somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম দ্বীপের নিঝুমতায় [পর্ব ২]

২৫ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাতিয়াতে আমরা উঠেছিলাম ওছখালিতে,সেখানে থাকতেন দিদির ভাসুর লক্ষ্মণ দা যার আতিথেয়তার কথা আমার আজীবন মনে থাকবে। অনেক গুনে গুণান্বিত এই মানুষটিকে দেখে বুঝেছি কেবল রক্তের বাধন একটি সম্পর্কের পূর্বশর্ত নয়,মাত্র অল্প কয়দিনের পরিচয়ে লোকটিকে অনেক আপন মনে হয়েছিল।

আমরা যেদিন হাতিয়া গিয়েছিলাম এর পরদিন আমাদের তমরুদ্দিতে দাওয়াত ছিল,লক্ষ্মণ দা আমাদেরকে বার বার উৎসাহ দিয়েছিলেন আমরা যেন মহিষের দধি চেখে দেখি।বলা বাহুল্য যে,একটি নতুন আইটেম খাবো ভেবে আমাদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করছিল।কিন্তু বিধি বাম,মহিষের দধি মুখে দেওয়ার পর আমাদের তিন বন্ধুর মধ্যে একটি নীরব প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিলো,প্রতিযোগিতাটা ছিল বমি রুখবার। X( X( X( X(

আমরা যেখানে দাওয়াতে গিয়েছিলাম,সেখানে তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানও এসেছিলেন।লক্ষ্মণ দার সাথে সুসম্পর্কের সুবাদে তিনি আমাদেরকে উনার ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে চা চক্রের নিমন্ত্রন করেন,আমরাও সানন্দে রাজি হয়ে যাই।

তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদ ভবনটা অনেক সাজানো গুছানো ছিল। এটি তমরুদ্দি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন।
চা চক্রের সময় আমরা ফ্রেম বন্দি হয়েছিলাম অজয়ের ক্যামেরাতে।মাযখানে চেয়ারে বসা চেয়ারম্যান সাহেব,বামে লক্ষ্মণ দা এবং পেছনে আমরা অধমরা।

চা চক্রের পর আমরা গিয়েছিলাম তমরুদ্দি বাজারে,সেখানে দিদিদের পুরনো বাড়ি ছিল।বাজারটা অনেক বড় এবং মেঘনার কোল ঘেঁষে ছিল এর বিস্তৃতি ।আমার কাছে বাজারটাকে অনেক পুরনো মনে হয়েছে।দিদিদের বাড়ির ঠিক পেছনেই ছিল মেঘনা নদী।

মেঘনার পাড়ের মানুষগুলকে দেখে আমি এক মুহূর্তের জন্য হলেও উপলব্ধি করেছিলাম,জীবনে সংগ্রামের কোন অন্ত নেই।আমাদের ইট কাঠের দেওয়াল ঘেরা নাগরিক জীবন যখন কেবল চাওয়া পাওয়া তথা বিলাসিতার জালে বন্দি,সেখানে মেঘনা পাড়ের এসব মানুষ প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকে প্রকৃতি তথা দারিদ্রের সাথে যুদ্ধ করে।এক মুঠো ভাতের আশায় এসব মানুষগুলু দিনের পর দিন নিজেদের প্রান বাজি রেখে উত্তাল মেঘনার বুকে পাড়ি জমায়।সত্যি বলতে এসব জেলেদের তথা মেঘনা পাড়ের মানুষদের অফুরন্ত প্রাণশক্তি দেখার পর যে কোন মানুষেরই তাদের ব্যাক্তি জীবনের চাওয়া পাওয়ার সমীকরণটিকে তুচ্ছ মনে হবে,যেমনটা আমার মনে হয়েছিলো।

মেঘনার পাড়ের মানুষগুলুকে আমি ২ ভাগে বিভক্ত হতে দেখেছি।প্রথম দলটি হচ্ছে জেলেদের দল,যারা কিনা উত্তাল মেঘনার বুকে জীবিকার সন্ধানে নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।অপর দলটি হচ্ছে,তাদের পরিবার বিশেষত স্ত্রী,বুড়ো মা কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তান যারা কিনা রোদে শুঁটকি শুকোতে দেয় এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুঁটকি পাহারা দেয়। এভাবেই আমি জেলেদের পরিবারগুলকে ২ ভাগে বিভক্ত হয়ে জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে দেখেছি।
মেঘনার পাড়ে এভাবেই শুঁটকি শুকানো হয়।
শুঁটকির স্তূপ,শুকানো শেষে এভাবেই শুঁটকিগুলোকে স্তূপ করে রাখা হয়।
এরাই হচ্ছে উপরে বর্ণিত প্রথম জনগোষ্ঠী যারা জীবিকার সন্ধানে মেঘনার বুকে দাপিয়ে বেড়ায়।এই ছবিটি যখন তোলা হয়েছিলো তখন এই মাছ ধরার নৌকাটি মাত্র তীরে ভিড়েছিল।
আমার বর্ণিত অপর জনগোষ্ঠী যারা শুঁটকি শুকোতে ব্যাস্ত।
দেখুন এরা কত অল্পতেই খুশি,তবে আমি যতটুকু জানি মহাজনের দাদনের টাকা শোধ করার পর এই হাসিটুকু মলিন হয়ে যায় কারণটা আমার মনে হয় সবারই জানা আছে।
নৌকা ঘাটে ভিড়তেই সন্তানেরা ব্যাস্ত হয়ে যায় নিজেদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য দিয়ে বাবাকে সাহায্য করার জন্য।
মাছগুলুকে এভাবেই বহন করে নিয়ে যাওয়া হয়ে মহাজনের আড়তে।
মাছ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ছোট এই শিশুটিকে দেখেছিলাম বাজারে বিক্রির জন্য আলাদা করে কিছু মাছ নিয়ে যেতে।
মেঘনার বুকে জেলেদের নিরন্তর ছুটে চলা,একদল মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরে তো অন্য দল ছুটে যায় মাছ ধরার জন্য।

মেঘনার বুকে সূর্য মামা অস্ত যাচ্ছে।
[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১২ বিকাল ৩:৫০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×