আমরা যেদিন হাতিয়া গিয়েছিলাম এর পরদিন আমাদের তমরুদ্দিতে দাওয়াত ছিল,লক্ষ্মণ দা আমাদেরকে বার বার উৎসাহ দিয়েছিলেন আমরা যেন মহিষের দধি চেখে দেখি।বলা বাহুল্য যে,একটি নতুন আইটেম খাবো ভেবে আমাদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করছিল।কিন্তু বিধি বাম,মহিষের দধি মুখে দেওয়ার পর আমাদের তিন বন্ধুর মধ্যে একটি নীরব প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিলো,প্রতিযোগিতাটা ছিল বমি রুখবার।
আমরা যেখানে দাওয়াতে গিয়েছিলাম,সেখানে তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও এসেছিলেন।লক্ষ্মণ দার সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে তিনি আমাদেরকে উনার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে চা চক্রের নিমন্ত্রন করেন,আমরাও সানন্দে রাজি হয়ে যাই।
তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটা অনেক সাজানো গুছানো ছিল। এটি তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন।
চা চক্রের সময় আমরা ফ্রেম বন্দি হয়েছিলাম অজয়ের ক্যামেরাতে।মাযখানে চেয়ারে বসা চেয়ারম্যান সাহেব,বামে লক্ষ্মণ দা এবং পেছনে আমরা অধমরা।
চা চক্রের পর আমরা গিয়েছিলাম তমরুদ্দি বাজারে,সেখানে দিদিদের পুরনো বাড়ি ছিল।বাজারটা অনেক বড় এবং মেঘনার কোল ঘেঁষে ছিল এর বিস্তৃতি ।আমার কাছে বাজারটাকে অনেক পুরনো মনে হয়েছে।দিদিদের বাড়ির ঠিক পেছনেই ছিল মেঘনা নদী।
মেঘনার পাড়ের মানুষগুলকে দেখে আমি এক মুহূর্তের জন্য হলেও উপলব্ধি করেছিলাম,জীবনে সংগ্রামের কোন অন্ত নেই।আমাদের ইট কাঠের দেওয়াল ঘেরা নাগরিক জীবন যখন কেবল চাওয়া পাওয়া তথা বিলাসিতার জালে বন্দি,সেখানে মেঘনা পাড়ের এসব মানুষ প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকে প্রকৃতি তথা দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে।এক মুঠো ভাতের আশায় এসব মানুষগুলু দিনের পর দিন নিজেদের প্রান বাজি রেখে উত্তাল মেঘনার বুকে পাড়ি জমায়।সত্যি বলতে এসব জেলেদের তথা মেঘনা পাড়ের মানুষদের অফুরন্ত প্রাণশক্তি দেখার পর যে কোন মানুষেরই তাদের ব্যাক্তি জীবনের চাওয়া পাওয়ার সমীকরণটিকে তুচ্ছ মনে হবে,যেমনটা আমার মনে হয়েছিলো।
মেঘনার পাড়ের মানুষগুলুকে আমি ২ ভাগে বিভক্ত হতে দেখেছি।প্রথম দলটি হচ্ছে জেলেদের দল,যারা কিনা উত্তাল মেঘনার বুকে জীবিকার সন্ধানে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।অপর দলটি হচ্ছে,তাদের পরিবার বিশেষত স্ত্রী,বুড়ো মা কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান যারা কিনা রোদে শুঁটকি শুকোতে দেয় এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুঁটকি পাহারা দেয়। এভাবেই আমি জেলেদের পরিবারগুলকে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে দেখেছি।
মেঘনার পাড়ে এভাবেই শুঁটকি শুকানো হয়।
শুঁটকির স্তূপ,শুকানো শেষে এভাবেই শুঁটকিগুলোকে স্তূপ করে রাখা হয়।
এরাই হচ্ছে উপরে বর্ণিত প্রথম জনগোষ্ঠী যারা জীবিকার সন্ধানে মেঘনার বুকে দাপিয়ে বেড়ায়।এই ছবিটি যখন তোলা হয়েছিলো তখন এই মাছ ধরার নৌকাটি মাত্র তীরে ভিড়েছিল।
আমার বর্ণিত অপর জনগোষ্ঠী যারা শুঁটকি শুকোতে ব্যাস্ত।
দেখুন এরা কত অল্পতেই খুশি,তবে আমি যতটুকু জানি মহাজনের দাদনের টাকা শোধ করার পর এই হাসিটুকু মলিন হয়ে যায় কারণটা আমার মনে হয় সবারই জানা আছে।
নৌকা ঘাটে ভিড়তেই সন্তানেরা ব্যাস্ত হয়ে যায় নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে বাবাকে সাহায্য করার জন্য।
মাছগুলুকে এভাবেই বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়ে মহাজনের আড়তে।
মাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ছোট এই শিশুটিকে দেখেছিলাম বাজারে বিক্রির জন্য আলাদা করে কিছু মাছ নিয়ে যেতে।
মেঘনার বুকে জেলেদের নিরন্তর ছুটে চলা,একদল মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরে তো অন্য দল ছুটে যায় মাছ ধরার জন্য।
মেঘনার বুকে সূর্য মামা অস্ত যাচ্ছে।
[চলবে]