যাই হোক,দিদির আত্মীয় স্বজন সবাইর মতামতকে উপেক্ষা করে অবশেষে আমি আর অজয় নিঝুম দ্বীপে যাবার জন্য রেডি হয়ে হোন্ডা স্ট্যান্ডে গেলাম।সেখানে সত্য দা আমাদেরকে মোটরসাইকেল ঠিক করে দিলেন, ৩০০ টাকা ভাড়া দিতে হবে জাহাজমারা যাবার জন্য।আমার কাছে প্রথম মনে হয়েছিলো সত্য দা মনে হয় ভাড়ার ব্যাপারে একটু ঠকে গেছেন কারন ৩০০ টাকা মোটরসাইকেল এর ভাড়া কিভাবে হয়?কিন্তু আমি মোটরসাইকেলে চড়ে যতদূর গিয়েছি,যত সময় গড়িয়েছে,আমার মনে হয়েছে ৩০০ টাকা দুরত্তের তুলনায় অনেক কম। যেই গতি তথা দক্ষতার সাথে পুরোটা পথ(কাচা,আধা কাঁচা) ড্রাইভার মোটরসাইকেল চালিয়েছিলেন সেটা বলে বুঝানো যাবে না।বলা বাহুল্য যে,আমি এবং আমার বন্ধু কিছু সময়ের জন্য হলেও পশ্চাৎদেশে ব্যাথা অনুভব করেছিলাম।
এরকম আধা কাঁচা পথ ধরেই বাইকে চড়ে আমরা জাহাজমারা ঘাটে গিয়েছিলাম,যদিও পরের পথ আরও খারাপ ছিল।
আমরা প্রায় দেড় ঘণ্টার এক আনন্দময়(যদিও শেষ দিকে সেটা বিষাদময়) মোটরসাইকেল ভ্রমন শেষে জাহাজমারা ঘাটে পৌঁছাই।আর ৮-১০ টা পর্যটন স্থানের মতো সেখানেও দেখি দালালের অভাব নেই।আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটা ব্যাপার বেশ লক্ষণীয়,পর্যটন স্পটগুলোতে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যটকদেরকে সাহায্য করার কোন বুথ তো থাকেই না এমনকি পর্যটকদের যাতে ভোগান্তি না হয় এই ব্যাপারটুকু দেখার জন্যেও কোন জনবল থাকে না।আমরা জাহাজমারা ঘাটে পোঁছানোর পর যখন চা খাচ্ছিলাম আর নৌকার জন্য অপেক্ষা করছিলাম,ঐ সময়টুকুতে কিছু লোক এমনভাবে গাঁয়ে পড়ে নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে আমাদেরকে নানা রকম তথ্য দিয়ে সাহায্য করছিল যে উনাদের প্রতি ক্ষণিকের জন্য হলেও মন থেকে শ্রদ্ধা এসে গিয়েছিলো।আমরা নৌকায় উঠার ঠিক আগ মুহূর্তে অচেনা শুভাকাঙ্ক্ষীদের একজন বলেছিল নিঝুম দ্বীপে কোন এক দোকানে উনাদের কথা বললেই চলবে,দোকানদার নাকি আমাদেরকে দু হাত ভরে সাহায্য করবেন আমার তখনই সন্দেহ হয়েছিলো কিন্তু সন্দেহটাকে মনে প্রশ্রয় দেই নি ।কিন্তু নিঝুম দ্বীপের ঘাটে গিয়ে দেখি আমার মনের ভেতর উঁকি দেয়া সম্ভাবনাটাই সত্যি ছিল কারন ঐ দোকানদারের কাছে আমাদের আর কষ্ট করে হেঁটে যেতে হয় নি বরং উনি নিজেই আমাদেরকে স্বাগত জানানোর জন্য ঘাটে হাজির।আমরা দুই বন্ধু বেশ বুঝলাম অবস্থা সুবিধার নয় তাই দুজনে পরামর্ষ করে লক্ষণ দাকে ফোন দিলাম,কপাল ভালই ছিল বলতে হবে কারন লক্ষণ দার এক পাইকার থাকে নিঝুম দ্বীপে উনার টুরিস্ট মোটরসাইকেল ব্যবসা আছে ঐ ছেলে তার ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিয়েছিলো আমাদেরকে রিসিভ করার জন্য। শুরু হল আমাদের যাত্রা।
জাহাজমারা ঘাটে এই নৌকাতে করেই নিঝুম দ্বীপ যেতে হয়।
মানুষ ভরার পর নৌকা ছাড়া হয়,ভাড়া ১০ টাকা।
নিঝুম দ্বীপে এই পথ ধরেই মানুষ তথা যানবাহন চলাচল করে।
নিঝুম দ্বীপে খড়ের গাদা।
এই বনের ভেতর আমরা প্রায় ২ ঘণ্টা হেঁটেছিলাম হরিণ দেখার জন্য।
এই নালাগুলোতে জোয়ারের সময় পানি থাকে আবার ভাটার সময় পানি নেমে যায়।
বনের ভেতরে,বনের সম্মুখভাগ হওয়াতে গাছগুলো একটু কম ঘন কিন্তু ভেতরে আরও অনেক বেশি ঘন।
নালার এক পাশ থেকে অপর পাশে যাবার জন্য গাছ বেছানো ছিল।
বনের ভেতরে আমরা দুই বন্ধু।
মানুষের চলাচলের জন্য পায়ে হাঁটার রাস্তা।
এই পুকুরটি নাকি ফরেস্ট অফিসার এর নির্দেশে কাঁটা হয়েছিলো যাতে হরিণ এর দল এসে পানি খেতে পারে,এটিও হরিণ দেখার স্পট।
পুরো বন জুড়েই এদের দেখা যায় তাই খুব সাবধানে হাঁটতে হয়।
এই বাড়িটির অবস্থান বন ঘেঁষে ছিল,আমরা সেখানে গিয়েছিলাম হরিণ দেখতে।অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি এই বাড়ির আঙ্গিনাতে প্রতিদিন হরিণ ঘাস খেতে আসে,সকালে আমরা সেখানে হরিণ দেখতে পাই নি কিন্তু বিকেলে...... পেয়েছিলাম।
সকালের দিকে যদিও আমরা হরিনের দেখা পাই নি তাই বলে আমরা নিঝুম দ্বীপে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকি নি,আমরা মোটরসাইকেলে করে চসে বেড়িয়েছি দ্বীপের এই প্রান্ত থেকে ঐপ্রান্ত।নিঝুম দ্বীপও আমাদেরকে হতাশ করে নি।তবে আমাদের চালক সাহেব এর জন্য একটি ধন্যবাদ অবশ্যই প্রাপ্য,হয়তোবা উনার সদিচ্ছা না থাকলে এভাবে ঘুরে বেরানো সম্ভব হতো না।
পথিমধ্যে দেখলাম জেলেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম,মাছ ধরা এবং মধু সংগ্রহ করা এই দ্বীপের মানুষের প্রধান পেশা।
নিঝুম দ্বীপে বরই,আমিও খাইসিলাম তবে চুরি কইরা ভাইগগো বালা আচিলো কিছু কয় নাই।
শুঁটকি শুকানো হচ্ছে।
বকের দল।
এইটা কি মাছ?আমি এবং আমাদের পাইলট।
সরষে ফুল বাতাসে এদিক ওদিক দুলছিল।
নিঝুম দ্বীপের এই অংশটাকে কক্সবাজারের মতো লেগেছিলো,জায়গাটা অনেক সুন্দর ছিল যেটা ছবি দেখে বুজা যাচ্ছে না।
কক্সবাজার লুকের আরও একটি ছবি ।
নদীর পাড়টা যেন শান্ত এক সমুদ্রের মতো।
এই কচি কাঁচার দলের সাথে দেখা হয়েছিলো নদীর পাড়ে,তাদের আবদার মেটাতে যথারীতি ক্লিক ক্লিক।
এই পথ ধরেই ফিরে এসেছিলাম লোকালয়ে।
এসে দেখি খেজুর গাছ কাঁটা হচ্ছে।
খেজুর গাছ কাটার পর।
ছবির মতই সুন্দর স্নিগ্ধ নিঝুম দ্বীপ এবং এর শান্তি প্রিয় মানুষেরা।
(আগামী পর্বে মুল আকর্ষণ,দেখার অনেক কিছু থাকবে কথা দিলাম )
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১২ রাত ১১:১০