somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভরা বর্ষায় দার্জিলিংয়ে [প্রথম কিস্তি]

০৯ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দার্জিলিং,ব্রিটিশদের গড়া অন্যতম একটি হিল স্টেশন। আমরা নানা কাজে কর্মে কিংবা উঠতে বসতে ব্রিটিশদের যতই সমালোচনা করি না কেন,কিছু ব্যাপারে ওদেরকে বাহবা দিতেই হবে।কারন ব্রিটিশরাই লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যাওয়া এই স্বর্গপূরীকে হিল স্টেশন বানিয়ে এটিকে বিখ্যাত করে যা কিনা যে কোন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু।

আমার ব্যাক্তি জীবনে যতটুকু ভ্রমণের সৌভাগ্য হয়েছে তার বেশির ভাগই জুন-জুলাই মাসে করা,কারণ আমার পরীক্ষা শেষ হতো জুনে আর তার পরই শুরু হয়ে যেত মাথা থেকে গ্রন্থগত বিদ্যা ঝেড়ে ফেলার পালা (ঘোরাঘুরির পালা)।আমাকে অনেকেই বলেছে বর্ষাকালে ঘুরতে বের হওয়া বোকামির শামিল,ঐ সময় কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু আমার এই পিপাসু মন ভ্রমণকে কোন সময়ের গণ্ডীতে বেঁধে রাখার পক্ষে ছিল না। আমি বিশ্বাস করি ঘুরতে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় দরকার হচ্ছে মন,সেখানে সিজনটাকে খুব বেশি বড় করে দেখার কিছু নেই কারণ আমরা যে এই নাগরিক জিবনের ব্যাস্ততাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঘুরার সময় বের করছি সেটাই অনেক বেশি।ডিসেম্বর মাসে কক্সবাজার ভালো কিংবা শীতকালে সিলেট ভালো এসবই আমার কাছে অর্থহীন মনে হয়।কারণ বর্ষায় সমুদ্রের গর্জন এখনও আমাকে দুই হাত দিয়ে ডাকে। তাই আমি সবাইকে বলবো সময় পেলে বেরিয়ে পড়ুন,প্রতিটি মুহূর্তেই প্রকৃতি বদলায় সেই বদলানোটা দু চোখ ভরে দেখতে পাওয়াটাই মূল কথা,তাছাড়া প্রকৃতি কখনো আপনাকে বঞ্চিত করবে না।

আমি দার্জিলিং গিয়েছিলাম ২০১০ এর জুলাই মাসে।প্রথমে আমি ভীষণ দ্বিধার মধ্যে ছিলাম যাবো কি যাবো না কারণ এর কিছুদিন আগেই সেখানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছিল। আমি তখন নিয়মিত ওয়েদার রিপোর্ট দেখতাম দার্জিলিং এর।একদিন নেট ঘাটতে গিয়ে সন্ধান পাই মিজানুর রহমান [ভাই] নামের একজন ভদ্রলোকের যিনি কিনা একটি ভ্রমণ গল্প লিখেছিলেন এবং ঐখানে ফোন নাম্বারও দিয়েছিলেন।উনার সাথে কথা বলেই আমি উৎসাহ পাই এবং উনি আমাকে বাজেট সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা দিয়েছিলেন, আমি আজও সেই কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি। যাই হোক,আমরা ৩ জন ভিসার জন্য দাড়াই এবং এর পরদিন ভিসা পাই। আমরা ভিসা পাওয়ার পরদিনই টিকেট বুক দেই। মাঝখানের দিনটা যে কিভাবে কেটেছিল সেটা বলে বুঝানো যাবে না,সময় মনে হয় কাটছিলই না।যাই হোক আমরা পরদিন রাত ৯ টায় যথারীতি শ্যামলীর কাউন্টারে গিয়ে হাজির কিন্তু গিয়ে দেখি বিধি বাম।আমাদের দুই বন্ধুর স্থল বন্দর ছেংরাবান্ধা লিখা থাকলেও অপরজনেরটা ছিল সাতক্ষীরা বর্ডার।মন ভীষণ খারাপ হয়ে গেল,কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না,মনে হচ্ছিল নিজের মাথার চুল নিজে ছিঁড়ি। এর মধ্যে ফয়সাল দালালের সাথে যোগাযোগ করল এবং সে নিশ্চয়তা দিল যে কাল সব ঠিক করে দিবে কিন্তু আমরা যে ৩টি টিকেট কিনলাম তার কি হবে?অবশেষে ৩ জন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমরা ২ জন যাবো গিয়ে সাথে সাথেই ফয়সালকে ফোন করে আমাদের হোটেলের ঠিকানা জানিয়ে দিব,এই মর্মে ফয়সাল পরদিন আসবে বলে আমাদের কথা দেয়।

রাত ১০টায় রওনা হয়ে আমরা বুড়িমারি পোছাই পরদিন সকাল ৭ তায়,মাঝে আধা ঘণ্টার ব্রেক ছিল। বর্ডার খুলেছিল ৯টায় এবং সেখানে আমাদের প্রায় দেড় ঘণ্টা লেগেছিল ফর্মালিটি সারতে। আমরা শিলিগুড়ি পৌঁছেছিলাম বিকেল ৩ টা ৩০ মিনিটে,তখন রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল,এখন কি অবস্থা আল্লাহ মালুম।

শিলিগুড়ির বিরিয়ানি কয়জন খেয়েছেন আমি জানি না,তবে কেবল এতটুকুই বলবো যে এর বাহ্যিক রুপ দেখে মোহিত হবার কোন কারণ নেই।ওখানের বিরিয়ানি দেখতে যতটাই সুন্দর,খেতে ঠিক ততখানি পচা। আমি ভাবতে লাগলাম এরা যদি পুরনো ঢাকার বিরিয়ানির স্বাদ পেত তাহলে জীবনে বাংলাদেশ ছেড়ে যেত না। খাওয়ার পর্ব সেরে আমার ৩গ্রুপ মিলে একটি জিপ ভাড়া করি দার্জিলিং যাওয়ার জন্য যার ভাড়া ছিল ৯০০ রুপি। তো শুরু হল আমাদের যাত্রা।

শিলিগুড়ি ছেড়ে সামনে এগুলেই চোখে পড়বে অজস্র চা বাগান,তার একটু পরেই একটি ক্যান্টনমেন্ট ছিল,ক্যান্টনমেন্টের পরিবেশ খুবই এককথায় মনোমুগ্ধকর। দার্জিলিং যাওয়ার পথে কত যে চা বাগান আর কত যে ঝর্না পড়ে সেটা কেবল যারা গিয়েছেন তারাই বলতে পারবেন।

এই ছবিটি যাওয়ার পথে তোলা।

পথিমধ্যে এমন মেঘের আনাগোনা খুবই সাধারন ব্যাপার।

আমরা প্রায় ৩ ঘণ্টা পর দার্জিলিং পৌছাই,আমাদের ভ্রমণ সঙ্গীরা হোটেল সোনার বাংলাকে বেছে নিলেও আমরা বেছে নিয়েছিলাম মল রোড এর পাশের একটি হোটেল কারণ শ্রদ্ধেয় মিজান ভাই বলেছিলেন ওখান থেকেই নাকি মেঘের সবচাইতে ভালো ভিউ পাওয়া যায়।বাস্তবিকই আমরা উনার কথা প্রমান হাতে নাতে পেয়েছিলাম।

এই পথ ধরে উপরে গেলেই মল রোড।
[চলবে]
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১২ রাত ১১:০৫
১৫টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×