somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিস্মৃতি

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্যবহার করা কার্ডের নম্বরগুলোই আবার এলোমেলো করে টাইপ করে মোবাইলের রিচার্জের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। একটার পর একটা নম্বর পরিবর্তন করেও কাজ হচ্ছেনা। অনেকটা হতাশ হয়েই রহাত গা এলিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। নানা রকম চিন্তায় তার মন বিষিয়ে উঠছে। হঠাৎই রিংটোন বেজে উঠল।
হ্যালো, রাহাত, কি খবর? তোমার না আমাকে কল করার কথা।
রাহাত: আসলে একটু ব্যাস্ত ছিলাম, তাই...
নিতু: আচ্ছা যাই হোক আজ বিকেলে পাঁচ টায়, টিএসসি-তে চলে এসবা কিন্তু। আজ কোন ব্যবস্ততার অজুহাত মানবনা, অমি তোমার কোন কথা শুনবনা।
রাহাত: আসলে তোমাকে কিছু কথা বলা দরকার।
নিতু: কি কথা?
রাহাত: আমার সাথে আসলে তোমার আর যোগাযোগ না হওয়াটাই ভাল।
নিতু: আবার এসব কথা বলা শুরু করেছ।
রাহাত: যেটা হবার না সেটা নিয়ে না আগানোই ভাল।
নিতু: কেন এমন কথা বলছ?
রাহাত: তুমি একটু বোঝার চেষ্টা কর, তোমার আমার মধ্যে পার্থক্যটা অনেক বেশি। ফেসবুকে তোমার সাথে পরিচয় হয়েছে আর এখন একটা ভাল বন্ধুত্ব হয়েছে, বন্ধুত্ব করার জন্য পরিচয়টাই যথেষ্ট। আর প্রেম করার জন্য হয়ত বন্ধুত্বকেই যথেষ্ট। কিন্তু বিয়ের জন্য? বিয়েটা এত সহজ নয়। তুমি সম্ভ্রান্ত পরিবারের একমাত্র মেয়ে। ঢাকা ভার্সিটি আইবিএ তে পড়ছ। তুমি চাইলেই একটা ভাল প্রতিষ্ঠিত ছেলে পেতে পার।
নিতু: ডার্লিং তুমি এখন এসব কথা রাখ।
রাহাত: না, আমার কথা শোন। তোমার সাথে সম্পর্কে জড়ালে আমি কেবল তোমার কাছে ছোট হয়ে যাব। বাসায় আমার অনেক সমস্যা। আমাকে নিজের খরচে চলতে হয়। টিউশনি করিয়ে কোনমতে জিবন চালাই। ধার-কর্জ করে আমার জীবণ চলে, পরের সপ্তাহ কিভাবে চলব সেই নিয়ে চিন্তায় থাকি। তোমাকে সুন্দর কোন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যেতে পারবনা, একটা ভাল রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে পারবনা। তুমি কেন আমার সাথে প্রেম করবা?
নিতু: আমার টাকা আছে, খরচ নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা।
রাহাত: তা হয়না। তুমি চাইলেই একটা ভাল ছেলে পেতে পার। প্রতিষ্ঠিত একটা ছেলেই তোমার জন্য পরফেক্ট। আনন্দের সাথে ঘুরতে পারবা, মজা করবা, প্রতিসপ্তাহে শপিং এ যাবা, শো-পিস কিনবা ঘর সাজাবা। অনেক মজা হবে তোমার।
নিতু: আমি শুধু তোমাকে চাই, আর কিছুনা।
রাহাত: এখন তোমার কাছে এ রকম মনে হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন।
নিতু: তুমি না বলেছ, তুমি সফটওয়ার ফার্ম দিবা। বিজনেস করবা। তাহলে তো আর কোন সমস্যা থাকবেনা।
রাহাত: হ্যা, বলেছি। কিন্তু এসবই বাকির খাতায়। এখন আমার কিছুই নাই। এখন আমাকে তোমার ভাল লাগছে এটা সাময়িক আবেগ। পরে আর ভাল লাগবেনা। যখন তুমি দেখবা, তোমার বান্ধবিরা সবাই প্রষ্ঠিত হাসবেন্ড এর বাড়িতে থাকবে গাড়ি নিয়ে ঘুরবে তখন তুমি আমাকে প্রতারক মনে করবা। তাছাড়া তোমার বাসায় আমাদের সম্পর্ক কখনই মেনে নেবেনা।
নিতু: বাসায় আমি রাজি করাব। তুমি শুধু বাসায় এসে একবার দেখা করলেই হবে।
এভাবে চলে গেল আরও কিছু দিন...
নিতু: হ্যালো, শোন আজ বাবা বাসায় আছেন। তোমাকে দেখা করতে বলেছেন। বিকালে চলে এস।
রাহাত: আসতেই হবে। আমি বলছিলাম..
নিতু: তোমার বলাবলি বাদ দেও। যা বলছি কর।
রাহাত: আচ্ছা, ঠিক আছে।
সামনের দিকে একটু ঝুঁকে চেয়ারে বসে আছে রাহাত। ঘরময় দারুণ সুগন্ধে ভরপুর। বিভিন্ন রঙ্গেও তৈলচিত্র অন্যরকম সোন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। এসির ঠন্ডা হাওয়ায় প্রাণ জুরিয়ে আসে। হঠাৎই পায়ের শব্দে দঁড়িয়ে সালাম দেয় রাহাত।
তোমার নামই রাহাত, তোমার কথা অনেক শুনেছি নিতুর মুখে। তুমি অনেক ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। বুয়েটে পড় আবার লেখালেখিও কর। এটা ভাল। মেধার চর্চা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ।
রাহাত: জি..। এই টুকটাক চেষ্টা করছি।
তুমি তো ফাইনাল ইয়ারে। পাশ করে কি করবে ঠিক করেছ?
রাহাত: আপাতত সফটওয়ার ফার্মে জয়েন করব। তারপর নিজেই একটা সফটওয়ার ফার্মে দেব, প্রয়োজনে দু-একজনকে সাথে নেব।
হুম, তোমার পরিকল্পনা ভাল। উদ্যোগী চিন্তা আছে তোমার। দেশের জন্য দরকার। দেশে উদ্যোগী মানুষের বড় অভাব।
তোমার বাবা কি করেন?
রাহাত: বাবা সেনাবাহিনীতে ছিলেন, এখন রিটায়ার্ড।
তোমার বাবা কি কমিশন্ড অফিসার ছিলেন?
রাহাত: জিনা। ননকমিশন্ড অফিসার।
তোমার বাড়ি যেন কোথায়?
রাহাত: সিলেটে।
ওখানে কি তোমাদের নিজেদের বাড়ি?
রাহাত: জিনা। ভাড়া থাকি। বাবা-মা আর আমার ছোট ভাই ওখানে থাকে।
শুনেছি তুমি আর নিতু অনেক ভাল ফ্রেন্ড। ফ্রেন্ড হওয়াটা ভাল। এখন তো ভার্সিটিতে পড়–য়া ছেলে-মেয়েদের ফ্রেন্ডশীপ একেবারে কমন বিষয় হয়ে গেছে। আমাদের সময় তো এতটা ছিলনা। যাই হোক, তবে কারও সাথে এর চেয়ে বেশি সম্পর্ক গড়ে তোলার অগে বোধয় একটু ভেবে দেখা উচিৎ। তুমি শিক্ষিত বুদ্ধিমান ছেলে, অল্পতেই অনেক কিছু বুঝতে পার।
রাহাত: জি। আপনি ঠিকই বলেছেন।
রাহাত চোখের পানি কোন রকমে আটকে নিয়ে বলল, ‘আমিও সে রকমই মনে করি।’
ছোট ফুটফুটে একটা বাচ্চা রাহাতের চেয়ারের কাছে খেলনা দিয়ে খেলছে। কথার প্রসঙ্গ পরিবর্তনের জন্য বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বলল,‘অনেক সুন্দর, ফুটফুটে।’
আমার, নাতনি। সাড়াদিন ঘর মাতিয়ে রাখে।
রাহাত: নাম কি তোমার বাবু?
আমার নাম বলবনা।
রাহাতের চোখে তখনও অশ্র“ জল ছলছল করছে। এই বুঝি চোখের কোটর ছেড়ে বেড়িয়ে পড়বে।
রাহাত: কোন ক্লাসে পড় তুমি?
নার্সারি তে।
নিজেকে কোন রকমে সামলে নিয়ে রাহাত বলল, আজ তাহলে উঠি। আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভাল লাগল।
আরে চা খেয়ে যাও।
রাহাত: জি না আরেক দিন খাব। আজ উঠি।
ধীর গতিতে পা চালাল রাহাত। আজ তার পা যেন অবস হয়ে গেছে। সামনে চলতেই চাইছেনা। দরজা পার হতেই দেখে নিজের জিনিসপত্র নিয়ে গোছানো ব্যাগটা হতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিতু।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×