somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম দ্বীপের নিঝুমতায় [পর্ব ৩]

৩০ শে মে, ২০১২ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদিও নিঝুম দ্বীপে যাবো বলেই আমরা চাঁদপুর থেকে এসেছিলাম কিন্তু হাতিয়াতে দিদির আত্মীয় যারা ছিলেন তারা সবাই আমাদেরকে নিঝুম দ্বীপে যাবার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছিলেন।উনাদের মতে নিঝুম দ্বীপে দেখার মতো কিছুই নেই,বরং কাজীর বাজার নামে নাকি একটা জায়গা আছে ঐটা আরও সুন্দর।আমি বরাবরই আমার সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম যে,নিঝুম দ্বীপেই যেতে হবে,কাজীর বাজার যদি সুন্দর হয়েও থাকে সেটা পরে দেখা যাবে।আমার সিদ্ধান্তটা যে কতখানি সঠিক ছিল সেটা আমি নিঝুম দ্বীপে যাওয়ার পর টের পেয়েছিলাম।

যাই হোক,দিদির আত্মীয় স্বজন সবাইর মতামতকে উপেক্ষা করে অবশেষে আমি আর অজয় নিঝুম দ্বীপে যাবার জন্য রেডি হয়ে হোন্ডা স্ট্যান্ডে গেলাম।সেখানে সত্য দা আমাদেরকে মোটরসাইকেল ঠিক করে দিলেন, ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে জাহাজমারা যাবার জন্য।আমার কাছে প্রথম মনে হয়েছিলো সত্য দা মনে হয় ভাড়ার ব্যাপারে একটু ঠকে গেছেন কারন ৩০০ টাকা মোটরসাইকেল এর ভাড়া কিভাবে হয়?কিন্তু আমি মোটরসাইকেলে চড়ে যতদূর গিয়েছি,যত সময় গড়িয়েছে,আমার মনে হয়েছে ৩০০ টাকা দুরত্তের তুলনায় অনেক কম। যেই গতি তথা দক্ষতার সাথে পুরোটা পথ(কাচা,আধা কাঁচা) ড্রাইভার মোটরসাইকেল চালিয়েছিলেন সেটা বলে বুঝানো যাবে না।বলা বাহুল্য যে,আমি এবং আমার বন্ধু কিছু সময়ের জন্য হলেও পশ্চাৎদেশে ব্যাথা অনুভব করেছিলাম।

এরকম আধা কাঁচা পথ ধরেই বাইকে চড়ে আমরা জাহাজমারা ঘাটে গিয়েছিলাম,যদিও পরের পথ আরও খারাপ ছিল।

আমরা প্রায় দেড় ঘণ্টার এক আনন্দময়(যদিও শেষ দিকে সেটা বিষাদময়) মোটরসাইকেল ভ্রমন শেষে জাহাজমারা ঘাটে পৌঁছাই।আর ৮-১০ টা পর্যটন স্থানের মতো সেখানেও দেখি দালালের অভাব নেই।আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটা ব্যাপার বেশ লক্ষণীয়,পর্যটন স্পটগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটকদেরকে সাহায্য করার কোন বুথ তো থাকেই না এমনকি পর্যটকদের যাতে ভোগান্তি না হয় এই ব্যাপারটুকু দেখার জন্যেও কোন জনবল থাকে না।আমরা জাহাজমারা ঘাটে পোঁছানোর পর যখন চা খাচ্ছিলাম আর নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলাম,ঐ সময়টুকুতে কিছু লোক এমনভাবে গাঁয়ে পড়ে নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে আমাদেরকে নানা রকম তথ্য দিয়ে সাহায্য করছিল যে উনাদের প্রতি ক্ষণিকের জন্য হলেও মন থেকে শ্রদ্ধা এসে গিয়েছিলো।আমরা নৌকায় উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে অচেনা শুভাকাঙ্ক্ষীদের একজন বলেছিল নিঝুম দ্বীপে কোন এক দোকানে উনাদের কথা বললেই চলবে,দোকানদার নাকি আমাদেরকে দু হাত ভরে সাহায্য করবেন আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু সন্দেহটাকে মনে প্রশ্রয় দেই নি ।কিন্তু নিঝুম দ্বীপের ঘাটে গিয়ে দেখি আমার মনের ভেতর উঁকি দেয়া সম্ভাবনাটাই সত্যি ছিল কারন ঐ দোকানদারের কাছে আমাদের আর কষ্ট করে হেঁটে যেতে হয় নি বরং উনি নিজেই আমাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য ঘাটে হাজির।আমরা দুই বন্ধু বেশ বুঝলাম অবস্থা সুবিধার নয় তাই দুজনে পরামর্ষ করে লক্ষণ দাকে ফোন দিলাম,কপাল ভালই ছিল বলতে হবে কারন লক্ষণ দার এক পাইকার থাকে নিঝুম দ্বীপে উনার টুরিস্ট মোটরসাইকেল ব্যবসা আছে ঐ ছেলে তার ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো আমাদেরকে রিসিভ করার জন্য। শুরু হল আমাদের যাত্রা।

জাহাজমারা ঘাটে এই নৌকাতে করেই নিঝুম দ্বীপ যেতে হয়।

মানুষ ভরার পর নৌকা ছাড়া হয়,ভাড়া ১০ টাকা।

নিঝুম দ্বীপে এই পথ ধরেই মানুষ তথা যানবাহন চলাচল করে।

নিঝুম দ্বীপে খড়ের গাদা।

এই বনের ভেতর আমরা প্রায় ২ ঘণ্টা হেঁটেছিলাম হরিণ দেখার জন্য।

এই নালাগুলোতে জোয়ারের সময় পানি থাকে আবার ভাটার সময় পানি নেমে যায়।

বনের ভেতরে,বনের সম্মুখভাগ হওয়াতে গাছগুলো একটু কম ঘন কিন্তু ভেতরে আরও অনেক বেশি ঘন।

নালার এক পাশ থেকে অপর পাশে যাবার জন্য গাছ বেছানো ছিল।

বনের ভেতরে আমরা দুই বন্ধু।

মানুষের চলাচলের জন্য পায়ে হাঁটার রাস্তা।

এই পুকুরটি নাকি ফরেস্ট অফিসার এর নির্দেশে কাঁটা হয়েছিলো যাতে হরিণ এর দল এসে পানি খেতে পারে,এটিও হরিণ দেখার স্পট।

পুরো বন জুড়েই এদের দেখা যায় তাই খুব সাবধানে হাঁটতে হয়।

এই বাড়িটির অবস্থান বন ঘেঁষে ছিল,আমরা সেখানে গিয়েছিলাম হরিণ দেখতে।অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই বাড়ির আঙ্গিনাতে প্রতিদিন হরিণ ঘাস খেতে আসে,সকালে আমরা সেখানে হরিণ দেখতে পাই নি কিন্তু বিকেলে......:P:P :P পেয়েছিলাম।


সকালের দিকে যদিও আমরা হরিনের দেখা পাই নি তাই বলে আমরা নিঝুম দ্বীপে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকি নি,আমরা মোটরসাইকেলে করে চসে বেড়িয়েছি দ্বীপের এই প্রান্ত থেকে ঐপ্রান্ত।নিঝুম দ্বীপও আমাদেরকে হতাশ করে নি।তবে আমাদের চালক সাহেব এর জন্য একটি ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য,হয়তোবা উনার সদিচ্ছা না থাকলে এভাবে ঘুরে বেরানো সম্ভব হতো না।

পথিমধ্যে দেখলাম জেলেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম,মাছ ধরা এবং মধু সংগ্রহ করা এই দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা।

নিঝুম দ্বীপে বরই,আমিও খাইসিলাম তবে চুরি কইরা ভাইগগো বালা আচিলো কিছু কয় নাইB-)B-)B-)B-)

শুঁটকি শুকানো হচ্ছে।

বকের দল।

এইটা কি মাছ?আমি এবং আমাদের পাইলট।

সরষে ফুল বাতাসে এদিক ওদিক দুলছিল।

নিঝুম দ্বীপের এই অংশটাকে কক্সবাজারের মতো লেগেছিলো,জায়গাটা অনেক সুন্দর ছিল যেটা ছবি দেখে বুজা যাচ্ছে না।

কক্সবাজার লুকের আরও একটি ছবি ।

নদীর পাড়টা যেন শান্ত এক সমুদ্রের মতো।

এই কচি কাঁচার দলের সাথে দেখা হয়েছিলো নদীর পাড়ে,তাদের আবদার মেটাতে যথারীতি ক্লিক ক্লিক।

এই পথ ধরেই ফিরে এসেছিলাম লোকালয়ে।

এসে দেখি খেজুর গাছ কাঁটা হচ্ছে।

খেজুর গাছ কাটার পর।

ছবির মতই সুন্দর স্নিগ্ধ নিঝুম দ্বীপ এবং এর শান্তি প্রিয় মানুষেরা।

(আগামী পর্বে মুল আকর্ষণ,দেখার অনেক কিছু থাকবে কথা দিলাম )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১২ রাত ১১:১০
৭টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×