আমি মধ্যবিত্ত বাঙালি।তাই অনাহার বা হীরের খনি নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যাথা নেই।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা শচীন তেন্দুলকরের পড়তি ফর্ম।কিন্তু লেখালেখি করতে গিয়ে তো তা স্বীকার করলে চলে না,তখন 'বিশ্বায়ন' এনে ফেলতে হয়।ছোটবেলায় যে কোনো রচনা লিখতে গিয়ে যেমন দুম করে 'অনির্বচনীয়' আর 'পরিপ্রেক্ষিত' ঠুকে দিয়ে নিশ্চিনতে বসে থাকতাম, এখন তেমনি দু'চার পিস 'বিশ্বায়ন','খোলা বাজার' আর 'FDI' লাগালেই অনর্গল হাততালি।
'বিশ্বায়ন' মানে কি?? ফ্র্যাংকলি বলছি আমি জানি না।কিন্তু আমি ছাড়া বাকি সকলেই দেখছি জানেন।এবং নানাবিধ জানেন।কারো কাছে সে শাহরুখাতীত হিরো,কারো কাছে প্রানঘাতী ভিলেন।যেহেতু আমাকে লেখাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে তাই আান্দাজের দু'একটা খুচরো ঢিল আমার পকেটেও আছে।তাই ছুঁড়ে আমি বুঝি, বিশ্বায়ন মানে কিছু মানুষের সাংঘাতিক মোটা মাইনের চাকরি পাওয়ার সুযোগ আর সব মানুষের বাড়ি বসেই অপসংস্কৃতি ভোগ করার সুবিধে।
'অপসংস্কৃতি' মানে?? উঃ- আমেরিকা।মানে পাশ্চাত্য অসংস্কৃতি।আগে কালাপানির ওপারকে বলা হতো 'বিলেত',এখন বলে 'আমেরিকা'।তো এই আমেরকার সিনেমা,সিরিয়াল,মিউজিক ভিডিও যে ধঁা করা বিশ্বটি রচনা করেছে তার মূল উপাদান হলো ভাবনা,বিষয়বৈচিত্র,প্রয়োগকৌশল।ভাবনায় ওরা প্রানপন পরিনতমনস্ক।প্রেসিডেন্টকে বিদ্রুপ করে শুইয়ে দিচ্ছে।রাষ্ট্রব্যবস্থাকে চাবকে লাল করে দিচ্ছে।মহাপুরুষদের নিয়ে লোফালুফি খেলছে।সামাজিক অনুমোদনের তোয়াক্কা না করে নিজের নির্লজ্জ কামনাবাসনার কথা চিৎকার করে জানাচ্ছে।মানুষ মানুষীর সম্পর্কের পেলব আস্তরন ছিড়ে খুঁড়ে দুষ্টব্রন খুটে রক্তারক্তি করে তবে শান্তি।এ সবের জন্য যে রসবোধ,সহনশীলতা,সপ্রতিভতা ও একটা পর্যায় অবধি সততা দরকার,তার কোনওটাই ধারন করার ক্ষমতা বাঙালির নেই।সে চায় প্রচলিত ধারনার আনুগমন,পুরাতনের পুনঃপ্রবর্তন।থোড় ও বড়ি দিয়ে আবার কী খাড়া হলো দেখার জন্য তার উৎসাহ উথলে ওঠে।এবং তার বিনোদনের গায়ে কোনও কাঁটা বা খোঁচা থাকলে চলবে না।নিরুপদ্রব,নিরাপদ,সবাইকে তোষন করে চলা,গা বাঁচানো,বিরক্তিকর শিল্প সে করে এবং করায়।সাবধানে থাকে,কারও পা মাড়ায় না,শুধু সেই সাপ গোইটা দুই মারে যার শিং বানখ নেই।এইভাবে মধ্যবিত্ততার গুটি বুনে,তার মধ্যে পাশ ফিরে শোয়।