আমরা দার্জিলিং পৌঁছে হোটেলে উঠার পর পরই মনের ভেতরে এক অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগলো,অনুভতিটা ছিল মেঘকে দুই হাতে ছোঁয়ার হাতছানি। আমাদের যেন আর তর সইছিল না,তাই আমরা চট জলদি করে বেরিয়ে পড়েছিলাম শহরটা ঘুরে দেখার জন্য।প্রথমেই বলে রাখি,ভারতের প্রায় সব হিল ষ্টেশনে মল নামে একটি জায়গা থাকে যেখান থেকে খুব সুন্দর ভিউ পাওয়া যায় দার্জিলিংও এর ব্যাতিক্রম নয়। যেহেতু,আমরা প্রায় সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই অবস্থায় দার্জিলিং পৌঁছেছিলাম তাই আমরা সেদিনের ঘোরাঘুরি মল রোড পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু তাই বলে ভাববেন না যে,একটি মাত্র রোডে নিজেদের ভ্রমণকে সীমাবদ্ধ রেখে আমরা আমাদের সন্ধ্যাটাকে মাটি করেছি। মল রোড আমার দেখা রোম্যান্টিক জায়গাগুলোর অন্যতম,সন্ধ্যা বেলায় রাশি রাশি মেঘেদের দল সেখানে এসে পাড়ি জমায়।মলের পুরো চত্বর জুড়ে বসার বেঞ্চ আছে সেথায় পর্যটকগন দু চোখে অপার বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে রাশি রাশি মেঘের দিকে,অনেক বিদেশি কপোত-কপোতীকে দেখেছি একজন অপরের বাহুতে আবদ্ধ হয়ে বসে থাকতে। বলা বাহুল্য,মল রোডের আশে পাশে অনেক চায়ের দকান,সেগুলতে রকমারি ফ্লেভার এর চা পাওয়া যায়। আমরা NATHMULLS নামে একটি চায়ের স্টল থেকে একটি ফ্লেভার পছন্দ করে অর্ডার দেই, চা খেতে খেতে বেঞ্চে বসে মেঘ দেখেছিলাম আর ভাবছিলাম ''The more you see,the more you rich become''.সেদিন সন্ধায় মল রোডে ৩ রকম ফ্লেভার টেস্ট করেছিলাম তন্মদ্ধে দুইটা ভালো ছিল।
সবার কাছ থেকে ইন্ডিয়ার পানি পুরীর অনেক প্রশংসা শুনলেও আমি দার্জিলিং এ পানি পুরি খেয়ে হতাশ হয়েছিলাম,তাই রাগ করে ছবিটা দিলাম না।আমরা যখন মল রোডে মেঘেদের সাথে ভাব বিনিময় করাতে ব্যাস্ত তখনি মনে পড়লো আমাদের বাকি ভ্রমণ সঙ্গিদের কথা যাদের সাথে বাসে পরিচয় হয়েছিলো। ছুটে গেলাম উনাদের হোটেলে,রওনক ভাইসহ আমরা আমাদের আগামী দিনের প্ল্যান ঠিক করলাম,আমরা উনাদের রুমে প্রায় ১ ঘণ্টার মত ছিলাম। হটা্ৎ রওনক ভাই তাগাদা দিলেন যে এখানে নাকি সব কিছু তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়,উনারা আগেই খাওয়ার পর্ব সেরে এসেছেন এখন আমাদেরকে খেয়ে হোটেলে ফিরে যেতে বললেন। আমি উনাদের রুম থেকে বের হয়ে আসলেও মনে মনে কথাটাকে পাত্তা দেই নি।কিন্তু রাস্তায় নেমে টের পেলাম,রাস্তায় নেমে দেখি মানুষের চেয়ে কুকুরের সংখ্যা বেশি এবং কুকুরের ডাক তথা জনহীন রাস্তা এই দুইয়ে মিলে কেমন যেন ভৌতিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো।সেদিন রাতে অনেক কষ্টে একটি হোটেল খোলা পেয়েছিলাম,খাওয়াটাও ভালো ছিল। খাওয়া সেরেই এক দৌড়ে হোটেলে কারণ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠতে হবে।
আমি এই কথা অস্বীকার করবো না যে,টাইগার হিল গিয়ে কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে না পারা চরম হতাশাজনক।আমরা যে সময় গিয়েছিলাম মানে জুলাই মাসে কাঞ্চনজঙ্গা দেখতে পাওয়াটা অনেকটা হ্যালির ধূমকেতু দেখতে পাওয়ার মত।বর্ষায় দার্জিলিং ভ্রমণে এই অপূর্ণতাটুকু আপনাকে মেনে নিতেই হবে,আমাদের হতাশা দেখে আমাদের জীপ ড্রাইভার আমাদেরকে বলেছিলেন সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও নাকি অনেকে কাঞ্চনজঙ্গার দেখা পায় না,উনি নাকি একই দম্পতিকে নিয়ে পরপর ৪দিন এসেছিলেন কাঞ্চনজঙ্গা দেখানোর জন্য,এমনটা নাকি হামেশাই ঘটে কাঞ্চনজঙ্গার দেখা পেতে ভাগ্যদেবীর আশীর্বাদ কপালে লিখা থাকতে হবে। তাই বলে অপূর্ণতাকে বড় করে দেখলে চলবে না কারণ দেখার আছে অনেক কিছু।
টাইগার হিলে আমরা অনেক ছবি তুলেছিলাম কিন্তু মেঘের কারনে সব ঘোলা এসেছে তাই অনেক আফসোস।টাইগার হিল থেকে নামার পথে আমরা গিয়েছিলাম ঘুম টয় ট্রেন স্টেশনএ,এই ট্রেন খুবই ঐতিহ্যবাহী,ব্রিটিশ আমল থেকে সার্ভিস দিচ্ছে।
সকালের ঘোরার পালা শেষে আমাদেরকে হোটেলে নামিয়ে দেয়া হল সাথে সাথে টের পেলাম পেট খিদায় চোঁ চোঁ করছে।একটু আধটু খবর নিয়ে জানতে পারলাম HASTY TASTY নামে একটা খাবার দোকান আছে মল রোড এর পাশেই,হুমড়ি খেয়ে পড়লাম তার উপর।
খেয়ে দেয়ে শুরু করলাম হাঁটাচলা কারণ ড্রাইভার বেটার আস্তে নাকি দেরি হবে।রাস্তায় পায়চারি করতেই চোখে পড়লো দার্জিলিং এর সিটি কর্পোরেশন।
এরপর গিয়েছিলাম জাপানিজ মন্দির দেখতে,সেখানে অনেকগুলো সোনালি মূর্তি যেগুলো দেখতে আমাদের বান্দারবানের স্বর্ণ মন্দিরের মত।
ভারতে দার্জিলিং থেকে শুরু করে শিমলা মানালি যেখানেই যান না কেন আপনি খেয়াল করে দেখবেন উপসনালয়গুলোকে সেখানে টুরিস্ট স্পট হিসেবে বিবেচনা করা হয়,আপনি যখন গাড়ি ভাড়া করবেন সারাদিন ঘোরার জন্য তখন স্পটগুলোর উপর ভিত্তি করে পয়েন্ট সিস্টেম এ আপনাকে ভাড়া গুনতে হবে।যে যত বেশি পয়েন্টের গাড়ি ভাড়া করবে তাকে তত বেশি ভাড়া দিতে হবে।যাই হোক মূল কথায় আসি।দার্জিলিং এর অন্যতম একটি পর্যটন স্পট হচ্ছে ঘুম মনেস্ট্রী।শেখাণে অনেক বৌদ্ধ ভিক্ষু থাকে,অনেকটা এতিম খানার মত।
প্রথম পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:০৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




