somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণা

১৫ ই মার্চ, ২০১২ ভোর ৪:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘সাইবার ক্রাইম’ খুবই আলোচিত একটি বিষয়। কম্পিউটার ক্রাইমে কম্পিউটার প্রাথমিক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহূত হয় এবং এটি একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি কম্পিউটারই হয় অপরাধের লক্ষ্যবস্তু অথবা লক্ষ্যবস্তু হতে পারে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এবং এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। কম্পিউটারভিত্তিক সাইবার ক্রাইম বা সাইবার-সন্ত্রাস সারা বিশ্বেই কমবেশি হচ্ছে। এর প্রতিরোধের ব্যবস্থাও আছে। তা সত্ত্বেও সাইবার আক্রমণ হলে কীভাবে সেখান থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, তা নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিকল্প ধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস সমগ্র বিশ্বের ইন্টারনেট সিকিউরিটিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকা দি নিউজ ইন্টারন্যাশনাল ফোনে আড়ি পাতার অভিযোগে বন্ধ হয়েছে। গণমাধ্যমকে ক্ষমতার হাতিয়ার বানিয়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্রিটেনের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিলেন মারডক।
আরও একটি বিষয় হচ্ছে ইন্টারনেটে অশ্লীল ভিডিও আপলোড। অনেকেই মনে করেন, প্রযুক্তিভিত্তিক অবাঞ্ছিত সংস্কৃতির অনুপ্রবেশই এর প্রধান কারণ। এর সঙ্গে আমাদের সামাজিক বিষয়াবলি খুব বেশি সম্পৃক্ত। অনেক ব্যবহারকারীই ইন্টারনেটে ক্রেডিট অথবা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকেন। অরক্ষিত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ক্রেডিট কার্ড অথবা ডেবিট কার্ডের পাসওয়ার্ড চুরির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে। প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন পণ্যের পাইরেসির হার বেড়ে গেছে। পাইরেটেড সফটওয়্যার তো আছেই, সেই সঙ্গে চলচ্চিত্র, গান, বইসহ অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস এখন পাইরেটেড কপি বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে এ-সম্পর্কিত শিল্পগুলো হুমকির মুখে আছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণা ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে। কথিত এমএলএম কোম্পানিগুলো প্রযুক্তিকেই প্রতারণার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার লাভ করার কারণে এ-সম্পর্কিত বিভিন্ন পেশার সৃষ্টি হয়েছে। আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিংসহ আরও অনেকগুলো সেক্টরে কাজ করে বৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ বেড়ে গেছে। এটা সত্যিই সুসংবাদ। কিন্তু দুঃখের বিষয়, জনসচেতনতা না থাকায় এমএলএম প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্নভাবে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে।
ইন্টারনেটভিত্তিক এসব আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং-বিষয়ক ওয়েবসাইটে কাজ করার জন্য বিপুল পরিমাণ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয় না। আরও বড় ব্যাপার হলো, আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং-বিষয়ক কাজের দক্ষতা অর্জন করতে পারলে ইন্টারনেট ব্যবহার করে কাজের জন্য বিভিন্ন ওয়েবসাইটে বিট করা যায়। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে কাজ সম্পন্ন করে সেসব কাজ ইন্টারনেটের মাধ্যমেই দূরদেশে পাঠিয়ে দেওয়া সম্ভব। অর্থাৎ প্রযুক্তিনির্ভর কাজের মাধ্যমে দেশে বসেই বিদেশি মুদ্রা অর্জন সম্ভব এবং এটা হচ্ছেও। ইতিমধ্যেই সফটওয়্যার শিল্প বাংলাদেশে ব্যাপক প্রসার লাভ করছে। অনেক তরুণ উদ্যোক্তা নিজেরা সফটওয়্যার ফার্ম স্থাপন করে দেশের অভ্যন্তরীণ কাজের পাশাপাশি বিদেশের কাজও করছেন। এমএলএম কোম্পানির প্রতারণার গর্তে এই শিল্পকে কোনোভাবেই হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করা সরকার এবং প্রচারমাধ্যমের নৈতিক দায়িত্ব।
প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণা বন্ধে জনসচেতনতাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আইসিটি ও প্রযুক্তিবিষয়ক কিছু সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আছে, যারা সফটওয়্যার ও আইসিটি-বিষয়ক মেলা ও বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করে থাকে। জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে তারা চাইলেই মেলা ও কর্মশালার পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধের বিষয়ে সেমিনারের আয়োজন করতে পারে। সরকার থেকেও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ভেঙে আলাদা দুটি মন্ত্রণালয় গঠন করা হয়েছে। দুটি মন্ত্রণালয়ের একটি হলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, অপরটি হলো তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। যেহেতু এখন অপরাধ প্রযুক্তিনির্ভর হচ্ছে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ববান হতে হবে। ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সে আইনের অষ্টম অধ্যায়ে অপরাধ ও দণ্ড ধারায় হ্যাকিংয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তি যদি—(ক) জনসাধারণের বা কোন ব্যক্তির ক্ষতি করিবার উদ্দেশ্যে বা ক্ষতি হইবে মর্মে জ্ঞাত হওয়া সত্ত্বেও এমন কোন কার্য করেন যার ফলে কোন কম্পিউটার রিসোর্সের কোন তথ্য বিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তিত হয় বা উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস পায় বা অন্য কোনভাবে উহাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
‘(খ) এমন কোন কম্পিউটার, সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে ইহার ক্ষতি সাধন করেন, যাহাতে তিনি মালিক বা দখলদার নহেন।’
হ্যাকিংয়ের শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘হ্যাকিং অপরাধ করলে তিনি অনধিক দশ বৎসর কারাদণ্ডে বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ওই আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। পাইরেসি বন্ধে আইন থাকলেও এর প্রয়োগ প্রশ্নবিদ্ধ। ইতিমধ্যেই সরকারি গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ওয়েবসাইট হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে। ডেটাবেইসের মাধ্যমে ডেটা স্টোরেজ ডিভাইসে ওয়েবসাইটের ডেটা সংরক্ষিত থাকে। হ্যাকিংয়ের কারণে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ডেটা নষ্ট হয়ে গেলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই এসব ওয়েবসাইটের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা টিম গঠন করা এখন সময়ের দাবি। প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ দমনে প্রযুক্তিকেই কাজে লাগানো যেতে পারে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় আছে, প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের অবদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে প্রযুক্তিনির্ভর বিভিন্ন অপরাধ এমনিতেই কমে যাবে।

Click This Link
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×