somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইনডেমনিটি (সাইকো গল্প)

১৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

'একটা কথা তোমাকে বলে রাখা প্রয়োজন!'
বলে খুক-খুক করে বিব্রত ভংগীতে কাশে আশফাক।
মিলির হাসি আসে। নিশ্চিত ছেলেটা বলবে তার আরেকটা মেয়ের সংগে এই সেই ছিল। বেশিরভাগ ছেলেই বিয়ের পরপর এরকম একটা কনফেশন করে। মেয়েদের অবশ্য পেটে বোমা পড়লেও মনের কথা বের হয় না।
-কি হয়েছে তোমার?
-হয়নি , তবে হবে !
-কি হবে ?
-আমাকে পুড়িয়ে মারা হবে!
-কেন ?
-না মানে, প্রায়ই স্বপ্নে দেখি আমাকে পুড়িয়ে মারা হবে।
-স্বপ্নতো স্বপ্নই। এত ভাবছো কেন ?
-না সত্যিই আমাকে পুড়িয়ে মারা হবে।

বলে কি? পাগল নাকি ? ইশ ! বাবা মা শেষ পর্যন্ত একটা পাগলের সংগে বিয়ে ঠিক করল ! বাসর রাতে মানুষ ইনিয়ে বিনিয়ে কত কথা বলে। আর ইনি কিনা তার মৃত্যুর কথা বলতে এসেছেন। হাহ !

***

চেম্বারে বসে আছি দুই ঘন্টা হল। একটা রোগীও নেই। বসে বসে মাছি মারা ছাড়া আর কোন কাজ নেই।
কিছুক্ষন ঝিমানোর পর মনে হল বাসায় গিয়ে একটু ঘুমিয়ে আসি। কম্পাউন্ডার চা নিয়ে এসেছিল। চা খেয়ে ঘুম নষ্ট করার মানে হয় না। বাইরে ঝিম ঝিম করে বৃষ্টি হচ্ছে । ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে আসলাম।
অসময়ে বাসায় ফিরতে দেখে নীলু বেশ খুশি হল। কিছু কিছু মানুষের একটুতেই খুশি হওয়ার রোগ আছে। আমার বউ নীলুও এরকম। এরকম খুশি-রোগীকে জীবন সংগী হিসেবে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।
বৃষ্টির দিনে চাল ভাজা ঝাল করে মেখে খেতে দারুন লাগে। ছোটবেলায় সর্দি হলে মা মাঝে মাঝে চাল ভাজতেন। ভাজা চাল গুড়া করে মরিচ দিয়ে খুব ঝাল একটা পাউডারের মত বানাতেন। এরপর একটা শক্ত কাগজ ভাজ করে আমাকে ধরিয়ে দিতেন। কায়দামত কাগজটা ধরে চালের গুড়া খেতাম। খেয়ে ঝালের ঝাজে সর্দি কোথায় পালাতো!
নীলুকে চাল ভাজার ব্যাপারে বললাম। সে আইডিয়াটা গ্রহন করলো। আমি পাশে দাড়িয়ে থেকে দর্শক হয়ে তাকে সাহায্য করলাম। কিছুক্ষনের মধ্যে সব তৈরি হয়ে গেল। সরিষার তেল দিয়ে পেয়াজ, মরিচ আর ছোট ছোট আদাকুচি সহ চাল ভাজা মাখানো হতে লাগল। এসময় কম্পাউন্ডার ফোন দিল, 'স্যার, আশফাক স্যার আইছে।'
আবার চেম্বারে যেতে হবে। নীলুর জন্য মন খারাপ লাগছে কিন্তু কিছু করার নেই।
আশফাক আমার পুরনো রোগী। তার বাবা আবরার চৌধুরী দেশের হাতেগোনা কয়েকজন ভিভিআইপির মধ্যে একজন। সে ডাকলে দেশের মন্ত্রী এমপিকেও দৌড়ে আসতে হবে আর আমিতো সামান্য এক সাইকিয়াটৃস্ট।
আশফাক ছেলেটা চমৎকার। আর সব বড়লোকের ছেলের মত আশফাক উচ্ছন্নে যায়নি। প্রচন্ড মেধাবী আর প্রানোচ্ছল এই তরুনের দেশ ঘোরার বাতিক আছে। তার কেস স্টাডিটা হলো , বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বান্দরবানের জাদিপাই ঝর্না দেখতে যাওয়ার সময় বন্ধুদের সংগে নিয়ে একটা পাহাড়ী সাপকে পুড়িয়ে মারে সে। সেই থেকে মাঝে মাঝে স্বপ্নে নিজেকে পুড়ে মরতে দেখে সে। তার আশঙ্কা পুড়েই মৃত্যু হবে তার। যে রাতেই সে ওরকম স্বপ্ন দেখে তার পরদিন একটা ডাইরীতে স্বপ্নটার আদ্যোপান্ত লিখে আমার কাছে আসে ও। আর আমার কাজ হচ্ছে তার স্বপ্নের গল্পটা হাসিমুখে শোনা। গল্পগুলোতে বেশ বৈচিত্র আছে। শুনতে খারাপ লাগে না।
যেমন তার গত সপ্তাহের স্বপ্নটা এমন-

. . চলন্ত বাস থেকে বাইরের দৃশ্য বেশ সুন্দর। ছোটখাট দোকানগুলো আর কিছু মানুষের আড্ডা। কিছু আম-কাঠালের বাগান কিংবা তারই ফাক গলে দাড়িয়ে থাকা কিছু টিনের বাড়ী। কোথাও যাচ্ছি আমি। পাশের সিটে মিলি ঘুমাচ্ছে। ঘুমের ঘোরেই আমার হাতটা চেপে ধরে আছে। মমতা মাখানো পরশ। ভাল লাগে খুব। বাইরের দৃশ্যটাও মমতা মাখানো। সেই পুরনো পাহাড় আর ঘন বন। যেন বহুদিনের চেনা। তবে ঠিক মনে পড়ছে না। ঝরনাটা চোখে পড়ল হঠাৎ। তখনই বুঝতে পারলাম, কোথায় দেখেছি। পাশের সিটে মিলির ঘুম ভেঙেছে। কেন যেন সে চেচাচ্ছে। কিছু বুঝতে পারছি না। বুঝতে পারলাম যখন হাতে আগুনের আচ লাগল . .

. . ঘুম ভাঙতেই দেখি খুব ঘামছি। অথচ ঘরটা এসিতে প্রচন্ড ঠান্ডা।

আজকের গল্পটাও ভালো। হাসি মুখে শুনলাম। কাউন্সেলিং , সামান্য কিছু ওষুধ আর এককাপ চা খাইয়ে বিদায় করলাম ওকে। এত ভাল আর কর্মঠ একটা ছেলে। বাবার ব্যবসায় পুরোদমে লেগে আছে। বাবার মত সফল ব্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছে অথচ ভেতরে ভেতরে এত দুঃশ্চিন্তায় ভোগে ভাবাই যায়না।

***
অস্ট্রেলিয়া থেকে একটা সেমিনার করে রাতের ফ্লাইটে ফিরেছি। রাতে একদমই ঘুম হয়নি। সবে ঘুম চোখে লেগে এসেছে এসময় ফোন করল আশফাক এর পি এ । গতরাতে বাসায় আগুন লেগে পুড়ে মারা গেছেন আশফাক । কতক্ষন সময় লাগল কথাটা বুঝতে। ঝিম মেরে বসে রইলাম।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×