আপনার অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে মেডিকেল সেক্টরে কয়েক বছর আগে ঘুনে ধরা শুরু হয়েছে। আমরা এখনও বুঝতে পারি নি। বুঝার জন্য আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না দূয়েক বছর পর এমনিই টের পাওয়া যাবে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কোথায় গেছে।
ছোট বেলা থেকে আমাদের অধিকাংশ বাবা মায়ের স্বপ্ন থাকে যে তার ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যেন ডাক্তার হয়। আর অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীরা তাদের জীবনে উদ্দেশ্য হিসাবে ঠিক করে ডাক্তার হওয়ার। তার কারনও খুব সহজ । আমরা সহজে দেখতে পাই ডাক্তারদের জীবন যাপন, সমাজে তাদের অবস্থান । খুব সাধারন ভাবে বললেও দেখা যায় ডাক্তারদের অবস্থান আমাদের সমাজে অনেক উঁচুতে।
ডাক্তার দেরকে আমরা যতই গালিগালাজ করি না কেন তারা কসাই, মানুষের অসহায়ের সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করে, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে ল্যাব থেকে কমিশন নেওয়া, রোগীর প্রতি অবহেলা, ভূল চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীর ক্ষতি করা এমন কি রোগীর মৃত্যুর জন্যও দায়ী। উপরন্তু তাদেরকে এত খারাপ বলা সত্ত্বেও আমরা কিন্তু আমাদের ছেলে মেয়ে ভাই বোন নিজের আত্বীয় স্বজন ডাক্তার হওয়ক সবাই চাই। নিজের পরিবারে কেউ ডাক্তার থাকলে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করি যে ,আমার অমুক ডাক্তার।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ আছে বাইশটি আর প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ আছে প্রায় পঞ্চাশ টি । সরকারি মেডিকেলে এ আসন সংখ্যা প্রায় তিন হাজার আর প্রাইভেট এ পাঁচ হাজার।আপনারা সকলে অবগত আছেন যে সরকারি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের মেধা প্রমান করে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। আর যারা মেধা পরীক্ষায় উর্ত্তীন হতে পারেন নাই আর নিজের বাপ মায়ের কাড়ি কাড়ি টাকা আছে আছে তারাই শুধু প্রাইভেট মেডিকেলে ভর্তি হয়। যেখানে মেধা কখনও পূর্বশর্ত নয়, টাকাই ভর্তি হওয়ার পূর্বশর্ত । যার টাকা আছে সে ভর্তি হবে আর যার নেই সে ভর্তি হতে পারবে না। দেশের হাত গোনা কয়েকটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ বাদ দিলে পড়ার মান নিয়ে প্রশ্ন করার আগে মেডিকেলের বিষয় গুলো পড়ানোর মত কলেজগুলোতে অবকাঠামো ও একাডেমিক সুযোগ সুবিধা আছে কিনা?
এম বি বি এস কোর্সে মোট পাঁচ বছর পড়ানো হয়। এর মধ্যে সাড়ে তিন বছর শুধু বেসিক মেডিকেল বিষয় গুলো পড়ানো হয়। বাকী দেড় বছর শুধু ক্লিনিকেল বিষয় গুলো পড়ানো হয়। বেসিক মেডিকেল বিষয় গুলই ভিত্তি তৈরি করে দেয় পরবর্তি জীবনে এক জন মেডিকেলের ছাত্র কেমন ভালো ডাক্তার হবে। বেসিক মাডিকেল সায়েন্সে আটটি বিষয় পড়ানো হয়। সবচেয়ে আশ্চর্য ও দুঃখের বিষয় হচ্ছে যে হাতে গোনা কয়েকটি প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ ছাড়া কোন মেডিকেল কলেজেই এই আটটি বিষয়ে একজন করে সহকারী অধ্যাপক বা সহযোগী বা অধ্যাপক নেই পূর্ন সময়ের জন্য । একজন অধ্যাপক কমপক্ষে দুই থেকে তিনটি মেডিকেল কলেজের একমাত্র শিক্ষক(প্রভাষক ব্যতিত কারন তাদের সংশ্লিষ্ট বিষয় কোন উচ্চতর ডিগ্রি নেই) । টতৎৎৎসংশ্লিষ্ট
তিনি সপ্তাহে এক দিন কিংবা দুই দিন ক্লাস নেওয়ার জন্য আসেন এবং ক্লাস নিয়ে চলে যান। এভাবেই চলছে আমাদের দেশের মেডিকেল কলেজ গুলোতে বেসিক মেডিকেল বিষয় শিক্ষা দেওয়ার অবস্থা ।
এবার ছাত্রদের দেখি যারা মেধার যোগ্যতায় না পেরে টাকার যোগ্যতায় ভর্তি হলেন তাদের কি অবস্থা। এই কথা অস্বীকার করার কোন উপায় নাই যে প্রত্যেক প্রাইভেট মেডিকেলে প্রতি ব্যাচে সাত থেকে দশ জন ছাত্র আছে যারা সরকারী মেডিকেল থেকে পাস করা ডাক্তারদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। আর বাকি গুলো সম্পর্কে কিছু বলতে ইচ্ছা করছে না তবে এতটুকু বলি তারা নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য নিরাপদ নয় চিকিৎসক হিসাবে আর আমজনতার জন্য যে কি তা বুঝে নেনX ।
আগে সরকারী মেডিকেল কলেজ গুলোতে আদু ভাইদের কথা শুনতাম, যারা বছরের পর বছর পরীক্ষা দিতেন কিন্তু পাস করতে পারতেন না। ইদানিং জানতে পারলাম যে সরকারী মেডিকেলে আদু ভাই সঙ্কটে ভুগছে। অনুসন্ধানে জানতে পারলাম যে সরকারী মেডিকেলের স্যাররা যারা প্রাইভেট মেডিকেলে পরীক্ষা নিতে যান তারা ঐখানে বিভিন্ন কারনে এমন গরু গাধাকে পাস করান যাদের কারনে এমন হাবলু মার্কা ছাত্রদের পাস করনো হলে কি দোষ তাদের আদু ভাইদের যারা তাদের চেয়ে বহু গুন ভালো।
তাই আসুন এদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াই যারা কোটি কোটি টাকার লোভে কোন রকম অবকাঠামো ও একাডেমিক সুযোগ সুবিধা না দেখে যত্রতত্র মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দিয়ে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঝুকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। আমরা এই রকম ডাক্তার চাই যারা আমাদের সঙ্কটকালিন সময়ে আমদের একটু সাহায্য করবেন। এই রকম ডাক্তার চাই না যারা আমাদের বিপদের সময় আরো বিপদে ফেলে দিবে।