মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে শিগগিরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তদন্ত দল।
তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্তত ১৫০ সংখ্যালঘুকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার তথ্য প্রমাণও পাওয়া গেছে বলে আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালের তদন্ত দল সাংবাদিকদের জানিয়েছে।
দুদিন তদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার তদন্ত দলের প্রধান পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
চতুর্থ দফা তদন্তের জন্য দলটি বুধবার পিরোজপুর আসে। এর আগে নড়াইলেও সাঈদীর বিরুদ্ধে তদন্ত হয়েছে।
জামায়াতের নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য সাঈদী ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।
তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও সোপর্দ করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে সাঈদীর বিরুদ্ধে পিরোজপুর সদর ও জিয়ানগর থানায় দুটি মামলা হয়েছে।
পরে মামলা দুটি আন্তর্জাতিক যুদ্ধপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।
এএসপি হেলাল উদ্দিন জানান, তদন্তে সাঈদীর বিরুদ্ধে আরো বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছেন। অভিযোগ গঠনের ক্ষেত্রের এই সব তথ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে কাজ করবে।
তিনি বলেন, "আশা করছি খুব শিগগিরই আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দিতে পারবো।"
জেলা সার্কিট হাউসে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তদন্ত কর্মকর্তা জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় সাঈদী ও অপর অভিযুক্ত দনেশ মোল্লার নেতৃত্বে পাড়েরহাট এলাকার অন্তত ১৫০ সংখ্যালঘু ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে অস্ত্রের মুখে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা হয়।
পাড়েরহাট বন্দর 'শান্তি কমিটির' সদস্যদের তত্ত্বাবধানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতা তারা এই অপকর্ম করেন।
এই অপকর্মের শিকার এমন তিনজন সাক্ষ্য দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম জানানো যাচ্ছে না।
তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, মানবতাবিরোধী ওই ঘৃণ্য চক্র সংখ্যালঘুদের অস্ত্র ও বেয়নেটের মুখে চার কলেমা পড়িয়ে হাতে তসবিহ, জায়নামাজ ও মাথায় টুপি পরিয়ে দেয়।
এএসপি হেলাল বলেন, মামলার প্রধান আসামি সাঈদীর নেতৃত্বে তার শ্বশুরবাড়ি পাড়েরহাট বন্দরের ব্যবসায়ী মাখন সাহার পাকা ঘরের মাটির নিচ থেকে ২৪ সের স্বর্ণ ও রূপা লুট করে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে তুলে দেওয়া।
পরে স্থানীয় রাজাকার, আলবদর ও তাদের দোসররা বন্দরের ৩৫ থেকে ৪০ জন সংখ্যালঘুর বাড়িঘর লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পিরোজপুরে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের জনগণকে একত্রিত করে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেছিলেন তৎকালীন মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান।
পাকিস্তানিদের দোসররা তাকে ধরে এনে গাড়ির পিছনে বেঁধে টেনে-হেচড়ে জখম করে। পরে তাকে বলেশ্বর নদীঘাটে এনে গুলি করে হত্যা করে।
একই সময় মহকুমার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এসডিও) আবদুর রাজ্জাক ও দুর্নীতি দমন কর্মকর্তা হীরেন্দ্রনাথ মহাজনকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।
তদন্ত কর্মকর্তারা রাজ্জাক, মিজান ও হীরেন্দ্রনাথের স্বজনদের খোঁজ করছেন। তাদের পেলে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করছেন তদন্ত দলের সদস্যরা।
তদন্ত দলের অপর দুই সদস্য হলেন- পুলিশ পরিদর্শক নূর হোসেন ও মো. আতাউর রহমান।
তারা সাংবাদিকদের জানান, বুধ ও বৃহস্পতিবার তদন্ত দল সদর ও জিয়ানগর উপজেলার হোগলাবুনিয়া, নলবুনিয়া, চিথলিয়া, উমেদপুর, নামাজপুর, মাছিমপুর,পাড়েরহাটসহ মাছিমপুরের মন্ডল পাড়া ও মিস্ত্রি পাড়া পরিদর্শন করেছে।
তারা ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তদন্তাধীন মামলার সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিদের সঙ্গেও কথা বলেন তারা।
এএসপি হেলাল জানান, দু'দিনে তারা বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের সময় ২৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এই নিয়ে ৬৫ থেকে ৭০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হলো।
courtesy: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/প্রতিনিধি/এমএসবি/১৮১৯ ঘ.
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ৮:৪৫