অনেকেই সেনাবাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র কেনার যুক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অনেকেই বলছেন আমরা তো আর আপাদত কারো সাথে যুদ্ধ-টুদ্ধ করতাছি না ।সুতরাং এখনই সেনাবাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র কেনাটা হচ্ছে বোকামি এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিতেই টাকা লস । কিন্তু আমার কাছে এখনই সেনাবাহিনীর জন্য সমরাস্ত্র কেনাটা অর্থনৈতিক দৃষ্টিতেই লাভজনক ।
(১) আমাদের সেনাবাহিনী গত ৪ বৎসরে জাতিসংঘের আওতায় শান্তিবাহিনীতে কাজ করে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার রেমিটেন্স এনেছে ।নতুন এই সমরাস্ত্র সেনাবাহিনীতে যুক্ত হলে আমাদের সেনাবাহিনী আরও চৌকস এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে । ফলশ্রুতিতে শান্তিবাহিনীতে আমাদের সেনাবাহিনীর ঢোকার সুযোগ আরও বাড়বে । এই কারনে আজকে হয়তো আমরা সেনাবাহিনীর জন্য ৮ হাজার কোটি টাকা সমরাস্ত্র কিন্তে ব্যয় করছি কিন্তু দক্ষ সেনাবাহিনী তৈরি হলে শান্তিবাহিনীতে ঢোকার সুযোগ আরও বাড়বে সুতরাং এই খরচের তিনগুন টাকা ৩- ৪ বৎসরের মধ্য শান্তিবাহিনীতে কাজ করে আমাদের সেনাবাহিনী আয় করবে এবং বৈদেশিক রেমিটেন্স অর্জনের ক্ষেত্রে আরও ভূমিকা রাখবে । আমি মনেকরি সেনাবাহিনীর পেছনে এই অর্থ খরচটা হলো এরকম যে কোন লাভজনক ব্যাবসার শুরুতে যেমন বিনিয়োগ করা লাগে, সেনাবাহিনীর পেছনে এই অর্থ খরচটাও ঠিক তেমনি ।তাই সেনাবাহিনীর সমরাস্ত্রের জন্য এই খরচ একটা লাভজনক বিনিয়োগ বৈকি আর কিছু নয়।
(২) এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য আমরা কিন্তু এখনই আমাদের ঘরের টাকা সরাসরি রাশিয়াকে দিয়ে এসব কিনছি না ।বরং রাশিয়ার কাছ থেকে আমরা এসব অস্ত্র কিনছি বাকিতে যেটা পরবর্তীতে আমরা কিস্তিতে ধাপে ধাপে এই টাকা শোধ দেবো ।যেহেতু এখনই এখাতে টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে না , সেকারনে এ প্রকল্পের জন্য এখননই আমরা অর্থনৈতিকভাবে কোন ধরণের ধাক্কার শিকার হবো না ।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকা সংক্রান্ত পত্রিকার একটি খবর কপি করে দিলামঃ
বিশ্ব শান্তি রক্ষা কাজে বছরে বাংলাদেশের আয় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা
সাক্ষাতকারে ড. আবদুল মোমেন
কাওসার রহমান ॥ বিশ্ব শান্তি রক্ষায় সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা আয় করছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী, অস্ত্রশস্ত্র ও সরঞ্জাম ভাড়া দিয়ে এ অর্থ আয় করছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আবদুল মোমেন দৈনিক জনকণ্ঠকে এ কথা জানিয়েছেন।
রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ১০ হাজার ৬৫৯ শান্তি রক্ষী বিশ্বের চলমান ১১টি শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করছে। এ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে দুনিয়ার শান্তি রক্ষা কাজে নিয়োজিত সৈন্য ও পুলিশের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শীর্ষে উঠে এসেছে। এটা বাংলাদেশের জন্য বিরাট গর্বের বিষয়।’ উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তিরক্ষায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনগুলোতে কাজ করে আসছে। এ পর্যন্ত ৬৬টি শান্তিরক্ষা মিশনের মধ্যে ৪৫টিতে বাংলাদেশ কাজ করেছে। এরমধ্যে ৩৫টি দেশে বাংলাদেশের প্রায় এক লাখ তিন হাজার শান্তিরক্ষী কাজ করেছে। এরমধ্যে ১০৩ জন শান্তিরক্ষী বিশ্বের শান্তিরক্ষা করতে গিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছে। শান্তিরক্ষী ছাড়াও বাংলাদেশ জাতিসংঘে ফ্রিগ্রেট, অফশোর পেট্রোল ভেসেল, সি-১৩০ বিমান, হেলিকপ্টার প্রভৃতি ভাড়া দিয়ে প্রচুর অর্থ প্রতি বছর আয় করে।
এ প্রসঙ্গে ড. আবদুল মোমেন বলেন, ‘এ সকল সরঞ্জাম ও ট্রুপস থেকে এবছর এ পর্যন্ত আমরা প্রায় ৪০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ৩২শ’ কোটি টাকা) আয় করেছি। বছর শেষে এই আয় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এখন আমরা চেষ্টা করছি সামরিক লোকজনের পাশাপাশি শান্তি রক্ষা কার্যক্রম বেসামরিক লোক পর্যায়ক্রমে বাড়াতে।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আবেদনের পর জাতিসংঘের পিসকিপিং হেডকোয়ার্টারে আমাদের প্রতিনিধিত্ব তিনগুণ বেড়েছে। শুধু তাই নয়, বর্তমানে একজন বাংলাদেশী জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া আরও দুজন প্রতিনিধির একজন ফোর্স কমান্ডার এবং অন্যজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাছাড়া আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে ১৮ বছর পর শান্তিরক্ষীদের বেতন ও ঝুঁকিভাতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:০৫