবার- পঞ্চাশ টাকা জরিমানা। আমি কিন্তু খুশিই হয়েছিলাম। হয়তো ধূমপান এবার কমবে। কিন্তু কিসের কি? বেড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে? মাঝে মাঝে পুলিশ ভাই দের হাতেই যে সিগারেট দেখি!
আমার পিতাও তুখোড় ধূমপায়ী ছিলেন। সিগারেট উনাকে প্রায় শেষ করে দিয়েছিলো। অবশেষে নিজের এবং পরিবারের কথা চিন্তা করে সিগারেট ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞা করেন। বিস্ময়ের সাথে লক্ষ্য করতে থাকি, উনি সিগারেট ছেড়ে দিচ্ছেন। তবু মাঝে মাঝে লোভে পড়ে ধূমপান করতেন। তখন অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে যায় তার সন্তানেরা অর্থাৎ আমরা। উনার প্রতিজ্ঞার কথা মনে করিয়ে দিয়ে লজ্জা দিতাম। অবশেষে উনি পুরোপুরিভাবে ধূমপানের অভ্যাস ত্যাগ করেন। এখন উনি বেশ সুস্থ জীবন যাপন করছেন। অনেক বিফল চেষ্টাইতো করলাম, তাই আমিও আশায় আছি, হয়তো আমার সন্তানেরাও আমাকে এই লোভনীয় নেশা থেকে মুক্ত করবে।